ঢাকা ১১:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইরাক-সিরিয়ায় মার্কিন হামলা নিয়ে সর্বশেষ যা জানা গেল

গত মাসে জর্ডানের একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের তিন সেনা নিহত হয়েছেন। এই হামলার জবাবে ইরাক ও সিরিয়ায় ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, সমন্বিত এসব হামলা ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডসের (আইআরজিসি) কুদস ফোর্স ও সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চালানো হয়েছে। এ ছাড়া হামলা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় মধ্যরাতে এসব হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সাতটি এলাকার মোট ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা হয়েছে। হামলায় বেশ কয়েকটি বোমারু বিমান অংশগ্রহণ করেছে। এমনকি এই হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে বি-১ নামে দূরপাল্লার বোমারু বিমান উড়িয়ে আনা হয়েছে। ১২৫টির বেশি নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।মার্কিন জেনারেল ডগলাস সিমস বলেন, হামলার শিকার স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেই বিশ্বাস করে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে মূল্যায়ন শেষে আগামীকাল আমরা আরও বিশদ জানতে পারব।

জর্ডানের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলার জন্য ইরানপন্থি মিলিশিয়া গোষ্ঠীদের জোট ইসলামিক রেজিস্ট্যান্সকে দায়ী করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। জোটটি এই হামলার দায় স্বীকারও করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স জোটের যোদ্ধাদের অর্থ, অস্ত্র ‍ও প্রশিক্ষণ দেয় আইআরজিসি। এমনকি জর্ডানের মার্কিন ঘাঁটিতে যে একমুখী ড্রোনটি ব্যবহৃত হয়েছে সেটি ইরানের দেওয়া। এই একই ধরনের ড্রোন রাশিয়াকেও দিয়েছে ইরান।

যুক্তরাষ্ট্রের হামলা স্থায়ী হয়েছে মাত্র ৩০ মিনিট। এরই মধ্যে সিরিয়ায় চারটি ও ইরাকে তিনটি এলাকার ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে মার্কিন বাহিনী। আইআরজিসির কুদস ফোর্স ও সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীর স্থাপনায় এসব হামলা হয়েছে। তবে ইরানের ভূখণ্ড বা লোহিত সাগরে ইরানি যুদ্ধজাহাজে সরাসরি হামলা চালায়নি মার্কিন বাহিনী।

মার্কিন সেনা সদর দপ্তর পেন্টাগন বলছে, লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে ছিল সশস্ত্র গোষ্ঠী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক আইআরজিসির কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র, সামরিক রসদভান্ডার ও ড্রোন স্টোরেজ ইউনিট।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস ওয়ার মনিটর জানিয়েছে, মার্কিন হামলায় পূর্ব সিরিয়ায় অন্তত ১৩ জন ইরানপন্থি যোদ্ধা নিহত হয়েছে।

হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জো বাইডেন বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য বা বিশ্বের অন্য কোথাও কোনো সংঘাত চায় না যুক্তরাষ্ট্র। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায় তাদের সবাইকে এটা জানিয়ে দিন যে কোনো আমেরিকানের ক্ষতি হলে আমরা তার জবাব দেব।

গত রোববার (২৮ জানুয়ারি) সিরিয়ার সীমান্তবর্তী জর্ডানে একটি মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত ও ৪১ জন সেনা আহত হয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু হলে এই প্রথম এ অঞ্চলে কোনো মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। এ হামলার পর পাল্টা জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন। এরপর বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সিরিয়া ও ইরাকে ইরানি স্থাপনায় হামলা চালানোর পরিকল্পনার অনুমোদন দেয় বাইডেন প্রশাসন।

তবে দুই দেশে একযোগে হামলা চালিয়ে বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের সমালোচনা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না বাইডেন। তারা বলছেন, আরও আগেই এই হামলার জবাব দেওয়া উচিত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। তবে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ায় এতদিন হামলা চালানো হয়নি।

হামলার পর পর হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তার মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, গত ২৮ জানুয়ারি ড্রোন হামলার দিন থেকে ইরানের সঙ্গে আমেরিকার কোনো যোগাযোগ নেই।

জর্ডানে মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে ইরান। তবে মার্কিন হামলার আগে বুধবার রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি বলেন, কোনো ধরনের হুমকির জবাব না দিয়ে ছাড়া হবে না। হোসেইন সালামি ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

এর আগের দিন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাভানি নিউইয়র্কে ইরানি সাংবাদিকদের বলেন, ইরানের ওপর কোনো হামলা হলে চূড়ান্ত জবাব দেওয়া হবে।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরাক ও সিরিয়া থেকে ইরানি সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার সময় দিতে এক সপ্তাহ দেরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাত এড়াতেই এই পথ বেছে নিয়েছে ওয়াশিংটন।

২০২০ সালে মার্কিন বিমান হামলায় আইআরজিসির জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহত হওয়ার পর যে ধরনের জবাব ইরান দিয়েছিল, এবারও একই ধরনের জবাব দিতে পারে দেশটি। কাসেম সোলেইমানি নিহত হওয়ার পাঁচ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রকে কয়েক ঘণ্টার নোটিশ দিয়ে সিরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটিতে ভয়াবহ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইরান।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইরাক-সিরিয়ায় মার্কিন হামলা নিয়ে সর্বশেষ যা জানা গেল

আপডেট সময় ০৪:২৯:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

গত মাসে জর্ডানের একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের তিন সেনা নিহত হয়েছেন। এই হামলার জবাবে ইরাক ও সিরিয়ায় ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, সমন্বিত এসব হামলা ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডসের (আইআরজিসি) কুদস ফোর্স ও সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চালানো হয়েছে। এ ছাড়া হামলা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় মধ্যরাতে এসব হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সাতটি এলাকার মোট ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা হয়েছে। হামলায় বেশ কয়েকটি বোমারু বিমান অংশগ্রহণ করেছে। এমনকি এই হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে বি-১ নামে দূরপাল্লার বোমারু বিমান উড়িয়ে আনা হয়েছে। ১২৫টির বেশি নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।মার্কিন জেনারেল ডগলাস সিমস বলেন, হামলার শিকার স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেই বিশ্বাস করে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে মূল্যায়ন শেষে আগামীকাল আমরা আরও বিশদ জানতে পারব।

জর্ডানের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলার জন্য ইরানপন্থি মিলিশিয়া গোষ্ঠীদের জোট ইসলামিক রেজিস্ট্যান্সকে দায়ী করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। জোটটি এই হামলার দায় স্বীকারও করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স জোটের যোদ্ধাদের অর্থ, অস্ত্র ‍ও প্রশিক্ষণ দেয় আইআরজিসি। এমনকি জর্ডানের মার্কিন ঘাঁটিতে যে একমুখী ড্রোনটি ব্যবহৃত হয়েছে সেটি ইরানের দেওয়া। এই একই ধরনের ড্রোন রাশিয়াকেও দিয়েছে ইরান।

যুক্তরাষ্ট্রের হামলা স্থায়ী হয়েছে মাত্র ৩০ মিনিট। এরই মধ্যে সিরিয়ায় চারটি ও ইরাকে তিনটি এলাকার ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে মার্কিন বাহিনী। আইআরজিসির কুদস ফোর্স ও সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীর স্থাপনায় এসব হামলা হয়েছে। তবে ইরানের ভূখণ্ড বা লোহিত সাগরে ইরানি যুদ্ধজাহাজে সরাসরি হামলা চালায়নি মার্কিন বাহিনী।

মার্কিন সেনা সদর দপ্তর পেন্টাগন বলছে, লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে ছিল সশস্ত্র গোষ্ঠী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক আইআরজিসির কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র, সামরিক রসদভান্ডার ও ড্রোন স্টোরেজ ইউনিট।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস ওয়ার মনিটর জানিয়েছে, মার্কিন হামলায় পূর্ব সিরিয়ায় অন্তত ১৩ জন ইরানপন্থি যোদ্ধা নিহত হয়েছে।

হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জো বাইডেন বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য বা বিশ্বের অন্য কোথাও কোনো সংঘাত চায় না যুক্তরাষ্ট্র। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায় তাদের সবাইকে এটা জানিয়ে দিন যে কোনো আমেরিকানের ক্ষতি হলে আমরা তার জবাব দেব।

গত রোববার (২৮ জানুয়ারি) সিরিয়ার সীমান্তবর্তী জর্ডানে একটি মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত ও ৪১ জন সেনা আহত হয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু হলে এই প্রথম এ অঞ্চলে কোনো মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। এ হামলার পর পাল্টা জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন। এরপর বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সিরিয়া ও ইরাকে ইরানি স্থাপনায় হামলা চালানোর পরিকল্পনার অনুমোদন দেয় বাইডেন প্রশাসন।

তবে দুই দেশে একযোগে হামলা চালিয়ে বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের সমালোচনা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না বাইডেন। তারা বলছেন, আরও আগেই এই হামলার জবাব দেওয়া উচিত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। তবে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ায় এতদিন হামলা চালানো হয়নি।

হামলার পর পর হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তার মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, গত ২৮ জানুয়ারি ড্রোন হামলার দিন থেকে ইরানের সঙ্গে আমেরিকার কোনো যোগাযোগ নেই।

জর্ডানে মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে ইরান। তবে মার্কিন হামলার আগে বুধবার রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি বলেন, কোনো ধরনের হুমকির জবাব না দিয়ে ছাড়া হবে না। হোসেইন সালামি ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

এর আগের দিন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাভানি নিউইয়র্কে ইরানি সাংবাদিকদের বলেন, ইরানের ওপর কোনো হামলা হলে চূড়ান্ত জবাব দেওয়া হবে।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরাক ও সিরিয়া থেকে ইরানি সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার সময় দিতে এক সপ্তাহ দেরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাত এড়াতেই এই পথ বেছে নিয়েছে ওয়াশিংটন।

২০২০ সালে মার্কিন বিমান হামলায় আইআরজিসির জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহত হওয়ার পর যে ধরনের জবাব ইরান দিয়েছিল, এবারও একই ধরনের জবাব দিতে পারে দেশটি। কাসেম সোলেইমানি নিহত হওয়ার পাঁচ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রকে কয়েক ঘণ্টার নোটিশ দিয়ে সিরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটিতে ভয়াবহ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইরান।