পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলারে এক নির্বাচনি জনসভায় হামলার শিকার হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রিপাবলিকান প্রার্থী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার সন্ধ্যায় (স্থানীয় সময়) গুলিবদ্ধ হন ট্রাম্প। তবে এ ঘটনায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও তার ওপর এ হামলা দেশটির নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। বলছেন, এ ঘটনায় ট্রাম্পের সমর্থন বাড়তে পারে। বদলে যেতে পারে আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গতিপথ। ঘুরে দাঁড়াতে পারে ট্রাম্পের ভাগ্য। এই ঘটনার ফলে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পথ সহজ হতে পারে বলেও ধারণা করছেন অনেকেই। বৈশ্বিক রাজনৈতিক ঝুঁকি গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইউরেশিয়া গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ইয়ান ব্রেমার বলেছেন, হামলার ঘটনা ট্রাম্পের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। আলজাজিরা, বিবিসি, ফরচুন।
আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখেই নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছিলেন ট্রাম্প। জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় তার কান ঘেঁষে গুলি করা হয়। ভয়াবহ এ ঘটনায় অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন ট্রাম্প। আহত হওয়ার পর স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে নিউ জার্সির বাড়িতে ফিরেছেন তিনি। নির্বাচনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী তিনি।
রোববার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলেছে, ট্রাম্পের ওপর এই হামলা নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এমনকি এই হামলা মার্কিন নির্বাচনি প্রচারণাকে দিতে পারে নতুন আকার। বিবিসির নর্থ আমেরিকা এডিটর সারাহ স্মিথ বলছেন, হামলায় ট্রাম্পের আহত হওয়া এবং রক্তাক্ত অবস্থায় মুষ্টিবদ্ধ হাত উপরে তুলে ফাইট বলে হার না মানার অঙ্গীকার, সেই সঙ্গে সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টদের মাধ্যমে মঞ্চ থেকে তাড়াহুড়ো করে চলে যাওয়ার অসাধারণ ছবি কেবল ইতিহাস তৈরিই নয় বরং এগুলোই দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের হিসাব নিকাশ পালটে দিতে পারে।
রাজনৈতিক সহিংসতার এই জঘন্য হামলাটি আগামী নির্বাচনের প্রচারণায় অনিবার্যভাবে প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করেন তিনি। অ্যারিজোনার একজন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি বিগস বিবিসিকে বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন নির্বাচনি সমাবেশ ও যেকোনো রাজনৈতিক প্রচারণা আজকের পর থেকে আলাদা হবে। অ্যান্ডির ধারণা, শনিবারের পর থেকে নির্বাচনি বা রাজনৈতিক সমাবেশ ইনডোর ভেন্যুতে হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান নেতা বলেছেন, আমরা এখনি লড়াইটা দেখতে পাচ্ছি। যা সামনে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। তাদের ধারণা, এ ঘটনা নির্বাচনি প্রচারণার ধরনটাকেই বদলে দেবে। বিবিসির নর্থ আমেরিকা করেসপন্ডেন্ট অ্যান্থনি জার্চার বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলা দেশটির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ২০২৪ সালের নির্বাচনি প্রচারণাকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে সিকিউরিটি ও সেফটির যে ধারণা গত কয়েক দশক ধরে তৈরি হয়েছে সেটি নাটকীয়ভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবারের এই ঘটনার প্রভাব যুক্তরাষ্ট্র এবং এর রাজনৈতিক গতি প্রকৃতির ওপর কতটা প্রভাব পড়বে তা অনুমান করা কঠিন। তবে যখন কোনো অস্ত্র কোনো ব্যক্তির ইচ্ছায় অপব্যবহৃত হয় তখন এটি ইতিহাসের গতি প্রকৃতি পালটে দেয়। এখন একটি বিষয় পরিষ্কার, নির্বাচনি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি একটি নতুন প্রাণঘাতি মোড় নিয়েছে। এটি মার্কিন ইতিহাসের দুঃখজনক একটি মুহূর্ত। ওয়াশিংটন সংবাদদাতা গ্যারি ওডনাহিউ পেনসিলভানিয়া থেকে লিখেছেন, ইতোমধ্যেই সব জায়গায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। সমস্যা হলো কীভাবে এটির বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। শুধু নির্বাচন নয়। দেশের ভবিষ্যতের জন্যও এর অর্থ কী দাঁড়াবে এটি এখন ভাবনার বিষয়। রাজনৈতিক নেতৃত্ব কোন দিকে এগুবে, কীভাবে এগুলোর বাইরে গিয়ে নেতারা দেশকে এগিয়ে নেবেন এ নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্ব সঠিকভাবে না হলে এটি খুব খারাপের দিকেও যেতে পারে।
অন্যদিকে ট্রাম্পের ওপর হামলার পর বাইডেনের নির্বাচনি প্রচারাভিযান তাদের সব রাজনৈতিক বিবৃতি স্থগিত করেছে। নির্বাচন সম্পর্কিত টেলিভিশন বিজ্ঞাপনগুলোও সরিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করছে। এই সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ না করে তার ওপর হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের পাশে থাকার দিকেই মনোনিবেশ করছেন তারা।