শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশকে তাগিদ দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথমবারের মতো শ্রম-মান নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসছে ঢাকা-ওয়াশিংটন। বৈঠকে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে আন্তর্জাতিক মান তথা আইএলও’র রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, শ্রম-মান নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) ভার্চুয়ালি বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। এতে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। ওয়াশিংটনের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জ্বালানি ও পরিবেশ বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি হোজে ফার্নান্দেজ। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র শ্রম অধিকার নিয়ে সরব। এ বছরের জুনে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক পরামর্শ সভা হয়। তখন শ্রম ইস্যুতে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহে এ বৈঠকটি হচ্ছে।
বৈঠকে কোন বিষয়গুলো উঠে আসতে পারে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, একেক দেশের প্রেক্ষাপট একেক রকম। শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ আইএলও-এর রোডম্যাপ বাস্তবায়নে কাজ করছে। এর মধ্যে অনেকগুলোতে ভালো অগ্রগতি হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ শ্রম খাতে সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ও অগ্রগতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরবে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আইএলও-এর ২০২৬ পর্যন্ত যে রোডম্যাপ রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হবে বলে আমরা আশা করছি।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে চলতি বছরের জুনে উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক পরামর্শ সভায় শ্রম ইস্যুতে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ সংক্রান্ত বৈঠকের বিষয়ে বার বার তাগিদ দেওয়া হয়। ওয়াশিংটনের চাওয়া ছিল, তাদের প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে বৈঠক করবে। কিন্তু ঢাকার এ ব্যাপারে অনাগ্রহ ছিল। কারণ অর্থনৈতিক পরামর্শ সভার বড় অংশজুড়ে ছিল শ্রমিক অধিকার প্রসঙ্গ। সেখানে প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে পাস করা এবং আইএলও রোডম্যাপের চারটি অগ্রাধিকার খাত দ্রুত বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু মাত্র চার মাসেরও কম সময়ের মাথায় আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বসে নতুন করে আগের অর্জনের বাইরে স্বল্প সময়ের মধ্যে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখানো সম্ভব নয়। সেজন্য অনেকটা উপায় না পেয়ে ভার্চুয়ালি বৈঠকে বসতে রাজি হয় ঢাকা।
তাছাড়া র্যাবের নিষেধাজ্ঞা, গুম-খুন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা কিংবা বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে শ্রম ইস্যুকে কেন্দ্র করে আলোচনা জোরালো হোক, সেটা ঢাকা চায় না বলে মনে করছে কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা পাওয়া এবং উন্নয়ন বিষয়ক তহবিল থেকে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ শ্রম অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, সে বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্যে। ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হয়ে আসার পর বেশ কয়েকবার কথা বলেছেন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা না পাওয়া প্রসঙ্গে। সম্প্রতি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন উদ্বেগের কারণে ২০১৩ সাল থেকে জিএসপি সুবিধা ও ডিএফসির অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ।
চলতি বছরের জুন মাসের শুরুর দিকে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক পরামর্শ সভায় অবকাঠামো খাতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) থেকে উন্নয়ন অর্থায়ন পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অনুরোধ বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে। তবে আইএলও-এর রোডম্যাপ বাস্তবায়নে জোর দিয়েছে দেশটি।