ঢাকা ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে হুজির হাল ধরেন ফখরুল

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের ডিজিটাল ফরেনসিক টিম।

শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত নয়টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলেন মো. ফখরুল ইসলাম (৫৮), মো. সাইফুল ইসলাম (২৪), মো. সুরুজ্জামান (৪৫), হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩), মো. দীন ইসলাম (২৫) ও  মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৬)।

সিটিটিসি জানায়, বিগত ১৯৮৮ সালে দেশ থেকে পাকিস্তানে যান মো. ফখরুল ইসলাম। সেখান থেকে তিনি আফগানিস্তানে গিয়ে একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লঞ্চার পরিচালনা করার প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকার সাক্ষাৎ করেছেন ফখরুল।

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান। মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ফখরুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানাধীন তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় দারোয়ানের চাকরি করতেন। পরে ১৯৮৮ সালে কাজের উদ্দেশে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচি শহরে যান তিনি। পাকিস্তানে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সে সময় মুফতি জাকির হোসেন করাচি শহরে ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং আল কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। মুফতি জাকির আল কায়েদা সংগঠনের জিহাদি ট্রেনিংয়ের কমান্ডার।

তিনি বলেন, মুফতি জাকির ফখরুল ইসলামকে জিহাদের দাওয়াত দিলে সে দাওয়াত গ্রহণ করেন। ফখরুল ইসলাম জিহাদি ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণে যায়। ফখরুল ওই ট্রেনিংয়ে বিভিন্ন অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লঞ্চার পরিচালনার প্রশিক্ষণ নেন।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় হুজি নেতা ফখরুল একাধিকার আল কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদি ট্রেনিং করার পর আবার পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। সেখান থেকে তিনি ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় ৩ বছর সেখানে থাকার পর আবার করাচিতে ফিরে আসেন। তিনি পরবর্তীতে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন।

সিটিটিসির এ কর্মকর্তা বলেন, হুজি সদস্যদের বান্দরবন পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছিল গ্রেপ্তাররা। ফখরুল ও তার ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম অন্যান্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকার কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যায়। সেখানে রোহিঙ্গাদের মোটা অংকের টাকা অনুদান দেন।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হুজির একটি এনক্রিপটেড অ্যাপের প্রাইভেট চ্যানেল ‘একটু প্রস্তুতির’ কনটেন্ট হিসেবে ‘একটি বোমা তৈরি করো তোমার মায়ের রান্নার ঘরে’ শীর্ষক ১০ পাতার ডকুমেন্ট এবং একই চ্যানেল থেকে টাইম বোমা বানানোর বাংলা বিবরণীসহ ভিডিও শেয়ার করেন। আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই এনক্রিপটেড অ্যাপসের চ্যানেল থেকে প্রাপ্ত কনটেন্ট তার সংগঠনের পরিচিত দুই-একজনকে হাতে কলমে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ লাভের উদ্দেশে এবং বোমা বানানোর নির্দেশনা দিয়ে শেয়ার করেছেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, তারা টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে সক্রিয় থেকে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তাদের অন্যান্য সহযোগীরা পরস্পরের যোগসাজশে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক ভিডিও ও তথ্য শেয়ার এবং নিজেদের মধ্যে গোপন তথ্য আদান-প্রদান করে থাকেন। ওই গ্রুপে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক প্রশিক্ষণের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি সচিত্র প্রশিক্ষণ ডকুমেন্টস (পিডিএফ, ভিডিও, অডিও) আদান-প্রদানও করত তারা।

হুজি সদস্যরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করায়, তাদের সংগঠনে রোহিঙ্গাদের যুক্ত করতে সফল হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তারা একাধিকবার প্রবেশ করেছিল এবং অনেক ক্ষেত্রে সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে অর্থও খরচ করেছে হুজি।

নির্বাচন কেন্দ্রিক হুজির কোনো পরিকল্পনা ছিল কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তারা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিল। আপাতত তাদের পরিকল্পনা এটাই ছিল। মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আমরা পাইনি। কোনো টার্গেট ছিল না। জর্দার কোটা দিয়ে দেশীয় পদ্ধতিতে ককটেল তৈরি করেছিল তারা।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মঠবাড়িয়ায় স্কুল ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ২

আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে হুজির হাল ধরেন ফখরুল

আপডেট সময় ০৩:৩৩:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৩

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের ডিজিটাল ফরেনসিক টিম।

শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত নয়টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলেন মো. ফখরুল ইসলাম (৫৮), মো. সাইফুল ইসলাম (২৪), মো. সুরুজ্জামান (৪৫), হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩), মো. দীন ইসলাম (২৫) ও  মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৬)।

সিটিটিসি জানায়, বিগত ১৯৮৮ সালে দেশ থেকে পাকিস্তানে যান মো. ফখরুল ইসলাম। সেখান থেকে তিনি আফগানিস্তানে গিয়ে একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লঞ্চার পরিচালনা করার প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকার সাক্ষাৎ করেছেন ফখরুল।

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান। মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ফখরুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানাধীন তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় দারোয়ানের চাকরি করতেন। পরে ১৯৮৮ সালে কাজের উদ্দেশে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচি শহরে যান তিনি। পাকিস্তানে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সে সময় মুফতি জাকির হোসেন করাচি শহরে ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং আল কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। মুফতি জাকির আল কায়েদা সংগঠনের জিহাদি ট্রেনিংয়ের কমান্ডার।

তিনি বলেন, মুফতি জাকির ফখরুল ইসলামকে জিহাদের দাওয়াত দিলে সে দাওয়াত গ্রহণ করেন। ফখরুল ইসলাম জিহাদি ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণে যায়। ফখরুল ওই ট্রেনিংয়ে বিভিন্ন অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লঞ্চার পরিচালনার প্রশিক্ষণ নেন।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় হুজি নেতা ফখরুল একাধিকার আল কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদি ট্রেনিং করার পর আবার পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। সেখান থেকে তিনি ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় ৩ বছর সেখানে থাকার পর আবার করাচিতে ফিরে আসেন। তিনি পরবর্তীতে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন।

সিটিটিসির এ কর্মকর্তা বলেন, হুজি সদস্যদের বান্দরবন পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছিল গ্রেপ্তাররা। ফখরুল ও তার ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম অন্যান্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকার কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যায়। সেখানে রোহিঙ্গাদের মোটা অংকের টাকা অনুদান দেন।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হুজির একটি এনক্রিপটেড অ্যাপের প্রাইভেট চ্যানেল ‘একটু প্রস্তুতির’ কনটেন্ট হিসেবে ‘একটি বোমা তৈরি করো তোমার মায়ের রান্নার ঘরে’ শীর্ষক ১০ পাতার ডকুমেন্ট এবং একই চ্যানেল থেকে টাইম বোমা বানানোর বাংলা বিবরণীসহ ভিডিও শেয়ার করেন। আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই এনক্রিপটেড অ্যাপসের চ্যানেল থেকে প্রাপ্ত কনটেন্ট তার সংগঠনের পরিচিত দুই-একজনকে হাতে কলমে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ লাভের উদ্দেশে এবং বোমা বানানোর নির্দেশনা দিয়ে শেয়ার করেছেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, তারা টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে সক্রিয় থেকে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তাদের অন্যান্য সহযোগীরা পরস্পরের যোগসাজশে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক ভিডিও ও তথ্য শেয়ার এবং নিজেদের মধ্যে গোপন তথ্য আদান-প্রদান করে থাকেন। ওই গ্রুপে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক প্রশিক্ষণের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি সচিত্র প্রশিক্ষণ ডকুমেন্টস (পিডিএফ, ভিডিও, অডিও) আদান-প্রদানও করত তারা।

হুজি সদস্যরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করায়, তাদের সংগঠনে রোহিঙ্গাদের যুক্ত করতে সফল হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তারা একাধিকবার প্রবেশ করেছিল এবং অনেক ক্ষেত্রে সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে অর্থও খরচ করেছে হুজি।

নির্বাচন কেন্দ্রিক হুজির কোনো পরিকল্পনা ছিল কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তারা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিল। আপাতত তাদের পরিকল্পনা এটাই ছিল। মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আমরা পাইনি। কোনো টার্গেট ছিল না। জর্দার কোটা দিয়ে দেশীয় পদ্ধতিতে ককটেল তৈরি করেছিল তারা।