চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতে বিয়ের পর মুক্তি পান ধর্ষণে অভিযুক্ত যুবক সাগর। তবে আদালত থেকে মুক্তি পেয়ে আবার পিটিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী ফারহানা ইসলাম শারমিন।
বুধবার (৪ জানুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের সামনে প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হলে এসব জানান তিনি। ফারহানা ইসলাম শারমিন বলেন, গত আগস্ট মাসে আদালতে আমাদের বিয়ে হয়। মুক্তি পেয়ে মাত্র তিন দিন তিনি আমার সঙ্গে ভালো আচরণ করেছেন। এরপর আমাকে মারধর করে তিনি পালিয়ে যান। নভেম্বর মাসে তার মায়ের বাসায় আমি খোঁজ নিতে যাই। তখন তিনি আমাকে আবার মারধর করেন। এদিন তিনি এসিড মেরে আবারও পরিবারকে নিয়ে পালিয়ে যান। এসিডে ঝলসে আমার মাথার পেছনের অংশে চুল উঠে গেছে। চোখের ঝাপসা দেখি।
তিনি বলেন, বাসা ভাড়া দিতে না পারায় মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। রাতে আমি বায়েজিদ বোস্তামী থানার বারান্দায় শুয়ে ছিলাম। সকালে উঠে কোর্ট বিল্ডিং আসছি একটা মামলা করার জন্য। টাকা নেই এজন্য জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে গেছি। তারা একজন আইনজীবী ঠিক করে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, পাঁচ দিন ভাত খাইনি। কোলের বাচ্চাটাকে তেমন কিছু খাওয়াতে পারিনি। আজকে কোর্টে একজন দুপুরে ভাত খাইয়েছে। রাতে কোথায় থাকব জানি না।
আদালতে শারমিনের দায়ের করা মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, চাকরি সূত্রে সাগর ও শারমিনের পরিচয় হয়। সেই পরিচয় থেকে দুজনের প্রেম হয়। একপর্যায়ে সাগর একটি কাগজ দেখিয়ে তাদের মধ্যে বিয়ে হয়েছে দাবি করে সংসার শুরু করে। কিন্তু আদতে কাবিননামা করা হয়নি। কিছুদিন পর শারমিন কাবিননামা করার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু রাজি না হলে শারমিন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সাগর ছাড়াও আসামি করা হয় সাগরের ভাই রেজাউল করিম শাকিল ও মোহাম্মদ ইদ্রিস মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে।
আদালত মামলাটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশে মামলাটি রুজু হলে সাগরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কারাগারে থাকা অবস্থায় ১৭ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আজিজ আহমেদ ভূঞার আদালতে দুজনের বিয়ে হয়। এতে কাবিন ধরা হয় চার লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিয়ের পর আদালত সাগরকে জামিন দেয়। এরপর সম্প্রতি তিনি আবারও স্ত্রীকে মেরে পালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী।
যদিও এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাগরের বক্তব্য জানতে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, আজকে (বুধবার) ফারহানা ইসলাম শারমিন আমার সঙ্গে দেখা করে এসব অভিযোগ করেছেন। যদি ঘটনা সত্য হয়ে থাকে আমি তাকে আলাদা মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। এছাড়া তার কথা মোতাবেক যেহেতু স্বামী শর্ত ভঙ্গ করেছে, সেহেতু আগের মামলায় জামিন বাতিলের আবেদন করতে পারেন। টাকা না থাকলে তিনি লিগ্যাল এইড অফিসের সহযোগিতা নিতে পারেন।