মূল্যস্ফীতিসহ নানা ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে বিশ্বের বহু দেশ। সংকটের কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে সঙ্গে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগও। এমনকি জীবনযাত্রার সংকট মোকাবিলার লড়াইয়ে বাদ যাচ্ছে না যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশগুলোর মানুষও।
একটি ভোক্তা অধিকার গোষ্ঠীর রিপোর্টে এমন তথ্যই বেরিয়ে এসেছে। বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) গোষ্ঠীটি সতর্ক করে বলেছে, খরচ বাঁচানোসহ জীবনযাত্রার সংকট মোকাবিলায় এক-দুই বেলা না খেয়ে থাকছে লাখ লাখ ব্রিটিশ নাগরিক।
এমনকি যুক্তরাজ্যের বহু মানুষ জ্বালানি দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেছে তারা। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সেপ্টেম্বরে ব্যাপক খাদ্যমূল্যের কারণে যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ফিরে যাওয়ার খবরটি প্রকাশের পর ভোক্তা গোষ্ঠীর রিপোর্টটি সামনে এলো। এছাড়া ক্ষমতাসীন হওয়ার দেড় মাসের মাথায় নানা ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস।
এএফপি বলছে, সংকটের কারণে লাখ লাখ ব্রিটিশ নাগরিকের খাবার কমানোর তথ্যটি সামনে এনেছে ভোক্তা অধিকার গোষ্ঠী ‘হুইচ?’। তারা বলছে, মানুষের সাধারণত তিনবেলা খাবার খাওয়ার কথা থাকলেও জীবনযাত্রার সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যের অর্ধেক পরিবার এখন খাবারের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে। ৩ হাজার মানুষের ওপর একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে এই তথ্য জানিয়েছে গোষ্ঠীটি।
এছাড়া একই পরিমাণ পরিবার অর্থনৈতিক সংকটের আগের তুলনায় স্বাস্থ্যকরভাবে খাওয়া কঠিন বলে মনে করছে। আর এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে আর্থিকভাবে বাধার মুখে পড়ছেন।
ভোক্তা অধিকার গোষ্ঠী ‘হুইচ?’-এর খাদ্য নীতির প্রধান স্যু ডেভিস বলছেন, ‘উদ্বেগজনকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকটের বিধ্বংসী প্রভাব হলো- লাখ লাখ মানুষ খাবার এড়িয়ে যাচ্ছে বা টেবিলে স্বাস্থ্যকর খাবার রাখতে সংগ্রাম করছে।’
অন্যদিকে, চলতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্য সরকারের জ্বালানির দাম হিমায়িত করার সিদ্ধান্তে লক্ষাধিক মানুষ তাদের ঘর পর্যাপ্তভাবে গরম রাখতে সক্ষম হবে না বলেও বুধবার জানিয়েছে ভোক্তা গোষ্ঠীটি।
‘হুইচ?’-এর নীতি ও অ্যাডভোকেসি প্রধান রোসিও কনচা সতর্ক করেছেন, ‘এপ্রিল মাসে সার্বজনীন জ্বালানি সহায়তা বন্ধ করার বিষয়ে লিজ ট্রাস সরকারের সিদ্ধান্ত দেশজুড়ে লাখ লাখ পরিবারকে — শুধু আর্থিকভাবে দুর্বল নয় — জ্বালানি দারিদ্র্যের দিকেও ছুঁড়ে ফেলতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারকে অবশ্যই এটা স্পষ্ট করতে হবে যে, তারা কীভাবে শীতের পর বসন্তের শেষ পর্যন্ত ঠান্ডায় সংগ্রাম করে যাওয়া মানুষকে সহায়তা করবে এবং একইসঙ্গে সরকারকে এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে, জ্বালানির দাম অবিশ্বাস্যভাবে বেশি থাকলেও ভোক্তাদেরকে ঠান্ডায় ফেলে রাখা হবে না।’
যুক্তরাজ্যের ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেসের (টিইউসি) সমন্বিত গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফ্রান্সিস ও’গ্র্যাডি এই সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘লিজ ট্রাসের জন্য আমার একটি বার্তা আছে: শ্রমজীবী মানুষ যে কাজ করে তার জন্য আমরা গর্বিত। আমরা কঠোর পরিশ্রম করি। আমরা ইউরোপে সবচেয়ে বেশি কাজ করি।’
ব্রাইটনে ইংলিশ সমুদ্রতীরবর্তী রিসোর্টে টিইউসি-এর বার্ষিক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘তবুও আপনার দলের ১২ বছর সরকারে থাকার জন্য ধন্যবাদ। ব্রিটেনের লাখ লাখ মানুষ বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করতে লড়াই করছে।’