ঢাকা ১১:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ফরিদগঞ্জে হাসপাতালের আড়ালে চলছে অনৈতিক কাজ শেখ হাসিনা ও রেহানাসহ ১৬৫ জনের বিরুদ্ধে আদাবর থানায় হত্যা মামলা ভারতে মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদে ভোলায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ আল-আরাফাহ ঘিরে নতুন পাঁয়তারা রাজবাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র তিতু গ্রেফতার আঙুল ফুলে কলাগাছ গোয়াইনঘাটের বুঙ্গড়ী আজিজুল-মাসুক! দুদক উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিকের অবৈধ সম্পদের পাহাড়  আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে ঘনিষ্ঠ দু’জনকে অতিরিক্ত এমডি পদে নিয়োগের আয়োজন ১১৭০ টাকার নামজারির খরচ, ভূমি কর্মকর্তা নেন ৮-১৫ হাজার! পটুয়াখালী জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার হাসানুজ্জামানের দুর্নীতির স্বর্গ রাজ্যে যেন আলাউদ্দিনের চেরাগ।

জাজিরায় বিপুল পরিমাণে বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট সহ অগ্নিকাণ্ড

দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরায় বিকেনগর ইউনিয়নের বেশ কয়েক জনের বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

গত ৫ আগষ্ঠ আওয়ামীলীগ সরকারের পদত্যাগের পর থেকে গত শনিবার ১০ আগষ্ঠ পর্যন্ত এই অরাজগতা চালায় দুর্বৃত্তরা। এদিকে অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা দায় চাপাচ্ছেন সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উপর।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগষ্ঠ আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর থেকে বিকেনগর এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সরদার ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মজিবর বানিয়া, মন্টু হাওলাদার, আনোয়ার হাওলাদার, আব্দুল আলী সরদার, কালাচান সরদার, বাবু সরদার, মাইনুল বানিয়া, সেলিম মানিয়া ও তাদের লোকজন। এসময় বিকেনগরের নমশূদ্র গ্রামের বিউটি বেগম, ইলিয়াস মাদবর ও কলেজ গেট এলাকার লাভলী বেগমের বাড়ীতে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়। এছাড়াও বিকেনগর ইউনিয়নের আনন্দবাজার থেকে আব্দুল আলী মাদবরের দোকানে লুটপাট করে অন্তত দশটি দোকানঘর ভেঙ্গে নিয়ে যায়।

রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিকেনগরের আনন্দবাজার, নমশূদ্র কান্দি ও কলেজগেট এলাকায় ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপর বসতঘরসহ দোকানপাট ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কয়েকজন ভুক্তভোগী সর্বস্ব হারিয়ে আহাজারি করছেন।

সাংবাদিকদের দেখে কান্নাজড়িত হয়ে ভুক্তভোগী বিউটি বেগম বলেন, আমার বাবার সম্পত্তিতে গত ৩০ বছর যাবৎ আমার সন্তানদের নিয়ে ঘর উঠিয়ে বাসবাস করছি। এরমধ্যে গত কয়েক বছর ধরে মজিবর বানিয়া, মন্টু হাওলাদাররা আমাকে ভিটামাটি ছাড়া করার পায়তারা করছে। এখন পুলিশ নাই তাই সেই সুযোগে ওরা আমার ঘরের মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। পরে আবার বাড়ীতে থাকা সবগুলো ঘর কুপিয়ে শেষ করে দিয়ে গেছে। এখন আমার ছেলেমেয়ে নিয়ে মাথা গোজার কোন জায়গা নাই। আমি এই জুলুমের বিচার চাই।

আরেক ভুক্তভোগী আব্দুল আলী মাদবরের মেয়ে স্বর্ণা আক্তার বলেন, আমার বাবার ১০টি দোকানঘর ভেঙ্গে নিয়ে গেছে সাইদুর সরদার, মজিবর বানিয়া ও মন্টু হাওলদারের লোকজনেরা। আমার বাবা হার্টের রোগী। আনন্দবাজারে একটি ডেকোরেটরের দোকান করতো সেই দোকানটিও কেড়ে নিয়েছে ওরা। আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। এই জুলুমবাজদের থেকে আমাদের রক্ষা করুন।

আওয়ামীলীগ সরকার পদত্যাগের একদিন পর গত ৬ আগষ্ঠ রাত ১টার দিকে আগুন দেয়া হয় বিকেনগর কলেজগেট এলাকার লাভলী বেগমের বসতবাড়িতে। লাভলী বেগম বলেন, মজিবর বানিয়ার সাথে আমাদের আগে থেকে জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। দেশের এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মজিবর বানিয়া তার লোকজন নিয়ে আমার বাড়ীতে আগুন দেয়। পরে স্থানীয়রা দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলায় অনেক বেশী ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ওরা চেয়েছিল আগুন দেয়ার দোষ ছাত্রদের উপর চাপাতে কিন্তু আমার বাড়ীতে ঐদিন কোন ছাত্র আসেনি। আমি এর সঠিক বিচার চাই।

বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্তদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তারা সকলেই দাবী করেন বিষয়টি তাদের জানা নেই। তারা ঢাকায় অবস্থান করছেন। তবে মজিবর বানিয়া বলেন, এগুলো আমারা বা আমাদের কোন লোকজন করেনি। ছাত্ররা এসব লুটপাট, ভাঙচুর করেছে। বাড়ীতে আগুন দিয়েছে। কোন ছাত্ররা এসব করেছে জানতে চাইলে মজিবর বানিয়া কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

স্থানীয় বাসিন্দা সাফিয়া বেগম বলেন, সাইদুর সরদার, মজিবর বানিয়া, মন্টু হাওলাদার তাদের লোকজন নিয়ে এলাকায় এসব তাণ্ডব চালিয়েছে। আমাদের এলাকায় কোন ছাত্রছাত্রী আসে নাই।

ঘটনার বিষয়ে জানতে বিকেনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস্কান্দার আলী ভূইয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানিনা।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন সেনাবাহিনী। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তবে ভুক্তভোগীদের সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ফরিদগঞ্জে হাসপাতালের আড়ালে চলছে অনৈতিক কাজ

জাজিরায় বিপুল পরিমাণে বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট সহ অগ্নিকাণ্ড

আপডেট সময় ১০:৪৩:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ অগাস্ট ২০২৪

দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরায় বিকেনগর ইউনিয়নের বেশ কয়েক জনের বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

গত ৫ আগষ্ঠ আওয়ামীলীগ সরকারের পদত্যাগের পর থেকে গত শনিবার ১০ আগষ্ঠ পর্যন্ত এই অরাজগতা চালায় দুর্বৃত্তরা। এদিকে অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা দায় চাপাচ্ছেন সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উপর।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগষ্ঠ আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর থেকে বিকেনগর এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সরদার ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মজিবর বানিয়া, মন্টু হাওলাদার, আনোয়ার হাওলাদার, আব্দুল আলী সরদার, কালাচান সরদার, বাবু সরদার, মাইনুল বানিয়া, সেলিম মানিয়া ও তাদের লোকজন। এসময় বিকেনগরের নমশূদ্র গ্রামের বিউটি বেগম, ইলিয়াস মাদবর ও কলেজ গেট এলাকার লাভলী বেগমের বাড়ীতে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়। এছাড়াও বিকেনগর ইউনিয়নের আনন্দবাজার থেকে আব্দুল আলী মাদবরের দোকানে লুটপাট করে অন্তত দশটি দোকানঘর ভেঙ্গে নিয়ে যায়।

রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিকেনগরের আনন্দবাজার, নমশূদ্র কান্দি ও কলেজগেট এলাকায় ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপর বসতঘরসহ দোকানপাট ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কয়েকজন ভুক্তভোগী সর্বস্ব হারিয়ে আহাজারি করছেন।

সাংবাদিকদের দেখে কান্নাজড়িত হয়ে ভুক্তভোগী বিউটি বেগম বলেন, আমার বাবার সম্পত্তিতে গত ৩০ বছর যাবৎ আমার সন্তানদের নিয়ে ঘর উঠিয়ে বাসবাস করছি। এরমধ্যে গত কয়েক বছর ধরে মজিবর বানিয়া, মন্টু হাওলাদাররা আমাকে ভিটামাটি ছাড়া করার পায়তারা করছে। এখন পুলিশ নাই তাই সেই সুযোগে ওরা আমার ঘরের মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। পরে আবার বাড়ীতে থাকা সবগুলো ঘর কুপিয়ে শেষ করে দিয়ে গেছে। এখন আমার ছেলেমেয়ে নিয়ে মাথা গোজার কোন জায়গা নাই। আমি এই জুলুমের বিচার চাই।

আরেক ভুক্তভোগী আব্দুল আলী মাদবরের মেয়ে স্বর্ণা আক্তার বলেন, আমার বাবার ১০টি দোকানঘর ভেঙ্গে নিয়ে গেছে সাইদুর সরদার, মজিবর বানিয়া ও মন্টু হাওলদারের লোকজনেরা। আমার বাবা হার্টের রোগী। আনন্দবাজারে একটি ডেকোরেটরের দোকান করতো সেই দোকানটিও কেড়ে নিয়েছে ওরা। আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। এই জুলুমবাজদের থেকে আমাদের রক্ষা করুন।

আওয়ামীলীগ সরকার পদত্যাগের একদিন পর গত ৬ আগষ্ঠ রাত ১টার দিকে আগুন দেয়া হয় বিকেনগর কলেজগেট এলাকার লাভলী বেগমের বসতবাড়িতে। লাভলী বেগম বলেন, মজিবর বানিয়ার সাথে আমাদের আগে থেকে জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। দেশের এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মজিবর বানিয়া তার লোকজন নিয়ে আমার বাড়ীতে আগুন দেয়। পরে স্থানীয়রা দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলায় অনেক বেশী ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ওরা চেয়েছিল আগুন দেয়ার দোষ ছাত্রদের উপর চাপাতে কিন্তু আমার বাড়ীতে ঐদিন কোন ছাত্র আসেনি। আমি এর সঠিক বিচার চাই।

বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্তদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তারা সকলেই দাবী করেন বিষয়টি তাদের জানা নেই। তারা ঢাকায় অবস্থান করছেন। তবে মজিবর বানিয়া বলেন, এগুলো আমারা বা আমাদের কোন লোকজন করেনি। ছাত্ররা এসব লুটপাট, ভাঙচুর করেছে। বাড়ীতে আগুন দিয়েছে। কোন ছাত্ররা এসব করেছে জানতে চাইলে মজিবর বানিয়া কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

স্থানীয় বাসিন্দা সাফিয়া বেগম বলেন, সাইদুর সরদার, মজিবর বানিয়া, মন্টু হাওলাদার তাদের লোকজন নিয়ে এলাকায় এসব তাণ্ডব চালিয়েছে। আমাদের এলাকায় কোন ছাত্রছাত্রী আসে নাই।

ঘটনার বিষয়ে জানতে বিকেনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস্কান্দার আলী ভূইয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানিনা।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন সেনাবাহিনী। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তবে ভুক্তভোগীদের সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছি।