ঢাকা ০১:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাদারগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নৈশপ্রহরীর এতো সম্পদ!

মাদারগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নৈশপ্রহরী জাহাঙ্গীর আলম। মাস্টার রোলে চাকরি করে বেতন পান মাত্র ১ হাজার ৭০০ টাকা। অথচ আজ তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক।

মাদারগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সের কাছে কোটি টাকার জমিতে লাখ লাখ টাকা খরচ করে তৈরি করেছেন বিশাল এক বাড়ি। এছাড়া সরকারি খাসজমি দখল করে গরুর খামারসহ একাধিক পাকা বাড়ি করেছেন তিনি। ফসলি জমি, পুকুর কোনো কিছুরই অভাব নেই তার। সব কিছুই হয়েছে মাদারগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসের বদৌলতে।

জানা গেছে, ১২ বছর আগে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের অফিসারের খাবার রান্নার কাজ করতে গিয়ে তিনি মাস্টার রোলে চাকরি পেয়ে যান। এরপরই তার ভাগ্য খুলে যায়। রাতারাতি তিনি অফিসের সব ‘গোপন কাজের’ সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। রাতের অফিসে গোপন কাজগুলো তার হুকুমে চলে। যত অনৈতিক অবৈধ কাজ হয় সবকিছুর বখরা যায় তার কাছে। জমি রেজিস্ট্রি, দলিল রেজিস্ট্রির কমিশন, নকল উত্তোলনসহ সব রকম কাজ তাকে ছাড়া করা যায় না। তাকে ‘দ্বিতীয় সাবরেজিস্ট্রার’ বলে থাকে অফিসের লোকজন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক জন দলিল লেখক ও অফিসের কর্মচারী জানান, এ অফিসে জাহাঙ্গীরের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তার সুপারিশে কয়েক জন প্রভাবশালীর ছেলেদের নকল নবিশের চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়ে তিনি নিজের হাতকে শক্তিশালী করেছেন। কেউ তাদের অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করলে তারা হুমকি দিয়ে, মারপিটের ভয় দেখিয়ে সবার মুখ বন্ধ রাখে। তার সিন্ডিকেটের কয়েক জনের কাছে পুরো সাবরেজিস্ট্রি অফিস জিম্মি হয়ে আছে।

এলাকার লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি উপজেলার সুখনগরী গ্রামে, নদী ভাঙনের পর তিনি উপজেলা সদরে পালপাড়ায় আশ্রয় নেন। এক সময় তিনি দিনমজুরি করতেন, বাসাবাড়িতে কামলার কাজ করতেন। পরে উপজেলার বিভিন্ন অফিসে ছোটখাটো ফরমায়েসি কাজ করতে থাকেন। পরে তার ঠাঁই হয় উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে। সেখানে ব্যাচেলর অফিসারদের রান্নাবান্না ও ঘর মোছার কাজ করতেন। এক পর্যায়ে তত্কালীন এক সাবরেজিস্ট্রার তাকে অফিসের ছোটখাটো কাজ করাতে শুরু করেন। এক সময় তিনি মাস্টার রোলে ঐ অফিসের নৈশপ্রহরীর কাজ পান। বেতন ছিল ৩০০ টাকা। বর্তমানে তার বেতন ১ হাজার ৭০০ টাকা।

সাবরেজিস্ট্রি অফিসে যোগ দিয়েই তিনি নেমে পড়েন অবৈধ কাজকারবারে। এক এক করে অফিসের সব কাজ হাতিয়ে নেন তিনি। দিনদিন সম্পদের পরিমাণও বাড়তে থাকে তার। নিজ নামে এবং আত্মীয়স্বজনসহ অনেকের নামে সম্পদ গড়েছেন তিনি। সুখনগরীতে সরকারি খাসজমি দখল করে সেখানে গরুর খামার গড়ে তুলেছেন, কয়েক বছর আগে স্থানীয় ব্যবসায়ী আতাউর রহমান আবু তালুকদারের কাছ থেকে উপজেলা কমপ্লেক্সের কাছে কোটি টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করেন তিনি। এখানেও জমির দাম কম ও ভুয়া শ্রেণি দেখিয়ে কম মূল্যে জমি রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এই দলিলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। ঐ জমিতে পাঁচতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন তিনি। দোতলা পর্যন্ত কাজ হয়েছে। এছাড়া পালপাড়ায় আরো একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে তার। গ্রামের বাড়িতে রয়েছে একাধিক ঘর, বাগান, গরুর খামার, পুকুর, কয়েক একর ফসলি জমি। একজন নৈশপ্রহরীর এত সম্পদ দেখে গ্রামবাসী হতবাক।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বারবার তার বিরুদ্ধে খবর না প্রকাশ করার অনুরোধ জানান। মাদারগঞ্জ উপজেলার বর্তমান সাবরেজিস্ট্রারও জাহাঙ্গীরের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মাদারগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নৈশপ্রহরীর এতো সম্পদ!

আপডেট সময় ০৫:৪৭:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪

মাদারগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নৈশপ্রহরী জাহাঙ্গীর আলম। মাস্টার রোলে চাকরি করে বেতন পান মাত্র ১ হাজার ৭০০ টাকা। অথচ আজ তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক।

মাদারগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সের কাছে কোটি টাকার জমিতে লাখ লাখ টাকা খরচ করে তৈরি করেছেন বিশাল এক বাড়ি। এছাড়া সরকারি খাসজমি দখল করে গরুর খামারসহ একাধিক পাকা বাড়ি করেছেন তিনি। ফসলি জমি, পুকুর কোনো কিছুরই অভাব নেই তার। সব কিছুই হয়েছে মাদারগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসের বদৌলতে।

জানা গেছে, ১২ বছর আগে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের অফিসারের খাবার রান্নার কাজ করতে গিয়ে তিনি মাস্টার রোলে চাকরি পেয়ে যান। এরপরই তার ভাগ্য খুলে যায়। রাতারাতি তিনি অফিসের সব ‘গোপন কাজের’ সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। রাতের অফিসে গোপন কাজগুলো তার হুকুমে চলে। যত অনৈতিক অবৈধ কাজ হয় সবকিছুর বখরা যায় তার কাছে। জমি রেজিস্ট্রি, দলিল রেজিস্ট্রির কমিশন, নকল উত্তোলনসহ সব রকম কাজ তাকে ছাড়া করা যায় না। তাকে ‘দ্বিতীয় সাবরেজিস্ট্রার’ বলে থাকে অফিসের লোকজন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক জন দলিল লেখক ও অফিসের কর্মচারী জানান, এ অফিসে জাহাঙ্গীরের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তার সুপারিশে কয়েক জন প্রভাবশালীর ছেলেদের নকল নবিশের চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়ে তিনি নিজের হাতকে শক্তিশালী করেছেন। কেউ তাদের অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করলে তারা হুমকি দিয়ে, মারপিটের ভয় দেখিয়ে সবার মুখ বন্ধ রাখে। তার সিন্ডিকেটের কয়েক জনের কাছে পুরো সাবরেজিস্ট্রি অফিস জিম্মি হয়ে আছে।

এলাকার লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি উপজেলার সুখনগরী গ্রামে, নদী ভাঙনের পর তিনি উপজেলা সদরে পালপাড়ায় আশ্রয় নেন। এক সময় তিনি দিনমজুরি করতেন, বাসাবাড়িতে কামলার কাজ করতেন। পরে উপজেলার বিভিন্ন অফিসে ছোটখাটো ফরমায়েসি কাজ করতে থাকেন। পরে তার ঠাঁই হয় উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে। সেখানে ব্যাচেলর অফিসারদের রান্নাবান্না ও ঘর মোছার কাজ করতেন। এক পর্যায়ে তত্কালীন এক সাবরেজিস্ট্রার তাকে অফিসের ছোটখাটো কাজ করাতে শুরু করেন। এক সময় তিনি মাস্টার রোলে ঐ অফিসের নৈশপ্রহরীর কাজ পান। বেতন ছিল ৩০০ টাকা। বর্তমানে তার বেতন ১ হাজার ৭০০ টাকা।

সাবরেজিস্ট্রি অফিসে যোগ দিয়েই তিনি নেমে পড়েন অবৈধ কাজকারবারে। এক এক করে অফিসের সব কাজ হাতিয়ে নেন তিনি। দিনদিন সম্পদের পরিমাণও বাড়তে থাকে তার। নিজ নামে এবং আত্মীয়স্বজনসহ অনেকের নামে সম্পদ গড়েছেন তিনি। সুখনগরীতে সরকারি খাসজমি দখল করে সেখানে গরুর খামার গড়ে তুলেছেন, কয়েক বছর আগে স্থানীয় ব্যবসায়ী আতাউর রহমান আবু তালুকদারের কাছ থেকে উপজেলা কমপ্লেক্সের কাছে কোটি টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করেন তিনি। এখানেও জমির দাম কম ও ভুয়া শ্রেণি দেখিয়ে কম মূল্যে জমি রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এই দলিলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। ঐ জমিতে পাঁচতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন তিনি। দোতলা পর্যন্ত কাজ হয়েছে। এছাড়া পালপাড়ায় আরো একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে তার। গ্রামের বাড়িতে রয়েছে একাধিক ঘর, বাগান, গরুর খামার, পুকুর, কয়েক একর ফসলি জমি। একজন নৈশপ্রহরীর এত সম্পদ দেখে গ্রামবাসী হতবাক।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বারবার তার বিরুদ্ধে খবর না প্রকাশ করার অনুরোধ জানান। মাদারগঞ্জ উপজেলার বর্তমান সাবরেজিস্ট্রারও জাহাঙ্গীরের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।