ঢাকা ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি

ভৈরবের কমপক্ষে ২৪ যুবক রাসেল নামে দালালের খপ্পরে পড়ে স্বপ্নের দেশ ইতালি যাওয়া থমকে গেছে। তাদের কেউ এখন লিবিয়ায় অপহরণকারীদের হাতে বন্দি আবার কেউ দেশটির কারাগারে বন্দি জীবনযাপন করছেন। এদের অনেকেরই পরিবার বাড়ির জমিজমাটুকু বিক্রি করে দালাল রাসেলকে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ায় এখন প্রায় নিঃস্ব। এদিকে লিবিয়ায় অপহরণকারীরা দাবি করছে, তাদেরকে আরও ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা দিলে ডাংকি দিয়ে সাগর পথে যুবকদেরকে ইতালি পাঠাবে। কিন্তু পরিবারগুলো এই দাবির টাকা না দিতে পারায় তাদের ওপর চালাচ্ছে অমানবিক নির্যাতন। আর সেই নির্যাতনের ভিডিও অপহরণকারীরা কৌশলে ভৈরবে পাঠাচ্ছে পরিবারগুলোর কাছে। ভিডিও দেখে পরিবারগুলোতে প্রতিদিনই চলছে আজাহারি। পরিবারগুলোর অভিযোগ, রাসেল ইতালি পাঠানোর নামে ২৪ জনের কাছ থেকে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছে পৌর শহরের রাসেল মিয়া, যার কাছ থেকে ৭ লাখ, একই এলাকার ফারুক মিয়াসহ তিনজনের কাছ থেকে ৬০ লাখ, নরসিংদীর শিবপুরের শফিকুলের কাছ থেকে ২৩ লাখ, সবুজ, তোফাজ্জল ও মনিরের কাছ থেকে ৭০ লাখ, হাছেন আলী ও তার দুই বন্ধুর কাছ থেকে ৪৫ লাখ, সুমনের কাছ থেকে ১৪ লাখ, পঞ্চবটি এলাকার রশিদ, মালেক ও হুরুন আলীর কাছ থেকে ৬৫ লাখ টাকা নিয়েছে রাসেল। এদের মধ্যে কেউ ৬ মাস আগে, কেউ ৪ মাস আগে আবার কেউ ৩ মাস আগে রাসেলকে টাকা দিয়েছে।

ভুক্তভোগী সুমনের বাবা নরিছলাম বলেন, সুখের স্বপ্ন দেখে ছেলেকে রাসেলের মাধ্যমে ইতালি পাঠাতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার বুকেরধন এখন লিবিয়ার কারাগারে বন্দি।

শফিকুলের বাবা এবাদুল্লাহ বলেন, ছেলেকে লিবিয়ায় অপহরণকারীরা আটকে রেখেছে। এখন ১০ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছে। এত টাকা কোথা থেকে দিব। হাছেন আলীর বাবা রইছ উদ্দিন বলেন, তিন মাস ধরে ছেলের কোনো খোঁজ নেই। ৪০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম দালালকে। এদিকে গত ৪ জুলাই অভিযোগের ভিত্তিতে লিবিয়া ফেরত দালাল রাসেলকে গ্রেফতারের পর কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এখন তাকে কারাগারে পাঠিয়ে আরও বিপদ হয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি। তারা বলছে, রাসেল ছাড়া যুবকদেরকে লিবিয়া থেকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়।

ভৈরব থানার ওসি সফিকুল ইসলাম জানান, রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে ২৪ জনের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা নিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। রাসেল বলছে, টাকাগুলো লিবিয়ার দালালকে পাঠিয়েছে। সাগর পথে ঝামেলার কারণে যুবকদেরকে ইতালিতে পাঠাতে বিলম্ব হচ্ছে। অপহরণকারীদের হাতে তারা কয়েকজন বন্দি এসব কথা অস্বীকার করেছে রাসেল। সব ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওসি।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি

আপডেট সময় ১২:১১:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪

ভৈরবের কমপক্ষে ২৪ যুবক রাসেল নামে দালালের খপ্পরে পড়ে স্বপ্নের দেশ ইতালি যাওয়া থমকে গেছে। তাদের কেউ এখন লিবিয়ায় অপহরণকারীদের হাতে বন্দি আবার কেউ দেশটির কারাগারে বন্দি জীবনযাপন করছেন। এদের অনেকেরই পরিবার বাড়ির জমিজমাটুকু বিক্রি করে দালাল রাসেলকে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ায় এখন প্রায় নিঃস্ব। এদিকে লিবিয়ায় অপহরণকারীরা দাবি করছে, তাদেরকে আরও ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা দিলে ডাংকি দিয়ে সাগর পথে যুবকদেরকে ইতালি পাঠাবে। কিন্তু পরিবারগুলো এই দাবির টাকা না দিতে পারায় তাদের ওপর চালাচ্ছে অমানবিক নির্যাতন। আর সেই নির্যাতনের ভিডিও অপহরণকারীরা কৌশলে ভৈরবে পাঠাচ্ছে পরিবারগুলোর কাছে। ভিডিও দেখে পরিবারগুলোতে প্রতিদিনই চলছে আজাহারি। পরিবারগুলোর অভিযোগ, রাসেল ইতালি পাঠানোর নামে ২৪ জনের কাছ থেকে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছে পৌর শহরের রাসেল মিয়া, যার কাছ থেকে ৭ লাখ, একই এলাকার ফারুক মিয়াসহ তিনজনের কাছ থেকে ৬০ লাখ, নরসিংদীর শিবপুরের শফিকুলের কাছ থেকে ২৩ লাখ, সবুজ, তোফাজ্জল ও মনিরের কাছ থেকে ৭০ লাখ, হাছেন আলী ও তার দুই বন্ধুর কাছ থেকে ৪৫ লাখ, সুমনের কাছ থেকে ১৪ লাখ, পঞ্চবটি এলাকার রশিদ, মালেক ও হুরুন আলীর কাছ থেকে ৬৫ লাখ টাকা নিয়েছে রাসেল। এদের মধ্যে কেউ ৬ মাস আগে, কেউ ৪ মাস আগে আবার কেউ ৩ মাস আগে রাসেলকে টাকা দিয়েছে।

ভুক্তভোগী সুমনের বাবা নরিছলাম বলেন, সুখের স্বপ্ন দেখে ছেলেকে রাসেলের মাধ্যমে ইতালি পাঠাতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার বুকেরধন এখন লিবিয়ার কারাগারে বন্দি।

শফিকুলের বাবা এবাদুল্লাহ বলেন, ছেলেকে লিবিয়ায় অপহরণকারীরা আটকে রেখেছে। এখন ১০ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছে। এত টাকা কোথা থেকে দিব। হাছেন আলীর বাবা রইছ উদ্দিন বলেন, তিন মাস ধরে ছেলের কোনো খোঁজ নেই। ৪০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম দালালকে। এদিকে গত ৪ জুলাই অভিযোগের ভিত্তিতে লিবিয়া ফেরত দালাল রাসেলকে গ্রেফতারের পর কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এখন তাকে কারাগারে পাঠিয়ে আরও বিপদ হয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি। তারা বলছে, রাসেল ছাড়া যুবকদেরকে লিবিয়া থেকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়।

ভৈরব থানার ওসি সফিকুল ইসলাম জানান, রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে ২৪ জনের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা নিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। রাসেল বলছে, টাকাগুলো লিবিয়ার দালালকে পাঠিয়েছে। সাগর পথে ঝামেলার কারণে যুবকদেরকে ইতালিতে পাঠাতে বিলম্ব হচ্ছে। অপহরণকারীদের হাতে তারা কয়েকজন বন্দি এসব কথা অস্বীকার করেছে রাসেল। সব ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওসি।