ঢাকা ০২:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কুমিল্লা সীমান্তে নিহত যুবকের মরদেহ ফেরত দিলো বিএসএফ নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙাতে ভক্তরা দক্ষিণায়নে পটুয়াখালীতে আবারও নার্স ও মিডওয়াইফদের কর্মবিরতি; ভােগান্তিতে রোগীরা পটুয়াখালীতে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা , হুমকির মুখে পরিবার পটুয়াখালীতে কৃষি উন্নয়ন কর্মকর্তা লেবার ফান্ডের কোটি টাকা আত্মসাৎ। অসীম সাহসিকতা ও ধৈর্যের মাধ্যমে সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হবে : জামায়াতের নায়েবে আমির ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮১ মন্ত্রিপরিষদ সচিব হলেন ড. শেখ আব্দুর রশীদ সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা হলেন কাউন্সিলর রংপুর সিটি কর্পোরেশন এর ৩৩ টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করবেন যে সকল সরকারি কর্মকর্তাগন মুরাদনগরে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান: ৭ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের ১৫০ বছর পূর্তি বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত

কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহি নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫০ বছর পূর্তি বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে।

দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনে সার্ধশত বার্ষিকী উৎসব পালিত হয়। এতে বিদ্যালয়ের প্রায় আড়াই হাজার প্রাক্তন বর্তমান শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা ঘটে।

শুক্রবার সকালে নগরের টাউনহল মাঠে রঙ্গিন বেলুল উড়িয়ে গৌরবের ১৫০বছর আনন্দ র‌্যালি উদ্বোধন করেন সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আ.ক.ম বাহা উদ্দিন বাহার।এসময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য আরমা দত্ত ।

নবাব ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আনন্দ র‌্যালিটি কুমিল্লা টাউন হল থেকে বের হয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত চলবে আড্ডা, খাওয়া ও স্মৃতিচারণ,আলোচনা সভা।

নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার বলেন, ১৫০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টিতে ফেলে আশা দিনগুলো স্মরণ করে শিক্ষার্থীদের মিলন মেলায় আজ উৎসবে অনেক পূর্ণতা পেয়েছে।

বিকেলে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি – কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।

বিশেষ অতিথি কুমিল্লা সিটি মেয়র আরফানুল হক রিফাত, কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান বাবলু, জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান।

নবাব ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫০ বছর পূর্তি সার্ধশত বার্ষিকী উৎসবের আয়োজক পর্ষদের যুগ্ম আহবায়ক দিলনাশিন মহসিন ও আয়োজক পর্ষদের সদস সচিব ফাহমিদা জেবিন দীর্ঘ ৩মাস নিরলস প্রচেষ্টার ফসল এ আনন্দঘন অনুষ্ঠান।

১৮৭৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী। তিনি নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এই বালিকা এটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে মেয়েদের জন্য এটি ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৮৮৯ সালে জুনিয়র হাই স্কুল এবং ১৯৩১ সালে উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়।

তৎকালীন ভারত উপমহাদেশের মহিয়সী নারী দেশের গৌরব কুমিল্লার ১৪ পরগনার জমিদার প্রথম নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী। দীর্ঘ ১৮৭ বছর পার হলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এখনো মিলেনি ।শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যেমন মোঘল ঐহিহাসিক যুগের গৌরবের কথা জানান দেয়, তেমনি তৎকালীন ভারত উপমহাদেশের এই মহীয়সী নারী নবাব ফয়জুন্নেছা লাকসামের ঐতিহ্যের নিজস্ব স্বকীয়তায়।.

মহিয়সী নারীর ১৮৩৪ সালে কুমিল্লা জেলার তৎকালীন হোমনাবাদ পরগনা লাকসামের এককালের রাক্ষুসী খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেষে পশ্চিমগাঁও গ্রামে নবাব ফয়জুন্নেছা জন্ম গ্রহণ করেন। আহম্মদ আলী চৌধুরী হলেন নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর পিতা। তার মাতৃকুল নোয়াখালী জেলার প্রাচীন নাম ভুলুয়ার অন্তর্গত ধলীয়া গ্রামে মিনা মাহতাব নামে এক সভ্রান্ত বংশীয় জনদরদি জমিদারের পুত্র ফজিল আহম্মদ চৌধুরীর শেষ বংশধর বেজু মিয়া চৌধুরী। এরই ভগ্নিপতি জমিদার আমজাদ চৌধুরী ওরফে ডেঙ্গুমিয়া চৌধুরীর পুত্র আসাদ চৌধুরীর প্রথমা কন্যা আরফান্নেছা চৌধুরী। তৎকালীন হোমনাবাদের জমিদার আহম্মদ আলী চৌধুরী ও ভুলুয়ার জমিদার আসাদ চৌধুরী কন্যা আরফান্নেছা চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ কন্যা হলেন এ মহিয়সী নারী ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী। নবাব ফয়জুন্নেছার দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে সৈয়দা বদরুন্নেছা চৌধুরানীকে নিজ গ্রাম পশ্চিমগাঁওয়ে এবং অপর মেয়ে সৈয়দা আসাদুন্নেছা চৌরানীকে বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার জমিদার বাড়ীতে বিয়ে দেয়। বাল্য কালে ফয়জুন্নেছার ওস্তাদ তাকে শুধূ আরবী-উর্দু ও ফারসিই পড়াননি একই সাথে বাংলা ও সংস্কৃত চর্চাও শিখিয়েছেন। পরিবার-পরিজন ও এলাকার লোকজন তাঁকে ফয়জুন বেগম বলে ডাকতে।

হাসপাতাল, দিঘী-পুকুর, মসজিদ, মুসাফিরখানা, পুল-ব্রিজ, পত্র-পত্রিকায় পৃষ্ঠপোষকতা, কবি সাহিত্যিকদের সাথে যোগাযোগ, ফয়জুন পাঠাগার, রূপজালাল গ্রন্থ রচনাসহ বিভিন্ন জনহিতকর কাজ করে গেছেন তিনি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কুমিল্লা সীমান্তে নিহত যুবকের মরদেহ ফেরত দিলো বিএসএফ

কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের ১৫০ বছর পূর্তি বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত

আপডেট সময় ০৭:৫৩:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহি নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫০ বছর পূর্তি বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে।

দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনে সার্ধশত বার্ষিকী উৎসব পালিত হয়। এতে বিদ্যালয়ের প্রায় আড়াই হাজার প্রাক্তন বর্তমান শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা ঘটে।

শুক্রবার সকালে নগরের টাউনহল মাঠে রঙ্গিন বেলুল উড়িয়ে গৌরবের ১৫০বছর আনন্দ র‌্যালি উদ্বোধন করেন সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আ.ক.ম বাহা উদ্দিন বাহার।এসময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য আরমা দত্ত ।

নবাব ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আনন্দ র‌্যালিটি কুমিল্লা টাউন হল থেকে বের হয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত চলবে আড্ডা, খাওয়া ও স্মৃতিচারণ,আলোচনা সভা।

নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার বলেন, ১৫০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টিতে ফেলে আশা দিনগুলো স্মরণ করে শিক্ষার্থীদের মিলন মেলায় আজ উৎসবে অনেক পূর্ণতা পেয়েছে।

বিকেলে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি – কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।

বিশেষ অতিথি কুমিল্লা সিটি মেয়র আরফানুল হক রিফাত, কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান বাবলু, জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান।

নবাব ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫০ বছর পূর্তি সার্ধশত বার্ষিকী উৎসবের আয়োজক পর্ষদের যুগ্ম আহবায়ক দিলনাশিন মহসিন ও আয়োজক পর্ষদের সদস সচিব ফাহমিদা জেবিন দীর্ঘ ৩মাস নিরলস প্রচেষ্টার ফসল এ আনন্দঘন অনুষ্ঠান।

১৮৭৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী। তিনি নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এই বালিকা এটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে মেয়েদের জন্য এটি ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৮৮৯ সালে জুনিয়র হাই স্কুল এবং ১৯৩১ সালে উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়।

তৎকালীন ভারত উপমহাদেশের মহিয়সী নারী দেশের গৌরব কুমিল্লার ১৪ পরগনার জমিদার প্রথম নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী। দীর্ঘ ১৮৭ বছর পার হলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এখনো মিলেনি ।শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যেমন মোঘল ঐহিহাসিক যুগের গৌরবের কথা জানান দেয়, তেমনি তৎকালীন ভারত উপমহাদেশের এই মহীয়সী নারী নবাব ফয়জুন্নেছা লাকসামের ঐতিহ্যের নিজস্ব স্বকীয়তায়।.

মহিয়সী নারীর ১৮৩৪ সালে কুমিল্লা জেলার তৎকালীন হোমনাবাদ পরগনা লাকসামের এককালের রাক্ষুসী খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেষে পশ্চিমগাঁও গ্রামে নবাব ফয়জুন্নেছা জন্ম গ্রহণ করেন। আহম্মদ আলী চৌধুরী হলেন নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর পিতা। তার মাতৃকুল নোয়াখালী জেলার প্রাচীন নাম ভুলুয়ার অন্তর্গত ধলীয়া গ্রামে মিনা মাহতাব নামে এক সভ্রান্ত বংশীয় জনদরদি জমিদারের পুত্র ফজিল আহম্মদ চৌধুরীর শেষ বংশধর বেজু মিয়া চৌধুরী। এরই ভগ্নিপতি জমিদার আমজাদ চৌধুরী ওরফে ডেঙ্গুমিয়া চৌধুরীর পুত্র আসাদ চৌধুরীর প্রথমা কন্যা আরফান্নেছা চৌধুরী। তৎকালীন হোমনাবাদের জমিদার আহম্মদ আলী চৌধুরী ও ভুলুয়ার জমিদার আসাদ চৌধুরী কন্যা আরফান্নেছা চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ কন্যা হলেন এ মহিয়সী নারী ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী। নবাব ফয়জুন্নেছার দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে সৈয়দা বদরুন্নেছা চৌধুরানীকে নিজ গ্রাম পশ্চিমগাঁওয়ে এবং অপর মেয়ে সৈয়দা আসাদুন্নেছা চৌরানীকে বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার জমিদার বাড়ীতে বিয়ে দেয়। বাল্য কালে ফয়জুন্নেছার ওস্তাদ তাকে শুধূ আরবী-উর্দু ও ফারসিই পড়াননি একই সাথে বাংলা ও সংস্কৃত চর্চাও শিখিয়েছেন। পরিবার-পরিজন ও এলাকার লোকজন তাঁকে ফয়জুন বেগম বলে ডাকতে।

হাসপাতাল, দিঘী-পুকুর, মসজিদ, মুসাফিরখানা, পুল-ব্রিজ, পত্র-পত্রিকায় পৃষ্ঠপোষকতা, কবি সাহিত্যিকদের সাথে যোগাযোগ, ফয়জুন পাঠাগার, রূপজালাল গ্রন্থ রচনাসহ বিভিন্ন জনহিতকর কাজ করে গেছেন তিনি।