হুমায়ূন আহমেদ, হিমু, জোসনাবিলাস, মনে পড়ে কিছু? বই পড়ার বাতিক থাকলে এ শব্দগুলো আপনাকে কিছু একটা রোমন্থন করিয়ে দেবে। বিশেষ করে হিমু, হলুদ পাঞ্জাবি পরা এক যুবক। খালি পায়ে রাস্তায় হেঁটে বেড়ানো হিমুর চরিত্রকে অনেকেই ধারণ করে গেছেন নিজের মধ্যে। এখনও হিমু সিরিজের বই পড়লে একটা হিমু-হিমু ভাব চলে আসে নিজের মধ্যে। বারবার চা পান করতে মন চায়, খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটতে মন চায়, ভরা পূর্ণিমায় জোসনা-বিলাস করতে মন চায়। খেয়াল করে দেখবেন এখনও পূর্ণিমার চাঁদ উঠলে অনেকেই হিমু হয়ে যান। উদাস দৃষ্টিতে চাঁদ দেখেন। এ-তো গেল হিমুর একদিকের কথা। কিন্তু রাস্তায় হেঁটে বেড়ানো কিংবা ঘুরে বেড়ানোর বিষয়টা কেমন? আপনি কি জানেন, বর্ষপঞ্জিকাতে আসলেই এমন দিন আছে যে দিনটায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় অনেকে?
২৬ শে মে। আজই সে দিন, যে দিন সবাই হিমু হয়ে ওঠে। মানে সবাই রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। ইংরেজিতে যেটাকে বলে Road Trip (রোড ট্রিপ)। আর এ দিনের সূচনার সময় ১৯০৩ সাল। দুরুত্বের জন্য যখন থেকে যানবাহনের চল শুরু হয়েছে, তখন থেকেই শুরু হয়েছে Road Trip (রোড ট্রিপ) এর। হোরাটিও নেলসন জ্যাকসন নামের এক ব্যক্তি সান ফ্রান্সিসকো থেকে নিউ ইয়র্ক পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। এই ভ্রমণে তার সফরসঙ্গী ছিল কুকুর আর কিছু মেকানিক। এই ভ্রমণকেই নথিভুক্ত করা হয় বিশ্বের প্রথম Road Trip (রোড ট্রিপ) হিসেবে। আর এই ভ্রমণটি ছিল ৬৩ দিনের। সে হিসেবে শতাব্দিরও বেশি সময় ধরে জনপ্রিয় এসব ভ্রমণগুলো। কারণ প্রতিদিনই কেউ না কেউ ভ্রমণে যাচ্ছেন, আর প্রস্তুতিও নিচ্ছেন যাওয়ার জন্য।
চলুন একটু স্মৃতি হাতড়াই। কখনও এমন সময় হয়েছে যখন আপনার মন খুব করে চেয়েছে নিয়মের একটু বাইরে গিয়ে রুটিনকে রদবদল করতে। খোলা আকাশ, সাই সাই করে যাওয়া বাতাসের দল আর কোন এক যানবাহনের জানালার ধারে আপনি। তবে যদি ওটা কোন বাইক হয় তো আরও ভালো। কেমন লাগবে বলুন তো?
কর্মব্যস্ততার যাতাকলে এতটাই পিষ্ট আমরা যে, নিজেকে সময় দেওয়াটাও আজকাল বিলাসিতা মনে হয়। কিন্তু বিশ্বাস করুন, মাঝেমাঝে একটু অনিয়ম করে এক অন্য ধরণের প্রশান্তি পাওয়া যায়। সাবধানতা মেনে একটা দিন যদি নিজেকে একটু ঘুরিয়ে আনতে পারেন প্রকৃতির কাছ থেকে, খারাপ যে লাগবে না এটুকুর নিশ্চয়তা দেওয়াই যায়।
অনেকে সপ্তাহের শেষ দিনে একটু ঘুরে আসে। আপনার পক্ষে যদি প্রতি সপ্তাহে সম্ভব না হয় অন্তত মাসে একদিন তো নিজেকে একটু ভ্রমণে নিয়ে যেতেই পারেন। অনেকে ভাবেন এত ঘুরে কী হবে? ঘুরে সময় নষ্টের কথাও বলেন অনেকে। টাকা অপচয়ের কথাও তোলেন। কিন্তু যদি আমরা হিসাবের মোড়টা একটু অন্যদিকে ঘুরাই তাহলে দেখা যাবে, অকারণে খরচ আমাদের মোটেও কম না। অপ্রয়োজনে কিছু কেনা হচ্ছে, এমন খরচের বহরও ঢের। সেক্ষেত্রে এসব অদরকারি খরচটা যদি জমিয়ে একটা ছোটোখাটো ট্যুর দেওয়া যায়, সেটা কেমন হয়? একটা ফুরফুরে সতেজ মন আর ক্লান্ত দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরে আসাটা কিন্তু অতটাও বেমানান নয়। তবে এটাও ঠিক পথে-প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানোটা তখনই ভালো লাগে যখন রাস্তাটা হয় মসৃণ। অন্তত এ তো স্বীকার করবেনই যে- জায়গায় জায়গায় গর্ত, জমে থাকা ময়লা পানি আর ভাঙা রাস্তায় যানবাহনে চড়ে অন্তত আনন্দ নেই।
কর্মব্যস্ত আমাদের অনেকের যাতায়াত বাসে। আর যদি কোনভাবে জানালার সিটটা পেয়ে যাই, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। কানে ইয়ারফোন বা ইয়ারপড কিংবা হেডফোন দিয়ে পছন্দের লাইনগুলো শুনতে শুনতে পার করে ফেলি পরিচিত রাস্তাটা। আমাদের ইদানীং এর Road Trip (রোড ট্রিপগুলো) এমনই হয়ে আসছে। দৈনন্দিনের আসা-যাওয়াটাই এখন ভ্রমণের অংশ। কখনও সে ভ্রমণে থাকে বিদঘুটে এক জ্যাম আর তিক্ত করা রোদ। কখনও হালকা অন্ধকারে মিশে থাকে ভ্যাপসা গরম, সাথে অতি সামান্য বাতাস।
দেখুন, আজ শুক্রবার। দিনটা তো ছুটির দিন। একটু অন্যরকম করা যায়? ধরুন সেটা মোবাইল ছাড়া? সাথে হেডফোন, ইয়ারফোন আর ইয়ারপডগুলোকেও ড্রয়ারে রেখে এসে পরিবার আর প্রিয়মুখগুলোকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন কোথাও একটা। বেসুরো গলায় গাইলেন কিছু উজ্জীবনী গান। দেখুন না সময় মেলাতে পারেন কী না। ব্যস্ততার গণ্ডির বাইরেও জীবন ভীষণ সুন্দর। উদযাপন করাটা শুধু জানতে হয়।
ঠিক কী ঘটতে যাচ্ছে সামনে, তা আমাদের জানার বাইরে। দৃষ্টির অগোচরে থাকা বিষয় নিয়ে আমাদের কৌতূহল থাকুক কিন্তু দুশ্চিন্তার ছাপ না পড়ুক দু’ভ্রুর মাঝখানে। মাঝে মাঝে সব ছেড়ে-ছুড়ে হারিয়ে যেতে মন চায়। যে হারানোতে পূর্ণ থাকবে প্রচুর অ্যাডভেঞ্চার, অবিস্মরণীয় স্মৃতি, অন্তহীন সম্ভাবনা আর কিছু স্ন্যাক্স! তো আর দেরি কেন? বাক্সপেটরা গুছিয়ে নিন। দু’হাত দু’দিকে ছড়িয়ে বুক ভরে শ্বাস নিন আর বেড়িয়ে পড়ুন কোন এক প্রকৃতির কোলে।
লেখক : মাজহারুল ইসলাম (রুবেল), সম্পাদক ও প্রকাশক মাদারিপুরসময় ডটকম।