কয়েক মাস ধরেই বাজার চড়া, এরপর থেকে কোনো মাছের দামই আর কমেনি। বাজারে সবচেয়ে কম দামের মাছ হিসেবে পাওয়া যেত চাষের পাঙাশ। বাজারের ঊর্ধ্বগতি প্রভাব থেকে বাদ যায়নি এই মাছও। কয়েক মাস আগে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দরে পাওয়া গেলেও মাঝে কেজি ১৬০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে ২০০ টাকা বা তার চেয়েও বেশিতে গিয়ে ঠেকেছে পাঙাশ মাছের দর।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একটু ছোট সাইজের পাঙাশ ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও মাঝারি সাইজের পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে। এছাড়া বিলের পাঙ্গাস দাবি করা মাছগুলোর দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি।
সবচেয়ে কম দামের পাঙাশ মাছের দামও বেড়ে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নিম্নআয়ের ক্রেতারা। শুক্রবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাজারে মাছ কিনতে আসা গার্মেন্টস কর্মী সাজেদুর রহমান বলেন, বাজারে কম দামে এখন আর কিছুই পাওয়া যায় না। ভালো মাছ কেনার কথা তো ভাবতেই পারি না। বাজারে এসে কম দামের মাছ খুঁজি। কম দামের মাছ বলতে পাঙাশ, তেলাপিয়া আর চাষের কই এগুলো। এসব মাছেরও দাম আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। পাঙাশ মাছ এখন কিনতে হয় ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। আজও বাজারে ২০০ টাকা কেজিতে পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে। তাহলে আমাদের মতো নিম্নআয়ের ক্রেতারা কি খাবে?
এই বাজারের মাছ বিক্রেতা এরশাদ আলী বলেন, মাছের দাম একটু বাড়তি যাচ্ছে। আসলে মাছের ফিডের (খাওয়ার) দাম বাড়ার পর থেকে মাছের বাজার বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহন খরচও বেড়েছে। সবকিছুর প্রভাব এসে পড়েছে বর্তমান মাছের বাজারে। বলতে গেলে বাজারে সবচেয়ে কম দামের মাছ ছিল পাঙাশ, এখন সেটি ২০০ টাকা কেজিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষের কই প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা, ছোট বোয়াল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, ছোট টেংরা ৪০০ টাকা, টাকি মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙাশ মাছ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, রুই মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০, কাতলা ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা, পাবদা ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, সিং মাছ ৪৫০ টাকা, রুপ চাঁদা ছোট সাইজের প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, ছোট কাচকি মাছ প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, জাটকা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৩০০ থেকে ১৬০০ টাকা, এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ১৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে সোনালী মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা প্রতি কেজি, কক ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি বাজারে খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায় আর গরু মাংস প্রতি কেজি ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লাল ডিম আগের মতোই ৫০ টাকা হালি (৪ পিস) বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মহাখালী বাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী হাফিজুর রহমান বলেন, সবজি থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, নিত্যপণ্য এমন কিছু নেই যেটার দাম বাড়েনি। বাজারে এসে ঘুরে ঘুরে খুঁজি কোন জিনিসটির দাম কম। কিন্তু কম দামে কিছুই পাই না। বাজারে এসে কম দামের যেসব মাছ আছে সেগুলো কিনতাম, এখন কম দামের কোন মাছ পাওয়া যায় না। তেলাপিয়া, পাঙাশ, চাষের কই এগুলো মাছের দামও এখন বাড়তি। তরি তরকারির বাজারে ৫০ টাকার নিচে কিছু পাওয়া যায় না, কম দামের মাছ বলতে পাঙ্গাস আগে ১৫০ টাকা কেজির মধ্যেই কেনা যেত, এখন সেটা কিনতে হয় ২০০ টাকায়। সবমিলিয়ে ঊর্ধ্বগতির বাজারে আমাদের মতো সাধারণ মানুষরাই সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে।