দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে যৌথ সামরিক মহড়া বন্ধ না করলে শক্তিশালী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। সোমবার ওয়াশিংটন এবং সিউল তাদের এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে; যা শেষ হবে আগামী শুক্রবার। এই মহড়া শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পিয়ংইয়ং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন ধরনের সামরিক মহড়ার জবাবে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। ২০১৭ সালের পর পিয়ংইয়ং প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দক্ষিণ কোরিয়ার একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ক্রমাগত গুরুতর সামরিক উসকানি অব্যাহত রাখে তাহলে উত্তর কোরিয়া আরও শক্তিশালী ফলো-আপ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
‘নিজেদের নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য যথাযথ নয়, এমন কোনও গুরুতর পরিস্থিতি যদি ওয়াশিংটন না চায়, তাহলে তাদের অনর্থক এবং অকার্যকর যুদ্ধের মহড়া অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। যদি এই মহড়া বন্ধ না করা হয়, তাহলে পরবর্তী সব পরিণতির দায় ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে।’
‘ভিজিল্যান্ট স্টর্ম’ নামে সোমবার ওয়াশিংটন এবং সিউল সামরিক মহড়া শুরু করেছে। এতে দুই দেশের শত শত যুদ্ধবিমান টানা ২৪ ঘণ্টা আক্রমণ চালানোর মহড়া চালাচ্ছে।
অক্টোবরের শুরুর দিকে কোরীয় উপদ্বীপের কাছে পারমাণবিক-শক্তি চালিত যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী ইউএসএস রোনাল্ড রিগান মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সময় ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে উত্তর কোরিয়ার জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হয়। পরে কোরীয় উপদ্বীপে দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনীর এক সামরিক মহড়ায় অংশ নেয় মার্কিন এই রণতরী।
সিউল বলেছে, রণতরীর ‘বিরল’ এই মোতায়েন উত্তর কোরিয়ার যেকোনও ধরনের উসকানির কঠোর জবাব দেওয়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া-মার্কিন জোটের দৃঢ় সংকল্প প্রদর্শন করেছে। বর্তমানে মার্কিন এই রণতরী ফিলিপাইন সাগরে ফ্লাইট অপারেশন পরিচালনা করছে।
গত অক্টোবরে চিরবৈরী প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ায় পারমাণবিক হামলার আদলে ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া চালানোর দাবি জানায় পিয়ংইয়ং। সেই সময় উত্তর কোরিয়া জানায়, মহড়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক স্থাপনা, বিভিন্ন বন্দর এবং বিমানবন্দরকে ‘প্রতীকী’ নিশানা বানিয়ে সফল সামরিক মহড়া চালানো হয়েছে। এই মহড়ায় ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতীকী নিশানায় যথাযথভাবে আঘাত করেছে। আর মহড়ায় যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম।
গত বছর উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন আগামী পাঁচ বছরের একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। এর মধ্যে তিনি যেসব নতুন অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করছেন তার বিশদ বিবরণ ছিল। এই পরিকল্পনায় তুলনামূলক ছোট যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য পারমাণবিক বোমা এবং সেগুলো বহন করার জন্য স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক অস্ত্রের পরীক্ষায় কিম যে শুধুমাত্র অস্ত্র তৈরির ইচ্ছার তালিকা বাস্তবায়নে কাজ করছেন না, বরং সৈন্যদের সেসব অস্ত্র ব্যবহারেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, তা প্রমাণ করে। দক্ষিণ কোরিয়ায় পারমাণবিক হামলার আদলে সম্প্রতি কয়েকটি মহড়াও করেছে উত্তর কোরিয়া।
গত সেপ্টেম্বরে উত্তর কোরিয়াকে ‘পারমাণবিক অস্ত্রধারী’ দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন কিম জং উন। আর রাষ্ট্রীয় এই তকমা একেবারে ‘অপরিবর্তনীয়’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। একই সঙ্গে দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আইনেও সংশোধন এনেছেন তিনি। পুরোনো আইনে কেবল আক্রান্ত হলেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি ছিল। কিন্তু সংশোধিত আইনে আত্মরক্ষার জন্যও এই অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের তৎপরতাও বৃদ্ধি করেছে উত্তর কোরিয়া; এখন পর্যন্ত দেশটি অন্তত ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। যা এক বছরের কম সময়ের মধ্যে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত উত্তর কোরিয়া ২০০৬ ও ২০০৭ সালের মাঝে অন্তত ছয়টি পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে।