ঢাকা ০১:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতের আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ মিলবে ডিসেম্বরে

চলতি বছরের ডিসেম্বরে দেশে আসবে ভারতের শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ। প্রতিষ্ঠানটি ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা এলাকায় একটি থার্মাল পাওয়ার সেন্টার তৈরি করেছে। ওই সেন্টার থেকে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডকে (পিডিবি) বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে এ বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোপুরি উৎপাদন শুরু করলে জাতীয় গ্রিডে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করবে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সঞ্চালন লাইনের কাজও প্রায় শেষের দিকে।

চুক্তি অনুসারে আগামী ২৫ বছর এ কেন্দ্র থেকে এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৮৯ পয়সা দরে আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ কিনতে সম্ভাব্য ব্যয় হবে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা

দেশের বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার লক্ষ্যে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট সই হয় ২০১১ সালে। ওই চুক্তির আওতায় ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট ভারতের আদানি পাওয়ারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর আদানির সঙ্গে ক্রয়চুক্তি সই হয়।

কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোপুরি উৎপাদন শুরু করলে জাতীয় গ্রিডে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করবে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সঞ্চালন লাইনের কাজও প্রায় শেষের দিকে

পিজিসিবির তথ্য অনুযায়ী, সীমান্ত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪০০ কিলোভোল্টের (কেভি) একটি সঞ্চালন লাইন বসানো হয়েছে। ব্যয় হয়েছে ২২৬ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এ লাইনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে নিতে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ এখনও চলমান। বড়পুকুরিয়া থেকে বগুড়া হয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর পর্যন্ত ২৬০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে তিন হাজার ৩২২ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আদানি পাওয়ারের মালিকানাধীন অস্ট্রেলিয়ার কারমিখায়েল খনি থেকে কয়লা আনা হবে। যা উড়িষ্যার ধামরা বন্দরে খালাস হবে। সেখান থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা নেওয়া হবে তাদের নির্মিত ৭০০ কিলোমিটার রেল লাইনের মাধ্যমে। চুক্তি অনুসারে আগামী ২৫ বছর এ কেন্দ্র থেকে এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৮৯ পয়সা দরে আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ কিনতে সম্ভাব্য ব্যয় হবে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।

দেশে চলমান বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে আদানির বিদ্যুৎ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম বলেন, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র মূলত কয়লাভিত্তিক। আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য কিছুটা বেশি পড়লেও আদানির বিদ্যুৎ আসা শুরু করলে তেলভিত্তিক ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া যাবে। ফলে একদিকে অর্থনৈতিকভাবে চাপ কমে যাবে, অপরদিকে বিদ্যুতের যে ঘাটতি চলছে সেটাও কমে আসবে।

অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, চলমান সংকট কমিয়ে আনতে আদানির বিদ্যুৎ ভূমিকা রাখবে। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাইতে আদানির বিদ্যুতের মূল্য কম। আমদানি করা এ বিদ্যুৎ দেশের উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ ঘাটতির পরিমাণ কমিয়ে আনবে।

২০১৩ সালে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে সরকার। বর্তমানে দেশটি থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। আদানির প্রথম ইউনিটের ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত করা গেলে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ দাঁড়াবে এক হাজার ৯৬০ মেগাওয়াটে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পুরো সক্ষমতা (১৪৯৫ মেগাওয়াট) অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ হলে আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে দুই হাজার ৬৫৫ মেগাওয়াটে। যা দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ১০ শতাংশ।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৫ হাজার ৭৩০ মেগাওয়াট। যদিও সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ সেপ্টেম্বর দিল্লি সফর করেন। ওই সময় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। এরপর এক টুইট বার্তায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে তিনি লেখেন, চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট গোড্ডা বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন চালুর বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চুক্তি অনুসারে আগামী ২৫ বছর এ কেন্দ্র থেকে এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারতের আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ মিলবে ডিসেম্বরে

আপডেট সময় ১০:০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ নভেম্বর ২০২২

চলতি বছরের ডিসেম্বরে দেশে আসবে ভারতের শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ। প্রতিষ্ঠানটি ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা এলাকায় একটি থার্মাল পাওয়ার সেন্টার তৈরি করেছে। ওই সেন্টার থেকে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডকে (পিডিবি) বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে এ বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোপুরি উৎপাদন শুরু করলে জাতীয় গ্রিডে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করবে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সঞ্চালন লাইনের কাজও প্রায় শেষের দিকে।

চুক্তি অনুসারে আগামী ২৫ বছর এ কেন্দ্র থেকে এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৮৯ পয়সা দরে আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ কিনতে সম্ভাব্য ব্যয় হবে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা

দেশের বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার লক্ষ্যে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট সই হয় ২০১১ সালে। ওই চুক্তির আওতায় ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট ভারতের আদানি পাওয়ারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর আদানির সঙ্গে ক্রয়চুক্তি সই হয়।

কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোপুরি উৎপাদন শুরু করলে জাতীয় গ্রিডে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করবে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সঞ্চালন লাইনের কাজও প্রায় শেষের দিকে

পিজিসিবির তথ্য অনুযায়ী, সীমান্ত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪০০ কিলোভোল্টের (কেভি) একটি সঞ্চালন লাইন বসানো হয়েছে। ব্যয় হয়েছে ২২৬ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এ লাইনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে নিতে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ এখনও চলমান। বড়পুকুরিয়া থেকে বগুড়া হয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর পর্যন্ত ২৬০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে তিন হাজার ৩২২ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আদানি পাওয়ারের মালিকানাধীন অস্ট্রেলিয়ার কারমিখায়েল খনি থেকে কয়লা আনা হবে। যা উড়িষ্যার ধামরা বন্দরে খালাস হবে। সেখান থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা নেওয়া হবে তাদের নির্মিত ৭০০ কিলোমিটার রেল লাইনের মাধ্যমে। চুক্তি অনুসারে আগামী ২৫ বছর এ কেন্দ্র থেকে এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৮৯ পয়সা দরে আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ কিনতে সম্ভাব্য ব্যয় হবে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।

দেশে চলমান বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে আদানির বিদ্যুৎ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম বলেন, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র মূলত কয়লাভিত্তিক। আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য কিছুটা বেশি পড়লেও আদানির বিদ্যুৎ আসা শুরু করলে তেলভিত্তিক ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া যাবে। ফলে একদিকে অর্থনৈতিকভাবে চাপ কমে যাবে, অপরদিকে বিদ্যুতের যে ঘাটতি চলছে সেটাও কমে আসবে।

অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, চলমান সংকট কমিয়ে আনতে আদানির বিদ্যুৎ ভূমিকা রাখবে। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাইতে আদানির বিদ্যুতের মূল্য কম। আমদানি করা এ বিদ্যুৎ দেশের উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ ঘাটতির পরিমাণ কমিয়ে আনবে।

২০১৩ সালে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে সরকার। বর্তমানে দেশটি থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। আদানির প্রথম ইউনিটের ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত করা গেলে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ দাঁড়াবে এক হাজার ৯৬০ মেগাওয়াটে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পুরো সক্ষমতা (১৪৯৫ মেগাওয়াট) অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ হলে আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে দুই হাজার ৬৫৫ মেগাওয়াটে। যা দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ১০ শতাংশ।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৫ হাজার ৭৩০ মেগাওয়াট। যদিও সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ সেপ্টেম্বর দিল্লি সফর করেন। ওই সময় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। এরপর এক টুইট বার্তায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে তিনি লেখেন, চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট গোড্ডা বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন চালুর বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চুক্তি অনুসারে আগামী ২৫ বছর এ কেন্দ্র থেকে এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।