ঢাকা ০৭:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন বিটিভির সংবাদ বেসরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারের প্রয়োজন নেই : নাহিদ শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ র‍্যাব ক্যাম্পের অভিযানে দু’কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার, আটক-১ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলেই ভাসতে থাকে প্রথম শ্রেণীর জাজিরা পৌরসভা। চট্টগ্রামে সাবেক সাংসদ বাদলের কবরে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে মুক্তি পাচ্ছে ‘রুম নম্বর ২০১১’ গণতন্ত্র ও বিএনপি সমান্তরাল : মির্জা ফখরুল আ.লীগ দেশকে পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল : তারেক রহমান

অনিয়ম অব্যবস্থাপনার মহারাজা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের তৎপরতা কমেনি

রাষ্ট্রের কর্পোরেট শাখার গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ স্থাপনা সমূহের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রকল্পের দায়িত্ব পালনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তৎপরতা কমেনি অনিয়ম অব্যবস্থাপনার মহারাজা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের। দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন জাহাঙ্গীর ঢাকায় কর্মস্থল যোগ দিতে জোর তদবির অব্যাহত রেখেছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধে অস্ত্র সহযোগিতার অভিযোগ থাকলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি তার বিরুদ্ধে।

তার বিরুদ্ধে যতো অভিযোগঃ
বর্তমানে রাজশাহী ডিভিশনে কর্মরত আছেন জাহাঙ্গীর আলম। সেখান থেকে ফের ইএম ডিভিশন -৪ ( সচিবালয়) বা ইএম ডিভিশন- ৭ (সংসদ ভবন) পোস্টিং পেতে জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গণপূর্তের মাফিয়া নির্বাহী প্রকৌশলীদের তালিকায় এক নম্বরে ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করছেন। তারই অংশ হিসেবে জয়েতি প্রকল্প সাব ডিভিশনই পরিবর্তন করে ফেলেন জাহাঙ্গীর আলম।
সাব ডিভিশন-৩ এর প্রকল্পের কিছু অংশ কার্যাদেশ দিয়েছিলেন সাব ডিভিশন ৪ এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সজলকে। যেমন: রোজগার্ডেনের কিছু অংশসহ বেঙ্গলি স্টুডিও’র দায়িত্বে আছে উপবিভাগ ৪। অথচ নিয়ম অনুযায়ী সাইট পরিবর্তনের ক্ষমতা রয়েছে প্রধান প্রকৌশলীর ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ হচ্ছে, হিসাব শাখা তদন্ত করলে দেখা যাবে অধিকাংশ বিল ভাউচারে উপসহকারী প্রকৌশলী কিংবা বিভাগীয় প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখে বিল প্রদান করা হয়েছে। তথ্যমতে, রায়ের বাজার বদ্ধভূমি উপকেন্দ্র সহ আনুষঙ্গিক কাজের বিল ও জিগাতলা ২৮৮ ফ্ল্যাট ১০০০ বর্গফুট ২টি ভবনের ৮ কোটি টাকার কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারকে প্রদান করা হয়েছে। এরকম অসংখ্য বিল নিজ ক্ষমতা বলে প্রদান করেছেন বলে ডিভিশনে গুঞ্জন আছে।
অভিযোগে আরো জানা যায়, ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট, পাম্প অপারেটর, লিফট অপারেটর, সিসি ক্যামেরা অপারেটর, বড় বাবু বা হিসাব সহকারী, জেনারেটর অপারেটর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অসংখ্য লোকজন। ই/এম বিভাগ- ২ এর অধীনে উপ বিভাগ ৩ ও ৪ এর লোকবল অধিকাংশই রাজশাহীর যা জাহাঙ্গীর আলমের আত্মীয়-স্বজন। এরা আর্থিক লেনদেনে নিয়োগ প্রাপ্ত । এর মধ্যে কিছু লোকবল কোন প্রয়োজন ছাড়াই নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তাদের বেতন ছিল দ্বিগুণ, এমনকি ঠিকাদারের অধীনস্থ লোকবল দিয়ে চালিয়েছেন বড়বাবুর/সেকশন প্রধানের দায়িত্ব, ব্যক্তিগত কাজেও ব্যবহার করতেন তাদেরকে। রাষ্ট্রের অর্থ খরচে লোকবল নিয়োগ দিয়ে করাতেন বিল ভাউচার। যদিও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী যোগদানের পরে অপ্রয়োজনীয় লোকবল চাকুরীচ্যুত করেছেন। তবে বিষয়গুলো জানার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী রাজু আহমেদকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
জাহাঙ্গীর আলমের উপর ক্ষিপ্ত গণপূর্তের অধিকাংশ ঠিকাদার। জানা যায়, কোন ছোটখাটো ঠিকাদার জাহাঙ্গীর আলমের কাছে ভীড়তে পারতেন না। ছোটখাটো কোন ফিগারও তিনি নিতেন না। এই জন্যই ছোট ঠিকাদারের স্থান ছিল না তার কাছে। জাহাঙ্গীর আলমের রেট ছিলো কমপক্ষে ১০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পর সবাইকে কাজ দিতেন এমনও নয়। হাতে গোনা ১০ থেকে ২০ জন ঠিকাদারকে কাজ দিতেন। বাকি ঠিকাদারের কাছ থেকে নেয়া টাকা ওই পোস্টিং এ শোধ করতে পারতেন না। কারণ হিসেবে জানা যায়, এরকম অসংখ্য ঠিকাদার থেকে একই ফিগার নিতেন। সেক্ষেত্রে সবার টাকা কম কম করে শোধ করতেন। যার ফলে সব ঠিকাদারের ভেতরে ভেতরে জাহাঙ্গীর আলমের উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের অধীনস্হ প্রায় একশ’ ঠিকাদার ছিলেন। এদের মধ্যে মাত্র ১০ থেকে ২০ জন ঠিকাদার ছিলেন তার অনুগত। বিশ্বস্থ ঠিকাদারের তালিকায় ছিল মামুন ও সাইদুল তাদেরকে বেশি কাজ দিতেন যা একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। এই গুটিকয়েক দুর্নীতিবাজ, নারী সাপ্লাই ঠিকাদারেরাই রুম দখল করে রাখতেন সব সময়। তার অফিস কক্ষের দরজা খোলার দায়িত্বে রাখতেন একাধিক লাঠিয়াল অফিস কর্মচারী। হাজার টাকা বকশিশ দিয়েও কেউ ভেতরে ঢোকার অনুমতি পেতেন না। সাধারণ, সৎ ও যোগ্যতা সম্পন্ন ঠিকাদাররা জাহাঙ্গীর আলমের রেট মোতাবেক টাকা খরচ করতে না পারায় বঞ্চিত হয়েছেন কাজ থেকে।
গণপূর্তের দুর্নীতিবাজ নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম তার বদলির আদেশটি বাতিল করার চেষ্টা করে অবশেষে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি এখনো। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অত্যাচারে অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব সহ সবাই তার উপর চরমভাবে বিরক্ত এবং ক্ষিপ্ত। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলম নির্লজ্জের মতো বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরপাক খাচ্ছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর নিয়ে জানা যায়, তিনি ২০১২ সালে বিআইডব্লিটিএ সহকারী প্রকৌশলী ছিলেন। সেখানেও তিনি বেপরোয়া ছিলেন। সেখান থেকে সরকারি বিধি ভেঙ্গে উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই ঢাকার বিশেষ বিশেষ স্থানে ব্যক্তিগত চাহিদা পালনসহ নির্বাহী প্রকৌশলী পদায়নের দায়িত্ব পান। বিশেষ করে ইএম বিভাগ-২ মন্ত্রী পাড়ার আওতাধীন হওয়ায় জাহাঙ্গীর আলমের দাম্ভিকতা ও অহংকার বেড়ে যায়। মন্ত্রীদের সাথে তার ওঠা বসা থাকায় তিনি কাউকে তোয়াক্কা করতেন না। এই বাড়াবাড়িই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান বিচারপতির বাসায় উঠাকালীন সময়ে কাজের গাফিলতির কারণে এবং সঠিক মানের মালামাল সরবরাহ না করায় প্রধান বিচারপতি তার প্রতি ভীষণ ক্ষিপ্ত হন। বাসযোগ্য উপযোগী না হওয়ায় এবং কাজের গুণগত মান নিম্নমানের হওয়ায় প্রধান বিচারপতি সঠিক সময়ে বাসায় উঠতে পারেননি। মূলত: প্রধান বিচারপতির ইশারায়ই এই দুর্নীতিবাজ ও নারী লোভী জাহাঙ্গীর আলমকে বদলী করা হয়।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, তার অধীনস্হ উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের মধ্যে দুই একজন তার কাছের ছিলেন। অন্য সব প্রকৌশলীরা তার বেপরোয়া চলাফেরা, আচরণ এবং সীমাহীন দুর্নীতি সহ্য করতেন না বলেই তাদের সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতি খুঁজে বের করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বদলির চিঠি দিতেন। এমনকি তিনি সফলও হতেন। সেই ভঁয়ে অন্য প্রকৌশলীরা তাঁর অন্যায় আদেশ নীরবে সহ্য করতেন। জাহাঙ্গীর আলমের অধীনস্হ ২ জন মাত্র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী। একজন নারী, আরেক জন পুরুষ। মন্ত্রী পাড়া জুরিডেকশনে পুরুষ এবং দুর্বল জুড়িডেকশনে নারী প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, নারী প্রকৌশলীর এই জায়গায় ২ বছরে ৪ জন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নারীকে বদলী করা হয়। এর কারণ অনুসন্ধান করে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের কু-প্রস্তাব বা অন্যায় এবং দুর্নীতির কাজে রাজি না হওয়ায় তারা নিজ চেষ্টায় অন্যত্র বদলী হয়ে চলে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি উপ বিভাগ ৩ এ জয়ন্তী নামের প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ পর্যায়ে প্রত্যাশি সংস্থাকে বুঝিয়ে দেয়ার পূর্বে সকল বিল সমাপ্ত করার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীকে যে সকল কাজ হয়নি সে সকল কাজের বিল দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে উক্ত প্রকল্পের উপ সহকারী প্রকৌশলী ও উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী থেকে দায়িত্ব বদল করে উপ বিভাগ-৪ কে হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে তিনি তার টার্গেট ফিলাপ করেন। যা গণপূর্তের বিধানে সাইড ডিস্টিভিশন করার এখতিয়ার শুধু মাত্র পারেন প্রধান প্রকৌশলী। বিষয়টি অনুসন্ধানে উঠে আসে যে, উপ বিভাগ ৪ এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীর সাথে তার ছিলো সখ্যতা এবং সব কাজের ভাগাভাগি সম্পর্ক। এমনকি অধিকাংশ কাজেই তাদের দুজনের ঠিকাদার ছিলো নামে মাত্র। পূর্ত ভবন বেইলি রোডের ভবনের কাজ উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী নিজেই করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খবর নিয়ে আরো জানা যায়, যে কোন কাজের বিল দেয়ার আগে দায়িত্বরত প্রকৌশলীদের সাথে জাহাঙ্গীর আলমের বনিবোনা না হলে তার পছন্দের প্রকৌশলীকে অর্ডার করে বিল প্রস্তাবের নির্দেশ দিতেন। সময়ের ব্যবধানে দায়িত্ব বদল করতে না পারলে দায়িত্বরত প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখেই নিজ ক্ষমতা বলে ঠিকাদারকে বিল প্রদান করতেন। তার প্রমাণ হিসেবে রায়ের বাজার বধ্যভূমির উপকেন্দ্রসহ আনুষাঙ্গিক ৪র্থ আর/ এ বিলের উপ প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখে ও ঝিগাতলা প্রকল্পের উপ সহকারী প্রকৌশলী এবং উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখেই বিল প্রদান করা হয়েছে। এরকম অসংখ্য বিলই দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ছাড়াই প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিল দুটো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তারিখ পরিবর্তনসহ বিলে সই করার পায়তারা করছেন জাহাঙ্গীর আলম।
অনুসন্ধানে আরো বেরিয়ে আসে, দুর্নীতিবাজ জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘ ৯ বছর সরকারের বিশেষ বিশেষ স্থাপনা পরিচালনা করতেন উপর মহল ঠিক রেখে। ওই মহলকে ঠিক রাখতে খরচ করতে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এই অর্থ আসতো ভুয়া প্রাক্কলন এবং ভুয়া বিলের মাধ্যমে। অথচ ভবনের সমস্যা সমস্যাই থেকে যেত। বিল প্রদান করার জন্য হিসাব শাখাটি ছিলো তার
অনুগত্। তাদের খুশি রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতেন তিনি। চেষ্টার অংশ হিসেবে হাজার হাজার ভুয়া ভাউচারে লাখ লাখ টাকার সুবিধা দিয়েছেন। এমনকি একাউন্ট শাখার কর্মচারীদের বাসায় এসির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন এই দুর্নীতিবাজ নির্বাহী প্রকৌশলী। কাজ শেষ হবার আগেই ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে নিজের ক্ষমতা বলে বিল দিয়েছেন। এছাড়াও নারী সহকর্মীরা তার সাথে কাজ করতে নিরাপদ নয় এমন অভিযোগও আছে। জাহাঙ্গীর আলমের ক্ষমতার দাপটে অফিসের সকাল কর্মকর্তা কর্মচারী মুখ বন্ধ করে কাজ করতেন। তার অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মতো কেউ না থাকায় রামরাজত্ব কায়েম করে ছিলেন তিনি।
একটি বদলির আদেশ থেকে জানাগেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি গণপূর্ত ইএম বিভাগ-২, ঢাকা থেকে ইএম পিএন্ডডি বিভাগ, রাজশাহীতে পোস্টিং দেয়া হয়েছে।
এদিকে জাহাঙ্গীর আলমের ঢাকায় ফের বদলীর খবরে গণপূর্তের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। জাহাঙ্গীর আলমের অত্যাচারে ডিভিশনের কেউ শান্তি মতো কাজ করতে পারেনি। তাকে ছাড়া ডিভিশনের সবাই ক্ষতিগ্রস্থ। একমাত্র তিনি এবং তার দুই অনুগত অফিসার লাভবান হয়েছেন। তিনি ছিলেন একক আধিপত্যের অধিকারী।
গণপূর্তের ইএম বিভাগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ৪ মাস আগে জাহাঙ্গীর আলমকে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে বদলির অন্যতম কারণ ছিলো প্রধান বিচারপতির বাস ভবনে কাজের গাফিলতি এবং নারী সহকর্মীরা তার সাথে কাজ করতে নিরাপদ নয়। তবে ঢাকায় আলাদিনের চেরাগ থাকায় নাছরবান্দা জাহাঙ্গীর মোটা টাকা খরচ করে হলেও সচিবালয় ৪ বা ইএম ৭ ডিভিশনে পোস্টিং পেতে মরিয়া। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দপ্তর সহ সম্ভাব্য সব জায়গায় আবারো তদবির শুরু করেছেন।
তবে গণপূর্তের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে , মাত্র ৪ মাস আগে বদলি করা হয়েছে, আবার ও ঢাকায় ফেরা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন।
অভিযোগে আরো জানা যায়, পিডব্লিউডির ইএম-২ ডিভিশনে চাকরি করে জাহাঙ্গীর আলম শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেন না। তার ইচ্ছেমতো বা মনমতো কোন কর্মকর্তা না হলে তাদের বিরূদ্ধে বেনামে অভিযোগ দায়ের করে পত্রিকায় খবর প্রকাশ করিয়ে ফায়দা লুটতেন। জিগাতলা প্রকল্পের ১ হাজার বর্গফুট এর ২ টি ভবনের ৮ কোটি টাকার কাজের বিল ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। ওই কাজের মেয়াদ শেষ হলেও মাহবুব কনস্ট্রাকশন এখনো কাজ বুঝিয়ে দিতে পারেনি। একই ভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্লাস টাওয়ারের লাইটের মূল্য ৩ গুণ বেশি দেখিয়ে এনার্জি প্লাসের সাথে যোগসাজশ করে সেখানেও ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই কর্মকর্তা। এরকম অসংখ্য কাজ ঠিকাদারকে দিয়ে কখনো অর্ধেক আবার কখনো কাজ না করিয়েই বিল উত্তলন করেছেন অহরহ। মাত্র ৯ বছর গণপূর্তে চাকরি করে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন করে জাহাঙ্গীর আলম এখন শত কোটি টাকার মালিক।
গণপূর্তের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ডিভিশনে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নারী সহকর্মীরা তার সাথে কাজ করতে নিরাপদ নয় এরকম বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে তদন্ত চলছে। গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেলে বিষয়টি দুদক পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিআইডব্লউটিতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল নাগাদ বিডব্লিউডিতে ডিউটি না করে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে বেতন তুলেছেন বলে অভিযোগও আছে। আলাদিনের চেরাগের মতো প্রমোশনের পাশাপাশি শত কোটি টাকার ধন সম্পদের মালিকও হয়েছেন দুর্নীতিবাজ এই নির্বাহী প্রকৌশলী ।
জাহাঙ্গীর আলমের ধন সম্পদের খবর নিয়ে জানা যায়, ঢাকার মোহাম্মদপুরে আলিশান বাড়ি, কুয়াকাটায় ও কক্সবাজারে রিসোর্ট এবং ফ্ল্যাট রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে বিঘা বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। তার সহকর্মীদের মুখ থেকে শোনা যায়, জাহাঙ্গীর আলম নিজ এলাকায় এমন কোন জমির খতিয়ান নেই যে সেখানে তার জমি নেই।
জাহাঙ্গীর আলমের বিলাসী জীবন যাপন সম্পর্কে খবর নিয়ে জানা যায় তিনি উচ্চবিলাসী এবং মনোরঞ্জনে অভ্যস্ত ব্যক্তি। সরকারি ছুটির দিন তার জন্য ঈদ। ঢাকায় থাকা অবস্থায় একেক ঠিকাদার একেক রিসোর্টে সুন্দরী, রমনী দিয়ে আনন্দ ও মনোরঞ্জন করাতেন। তিনি বোট ক্লাবে ১০ লাখ টাকা খরচ করে মেম্বারশিপ নিয়েছেন এমন খবরও শোনা গেছে।
হিসাব শাখার সুবিধা বঞ্চিত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের অনুগত একজন প্রকৌশলী যে পরিমাণ আর্থিক সুবিধা পেয়েছে তার ১০ গুণ সুবিধা দিয়েছে হিসাব শাখার একজন কর্মচারীকে। তদন্তে এর কিছু নজিরও পাওয়া গেছে। কিন্তু বিন্দুমাত্র তথ্য্ও প্রদান করতে রাজি নয় সংঘবদ্ধ দুর্নীতিবাজ চক্র। দুর্নীতিবাজ জাহাঙ্গীর আলমের ডিভিশনে ২ জন এস্টিমেটরের পদ থাকলেও দায়িত্বে ছিল একজন। তার অতিরিক্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে যাওয়াতে উপ বিভাগ ৪ এর দায়িত্ব প্রদান করেন উক্ত উপবিভাগের সেকশনে নিয়োজিত জুনিয়র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ফারুক হোসেন। এতে সুবিধা হয়েছে যে, সাইটে প্রাকলন প্রস্তুত করেন তিনি এবং তিনিই চেক করেন যাতে করে বেশি পরিমাণ দুর্নীতি করা যায় ।
গণপূর্ত অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অসংখ্য নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন এ দপ্তরে । কিন্তু কারো অফিস কক্ষের সামনে এত পরিমান ঠিকাদার অপেক্ষমান থাকতে দেখা যায়নি, যা জাহাঙ্গীর আলমের সময় দেখা গেছে। অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কক্ষের সামনেও এভাবে ভিড় জমাতেন না ঠিকাদাররা।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদক কে জানান, আমি চার মাস আগে রাজশাহীতে এসেছি বর্তমানে ঢাকায় ফেরার ইচ্ছা নেই। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে বলেন এগুলো পুরানো ঘটনা। আপনারা সচেতন মানুষ সত্যতা থাকলে নিউজ করেন। আমার কাছে এর বেশি বক্তব্য নাই। বিভিন্ন নারী সাপ্লাইয়ের বিষয়টি ও এড়িয়ে যান।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

অনিয়ম অব্যবস্থাপনার মহারাজা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের তৎপরতা কমেনি

আপডেট সময় ০৩:৫৯:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাষ্ট্রের কর্পোরেট শাখার গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ স্থাপনা সমূহের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রকল্পের দায়িত্ব পালনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তৎপরতা কমেনি অনিয়ম অব্যবস্থাপনার মহারাজা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের। দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন জাহাঙ্গীর ঢাকায় কর্মস্থল যোগ দিতে জোর তদবির অব্যাহত রেখেছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধে অস্ত্র সহযোগিতার অভিযোগ থাকলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি তার বিরুদ্ধে।

তার বিরুদ্ধে যতো অভিযোগঃ
বর্তমানে রাজশাহী ডিভিশনে কর্মরত আছেন জাহাঙ্গীর আলম। সেখান থেকে ফের ইএম ডিভিশন -৪ ( সচিবালয়) বা ইএম ডিভিশন- ৭ (সংসদ ভবন) পোস্টিং পেতে জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গণপূর্তের মাফিয়া নির্বাহী প্রকৌশলীদের তালিকায় এক নম্বরে ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করছেন। তারই অংশ হিসেবে জয়েতি প্রকল্প সাব ডিভিশনই পরিবর্তন করে ফেলেন জাহাঙ্গীর আলম।
সাব ডিভিশন-৩ এর প্রকল্পের কিছু অংশ কার্যাদেশ দিয়েছিলেন সাব ডিভিশন ৪ এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সজলকে। যেমন: রোজগার্ডেনের কিছু অংশসহ বেঙ্গলি স্টুডিও’র দায়িত্বে আছে উপবিভাগ ৪। অথচ নিয়ম অনুযায়ী সাইট পরিবর্তনের ক্ষমতা রয়েছে প্রধান প্রকৌশলীর ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ হচ্ছে, হিসাব শাখা তদন্ত করলে দেখা যাবে অধিকাংশ বিল ভাউচারে উপসহকারী প্রকৌশলী কিংবা বিভাগীয় প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখে বিল প্রদান করা হয়েছে। তথ্যমতে, রায়ের বাজার বদ্ধভূমি উপকেন্দ্র সহ আনুষঙ্গিক কাজের বিল ও জিগাতলা ২৮৮ ফ্ল্যাট ১০০০ বর্গফুট ২টি ভবনের ৮ কোটি টাকার কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারকে প্রদান করা হয়েছে। এরকম অসংখ্য বিল নিজ ক্ষমতা বলে প্রদান করেছেন বলে ডিভিশনে গুঞ্জন আছে।
অভিযোগে আরো জানা যায়, ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট, পাম্প অপারেটর, লিফট অপারেটর, সিসি ক্যামেরা অপারেটর, বড় বাবু বা হিসাব সহকারী, জেনারেটর অপারেটর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অসংখ্য লোকজন। ই/এম বিভাগ- ২ এর অধীনে উপ বিভাগ ৩ ও ৪ এর লোকবল অধিকাংশই রাজশাহীর যা জাহাঙ্গীর আলমের আত্মীয়-স্বজন। এরা আর্থিক লেনদেনে নিয়োগ প্রাপ্ত । এর মধ্যে কিছু লোকবল কোন প্রয়োজন ছাড়াই নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তাদের বেতন ছিল দ্বিগুণ, এমনকি ঠিকাদারের অধীনস্থ লোকবল দিয়ে চালিয়েছেন বড়বাবুর/সেকশন প্রধানের দায়িত্ব, ব্যক্তিগত কাজেও ব্যবহার করতেন তাদেরকে। রাষ্ট্রের অর্থ খরচে লোকবল নিয়োগ দিয়ে করাতেন বিল ভাউচার। যদিও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী যোগদানের পরে অপ্রয়োজনীয় লোকবল চাকুরীচ্যুত করেছেন। তবে বিষয়গুলো জানার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী রাজু আহমেদকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
জাহাঙ্গীর আলমের উপর ক্ষিপ্ত গণপূর্তের অধিকাংশ ঠিকাদার। জানা যায়, কোন ছোটখাটো ঠিকাদার জাহাঙ্গীর আলমের কাছে ভীড়তে পারতেন না। ছোটখাটো কোন ফিগারও তিনি নিতেন না। এই জন্যই ছোট ঠিকাদারের স্থান ছিল না তার কাছে। জাহাঙ্গীর আলমের রেট ছিলো কমপক্ষে ১০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পর সবাইকে কাজ দিতেন এমনও নয়। হাতে গোনা ১০ থেকে ২০ জন ঠিকাদারকে কাজ দিতেন। বাকি ঠিকাদারের কাছ থেকে নেয়া টাকা ওই পোস্টিং এ শোধ করতে পারতেন না। কারণ হিসেবে জানা যায়, এরকম অসংখ্য ঠিকাদার থেকে একই ফিগার নিতেন। সেক্ষেত্রে সবার টাকা কম কম করে শোধ করতেন। যার ফলে সব ঠিকাদারের ভেতরে ভেতরে জাহাঙ্গীর আলমের উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের অধীনস্হ প্রায় একশ’ ঠিকাদার ছিলেন। এদের মধ্যে মাত্র ১০ থেকে ২০ জন ঠিকাদার ছিলেন তার অনুগত। বিশ্বস্থ ঠিকাদারের তালিকায় ছিল মামুন ও সাইদুল তাদেরকে বেশি কাজ দিতেন যা একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। এই গুটিকয়েক দুর্নীতিবাজ, নারী সাপ্লাই ঠিকাদারেরাই রুম দখল করে রাখতেন সব সময়। তার অফিস কক্ষের দরজা খোলার দায়িত্বে রাখতেন একাধিক লাঠিয়াল অফিস কর্মচারী। হাজার টাকা বকশিশ দিয়েও কেউ ভেতরে ঢোকার অনুমতি পেতেন না। সাধারণ, সৎ ও যোগ্যতা সম্পন্ন ঠিকাদাররা জাহাঙ্গীর আলমের রেট মোতাবেক টাকা খরচ করতে না পারায় বঞ্চিত হয়েছেন কাজ থেকে।
গণপূর্তের দুর্নীতিবাজ নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম তার বদলির আদেশটি বাতিল করার চেষ্টা করে অবশেষে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি এখনো। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অত্যাচারে অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব সহ সবাই তার উপর চরমভাবে বিরক্ত এবং ক্ষিপ্ত। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলম নির্লজ্জের মতো বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরপাক খাচ্ছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর নিয়ে জানা যায়, তিনি ২০১২ সালে বিআইডব্লিটিএ সহকারী প্রকৌশলী ছিলেন। সেখানেও তিনি বেপরোয়া ছিলেন। সেখান থেকে সরকারি বিধি ভেঙ্গে উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই ঢাকার বিশেষ বিশেষ স্থানে ব্যক্তিগত চাহিদা পালনসহ নির্বাহী প্রকৌশলী পদায়নের দায়িত্ব পান। বিশেষ করে ইএম বিভাগ-২ মন্ত্রী পাড়ার আওতাধীন হওয়ায় জাহাঙ্গীর আলমের দাম্ভিকতা ও অহংকার বেড়ে যায়। মন্ত্রীদের সাথে তার ওঠা বসা থাকায় তিনি কাউকে তোয়াক্কা করতেন না। এই বাড়াবাড়িই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান বিচারপতির বাসায় উঠাকালীন সময়ে কাজের গাফিলতির কারণে এবং সঠিক মানের মালামাল সরবরাহ না করায় প্রধান বিচারপতি তার প্রতি ভীষণ ক্ষিপ্ত হন। বাসযোগ্য উপযোগী না হওয়ায় এবং কাজের গুণগত মান নিম্নমানের হওয়ায় প্রধান বিচারপতি সঠিক সময়ে বাসায় উঠতে পারেননি। মূলত: প্রধান বিচারপতির ইশারায়ই এই দুর্নীতিবাজ ও নারী লোভী জাহাঙ্গীর আলমকে বদলী করা হয়।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, তার অধীনস্হ উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের মধ্যে দুই একজন তার কাছের ছিলেন। অন্য সব প্রকৌশলীরা তার বেপরোয়া চলাফেরা, আচরণ এবং সীমাহীন দুর্নীতি সহ্য করতেন না বলেই তাদের সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতি খুঁজে বের করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বদলির চিঠি দিতেন। এমনকি তিনি সফলও হতেন। সেই ভঁয়ে অন্য প্রকৌশলীরা তাঁর অন্যায় আদেশ নীরবে সহ্য করতেন। জাহাঙ্গীর আলমের অধীনস্হ ২ জন মাত্র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী। একজন নারী, আরেক জন পুরুষ। মন্ত্রী পাড়া জুরিডেকশনে পুরুষ এবং দুর্বল জুড়িডেকশনে নারী প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, নারী প্রকৌশলীর এই জায়গায় ২ বছরে ৪ জন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নারীকে বদলী করা হয়। এর কারণ অনুসন্ধান করে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের কু-প্রস্তাব বা অন্যায় এবং দুর্নীতির কাজে রাজি না হওয়ায় তারা নিজ চেষ্টায় অন্যত্র বদলী হয়ে চলে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি উপ বিভাগ ৩ এ জয়ন্তী নামের প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ পর্যায়ে প্রত্যাশি সংস্থাকে বুঝিয়ে দেয়ার পূর্বে সকল বিল সমাপ্ত করার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীকে যে সকল কাজ হয়নি সে সকল কাজের বিল দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে উক্ত প্রকল্পের উপ সহকারী প্রকৌশলী ও উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী থেকে দায়িত্ব বদল করে উপ বিভাগ-৪ কে হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে তিনি তার টার্গেট ফিলাপ করেন। যা গণপূর্তের বিধানে সাইড ডিস্টিভিশন করার এখতিয়ার শুধু মাত্র পারেন প্রধান প্রকৌশলী। বিষয়টি অনুসন্ধানে উঠে আসে যে, উপ বিভাগ ৪ এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীর সাথে তার ছিলো সখ্যতা এবং সব কাজের ভাগাভাগি সম্পর্ক। এমনকি অধিকাংশ কাজেই তাদের দুজনের ঠিকাদার ছিলো নামে মাত্র। পূর্ত ভবন বেইলি রোডের ভবনের কাজ উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী নিজেই করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খবর নিয়ে আরো জানা যায়, যে কোন কাজের বিল দেয়ার আগে দায়িত্বরত প্রকৌশলীদের সাথে জাহাঙ্গীর আলমের বনিবোনা না হলে তার পছন্দের প্রকৌশলীকে অর্ডার করে বিল প্রস্তাবের নির্দেশ দিতেন। সময়ের ব্যবধানে দায়িত্ব বদল করতে না পারলে দায়িত্বরত প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখেই নিজ ক্ষমতা বলে ঠিকাদারকে বিল প্রদান করতেন। তার প্রমাণ হিসেবে রায়ের বাজার বধ্যভূমির উপকেন্দ্রসহ আনুষাঙ্গিক ৪র্থ আর/ এ বিলের উপ প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখে ও ঝিগাতলা প্রকল্পের উপ সহকারী প্রকৌশলী এবং উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখেই বিল প্রদান করা হয়েছে। এরকম অসংখ্য বিলই দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ছাড়াই প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিল দুটো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তারিখ পরিবর্তনসহ বিলে সই করার পায়তারা করছেন জাহাঙ্গীর আলম।
অনুসন্ধানে আরো বেরিয়ে আসে, দুর্নীতিবাজ জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘ ৯ বছর সরকারের বিশেষ বিশেষ স্থাপনা পরিচালনা করতেন উপর মহল ঠিক রেখে। ওই মহলকে ঠিক রাখতে খরচ করতে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এই অর্থ আসতো ভুয়া প্রাক্কলন এবং ভুয়া বিলের মাধ্যমে। অথচ ভবনের সমস্যা সমস্যাই থেকে যেত। বিল প্রদান করার জন্য হিসাব শাখাটি ছিলো তার
অনুগত্। তাদের খুশি রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতেন তিনি। চেষ্টার অংশ হিসেবে হাজার হাজার ভুয়া ভাউচারে লাখ লাখ টাকার সুবিধা দিয়েছেন। এমনকি একাউন্ট শাখার কর্মচারীদের বাসায় এসির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন এই দুর্নীতিবাজ নির্বাহী প্রকৌশলী। কাজ শেষ হবার আগেই ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে নিজের ক্ষমতা বলে বিল দিয়েছেন। এছাড়াও নারী সহকর্মীরা তার সাথে কাজ করতে নিরাপদ নয় এমন অভিযোগও আছে। জাহাঙ্গীর আলমের ক্ষমতার দাপটে অফিসের সকাল কর্মকর্তা কর্মচারী মুখ বন্ধ করে কাজ করতেন। তার অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মতো কেউ না থাকায় রামরাজত্ব কায়েম করে ছিলেন তিনি।
একটি বদলির আদেশ থেকে জানাগেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি গণপূর্ত ইএম বিভাগ-২, ঢাকা থেকে ইএম পিএন্ডডি বিভাগ, রাজশাহীতে পোস্টিং দেয়া হয়েছে।
এদিকে জাহাঙ্গীর আলমের ঢাকায় ফের বদলীর খবরে গণপূর্তের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। জাহাঙ্গীর আলমের অত্যাচারে ডিভিশনের কেউ শান্তি মতো কাজ করতে পারেনি। তাকে ছাড়া ডিভিশনের সবাই ক্ষতিগ্রস্থ। একমাত্র তিনি এবং তার দুই অনুগত অফিসার লাভবান হয়েছেন। তিনি ছিলেন একক আধিপত্যের অধিকারী।
গণপূর্তের ইএম বিভাগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ৪ মাস আগে জাহাঙ্গীর আলমকে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে বদলির অন্যতম কারণ ছিলো প্রধান বিচারপতির বাস ভবনে কাজের গাফিলতি এবং নারী সহকর্মীরা তার সাথে কাজ করতে নিরাপদ নয়। তবে ঢাকায় আলাদিনের চেরাগ থাকায় নাছরবান্দা জাহাঙ্গীর মোটা টাকা খরচ করে হলেও সচিবালয় ৪ বা ইএম ৭ ডিভিশনে পোস্টিং পেতে মরিয়া। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দপ্তর সহ সম্ভাব্য সব জায়গায় আবারো তদবির শুরু করেছেন।
তবে গণপূর্তের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে , মাত্র ৪ মাস আগে বদলি করা হয়েছে, আবার ও ঢাকায় ফেরা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন।
অভিযোগে আরো জানা যায়, পিডব্লিউডির ইএম-২ ডিভিশনে চাকরি করে জাহাঙ্গীর আলম শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেন না। তার ইচ্ছেমতো বা মনমতো কোন কর্মকর্তা না হলে তাদের বিরূদ্ধে বেনামে অভিযোগ দায়ের করে পত্রিকায় খবর প্রকাশ করিয়ে ফায়দা লুটতেন। জিগাতলা প্রকল্পের ১ হাজার বর্গফুট এর ২ টি ভবনের ৮ কোটি টাকার কাজের বিল ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। ওই কাজের মেয়াদ শেষ হলেও মাহবুব কনস্ট্রাকশন এখনো কাজ বুঝিয়ে দিতে পারেনি। একই ভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্লাস টাওয়ারের লাইটের মূল্য ৩ গুণ বেশি দেখিয়ে এনার্জি প্লাসের সাথে যোগসাজশ করে সেখানেও ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই কর্মকর্তা। এরকম অসংখ্য কাজ ঠিকাদারকে দিয়ে কখনো অর্ধেক আবার কখনো কাজ না করিয়েই বিল উত্তলন করেছেন অহরহ। মাত্র ৯ বছর গণপূর্তে চাকরি করে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন করে জাহাঙ্গীর আলম এখন শত কোটি টাকার মালিক।
গণপূর্তের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ডিভিশনে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নারী সহকর্মীরা তার সাথে কাজ করতে নিরাপদ নয় এরকম বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে তদন্ত চলছে। গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেলে বিষয়টি দুদক পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিআইডব্লউটিতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল নাগাদ বিডব্লিউডিতে ডিউটি না করে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে বেতন তুলেছেন বলে অভিযোগও আছে। আলাদিনের চেরাগের মতো প্রমোশনের পাশাপাশি শত কোটি টাকার ধন সম্পদের মালিকও হয়েছেন দুর্নীতিবাজ এই নির্বাহী প্রকৌশলী ।
জাহাঙ্গীর আলমের ধন সম্পদের খবর নিয়ে জানা যায়, ঢাকার মোহাম্মদপুরে আলিশান বাড়ি, কুয়াকাটায় ও কক্সবাজারে রিসোর্ট এবং ফ্ল্যাট রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে বিঘা বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। তার সহকর্মীদের মুখ থেকে শোনা যায়, জাহাঙ্গীর আলম নিজ এলাকায় এমন কোন জমির খতিয়ান নেই যে সেখানে তার জমি নেই।
জাহাঙ্গীর আলমের বিলাসী জীবন যাপন সম্পর্কে খবর নিয়ে জানা যায় তিনি উচ্চবিলাসী এবং মনোরঞ্জনে অভ্যস্ত ব্যক্তি। সরকারি ছুটির দিন তার জন্য ঈদ। ঢাকায় থাকা অবস্থায় একেক ঠিকাদার একেক রিসোর্টে সুন্দরী, রমনী দিয়ে আনন্দ ও মনোরঞ্জন করাতেন। তিনি বোট ক্লাবে ১০ লাখ টাকা খরচ করে মেম্বারশিপ নিয়েছেন এমন খবরও শোনা গেছে।
হিসাব শাখার সুবিধা বঞ্চিত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের অনুগত একজন প্রকৌশলী যে পরিমাণ আর্থিক সুবিধা পেয়েছে তার ১০ গুণ সুবিধা দিয়েছে হিসাব শাখার একজন কর্মচারীকে। তদন্তে এর কিছু নজিরও পাওয়া গেছে। কিন্তু বিন্দুমাত্র তথ্য্ও প্রদান করতে রাজি নয় সংঘবদ্ধ দুর্নীতিবাজ চক্র। দুর্নীতিবাজ জাহাঙ্গীর আলমের ডিভিশনে ২ জন এস্টিমেটরের পদ থাকলেও দায়িত্বে ছিল একজন। তার অতিরিক্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে যাওয়াতে উপ বিভাগ ৪ এর দায়িত্ব প্রদান করেন উক্ত উপবিভাগের সেকশনে নিয়োজিত জুনিয়র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ফারুক হোসেন। এতে সুবিধা হয়েছে যে, সাইটে প্রাকলন প্রস্তুত করেন তিনি এবং তিনিই চেক করেন যাতে করে বেশি পরিমাণ দুর্নীতি করা যায় ।
গণপূর্ত অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অসংখ্য নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন এ দপ্তরে । কিন্তু কারো অফিস কক্ষের সামনে এত পরিমান ঠিকাদার অপেক্ষমান থাকতে দেখা যায়নি, যা জাহাঙ্গীর আলমের সময় দেখা গেছে। অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কক্ষের সামনেও এভাবে ভিড় জমাতেন না ঠিকাদাররা।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদক কে জানান, আমি চার মাস আগে রাজশাহীতে এসেছি বর্তমানে ঢাকায় ফেরার ইচ্ছা নেই। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে বলেন এগুলো পুরানো ঘটনা। আপনারা সচেতন মানুষ সত্যতা থাকলে নিউজ করেন। আমার কাছে এর বেশি বক্তব্য নাই। বিভিন্ন নারী সাপ্লাইয়ের বিষয়টি ও এড়িয়ে যান।