ঢাকা ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত চুরির অভিযোগে কুবি শিক্ষার্থীকে পুলিশে হস্তান্তর গাজীপুরে জলবায়ু প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ড সম্পন্ন জয়পুরহাটে ৯ বছরের শিশুর অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার গজারিয়ায় ইস্পাত কারখানায় শ্রমিকের মৃত্যু শ্রীপুরে বনের জমিতে করা অবৈধ বসত বাড়ি উচ্ছেদে যৌথ বাহিনীর অভিযান রোটারেক্ট ক্লাব অব চিটাগং এলায়েন্স’র নতুন কমিটি গঠিত পটুয়াখালীতে কোস্ট গার্ড ও মৎস্য অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানে ৪ লক্ষ ৪০ হাজার পিস রেণু জব্দ পবিপ্রবিতে বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস ২০২৫ পালিত বেরোবিতে রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত

চট্টগ্রাম গণপূর্তের উচ্চমান সহকারী দেবাশীষের কালো টাকার পাহাড়

চট্টগ্রাম গণপূর্ত অধিদপ্তর ডিভিশন-১ এর উচ্চমান সহকারী দেবাশীষ কুমার বৈদ্যর বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যে ও অনৈতিক সুবিধাসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অফিসের উপ সহাকরী প্রকৌশলী-২ মো. গোলাম মুনহাম জোয়ার্দ্দারের আশ্রয় প্রশ্রয়ে অনিয়ম দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানায়।
উচ্চমান সহকারী দেবাশীষ কুমার বৈদ্য টানা ১৩ বছর ধরে একই অফিসে চাকুরী করার কারণে পুরো অফিস স্টাফ তার কাছে জিম্মি বলে জানা গেছে। অফিসে লোকজনকে জিম্মি করে নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। ২৭ বছরের চাকরি জীবনের ১৩ বছরই আছেন একই অফিসে। ২৭ বছরের চাকরি জীবনে মাত্র দু’বার দপ্তর বদল হয়েছে তার। এভাবে এক জায়গায় দীর্ঘদিন থাকার সুবাদে নিজের বলয় তৈরি করেছেন তিনি। ঠিকাদার থেকে শুরু করে সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে তিনি আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বনে গেছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ বিত্তের মালিক। গণপূর্তের ওই কর্মচারীর নাম দেবাশীষ কুমার বৈদ্য। গণপূর্ত অধিদপ্তর ডিভিশন-১ চট্টগ্রামের উচ্চমান সহকারী তিনি। দেবাশীষ কুমার বৈদ্যর বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব শাকপুরা গ্রামের ৮নং ওয়ার্ডে। থাকেন দেওয়ান বাজার দিদার মার্কেটস্থ গণপূর্তের সরকারি আবাসিক ভবনে।
চট্টগ্রাম গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত এই দেবাশীষ কুমার বৈদ্যকে সবাই বড় বাবু হিসেবেও চিনে। তিনি চট্টগ্রাম গণপূর্ত অধিদপ্তরের জায়গা লিজ/বন্দোবস্তি থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদের অবৈধ লেনদেনের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত। তার হাজারো অভিযোগে থাকলেও কর্মকর্তাদের অবৈধ লেনদেনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার ভয়ে কর্মকর্তারা তাকে বদলী করেনা।

অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সেবাপ্রার্থী ও ঠিকাদারদের লাইসেন্স নবায়নসহ দপ্তরের বিভিন্ন ফাইলের জটিলতা তৈরি করে তাদের কাছ থেকে আদায় করেন টাকা। আর টাকা না দিলে তিনি ফাইল আটকে দেন। সম্প্রতি এক ব্যক্তির কাছে টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে কথাও বলেছেন তিনি। সেই কথোপকথনের অডিও বার্তা আমাদের হাতে সংরক্ষিত আছে। ওই অডিওতে দেবাশীষ কুমার বৈদ্য বলেন, ‘কেউ খুশি হয়ে ৪০০-৫০০ টাকা দিলে আমি নিই। আমি কারও কাছ থেকে খুঁজি না। ৯৫ পার্সেন্ট কাজ আমি টাকা ছাড়া করি।’ অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি এই টাকা ঘুষ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি যেটা মনে করেন।

সূত্রে জানা যায়, এই অফিসের সকল অবৈধ লেনদেন তার মাধ্যমে হয়। তার একাধিক বাড়ি গাড়ি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। ভারতে ও তার বাড়ি আছে। এর মধ্যে স্ত্রীর অসুস্থতার অজুহাতে ছুটির পূর্ব অনুমোদন ব্যাতিত ভারতে গেছেন কয়েকবার।

জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের গণপূর্ত চট্টগ্রাম সার্কেলে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন দেবাশীষ কুমার বৈদ্য। ২০০৭ সালে উচ্চমান সহকারী হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। ২০১২ সাল গণপূর্ত অধিদপ্তরের ডিভিশন-২-এ কর্মরত ছিলেন। পরে ২০১২ সালে তিনি আসেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের ডিভিশন-১ এ। এখনও তিনি এই দপ্তরেই কর্মরত আছেন। অথচ সরকারি চাকরি বিধিতে উল্লেখ আছে, প্রেষণের সময়কাল তিন বছর। ব্যতিক্রম ক্ষেত্র ছাড়া, চাকরির মেয়াদ তিন বছরের অধিক হবে না। সরেজমিন চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জের গণপূর্ত কার্যালয়ে গিয়ে একাধিক ঠিকাদারের কাছে দেবাশীষ কুমার বৈদ্যের সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, উচ্চমান সহকারীর টেবিলে ফাইল গেলে তাকে আর্থিক খুশি করতে হয়। না দিলে আটকে দেয়। এছাড়া ঠিকাদারি লাইসেন্সের নবায়নসহ বিভিন্ন কাজে তাকে টাকা দিয়ে খুশি করতে হয়। এছাড়া উক্ত দপ্তরে আসা বিভিন্ন সেবা প্রার্থীরা তার বিরুদ্ধে নানান অনৈতিক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম গণপূর্ত অধিদপ্তর ডিভিশন-১ এর উচ্চমান সহকারী দেবাশীষ কুমার বৈদ্য বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেগুলো অভিযোগ দেয়া হয়েছে এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তবে নিউজ না করার জন্য চাপ দেন যদি কেউ নিউজ করে তাকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী-২ মো. গোলাম মুনহাম জোয়ার্দ্দার জানান, উচ্চমান সহকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে যেন কোন নিউজ না হয়, উনার বিরুদ্ধে নিউজ হলে উনি মামলায় চলে যাবে, তবে উনার বিষয়টি আমি দেখতেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম বলেন উনার বিরুদ্ধে আগেই অভিযোগ উঠেছিল বিষয়টি আমরা মন্ত্রনালয়ে জানিয়েছিলাম, মন্ত্রনালয় থেকে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিষয়টি সঠিক হলে মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা মতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত

চট্টগ্রাম গণপূর্তের উচ্চমান সহকারী দেবাশীষের কালো টাকার পাহাড়

আপডেট সময় ১১:১৫:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

চট্টগ্রাম গণপূর্ত অধিদপ্তর ডিভিশন-১ এর উচ্চমান সহকারী দেবাশীষ কুমার বৈদ্যর বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যে ও অনৈতিক সুবিধাসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অফিসের উপ সহাকরী প্রকৌশলী-২ মো. গোলাম মুনহাম জোয়ার্দ্দারের আশ্রয় প্রশ্রয়ে অনিয়ম দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানায়।
উচ্চমান সহকারী দেবাশীষ কুমার বৈদ্য টানা ১৩ বছর ধরে একই অফিসে চাকুরী করার কারণে পুরো অফিস স্টাফ তার কাছে জিম্মি বলে জানা গেছে। অফিসে লোকজনকে জিম্মি করে নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। ২৭ বছরের চাকরি জীবনের ১৩ বছরই আছেন একই অফিসে। ২৭ বছরের চাকরি জীবনে মাত্র দু’বার দপ্তর বদল হয়েছে তার। এভাবে এক জায়গায় দীর্ঘদিন থাকার সুবাদে নিজের বলয় তৈরি করেছেন তিনি। ঠিকাদার থেকে শুরু করে সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে তিনি আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বনে গেছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ বিত্তের মালিক। গণপূর্তের ওই কর্মচারীর নাম দেবাশীষ কুমার বৈদ্য। গণপূর্ত অধিদপ্তর ডিভিশন-১ চট্টগ্রামের উচ্চমান সহকারী তিনি। দেবাশীষ কুমার বৈদ্যর বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব শাকপুরা গ্রামের ৮নং ওয়ার্ডে। থাকেন দেওয়ান বাজার দিদার মার্কেটস্থ গণপূর্তের সরকারি আবাসিক ভবনে।
চট্টগ্রাম গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত এই দেবাশীষ কুমার বৈদ্যকে সবাই বড় বাবু হিসেবেও চিনে। তিনি চট্টগ্রাম গণপূর্ত অধিদপ্তরের জায়গা লিজ/বন্দোবস্তি থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদের অবৈধ লেনদেনের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত। তার হাজারো অভিযোগে থাকলেও কর্মকর্তাদের অবৈধ লেনদেনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার ভয়ে কর্মকর্তারা তাকে বদলী করেনা।

অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সেবাপ্রার্থী ও ঠিকাদারদের লাইসেন্স নবায়নসহ দপ্তরের বিভিন্ন ফাইলের জটিলতা তৈরি করে তাদের কাছ থেকে আদায় করেন টাকা। আর টাকা না দিলে তিনি ফাইল আটকে দেন। সম্প্রতি এক ব্যক্তির কাছে টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে কথাও বলেছেন তিনি। সেই কথোপকথনের অডিও বার্তা আমাদের হাতে সংরক্ষিত আছে। ওই অডিওতে দেবাশীষ কুমার বৈদ্য বলেন, ‘কেউ খুশি হয়ে ৪০০-৫০০ টাকা দিলে আমি নিই। আমি কারও কাছ থেকে খুঁজি না। ৯৫ পার্সেন্ট কাজ আমি টাকা ছাড়া করি।’ অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি এই টাকা ঘুষ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি যেটা মনে করেন।

সূত্রে জানা যায়, এই অফিসের সকল অবৈধ লেনদেন তার মাধ্যমে হয়। তার একাধিক বাড়ি গাড়ি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। ভারতে ও তার বাড়ি আছে। এর মধ্যে স্ত্রীর অসুস্থতার অজুহাতে ছুটির পূর্ব অনুমোদন ব্যাতিত ভারতে গেছেন কয়েকবার।

জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের গণপূর্ত চট্টগ্রাম সার্কেলে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন দেবাশীষ কুমার বৈদ্য। ২০০৭ সালে উচ্চমান সহকারী হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। ২০১২ সাল গণপূর্ত অধিদপ্তরের ডিভিশন-২-এ কর্মরত ছিলেন। পরে ২০১২ সালে তিনি আসেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের ডিভিশন-১ এ। এখনও তিনি এই দপ্তরেই কর্মরত আছেন। অথচ সরকারি চাকরি বিধিতে উল্লেখ আছে, প্রেষণের সময়কাল তিন বছর। ব্যতিক্রম ক্ষেত্র ছাড়া, চাকরির মেয়াদ তিন বছরের অধিক হবে না। সরেজমিন চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জের গণপূর্ত কার্যালয়ে গিয়ে একাধিক ঠিকাদারের কাছে দেবাশীষ কুমার বৈদ্যের সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, উচ্চমান সহকারীর টেবিলে ফাইল গেলে তাকে আর্থিক খুশি করতে হয়। না দিলে আটকে দেয়। এছাড়া ঠিকাদারি লাইসেন্সের নবায়নসহ বিভিন্ন কাজে তাকে টাকা দিয়ে খুশি করতে হয়। এছাড়া উক্ত দপ্তরে আসা বিভিন্ন সেবা প্রার্থীরা তার বিরুদ্ধে নানান অনৈতিক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম গণপূর্ত অধিদপ্তর ডিভিশন-১ এর উচ্চমান সহকারী দেবাশীষ কুমার বৈদ্য বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেগুলো অভিযোগ দেয়া হয়েছে এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তবে নিউজ না করার জন্য চাপ দেন যদি কেউ নিউজ করে তাকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী-২ মো. গোলাম মুনহাম জোয়ার্দ্দার জানান, উচ্চমান সহকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে যেন কোন নিউজ না হয়, উনার বিরুদ্ধে নিউজ হলে উনি মামলায় চলে যাবে, তবে উনার বিষয়টি আমি দেখতেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম বলেন উনার বিরুদ্ধে আগেই অভিযোগ উঠেছিল বিষয়টি আমরা মন্ত্রনালয়ে জানিয়েছিলাম, মন্ত্রনালয় থেকে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিষয়টি সঠিক হলে মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা মতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।