ঢাকা ০৯:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
মৃত্যুর দুই দিন পর জহুর আলীর মরদেহ হস্তান্তর করল বিএসএফ বোরহানউদ্দিনে‘তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত পবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য হলেন বিখ্যাত আইটি বিশেষজ্ঞ শরফুদ্দিন দক্ষিণ মুগদা থানা ৭১ নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত নির্বাচিত সরকার ছাড়া কোনো সংস্কারের বৈধতা আমরা দিতে পারব না: ফখরুল জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে যে পদক্ষেপের কথা জানালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম কুমিল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের ৭ সদস্য গ্রেফতার কোনো দল-গোষ্ঠী-ব্যক্তিকে সহযোগিতা করতে মাঠে নামিনি: সিইসি আনিসুল হক আরেক মামলায় গ্রেফতার চান্দিনায় মারুতির পেছনে বাসের ধাক্কায় শিশুর মৃত্যু,অন্তঃসত্ত্বা মা সহ আহত ৩

গুলিতে নিহত সিয়ামের ‘পালক’ বাবা-মায়ের কান্না থামছে না

বগুড়ায় কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে নিহত সিয়াম হোসেন শুভর (১৬) পালক মা শাপলা খাতুন ও বাবা রিকশাচালক আশিক উদ্দিনের কান্না থামছে না। ৭ বছর বয়সে বাবা-মা হারা শিশু সিয়াম ঠাঁই পেয়েছিল শাপলার বুকে। জন্ম না দিলেও ওই দম্পতি তাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। সিয়াম দিনভর ভাঙারি মালামাল কুড়িয়ে বিকালে বাড়িতে ফিরে মাকে ভাত দিতে বলে শহরের সেউজগাড়ি আমতলা মোড়ে আন্দোলন দেখতে গিয়েছিল। সেখানেই তাকে নৃশংস মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়।

বগুড়া শহরের কামারগাড়ি হাড্ডিপট্টি এলাকার রিকশাচালক আশিক উদ্দিন ও শাপলা খাতুন দম্পতির পালক ছেলে সিয়াম হোসেন শুভ। সে সারাদিন ভাঙারি মালামাল কুড়িয়ে সন্ধ্যায় বিক্রি করত। ওই টাকা বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিত।

গত ১৯ জুলাই শহরের বিভিন্ন অলিগলি ও ময়লার ভাগাড়ে ভাঙারি মালামাল কুড়িয়ে বিকালে বাড়ি ফেরে সিয়াম। মাকে ভাত দিতে বলে ঘরের বাহিরে যায়। তখন সেউজগাড়ি আমতলা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলছিল। ৬টার দিকে সেখানে সিয়ামের শরীরে ছররা গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এলাকার লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বগুড়া নার্সিং হোমে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক এএইচএম মশিহুর রহমান তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পালক মা শাপলা খাতুন জানান, মাত্র সাত বছর বয়সে সিয়াম তার জন্মদাতা বাবা-মা হারান। একদিন সে শহরের সাতমাথা এলাকায় একা বসে কান্নাকাটি করছিল। সেখানে শাপলা খাতুনকে দেখে সিয়াম শাড়ির আঁচল টেনে ধরে মা ডেকেছিল। তখন মায়ের মমতায় সিয়ামকে কোলে তুলে বাড়িতে এনে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করতে থাকেন। সংসারে অভাবের কারণে তাকে স্কুলে পাঠাতে পারেননি।

শাপলা বলেন, তারা গরিব অসহায় বলে সরকার বা জনপ্রতিনিধিরা কেউ খোঁজ নেয়নি। সিয়ামের অতীত স্মৃতি রোমন্থন করে শাপলা বলেন, তুই আমায় মা ডেকে মায়ায় ফেলে চলি গেলিরে বাপ। এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব। তবে পালক ছেলে সিয়ামের কিভাবে মৃত্যু হয়েছে এ প্রসঙ্গে পালক মা শাপলা খাতুন ও বাবা আশিক উদ্দিন কোন মন্তব্য করার সাহস করেননি। তাদের চোখে মুখে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। তারা ভয়ে ছেলের হত্যার বিচার চাইতেও পারছেন না। পরদিন সিয়ামের লাশ পাওয়ার পর নামাজগড় গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

এদিকে সিয়ামের মৃত্যু নিয়ে চিকিৎসক ও পুলিশ ভিন্ন কথা বলেছেন। বগুড়ার পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, সিয়াম আন্দোলনকারীদের ককটেলের আঘাতে মারা গেছেন। তার শরীরে ককটেলের স্পিন্টারের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সেদিন পুলিশ আন্দোলনকারীদের রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করেছিল।

তবে বগুড়া নার্সিং হোমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এএইচএম মশিহুর রহমান জানান, ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে সিয়ামকে মৃত অবস্থায় তার ক্লিনিকে আনা হয়। বন্দুকের ছররা গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে। তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত অন্তত ১০০টি গুলির চিহ্ন (ছিদ্র) রয়েছে। দুই চোখে গুলি লাগার পরই তার মৃত্যু হয়।

তিনি দাবি করেন, ছররা গুলির আঘাতেই ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। নিহত সিয়ামের পরিবার থেকে কোনো মামলা করা হয়নি। পুলিশ বাদী হয়ে আন্দোলনকারী বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মৃত্যুর দুই দিন পর জহুর আলীর মরদেহ হস্তান্তর করল বিএসএফ

গুলিতে নিহত সিয়ামের ‘পালক’ বাবা-মায়ের কান্না থামছে না

আপডেট সময় ১২:০০:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ জুলাই ২০২৪

বগুড়ায় কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে নিহত সিয়াম হোসেন শুভর (১৬) পালক মা শাপলা খাতুন ও বাবা রিকশাচালক আশিক উদ্দিনের কান্না থামছে না। ৭ বছর বয়সে বাবা-মা হারা শিশু সিয়াম ঠাঁই পেয়েছিল শাপলার বুকে। জন্ম না দিলেও ওই দম্পতি তাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। সিয়াম দিনভর ভাঙারি মালামাল কুড়িয়ে বিকালে বাড়িতে ফিরে মাকে ভাত দিতে বলে শহরের সেউজগাড়ি আমতলা মোড়ে আন্দোলন দেখতে গিয়েছিল। সেখানেই তাকে নৃশংস মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়।

বগুড়া শহরের কামারগাড়ি হাড্ডিপট্টি এলাকার রিকশাচালক আশিক উদ্দিন ও শাপলা খাতুন দম্পতির পালক ছেলে সিয়াম হোসেন শুভ। সে সারাদিন ভাঙারি মালামাল কুড়িয়ে সন্ধ্যায় বিক্রি করত। ওই টাকা বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিত।

গত ১৯ জুলাই শহরের বিভিন্ন অলিগলি ও ময়লার ভাগাড়ে ভাঙারি মালামাল কুড়িয়ে বিকালে বাড়ি ফেরে সিয়াম। মাকে ভাত দিতে বলে ঘরের বাহিরে যায়। তখন সেউজগাড়ি আমতলা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলছিল। ৬টার দিকে সেখানে সিয়ামের শরীরে ছররা গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এলাকার লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বগুড়া নার্সিং হোমে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক এএইচএম মশিহুর রহমান তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পালক মা শাপলা খাতুন জানান, মাত্র সাত বছর বয়সে সিয়াম তার জন্মদাতা বাবা-মা হারান। একদিন সে শহরের সাতমাথা এলাকায় একা বসে কান্নাকাটি করছিল। সেখানে শাপলা খাতুনকে দেখে সিয়াম শাড়ির আঁচল টেনে ধরে মা ডেকেছিল। তখন মায়ের মমতায় সিয়ামকে কোলে তুলে বাড়িতে এনে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করতে থাকেন। সংসারে অভাবের কারণে তাকে স্কুলে পাঠাতে পারেননি।

শাপলা বলেন, তারা গরিব অসহায় বলে সরকার বা জনপ্রতিনিধিরা কেউ খোঁজ নেয়নি। সিয়ামের অতীত স্মৃতি রোমন্থন করে শাপলা বলেন, তুই আমায় মা ডেকে মায়ায় ফেলে চলি গেলিরে বাপ। এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব। তবে পালক ছেলে সিয়ামের কিভাবে মৃত্যু হয়েছে এ প্রসঙ্গে পালক মা শাপলা খাতুন ও বাবা আশিক উদ্দিন কোন মন্তব্য করার সাহস করেননি। তাদের চোখে মুখে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। তারা ভয়ে ছেলের হত্যার বিচার চাইতেও পারছেন না। পরদিন সিয়ামের লাশ পাওয়ার পর নামাজগড় গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

এদিকে সিয়ামের মৃত্যু নিয়ে চিকিৎসক ও পুলিশ ভিন্ন কথা বলেছেন। বগুড়ার পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, সিয়াম আন্দোলনকারীদের ককটেলের আঘাতে মারা গেছেন। তার শরীরে ককটেলের স্পিন্টারের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সেদিন পুলিশ আন্দোলনকারীদের রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করেছিল।

তবে বগুড়া নার্সিং হোমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এএইচএম মশিহুর রহমান জানান, ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে সিয়ামকে মৃত অবস্থায় তার ক্লিনিকে আনা হয়। বন্দুকের ছররা গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে। তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত অন্তত ১০০টি গুলির চিহ্ন (ছিদ্র) রয়েছে। দুই চোখে গুলি লাগার পরই তার মৃত্যু হয়।

তিনি দাবি করেন, ছররা গুলির আঘাতেই ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। নিহত সিয়ামের পরিবার থেকে কোনো মামলা করা হয়নি। পুলিশ বাদী হয়ে আন্দোলনকারী বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।