দিনে রাতে যেকোনো সময় বা মুহূর্তে প্রবাসীদের জন্য রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ করে দিয়েছে দেশের অন্যতম মোবাইল ফোনভিত্তিক অর্থ স্থানান্তর (এমএফএস) সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’। এখন বিশ্বের ৭০টির বেশি দেশ থেকে ৭৫টি আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে আসছে রেমিট্যান্স।
ব্যাংকের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ পৌঁছে যাচ্ছে তার প্রিয়জনের বিকাশ অ্যাকাউন্টে। ফলে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ বৈধ পথে সহজেই আসছে দেশে। চাঙ্গা হচ্ছে দেশে অর্থনীতি। সমৃদ্ধ করছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
বিকাশ এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ প্রক্রিয়ায় বিকাশের মাধ্যমে দেশে থাকা প্রিয়জনের কাছে ২ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এ অংক ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় ১১১ শতাংশ বেশি।
গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও বিকাশের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর হার বেড়েছে। ২০২২ সালের প্রথম আট মাসে বিকাশের মাধ্যমে রেমিট্যান্স ছাড়িয়েছে ২ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসীরা কাজের সময় নষ্ট না করে যখন প্রয়োজন তখনই দেশে থাকা প্রিয়জনের বিকাশ অ্যাকাউন্টে মুহূর্তেই তার কষ্টার্জিত অর্থ পাঠিয়ে দেওয়ার সুবিধা পান। এজন্যই অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিকাশের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর এ সেবা।
এমএফএস এর মাধ্যমে দেশে থাকা স্বজনরা তাদের মোবাইল অ্যাকাউন্টে আসা রেমিট্যান্স যখন যেভাবে প্রয়োজন সেভাবে ব্যবহারের সুযোগ পান। ব্যাংকিং সময়ের মধ্যে কাউন্টারে গিয়ে অথবা এটিএম বুথে গিয়ে টাকা তোলার ঝামেলা এড়িয়ে বিকাশ অ্যাকাউন্টেই দিনে রাতে ২৪ ঘণ্টা যেকোনো স্থান থেকে রেমিট্যান্স গ্রহণের সুবিধা স্বজনদের দিচ্ছে বাড়তি স্বস্তি।
বিকাশ রেমিট্যান্স পাওয়া এমনই এক উপকারভোগী চাঁদপুরের সেলিনা বানু। আগে তার প্রবাসী স্বামী ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতেন। কিন্তু ব্যাংক থেকে সঙ্গে সঙ্গে টাকা তুলতে পারতেন না। তিনি বলেন, এখন হঠাৎ করে যদি টাকার দরকার হয় কল দিলে সঙ্গে সঙ্গে বিকাশেই তা পাঠিয়ে দেন। আগের মত আর টাকা আসার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় না।
‘বিদেশে থাকা স্বামীর আয়ের টাকা সবচেয়ে সহজে পেতে বিকাশ এখন অনেক বড় ভরসার জায়গা’ -বলেন সেলিনা বানু।
এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশে কয়েক বছর আগে রেমিট্যান্স গ্রহণ সেবা শুরু করে। প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত দেশগুলোর শীর্ষস্থানীয় মানি ট্রান্সফার সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিকাশের এই সেবা দ্রুততার সঙ্গে সম্প্রসারিত করছে। ফলে অল্প সময়ের ব্যবধানেই রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
বিকাশের তথ্য বলছে, পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে বিকাশে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ ছিল মাত্র ১৪১ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে ২৪২৭ কোটি টাকায় এসে দাঁড়ায়। রেমিটলি, ট্যাপ ট্যাপ সেন্ড, ওয়ার্ল্ড রেমিট, ওয়াইজ, রিয়া, মার্চেন্ট্রেড, গালফ এক্সচেঞ্জ, বাহরাইন ফিন্যান্সিং কোম্পানি (বিএফসি), সোনালী এক্সচেঞ্জ, সিবিএল মানি ট্রান্সফার, অগ্রণী এক্সচেঞ্জ, এনবিএল এক্সচেঞ্জ এর মতো অর্থ স্থানান্তর প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সহজেই বিকাশ হিসাবে টাকা পাঠানোর সেবা সময় সাশ্রয় করাসহ নানান সুবিধা দেয় প্রবাসীদের।
এক্সচেঞ্জ হাউজ বা ব্যাংক কাউন্টারের পাশাপাশি মোবাইল অ্যাপ ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে অর্থ পাঠাতে পারছেন প্রবাসীরা। আর বাংলাদেশে থাকা প্রবাসীর স্বজনেরা টাকা পেয়ে যাচ্ছেন মোবাইলে বিকাশের হিসাবে। দেশের ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এই অর্থ লেনদেন বৈদেশিক মুদ্রায় নিষ্পত্তি হচ্ছে। এই টাকা বিদেশ থেকে দেশে স্থানান্তর হচ্ছে মুহূর্তেই। এতে প্রবাসী বা তার স্বজনের ব্যাংক হিসাব থাকার প্রয়োজনও পড়ছে না।
এই প্রসঙ্গে বিকাশের চিফ কর্মাশিয়াল অফিসার আলী আহম্মেদ বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কেবল তাদের পরিবার নয়, দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। পৃথিবীব্যাপী অর্থনৈতিক এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করতেও প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। রেমিট্যান্স দেশে পাঠানোকে সহজ ও তাৎক্ষণিক করেছে এমএফএস। তাদের সুবিধা মাথায় রেখেই এখাতে রেমিট্যান্স আনাকে আরও সুবিধাজনক করতে উদ্যোগ নিতে হবে।
রেমিট্যান্স আনার সুবিধাই কেবল নয়, রেমিট্যান্স আনতে উৎসাহিত করতে সরকারের ২.৫ শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে আরও ১ শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দিয়েছে বিকাশ। বিকাশে আসা টাকা গ্রাহক তার প্রয়োজনমতো ব্যবহার করতে পারছেন। অন্য বিকাশ হিসাবে টাকা পাঠানো, পরিষেবা বিল, স্কুলের বেতন, কেনাকাটা, মোবাইল রিচার্জ, টিকেট কাটা, ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাসিক সঞ্চয়সহ বিভিন্ন সেবায় খরচ করতে পারছেন। প্রয়োজনে এজেন্ট বা এটিএম থেকে ক্যাশ টাকা তুলেও খরচ করতে পারছেন।
দেশজুড়ে বিকাশের ৩ লাখ এজেন্ট থেকে টাকা তুলতে পারেন প্রবাসীর স্বজনরা। পাশাপাশি ১৩টি শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ১৫০০টির বেশি এটিএম বুথ থেকেও বিকাশের টাকা তোলা যাচ্ছে।