ঢাকা ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
এবার অত্যাধুনিক বাস নির্মাণ করে চমকে দিল আফগানিস্তান পটুয়াখালীতে শেখ রাসেলের জন্মদিন পালন যোদ্ধাদের নতুন প্রধানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করল ফিলিস্তিনিরা স্বৈরাচারের সুবিধাভোগীরা মাথাচাড়া দিচ্ছে : তারেক রহমান মুরাদনগরের জোরপূর্বক হিন্দু পরিবারের রাস্তা দখলের পায়তারা আল্লাহর আনুগত্যের জন্য রাসূল(স.)এর আনুগত্য করতে হবে প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ আল মোসলেহ তজুমউদ্দিনে জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ১ সাকিবের বিকল্প খুঁজে নিলো বাংলাদেশ যেভাবে দেশ-বিদেশে ৫৮০ বাড়ির মালিক সাবেক ভূমিমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান রিফাত মহিউদ্দিন খান রিফাত শরীয়তপুরের জাজিরায় কালবেলার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান উদযাপন

‘ওরা কেন আমার বুকের ধন কেড়ে নিল?’

অভাবের সংসারে তিনবেলা খাওয়া ও ছোট ভাইবোনদের পড়াশোনায় সহযোগিতা করতে নিজে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে আর এগোতে পারেনি। বাবা অন্যের জমিতে কৃষি কাজ ও দিনমজুরের কাজ করে সংসারের হাল ঠিক রাখতে পারেন না, তাই কাজের সন্ধানে বের হয়ে ঢাকায় একটি কম্পিউটারের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করে। বলছিলাম শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের বিলদেওনিয়া এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম ফরাজির বড় ছেলে মো. জুনায়েদ হোসেনের (১৭) কথা। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় জুনায়েদের মা ডলি বেগম কবরের কাছে গিয়ে কান্না করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। আর বলছেন, ‘ওরা কেন আমার বুকের ধন কেড়ে নিল? আমার ছেলেতো কারও কোনো ক্ষতি করেনি। আমি এখন কার কাছে এই বিচার চাইব?’

জানা যায়, গত ১৯ জুলাই বিকেলে জুনায়েদ তার কর্মস্থল মিরপুর-১০ এ অবস্থিত আইটি গ্যালারি নামের কম্পিউটারের দোকান বন্ধ করে মিরপুর-২ এলাকার বাসায় ফিরছিল। তখন সেখানকার সড়কে সংঘর্ষ শুরু হলে জুনায়েদ আবারও তার কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলে হঠাৎ বুকে একটি গুলি লাগে। পরে পথচারীরা তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠায়। সেখানে পৌঁছালে চিকিৎসক সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত জুনায়েদের কর্মস্থল আইটি গ্যালারির মালিক সবুজ আলম মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, ‘জুনায়েদ অত্যন্ত শান্ত ও ভদ্র একটি ছেলে ছিল। সবসময় মনোযোগ দিয়ে কাজ করতো। গত ১৯ জুলাই যখন মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয় তখন আমি জুনায়েদসহ আমার দোকানের ৪ কর্মচারীকে দোকান বন্ধ করে বাড়িতে চলে আসতে বলি। তার কিছুক্ষণ পরে ফোনে জানতে পারি জুনায়েদ গুলিতে আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তখন হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি জুনায়েদ মারা গেছেন।

‘ওরা কেন আমার বুকের ধন কেড়ে নিল?’
সন্তানের মুখ দেখার আগেই রাকিবের চিরবিদায়
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জুনায়েদের পরিবারে তার আরও দুই ভাই ও এক বোন রয়েছে। তারা সবাই বিভিন্ন স্কুল কলেজে পড়াশোনা করছে। তাদের মধ্যে জুনায়েদই সবার বড়। এ ছাড়াও তার পরিবারে রয়েছে বাবা, মা ও তার দাদি। বাবা শাহ আলম ফরাজী ও জুনায়েদের আয় দিয়েই চলতো তাদের সংসার।

গত ২৭ জুলাই জুনায়েদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাকে বাড়ির সামনে সড়কের পাশেই দাফন করা হয়েছে। তার বাবা, মা, দাদিসহ ছোট ভাইবোনেরা কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।

নিহত জুনায়েদের বাবা শাহ আলম ফরাজি কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ছাড়া নিজেদের আর কোনো জমিজমা নেই। আমি অন্যের জমিতে কাজ করি। তাই সংসার চালাতে সহযোগিতা করতে আমার বড় ছেলে জুনায়েদ ঢাকায় একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করে প্রতিমাসে ৮-১০ হাজার টাকা পাঠাতো। তা দিয়েই বাবি ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা আর ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতাম। এখন আমি অথৈ সাগরে ভেসে গেলাম। আমার জুনায়েদ মারা যাওয়ার দুই ঘণ্টা আগেও ওর মা ও আমার সঙ্গে ফোন করে কথা বলেছিল। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।’

স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘জুনায়েদ খুবই দায়িত্বশীল ও ভদ্র প্রকৃতির ছিল। কখনো কারো সঙ্গে ঝামেলায় যেত না। সে মারা যাওয়ায় পরিবারটি খুবই বিপাকে পড়েছে। এখন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পেলে হয়তো কোনোভাবে তারা চলতে পারবে। নয়তো জুনায়েদের ছোট ভাইবোনের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’

এ বিষয়ে রাজনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবু আলেম মাদবর বলেন, আমার বাড়ির পাশেই জুনায়েদদের বাড়ি। সম্পর্কে সে আমার ভাতিজা হয়। পরিবারের হাল ধরতে বড় ছেলে হিসেবে জুনায়েদ ঢাকার একটি কম্পিউটার দোকানে কাজে গিয়েছিল। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার পরিবারকে সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা করব।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

এবার অত্যাধুনিক বাস নির্মাণ করে চমকে দিল আফগানিস্তান

‘ওরা কেন আমার বুকের ধন কেড়ে নিল?’

আপডেট সময় ১২:৪৬:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪

অভাবের সংসারে তিনবেলা খাওয়া ও ছোট ভাইবোনদের পড়াশোনায় সহযোগিতা করতে নিজে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে আর এগোতে পারেনি। বাবা অন্যের জমিতে কৃষি কাজ ও দিনমজুরের কাজ করে সংসারের হাল ঠিক রাখতে পারেন না, তাই কাজের সন্ধানে বের হয়ে ঢাকায় একটি কম্পিউটারের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করে। বলছিলাম শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের বিলদেওনিয়া এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম ফরাজির বড় ছেলে মো. জুনায়েদ হোসেনের (১৭) কথা। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় জুনায়েদের মা ডলি বেগম কবরের কাছে গিয়ে কান্না করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। আর বলছেন, ‘ওরা কেন আমার বুকের ধন কেড়ে নিল? আমার ছেলেতো কারও কোনো ক্ষতি করেনি। আমি এখন কার কাছে এই বিচার চাইব?’

জানা যায়, গত ১৯ জুলাই বিকেলে জুনায়েদ তার কর্মস্থল মিরপুর-১০ এ অবস্থিত আইটি গ্যালারি নামের কম্পিউটারের দোকান বন্ধ করে মিরপুর-২ এলাকার বাসায় ফিরছিল। তখন সেখানকার সড়কে সংঘর্ষ শুরু হলে জুনায়েদ আবারও তার কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলে হঠাৎ বুকে একটি গুলি লাগে। পরে পথচারীরা তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠায়। সেখানে পৌঁছালে চিকিৎসক সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত জুনায়েদের কর্মস্থল আইটি গ্যালারির মালিক সবুজ আলম মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, ‘জুনায়েদ অত্যন্ত শান্ত ও ভদ্র একটি ছেলে ছিল। সবসময় মনোযোগ দিয়ে কাজ করতো। গত ১৯ জুলাই যখন মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয় তখন আমি জুনায়েদসহ আমার দোকানের ৪ কর্মচারীকে দোকান বন্ধ করে বাড়িতে চলে আসতে বলি। তার কিছুক্ষণ পরে ফোনে জানতে পারি জুনায়েদ গুলিতে আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তখন হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি জুনায়েদ মারা গেছেন।

‘ওরা কেন আমার বুকের ধন কেড়ে নিল?’
সন্তানের মুখ দেখার আগেই রাকিবের চিরবিদায়
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জুনায়েদের পরিবারে তার আরও দুই ভাই ও এক বোন রয়েছে। তারা সবাই বিভিন্ন স্কুল কলেজে পড়াশোনা করছে। তাদের মধ্যে জুনায়েদই সবার বড়। এ ছাড়াও তার পরিবারে রয়েছে বাবা, মা ও তার দাদি। বাবা শাহ আলম ফরাজী ও জুনায়েদের আয় দিয়েই চলতো তাদের সংসার।

গত ২৭ জুলাই জুনায়েদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাকে বাড়ির সামনে সড়কের পাশেই দাফন করা হয়েছে। তার বাবা, মা, দাদিসহ ছোট ভাইবোনেরা কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।

নিহত জুনায়েদের বাবা শাহ আলম ফরাজি কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ছাড়া নিজেদের আর কোনো জমিজমা নেই। আমি অন্যের জমিতে কাজ করি। তাই সংসার চালাতে সহযোগিতা করতে আমার বড় ছেলে জুনায়েদ ঢাকায় একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করে প্রতিমাসে ৮-১০ হাজার টাকা পাঠাতো। তা দিয়েই বাবি ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা আর ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতাম। এখন আমি অথৈ সাগরে ভেসে গেলাম। আমার জুনায়েদ মারা যাওয়ার দুই ঘণ্টা আগেও ওর মা ও আমার সঙ্গে ফোন করে কথা বলেছিল। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।’

স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘জুনায়েদ খুবই দায়িত্বশীল ও ভদ্র প্রকৃতির ছিল। কখনো কারো সঙ্গে ঝামেলায় যেত না। সে মারা যাওয়ায় পরিবারটি খুবই বিপাকে পড়েছে। এখন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পেলে হয়তো কোনোভাবে তারা চলতে পারবে। নয়তো জুনায়েদের ছোট ভাইবোনের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’

এ বিষয়ে রাজনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবু আলেম মাদবর বলেন, আমার বাড়ির পাশেই জুনায়েদদের বাড়ি। সম্পর্কে সে আমার ভাতিজা হয়। পরিবারের হাল ধরতে বড় ছেলে হিসেবে জুনায়েদ ঢাকার একটি কম্পিউটার দোকানে কাজে গিয়েছিল। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার পরিবারকে সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা করব।