ঢাকা ১২:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাউফলে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের ২ কোটি ৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাসের বিরুদ্ধে। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে এ টাকা আত্মসাত করেন তিনি।

বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বশির গাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাসের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে গত ২০ জুন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) অভিযোগের বিষয়টি জানান ইউএনও বশির গাজী।

বাউফলের ইউএনও তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে অনাবাদী পতিত জমি ও বসত বাড়ির আঙিনায় সবজি ও পুষ্টি বাগান স্থাপণ প্রকল্প থেকে ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৫০ টাকা, কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ২৬ লাখ ৬১ হাজার ১১২ টাকা, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোড়দারকরণ প্রকল্প থেকে ১০ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাত করেন অনিরুদ্ধ দাস। এ ছাড়া বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠী, বরগুনা, মাদারীপুর ও শরিয়তপুর কৃষক উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ৪০ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টাকা, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নতমানের ধান, গম ও পাটবীজ উৎপাদন সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প থেকে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ১০০ টাকা, তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প থেকে ৯ লাখ ৩০ হাজার ৮০০ টাকা, রাজস্ব প্রকল্প থেকে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬০০ টাকা, সমন্বিত ব্যবস্থাপণার মাধ্যমে খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা, প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারগ্রেনরশীপ অ্যান্ড রেডিয়েশন ইন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দকৃত ২৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩১৮ টাকা, স্টেকহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কমপিটিটিভনেশন প্রকল্প (এসএসিপি) থেকে ২৯ লাখ ১০ হাজার ৪০০ টাকা এবং বাংলাদেশের চর এলাকায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮০০ টাকার কাজ না করে ভূয়া বিল ভাউচার তৈরি করে মোট ২ কোটি ৪ লখ ১৫ হাজার ২৯০ টাকা আত্মসাত করেন কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাস। প্রকল্প সম্পর্কে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ও সংশ্লিষ্ট সদস্যগণ কিছুই জানেন না।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, উল্লেখিত প্রকল্পের কোনো দৃশ্যমাণ কাজ বাউফল উপজেলায় হয়নি। কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাস বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাত করায় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প ম্লান হয়ে যাচ্ছে। কৃষক সঠিকভাবে সেবা পাচ্ছে না। কৃষি উপকরণ, প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাসের কারণে কৃষি সেক্টর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের উন্নয়ন আলোর মুখ দেখছে না।

জানা যায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উর্ধতন কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজসে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত করেন অনিরুদ্ধ দাস।

অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাস বলেন, প্রকল্পের কাজগুলো যথা নিয়মেই হয়েছে।

ইউএনও মো. বশির গাজী বলেন, উল্লেখিত প্রকল্পের কোনো কাজই হয়নি। অনিরুদ্ধ দাসের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অবহিত করে এবং তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসকের বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাউফলে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

আপডেট সময় ০৩:০১:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের ২ কোটি ৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাসের বিরুদ্ধে। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে এ টাকা আত্মসাত করেন তিনি।

বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বশির গাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাসের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে গত ২০ জুন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) অভিযোগের বিষয়টি জানান ইউএনও বশির গাজী।

বাউফলের ইউএনও তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে অনাবাদী পতিত জমি ও বসত বাড়ির আঙিনায় সবজি ও পুষ্টি বাগান স্থাপণ প্রকল্প থেকে ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৫০ টাকা, কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ২৬ লাখ ৬১ হাজার ১১২ টাকা, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোড়দারকরণ প্রকল্প থেকে ১০ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাত করেন অনিরুদ্ধ দাস। এ ছাড়া বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠী, বরগুনা, মাদারীপুর ও শরিয়তপুর কৃষক উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ৪০ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টাকা, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নতমানের ধান, গম ও পাটবীজ উৎপাদন সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প থেকে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ১০০ টাকা, তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প থেকে ৯ লাখ ৩০ হাজার ৮০০ টাকা, রাজস্ব প্রকল্প থেকে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬০০ টাকা, সমন্বিত ব্যবস্থাপণার মাধ্যমে খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা, প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারগ্রেনরশীপ অ্যান্ড রেডিয়েশন ইন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দকৃত ২৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩১৮ টাকা, স্টেকহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কমপিটিটিভনেশন প্রকল্প (এসএসিপি) থেকে ২৯ লাখ ১০ হাজার ৪০০ টাকা এবং বাংলাদেশের চর এলাকায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮০০ টাকার কাজ না করে ভূয়া বিল ভাউচার তৈরি করে মোট ২ কোটি ৪ লখ ১৫ হাজার ২৯০ টাকা আত্মসাত করেন কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাস। প্রকল্প সম্পর্কে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ও সংশ্লিষ্ট সদস্যগণ কিছুই জানেন না।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, উল্লেখিত প্রকল্পের কোনো দৃশ্যমাণ কাজ বাউফল উপজেলায় হয়নি। কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাস বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাত করায় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প ম্লান হয়ে যাচ্ছে। কৃষক সঠিকভাবে সেবা পাচ্ছে না। কৃষি উপকরণ, প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাসের কারণে কৃষি সেক্টর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের উন্নয়ন আলোর মুখ দেখছে না।

জানা যায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উর্ধতন কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজসে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত করেন অনিরুদ্ধ দাস।

অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাস বলেন, প্রকল্পের কাজগুলো যথা নিয়মেই হয়েছে।

ইউএনও মো. বশির গাজী বলেন, উল্লেখিত প্রকল্পের কোনো কাজই হয়নি। অনিরুদ্ধ দাসের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অবহিত করে এবং তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসকের বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।