ঢাকা ০৮:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
দুর্নীতিকে কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না – বিজিবিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সমাজকল্যাণমন্ত্রীর আশীর্বাদে মিজানের সম্পদের পাহাড় জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির উদ্দেগে ২৮ শে ডিসেম্বর মহা সন্মেলনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্টিত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে বিস্ফোরণ, আহত ১২ বেলাবতে তারেক রহমানের ১৭তম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে শীর্ষক আলোচনা দীর্ঘ সাত বছর পর আজ ৭ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে আসেন ডুবাই প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নূরনবী ভুইয়া ক্রেস্ট কেলেঙ্কারির বাবুলের ১ সপ্তাহে তিন পদোন্নতি গোয়াইনঘাটে ৯০ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দ: ধরা যায়নি কাউকে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব মহাসড়কে ঘুস আদায়, ১১ ট্রাফিক গ্রেফতার

‘পালটা-পালটি ধাওয়ার ছবি তোলার সময় গুলিবিদ্ধ হয় আসিফ’

কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় নিহত শেরপুরের আসিফুর রহমান নামে ১৭ বছরের এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ায় একটি পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে চূরমার হয়ে গেছে। আসিফুর রহমান শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের কেরেঙ্গাপাড়া গ্রামের আমজাদ হোসেন ও ফজিলা খাতুন দম্পতির ছেলে।

রাজধানীর মিরপুরে গত ১৯ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ধ্যা ৬টার দিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই দিনই রাত ৯টা ৪০ মিনিটে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আসিফ। পরের দিন ২০ জুলাই ঢাকা থেকে আসিফের মরদেহ নিয়ে এসে জানাজা শেষে উপজেলার কেরেঙ্গাপাড়া-ফুলপুর সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে ওই পরিবারের মা-বাবা, ভাইবোন ও স্বজনদের কান্নার রোল যেন থামছেই না। আসিফ গরিব অসহায় পরিবারের ভবিষ্যতে হাল ধরবে বলে বাবা-মা আমায় বুক বাঁধলেও সেটি আজ শুধু স্বপ্নেই রয়ে গেল। একটি গুলি আসিফের পরিবারের স্বপ্নকে চিরদিনের জন্য এলোমেলা করে দিল। ছেলের শোকে আসিফের বাবা-মা এখন দিশাহারা হয়ে চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন।

আসিফের মা ফজিলা খাতুন শুক্রবার রাতে বলেন, ‘আমার ছেলে খুবই ধীরস্থির ও শান্ত স্বভাবের ছিল। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় কুরআনে হাফেজ হওয়ার জন্য পড়াশোনা করত। তেরো সিফারা পর্যন্ত পড়েছে। অভাব-অনটনের সংসার তাই ছোট বয়সেই এক বছর আগে মিরপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। মাসে সে ১৩ হাজার টাকা বেতন পাইত।’

ফজিলা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, আমার দুই ছেলে। চার মেয়ে। ছেলেমেয়েদের মধ্যে আসিফ দ্বিতীয়। বড় মেয়ের ঢাকায় বিয়ে হয়েছে। ছেলে আসিফ ও তার বাবা ঢাকার মিরপুরে থাকে। ৮ মাস বয়সের শিশু ছেলে ও অপর তিন মেয়েকে নিয়ে নালিতাবাড়ী কেরেঙ্গাপাড়া গ্রামে থাকি। আমার ছেলে আসিফ ছিল আমাদের সম্বল। অকালে তার মৃতুতে আমাদের সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। সরকার যদি এখন আমাদের জন্য কিছু করে তা হলে আমরা বাঁচার শক্তি পামু। আপনারা দেখেন আমাদের জন্য কিছু করতে পারেন কিনা।

নিহত আসিফুর রহমানের বাবা আমজাদ হোসেন শুক্রবার রাতে বলেন, আমার ছেলের বয়স কম। সে কোনো রাজনীতি করত না। আমার সঙ্গে ঢাকায় থেকে গার্মেন্টসে চাকরি করত। গত ঈদের আগে সে বেতন ও ঈদ বোনাস মিলিয়ে ১৬ হাজার টাকা পাইছিল। আমি আগে মানুষের দোকানে কাজ করতাম। ধার করে মিরপুর-১০-এ আব্বাস উদ্দিন স্কুলে পেছনে গোডাউন ভাড়া করে গার্মেন্টসের জুটের ব্যবসা শুরু করেছি। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে খাওয়াদাওয়ার পর ছেলে আসিফ ও আমি ঘুমিয়ে পড়ি। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠে আমার ছেলে আসিফ তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যায়। সন্ধ্যা ৬টা দিকে ছেলে মোবাইল ফোনে বলে বাবা আমি অ্যাক্সিডেন্ট করেছি। খবর পেয়ে গোলাগুলির মধ্যে দৌড়াইয়া যাই। গিয়া দিখি আমার ছেলে মাথার ডান পাশে গুলি লাগছে। আহত হয়ে মিরপুরে আলোক হাসপাতালে পড়ে আছে। সেখান থেকে রিকশায় করে ছেলেকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যাই। সেখানে ব্যান্ডেজ করে ছেলেকে নিয়ে রিকশায় করে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে যাই। সেখানে ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। রিকশায় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নেওয়ার পথে ছেলের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। ছেলে বলে বাবা আমি আর বাঁচব না। তোমার মনের আশা আমি পূরণ করতে পারলাম না। আমাকে মাফ করে দিও।

আসিফের ফুফাতো ভাই আনোয়ার হোসেন শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, আসিফ আমার মামাতো ভাই। ১৯ জুলাই শুক্রবার ৪-৫ বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে যায়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিরপুরে ধাওয়া-পালটাধাওয়া শুরু হলে মোবাইলে ছবি তোলার চেষ্টা করলে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে মারা যায়। সে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। খুবই সাদাসিধা ও নরম প্রকৃতির ছেলে ছিল সে।

নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শুক্রবার রাতে জানান, ওই ছেলে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। মিরপুরে গার্মেন্টসে চাকরি করত আর বাবার সঙ্গেই থাকত। গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় সে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকাতেই মারা যায়। মরদেহ এলাকায় নিয়ে এসে দাফন করা হলেও আমাকে সে কথা জানানো হয়নি। পরে আমি লোক মুখে শুনেছি। আমার মনে হয় অজানা ভয়ের কারণেই হয়তো আমাকে জানায়নি। তবে তার বাবা-মা আমাদের নৌকাতেই ভোট দিত।

নালিতাবাড়ী থানার ওসি মনিরুল আলম ভুইয়া আসিফুর রহমানের লাশ দাফনের সত্যতা নিশ্চিত করে এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে জানান, আসিফ কোনো রাজনৈতিক দলে সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে গার্মেন্টসে চাকরি করত।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

দুর্নীতিকে কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না – বিজিবিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

‘পালটা-পালটি ধাওয়ার ছবি তোলার সময় গুলিবিদ্ধ হয় আসিফ’

আপডেট সময় ১২:৪৬:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় নিহত শেরপুরের আসিফুর রহমান নামে ১৭ বছরের এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ায় একটি পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে চূরমার হয়ে গেছে। আসিফুর রহমান শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের কেরেঙ্গাপাড়া গ্রামের আমজাদ হোসেন ও ফজিলা খাতুন দম্পতির ছেলে।

রাজধানীর মিরপুরে গত ১৯ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ধ্যা ৬টার দিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই দিনই রাত ৯টা ৪০ মিনিটে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আসিফ। পরের দিন ২০ জুলাই ঢাকা থেকে আসিফের মরদেহ নিয়ে এসে জানাজা শেষে উপজেলার কেরেঙ্গাপাড়া-ফুলপুর সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে ওই পরিবারের মা-বাবা, ভাইবোন ও স্বজনদের কান্নার রোল যেন থামছেই না। আসিফ গরিব অসহায় পরিবারের ভবিষ্যতে হাল ধরবে বলে বাবা-মা আমায় বুক বাঁধলেও সেটি আজ শুধু স্বপ্নেই রয়ে গেল। একটি গুলি আসিফের পরিবারের স্বপ্নকে চিরদিনের জন্য এলোমেলা করে দিল। ছেলের শোকে আসিফের বাবা-মা এখন দিশাহারা হয়ে চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন।

আসিফের মা ফজিলা খাতুন শুক্রবার রাতে বলেন, ‘আমার ছেলে খুবই ধীরস্থির ও শান্ত স্বভাবের ছিল। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় কুরআনে হাফেজ হওয়ার জন্য পড়াশোনা করত। তেরো সিফারা পর্যন্ত পড়েছে। অভাব-অনটনের সংসার তাই ছোট বয়সেই এক বছর আগে মিরপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। মাসে সে ১৩ হাজার টাকা বেতন পাইত।’

ফজিলা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, আমার দুই ছেলে। চার মেয়ে। ছেলেমেয়েদের মধ্যে আসিফ দ্বিতীয়। বড় মেয়ের ঢাকায় বিয়ে হয়েছে। ছেলে আসিফ ও তার বাবা ঢাকার মিরপুরে থাকে। ৮ মাস বয়সের শিশু ছেলে ও অপর তিন মেয়েকে নিয়ে নালিতাবাড়ী কেরেঙ্গাপাড়া গ্রামে থাকি। আমার ছেলে আসিফ ছিল আমাদের সম্বল। অকালে তার মৃতুতে আমাদের সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। সরকার যদি এখন আমাদের জন্য কিছু করে তা হলে আমরা বাঁচার শক্তি পামু। আপনারা দেখেন আমাদের জন্য কিছু করতে পারেন কিনা।

নিহত আসিফুর রহমানের বাবা আমজাদ হোসেন শুক্রবার রাতে বলেন, আমার ছেলের বয়স কম। সে কোনো রাজনীতি করত না। আমার সঙ্গে ঢাকায় থেকে গার্মেন্টসে চাকরি করত। গত ঈদের আগে সে বেতন ও ঈদ বোনাস মিলিয়ে ১৬ হাজার টাকা পাইছিল। আমি আগে মানুষের দোকানে কাজ করতাম। ধার করে মিরপুর-১০-এ আব্বাস উদ্দিন স্কুলে পেছনে গোডাউন ভাড়া করে গার্মেন্টসের জুটের ব্যবসা শুরু করেছি। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে খাওয়াদাওয়ার পর ছেলে আসিফ ও আমি ঘুমিয়ে পড়ি। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠে আমার ছেলে আসিফ তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যায়। সন্ধ্যা ৬টা দিকে ছেলে মোবাইল ফোনে বলে বাবা আমি অ্যাক্সিডেন্ট করেছি। খবর পেয়ে গোলাগুলির মধ্যে দৌড়াইয়া যাই। গিয়া দিখি আমার ছেলে মাথার ডান পাশে গুলি লাগছে। আহত হয়ে মিরপুরে আলোক হাসপাতালে পড়ে আছে। সেখান থেকে রিকশায় করে ছেলেকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যাই। সেখানে ব্যান্ডেজ করে ছেলেকে নিয়ে রিকশায় করে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে যাই। সেখানে ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। রিকশায় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নেওয়ার পথে ছেলের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। ছেলে বলে বাবা আমি আর বাঁচব না। তোমার মনের আশা আমি পূরণ করতে পারলাম না। আমাকে মাফ করে দিও।

আসিফের ফুফাতো ভাই আনোয়ার হোসেন শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, আসিফ আমার মামাতো ভাই। ১৯ জুলাই শুক্রবার ৪-৫ বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে যায়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিরপুরে ধাওয়া-পালটাধাওয়া শুরু হলে মোবাইলে ছবি তোলার চেষ্টা করলে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে মারা যায়। সে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। খুবই সাদাসিধা ও নরম প্রকৃতির ছেলে ছিল সে।

নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শুক্রবার রাতে জানান, ওই ছেলে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। মিরপুরে গার্মেন্টসে চাকরি করত আর বাবার সঙ্গেই থাকত। গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় সে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকাতেই মারা যায়। মরদেহ এলাকায় নিয়ে এসে দাফন করা হলেও আমাকে সে কথা জানানো হয়নি। পরে আমি লোক মুখে শুনেছি। আমার মনে হয় অজানা ভয়ের কারণেই হয়তো আমাকে জানায়নি। তবে তার বাবা-মা আমাদের নৌকাতেই ভোট দিত।

নালিতাবাড়ী থানার ওসি মনিরুল আলম ভুইয়া আসিফুর রহমানের লাশ দাফনের সত্যতা নিশ্চিত করে এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে জানান, আসিফ কোনো রাজনৈতিক দলে সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে গার্মেন্টসে চাকরি করত।