ঢাকা ০৭:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন বিটিভির সংবাদ বেসরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারের প্রয়োজন নেই : নাহিদ শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ র‍্যাব ক্যাম্পের অভিযানে দু’কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার, আটক-১ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলেই ভাসতে থাকে প্রথম শ্রেণীর জাজিরা পৌরসভা। চট্টগ্রামে সাবেক সাংসদ বাদলের কবরে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে মুক্তি পাচ্ছে ‘রুম নম্বর ২০১১’ গণতন্ত্র ও বিএনপি সমান্তরাল : মির্জা ফখরুল আ.লীগ দেশকে পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল : তারেক রহমান

রাজধানীতে র‍্যাবের হাতে জঙ্গি গ্রেফতার

জঙ্গি সম্পৃক্ততায় কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল হতে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সাথে জড়িত সংগঠনের দাওয়াতী ও অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ ও বাড়ি ছেড়ে যাওয়া ০৩ জনসহ মোট ০৫ জনকে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব ম্যানডেটের আলোকে প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে র‌্যাব জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার এবং হলি আর্টিজান পরবর্তী প্রায় দুই হাজার জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। যখনই জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়েছে, তখনই র‌্যাব ফোর্সেস সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গিদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে। পূর্ববর্তী ধারাকে সমুন্নত রেখে র‌্যাব বহুমূখী কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

শুধুমাত্র অভিযান নয়; জঙ্গিবাদ বিরোধী জনমত গড়তে ও জনসম্পৃক্ততা অর্জনে র‌্যাব ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করেছে। গত ২৩ আগস্ট ২০২২ তারিখ কুমিল্লা সদর এলাকা হতে ০৮ তরুণের নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় নিখোঁজ সংক্রান্তে গত ২৫ আগস্ট ২০২২ তারিখে কুমিল্লার কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। উক্ত ঘটনা গণমাধ্যম সমূহে বহুলভাবে আলোচিত হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের তৈরি হয়। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব উক্ত নিখোঁজের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের উদ্ধারে ও জড়িতদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

তদন্তকালে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা গৃহ ত্যাগ করেছে। ইতোমধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ ঘর ছাড়ার প্রস্তুতিকালে ০৪ জন তরুণকে হেফাজতে নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় র‌্যাব। পরবর্তীতে গত ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ০৮ তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২) নামক ব্যক্তি রাজধানীর কল্যাণপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে।

নিলয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ০৬ অক্টোবর ২০২২ তারিখ মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতী, তত্ত্বাবধানকারী, আশ্রয় প্রদান কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ০৩ জন ও নিরুদ্দেশ ০৪ তরুণসহ মোট ০৭ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা উগ্রবাদী সংগঠনটির সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরাণীগঞ্জ এলাকা হতে (১) শাহ মোঃ হাবিবুল্লাহ@ হাবিব (৩২), পিতা- মৃত মমতাজ আহমেদ, সদর, কুমিল্লা, (২) নেয়ামত উল্লাহ (৪৩), পিতা- আব্দুল মান্নান, সদর, কুমিল্লা, (৩) মোঃ হোসাইন (২২), পিতা- হারুনুর রশিদ, মোহাম্মদপুর,ঢাকা, (৪) রাকিব হাসনাত @ নিলয় (২৮), পিতা- আবুল হাসনাত বাদল, সূত্রাপুর, ঢাকা, এবং (৫) মোঃ সাইফুল ইসলাম @ রণি@ জায়দ চৌধুরী (১৯), পিতা- হাতিম, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী’দেরকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

উদ্ধার করা হয় ০৫টি উগ্রবাদী পুস্তিকা, প্রায় তিনশত লিফলেট এবং ০৫টি ব্যাগ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, প্রাথমিকভাবে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কোমলমতি তরুণদেরকে সংগঠনের সদস্যরা টার্গেট করত। পরবর্তীতে তাদেরকে বিভিন্ন সময় মুসলমানদের উপর নির্যাতন নিপীড়নের বিভিন্ন ভিডিও দেখানো এবং বিভিন্ন অপব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করত।

উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করার পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করার মাধ্যমে তরুণদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে উৎসাহী করে তুলত।

উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে গ্রেফতারকৃত হোসাইন ০১ বছর পূর্বে, গ্রেফতারকৃত সাইফুল দেড় মাস পূর্বে এবং গ্রেফতারকৃত রাকিব ০২ মাস পূর্বে নিখোঁজ হয়। জানা যায় যে, নিখোঁজ হওয়া তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রেরণ করা হয়। নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদেরকে বিভিন্ন সেইফ হাউজে রেখে পটুয়াখালী এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে রেখে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হত।

এছাড়াও, আত্মগোপনে থাকার কৌশল হিসেবে তাদেরকে রাজমিস্ত্রী, রং মিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিশিয়ানসহ বিভিন্ন পেশার কারিগরী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হত। বিভিন্ন সময় গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা ৫০ এর অধিক।

যারা প্রায় দেড় মাস থেকে দুই বছরের অধিক সময় ধরে নিরুদ্দেশ বা নিখোঁজ ছিল বলে জানা যায়। এদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার জানেন যে, তারা চাকুরীর জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন এবং নিয়মিত পরিবারকে অর্থ প্রদান করত। প্রাথমিকভাবে সংগঠনের সদস্যদের নিকট হতে তাদের নাম ও ঠিকানা পাওয়া গিয়েছে; ক্ষেত্র বিশেষে নাম ও ঠিকানায় কিছুটা তারতম্য থাকতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সংগঠনের ছত্রছায়ায় দুর্গম অঞ্চলে আত্মগোপনে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে এবং সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

 

প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত এই তথ্যসমূহ দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন বাহিনীকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সম্মিলিত অভিযান চলমান রয়েছে। গ্রেফতারকৃত হাবিবুল্লাহ কুমিল্লায় কুবা মসজিদের নামাজ পড়াতেন। এছাড়াও তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন, তিনি ২০২০ সালে নেয়ামত উল্লাহর মাধ্যমে “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) সংগঠনটিতে যুক্ত হন। তিনি সংগঠনটির অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে কুমিল্লা অঞ্চলে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালিত হত।

তিনি সংগঠনের জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করতেন ও উগ্রবাদী কার্যক্রমে অর্থ সরবরাহ করতেন। পার্বত্য অঞ্চলের নাইক্ষংছড়িতে তিনি প্রায় ০২ বছর যাবৎ একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন। তিনি পাহাড়ের বিভিন্ন অঞ্চল হতে ছাত্র সংগ্রহ করে তার মাদ্রাসায় রাখতেন। এছাড়াও, তিনি অদ্যাবধি ১৫-২০ জন সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণে প্রেরণ করেছেন বলে জানায়। গ্রেফতারকৃত নেয়ামত উল্লাহ কুমিল্লার একটি মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি ব্যক্তির মাধ্যমে সংগঠনে যুক্ত হয়।

তিনি সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রমে যুক্ত থাকার পাশাপাশি নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বেও জড়িত ছিলেন। বাড়ি ছেড়ে যাওয়া সদস্যদের তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে আশ্রয় প্রদান করতেন বলে জানায়। গ্রেফতারকৃত হোসাইন পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান এবং রং মিস্ত্রী। সে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। দীর্ঘ ০১ বছর যাবত সে সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে জড়িত বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত রাকিব কুরিয়ার সার্ভিসে ডেলিভারি বয়ের কাজ করত। সে গ্রেফতারকৃত হোসাইন এর মাধ্যমে সংগঠনে জড়িত হয়। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে প্রায় ০২ মাস পূর্বে নিরুদ্দেশ হয় বলে জানায়। ১০। গ্রেফতারকৃত সাইফুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। সে গত আগস্ট মাসে নোয়াখালী হতে জঙ্গিবাদে উদ্বুব্ধ হয়ে নিরুদ্দেশ হয়। সে নোয়াখালীর এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদী এই সংগঠনে জড়িত হয় বলে জানায়। ১১। গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

রাজধানীতে র‍্যাবের হাতে জঙ্গি গ্রেফতার

আপডেট সময় ১০:০৭:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০২২

জঙ্গি সম্পৃক্ততায় কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল হতে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সাথে জড়িত সংগঠনের দাওয়াতী ও অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ ও বাড়ি ছেড়ে যাওয়া ০৩ জনসহ মোট ০৫ জনকে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব ম্যানডেটের আলোকে প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে র‌্যাব জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার এবং হলি আর্টিজান পরবর্তী প্রায় দুই হাজার জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। যখনই জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়েছে, তখনই র‌্যাব ফোর্সেস সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গিদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে। পূর্ববর্তী ধারাকে সমুন্নত রেখে র‌্যাব বহুমূখী কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

শুধুমাত্র অভিযান নয়; জঙ্গিবাদ বিরোধী জনমত গড়তে ও জনসম্পৃক্ততা অর্জনে র‌্যাব ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করেছে। গত ২৩ আগস্ট ২০২২ তারিখ কুমিল্লা সদর এলাকা হতে ০৮ তরুণের নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় নিখোঁজ সংক্রান্তে গত ২৫ আগস্ট ২০২২ তারিখে কুমিল্লার কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। উক্ত ঘটনা গণমাধ্যম সমূহে বহুলভাবে আলোচিত হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের তৈরি হয়। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব উক্ত নিখোঁজের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের উদ্ধারে ও জড়িতদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

তদন্তকালে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা গৃহ ত্যাগ করেছে। ইতোমধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ ঘর ছাড়ার প্রস্তুতিকালে ০৪ জন তরুণকে হেফাজতে নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় র‌্যাব। পরবর্তীতে গত ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ০৮ তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২) নামক ব্যক্তি রাজধানীর কল্যাণপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে।

নিলয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ০৬ অক্টোবর ২০২২ তারিখ মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতী, তত্ত্বাবধানকারী, আশ্রয় প্রদান কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ০৩ জন ও নিরুদ্দেশ ০৪ তরুণসহ মোট ০৭ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা উগ্রবাদী সংগঠনটির সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরাণীগঞ্জ এলাকা হতে (১) শাহ মোঃ হাবিবুল্লাহ@ হাবিব (৩২), পিতা- মৃত মমতাজ আহমেদ, সদর, কুমিল্লা, (২) নেয়ামত উল্লাহ (৪৩), পিতা- আব্দুল মান্নান, সদর, কুমিল্লা, (৩) মোঃ হোসাইন (২২), পিতা- হারুনুর রশিদ, মোহাম্মদপুর,ঢাকা, (৪) রাকিব হাসনাত @ নিলয় (২৮), পিতা- আবুল হাসনাত বাদল, সূত্রাপুর, ঢাকা, এবং (৫) মোঃ সাইফুল ইসলাম @ রণি@ জায়দ চৌধুরী (১৯), পিতা- হাতিম, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী’দেরকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

উদ্ধার করা হয় ০৫টি উগ্রবাদী পুস্তিকা, প্রায় তিনশত লিফলেট এবং ০৫টি ব্যাগ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, প্রাথমিকভাবে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কোমলমতি তরুণদেরকে সংগঠনের সদস্যরা টার্গেট করত। পরবর্তীতে তাদেরকে বিভিন্ন সময় মুসলমানদের উপর নির্যাতন নিপীড়নের বিভিন্ন ভিডিও দেখানো এবং বিভিন্ন অপব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করত।

উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করার পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করার মাধ্যমে তরুণদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে উৎসাহী করে তুলত।

উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে গ্রেফতারকৃত হোসাইন ০১ বছর পূর্বে, গ্রেফতারকৃত সাইফুল দেড় মাস পূর্বে এবং গ্রেফতারকৃত রাকিব ০২ মাস পূর্বে নিখোঁজ হয়। জানা যায় যে, নিখোঁজ হওয়া তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রেরণ করা হয়। নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদেরকে বিভিন্ন সেইফ হাউজে রেখে পটুয়াখালী এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে রেখে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হত।

এছাড়াও, আত্মগোপনে থাকার কৌশল হিসেবে তাদেরকে রাজমিস্ত্রী, রং মিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিশিয়ানসহ বিভিন্ন পেশার কারিগরী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হত। বিভিন্ন সময় গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা ৫০ এর অধিক।

যারা প্রায় দেড় মাস থেকে দুই বছরের অধিক সময় ধরে নিরুদ্দেশ বা নিখোঁজ ছিল বলে জানা যায়। এদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার জানেন যে, তারা চাকুরীর জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন এবং নিয়মিত পরিবারকে অর্থ প্রদান করত। প্রাথমিকভাবে সংগঠনের সদস্যদের নিকট হতে তাদের নাম ও ঠিকানা পাওয়া গিয়েছে; ক্ষেত্র বিশেষে নাম ও ঠিকানায় কিছুটা তারতম্য থাকতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সংগঠনের ছত্রছায়ায় দুর্গম অঞ্চলে আত্মগোপনে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে এবং সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

 

প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত এই তথ্যসমূহ দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন বাহিনীকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সম্মিলিত অভিযান চলমান রয়েছে। গ্রেফতারকৃত হাবিবুল্লাহ কুমিল্লায় কুবা মসজিদের নামাজ পড়াতেন। এছাড়াও তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন, তিনি ২০২০ সালে নেয়ামত উল্লাহর মাধ্যমে “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) সংগঠনটিতে যুক্ত হন। তিনি সংগঠনটির অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে কুমিল্লা অঞ্চলে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালিত হত।

তিনি সংগঠনের জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করতেন ও উগ্রবাদী কার্যক্রমে অর্থ সরবরাহ করতেন। পার্বত্য অঞ্চলের নাইক্ষংছড়িতে তিনি প্রায় ০২ বছর যাবৎ একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন। তিনি পাহাড়ের বিভিন্ন অঞ্চল হতে ছাত্র সংগ্রহ করে তার মাদ্রাসায় রাখতেন। এছাড়াও, তিনি অদ্যাবধি ১৫-২০ জন সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণে প্রেরণ করেছেন বলে জানায়। গ্রেফতারকৃত নেয়ামত উল্লাহ কুমিল্লার একটি মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি ব্যক্তির মাধ্যমে সংগঠনে যুক্ত হয়।

তিনি সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রমে যুক্ত থাকার পাশাপাশি নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বেও জড়িত ছিলেন। বাড়ি ছেড়ে যাওয়া সদস্যদের তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে আশ্রয় প্রদান করতেন বলে জানায়। গ্রেফতারকৃত হোসাইন পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান এবং রং মিস্ত্রী। সে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। দীর্ঘ ০১ বছর যাবত সে সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে জড়িত বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত রাকিব কুরিয়ার সার্ভিসে ডেলিভারি বয়ের কাজ করত। সে গ্রেফতারকৃত হোসাইন এর মাধ্যমে সংগঠনে জড়িত হয়। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে প্রায় ০২ মাস পূর্বে নিরুদ্দেশ হয় বলে জানায়। ১০। গ্রেফতারকৃত সাইফুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। সে গত আগস্ট মাসে নোয়াখালী হতে জঙ্গিবাদে উদ্বুব্ধ হয়ে নিরুদ্দেশ হয়। সে নোয়াখালীর এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদী এই সংগঠনে জড়িত হয় বলে জানায়। ১১। গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।