চীনের ঝেংঝৌ প্রদেশের আইফোন কারখানার কয়েকজন কর্মী করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর কারখানা ও তার চারপাশের বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন জারি করেছে দেশটির সরকার; আর সেই লকডাউন থেকে বাঁচতে কারখানার কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে পালাচ্ছেন শ্রমিকরা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে এ সম্পর্কিত একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন বিবিসির চীন প্রতিনিধি স্টিফেন ম্যাকডোনেল। এশিয়ায় আইফোন প্রস্তুতের জন্য অ্যাপলের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে তাইওয়ানভিত্তিক মোবাইল প্রস্তুতকারী কোম্পানি ফক্সকোনের। ঝেংঝৌয়ে আইফোন প্রস্তুতের যে কারখানাটি রয়েছে, সেটি এশিয়ার বৃহত্তম আইফোন প্রস্তুতকারী কারখানা।
প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক কাজ করেন এই কারখানাটিতে। প্রতি বছর বৈশ্বিক বাজারে যত আইফোনের সরবরাহ আসে, তার অর্ধেকই তৈরি হয় ঝেংঝৌয়ের ফক্সকোন কারখানায়।স্টিফেন ম্যাকডোনেলের ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, ফক্সকোনের সেই কারখানার দেওয়ালের কাঁটাতারের বেড়া টপকে পালাচ্ছেন শ্রমিকরা। প্রথমে যুক্তরাজ্যের কিছু পত্রিকায় এই ভিডিওচিত্র ছাপা হয়েছিল, পরে চীনের সরকারি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমও প্রকাশ করে এ সংক্রান্ত সংবাদটি।
কিন্তু কেন এমন করছেন শ্রমিকরা? চীন প্রশাসনের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে ম্যাকডোনেল জানিয়েছেন, কোভিড সংক্রমণ ঠেকাতে সে দেশের সরকার একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে এবং দেশের সব নাগরিককে অ্যাপটি তাঁদের মোবাইলে রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অ্যাপটির মাধ্যমে এক জন ব্যক্তির গতিবিধি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পৌঁছে যাবে নির্দিষ্ট সরকারি তথ্যভান্ডারে। পালিয়ে যাওয়া শ্রমিকদের একাংশের অভিযোগ, কারখানা চত্বরের বাইরে তাদের চলাচল করাই বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। করোনাবিধি মানতে গিয়ে তারা কার্যত গৃহবন্দি হয়ে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তারা।
অ্যাপল কারখানার শ্রমিকদের অধিকাংশই নিজেদের গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন। চিনের গ্রাম এবং ছোট শহরগুলিতে করোনার প্রভাব কম হওয়ায় কোভিডবিধির কড়াকড়িও কম। তাই সেখানেই ফিরে যাচ্ছেন তারা। অধিকাংশই ৬০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবেন।
তাদের সাহায্য করার জন্য ইতোমধ্যেই বড় এবং ছোট রাস্তাগুলির ধারে পানীয় জল এবং শুকনো খাবার নিয়ে বসে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।প্রসঙ্গত, চিনের কঠোর কোভিড-নীতি নিয়ে আগেও নানা প্রশ্ন উঠেছে। কোভিড-নীতিকে মান্যতা দিতে গিয়ে চিনের বড় শহরগুলিতে খাদ্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশটির অর্থনীতিও।