ঢাকা ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ঘুষ না দিলে আটকে রাখেন বিল গণপূর্তের হিসাবরক্ষক

নেত্রকোনায় চাহিদা মতো ঘুষ না দেওয়ায় বিভাগীয় হিসাবরক্ষক গণপূর্ত বিভাগের তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকজন ঠিকাদারের বিল আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সম্প্রতি ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা নেত্রকোনা গণপূর্ত কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। এ সময় ওই হিসাব রক্ষকের একটি এলিয়ন ব্যান্ডের সাদা রঙের ব্যক্তিগত গাড়ি আটক করে বিক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা। পরে আবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুপারিশে হিসাব রক্ষক নাছিমা আক্তার রেখার চালকের কাছে গাড়ীর কাগজপত্রসহ গাড়ী ফেরত দেন ঠিকাদাররা। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত নেত্রকোনা গণপূর্ত অফিসের সামনে ঠিকাদাররা গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এই হিসাব রক্ষককে প্রত্যাহারের দাবি জানান ।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, যোগদানের পর থেকেই নাছিমা আক্তার রেখা টাকা ছাড়া কোনো বিল-নথিতে হাত দেন না। যারা তাকে টাকা দেন তিনি তাদের বিল ছেড়ে দেন। এ ছাড়া তার চাহিদা মতো টাকা আগে না দিলে তিনি বিভিন্ন অজুহাতে বিল আটকে রাখেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাদিরা কনস্টাকশনের স্বত্ত্বাধিকারী জিল্লুর রহমান বলেন, ‘গত দুই বছর আগে আমি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ২ লাখ ৬১ হাজার টাকার সংস্কার কাজ করি। যথাসময়ে কাজ শেষ করে বিল জমা দেই। নিয়ম মাফিক অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী বিলে স্বাক্ষর করলেও হিসাবরক্ষক নাছিমা আক্তার রেখা বিলটি টাকার জন্য আটকে রাখেন। গত জুন মাসে আমার কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ চাইলে ওই সময় নগদ ৮ হাজার টাকা দেই। কিন্তু তার চাহিদা পূরণ না হওয়ায় তিনি বিভিন্ন অজুহাতে আমার বিলটি আটকে রাখেন।’

চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সুজন ভূঁইয়া বলেন, ‘নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে সংস্কার কাজ শেষে ২০২২ সালের জুলাইয়ে ১৫ লাখ টাকার বিল জমা দেই। কিন্তু হিসাব রক্ষক ওই কার্যালয়ে যোগদান করেই আমার কাছে ৭৫ হাজার ঘুষ চান। টাকা না দেওয়ায় তিনি আমার বিলের পুরো ফাইলটি গায়েব করে দিয়ে এখন বলছেন আমি নাকি কোনো বিল জমা দেইনি। পরে আমি ফটোকপি দেখালে তিনি বলেন এক লাখ টাকা নিয়ে আসেন। এমনকি ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েও কাজ করছেন না। তিনি দামি গাড়িতে করে অফিস করেন।’

ঠিকাদার এনামুল হক রুমেল বলেন, হিসাব রক্ষককে টাকা না দেওয়ায় তার ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বিল আটকে রেখেছেন দেড় বছর ধরে। আমার মতো এ রকম সূচি কনস্টাকশন, নাহিদ এন্টারপ্রাইজ, সরকার এন্টারপ্রাইজ, সাদ এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ, ইমন এন্টারপ্রাইজ, নাদিরা কনস্ট্রাকশন, সরকার ট্রেডার্স, রহিমা এন্টারপ্রাইজ, জয়শ্রী এন্টারপ্রাইজ, এস. এ এন্টারপ্রাইজ সহ ২০ জন ঠিকাদারের বিল আটকে রেখেছেন।

জানতে চাইলে হিসাব রক্ষক নাছিমা বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কোনো কথা বলবো না। আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেইনি। আর টাকা চাইলেই সহজেই কি কেউ দিয়ে দেয়?’ গাড়িটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদাররা এভাবে আমার গাড়ির আটকে রেখে কাগজপত্র নিতে পারে না। তবে গাড়িটি আমার না। এটা আমার বোন জমাইয়ের।’ নেত্রকোনা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসিনুর রহমান বলেন, ‘হিসাব রক্ষকের বিষয়ে অভিযোগ শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিব।’

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সুদখোর চেয়ারম্যান সাইফুলের ঘরে আলাদিনের চেরাগ!

ঘুষ না দিলে আটকে রাখেন বিল গণপূর্তের হিসাবরক্ষক

আপডেট সময় ১০:০৯:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪

নেত্রকোনায় চাহিদা মতো ঘুষ না দেওয়ায় বিভাগীয় হিসাবরক্ষক গণপূর্ত বিভাগের তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকজন ঠিকাদারের বিল আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সম্প্রতি ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা নেত্রকোনা গণপূর্ত কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। এ সময় ওই হিসাব রক্ষকের একটি এলিয়ন ব্যান্ডের সাদা রঙের ব্যক্তিগত গাড়ি আটক করে বিক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা। পরে আবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুপারিশে হিসাব রক্ষক নাছিমা আক্তার রেখার চালকের কাছে গাড়ীর কাগজপত্রসহ গাড়ী ফেরত দেন ঠিকাদাররা। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত নেত্রকোনা গণপূর্ত অফিসের সামনে ঠিকাদাররা গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এই হিসাব রক্ষককে প্রত্যাহারের দাবি জানান ।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, যোগদানের পর থেকেই নাছিমা আক্তার রেখা টাকা ছাড়া কোনো বিল-নথিতে হাত দেন না। যারা তাকে টাকা দেন তিনি তাদের বিল ছেড়ে দেন। এ ছাড়া তার চাহিদা মতো টাকা আগে না দিলে তিনি বিভিন্ন অজুহাতে বিল আটকে রাখেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাদিরা কনস্টাকশনের স্বত্ত্বাধিকারী জিল্লুর রহমান বলেন, ‘গত দুই বছর আগে আমি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ২ লাখ ৬১ হাজার টাকার সংস্কার কাজ করি। যথাসময়ে কাজ শেষ করে বিল জমা দেই। নিয়ম মাফিক অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী বিলে স্বাক্ষর করলেও হিসাবরক্ষক নাছিমা আক্তার রেখা বিলটি টাকার জন্য আটকে রাখেন। গত জুন মাসে আমার কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ চাইলে ওই সময় নগদ ৮ হাজার টাকা দেই। কিন্তু তার চাহিদা পূরণ না হওয়ায় তিনি বিভিন্ন অজুহাতে আমার বিলটি আটকে রাখেন।’

চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সুজন ভূঁইয়া বলেন, ‘নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে সংস্কার কাজ শেষে ২০২২ সালের জুলাইয়ে ১৫ লাখ টাকার বিল জমা দেই। কিন্তু হিসাব রক্ষক ওই কার্যালয়ে যোগদান করেই আমার কাছে ৭৫ হাজার ঘুষ চান। টাকা না দেওয়ায় তিনি আমার বিলের পুরো ফাইলটি গায়েব করে দিয়ে এখন বলছেন আমি নাকি কোনো বিল জমা দেইনি। পরে আমি ফটোকপি দেখালে তিনি বলেন এক লাখ টাকা নিয়ে আসেন। এমনকি ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েও কাজ করছেন না। তিনি দামি গাড়িতে করে অফিস করেন।’

ঠিকাদার এনামুল হক রুমেল বলেন, হিসাব রক্ষককে টাকা না দেওয়ায় তার ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বিল আটকে রেখেছেন দেড় বছর ধরে। আমার মতো এ রকম সূচি কনস্টাকশন, নাহিদ এন্টারপ্রাইজ, সরকার এন্টারপ্রাইজ, সাদ এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ, ইমন এন্টারপ্রাইজ, নাদিরা কনস্ট্রাকশন, সরকার ট্রেডার্স, রহিমা এন্টারপ্রাইজ, জয়শ্রী এন্টারপ্রাইজ, এস. এ এন্টারপ্রাইজ সহ ২০ জন ঠিকাদারের বিল আটকে রেখেছেন।

জানতে চাইলে হিসাব রক্ষক নাছিমা বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কোনো কথা বলবো না। আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেইনি। আর টাকা চাইলেই সহজেই কি কেউ দিয়ে দেয়?’ গাড়িটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদাররা এভাবে আমার গাড়ির আটকে রেখে কাগজপত্র নিতে পারে না। তবে গাড়িটি আমার না। এটা আমার বোন জমাইয়ের।’ নেত্রকোনা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসিনুর রহমান বলেন, ‘হিসাব রক্ষকের বিষয়ে অভিযোগ শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিব।’