সরকার নির্ধারিত নয়, আগের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি ও তেল। আজ রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে রাজধানীর খুচরা বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজিতে। আর প্যাকেজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে। আর খোলা পাম অয়েল তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩৮ থেকে ১৪০ টাকা লিটার।
অথচ গত বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা করা হয় যে, রোববার থেকে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি সর্বোচ্চ ৮৯ টাকা, খোলা চিনি ৮৪ টাকা এবং পাম তেলের লিটার ১৩৩ টাকায় বিক্রির জন্য। কিন্তু বাজারে বাড়তি দামেই চিনি ও তেল বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম কমার পরিবর্তে উল্টো চিনির দাম বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে। ৪ হাজার ২০০ টাকার চিনির বস্তা আজ কিনতে হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ টাকায়। চিনি কেনাই পড়েছে ৮৬ টাকা কেজিতে। তার সঙ্গে যাতায়াত খরচ রয়েছে।
তারা বলছেন, টেলিভিশন, পেপার-পত্রিকায় শুনেছি (দেখেছি) চিনি আর তেলের দাম আজ থেকে কমানো হয়েছে। সেই হিসাবে আজ থেকে গোডাউন থেকে এই দরে চিনি ও তেল বাজারে আসতে শুরু করবে। এগুলো আমাদের কাছে আসতে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে। সরকারি বাজার মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বিষয়টি স্বীকার করছে। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ তথ্য মতে, রাজধানীতে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে।
তেলের মধ্যে খোলা সয়াবিনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭২ থেকে ১৭৫ টাকায়। এক লিটারের বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা থেকে ১৯২ টাকা কেজিতে। ৫ লিটারের তেল বিক্রি হয়েছে ৯২০ থেকে ৯৪৫ টাকায়। আর খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১২৬ থেকে ১৩৫ টাকা। আর সুপার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা লিটার। হিজবুল্লাহ স্টোরের মালিক মো. নুরুল হুদা দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি কে বলেন, খুচরা খোলা চিনি বিক্রি করছি ৯০ টাকা কেজি। তবে যদি পাইকারি ৫-১০ কেজি নেন, তাদের কাছে ৮৮ টাকা কেজি বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, শুনেছি আজ থেকে সরকার চিনির কেজি ৮৪ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু আজকে আমার কেনাই পড়েছে ৮৬ টাকা দরে। গতকালের চেয়ে বস্তার দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। ৪ হাজার ২০০ টাকা বস্তা ৪ হাজার ৩০০ টাকায় কেনা পড়েছে। তার সঙ্গে যাতায়াত খরচ সবমিলে সাড়ে ৮৬ টাকা কেজি দামই পড়েছে। এক থেকে দুই টাকা লাভে বিক্রি করছি। তিনি আরও বলেন, পাম অয়েল কেজি বিক্রি করছি ১৩৮ থেকে ৪০ টাকা। তবে পাইকারি ১৩৫ টাকা কেজি। সপ্তাহ দুয়েক আগেও পা অয়েলের দাম কমেছিল। এখনো সেই দামে বিক্রি করছি।
সরকার ১৩৩ টাকা করে নির্ধারণ করে দিয়েছে তারপরও কেন বাড়তি দামে বিক্রি করছেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ড্রাম (১৮৬ কেজি বা ২০৪ লিটার) আজকে আমাদের কেনা পেড়েছে ৩১ হাজার টাকায়। তাই বেশি দামে কেনায় একটু বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে পাম অয়েলের দাম গত দুই-তিন সপ্তাহে কেজি প্রতি ৪০ টাকা কমেছে। ১৮০ টাকার কেজি পাম অয়েল এখন ১৪০ টাকা বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ী আরও বলেন, পাম অয়েলের পাশাপাশি বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি করছি ১৯০ থেকে ১৯২ টাকা। দুই লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি করছি ৩৮৪ টাকা। আর ৫ লিটার তেল বিক্রি করছি ৯৪৫ টাকায়। রামপুরা বাজারে বরিশাল স্টোরের মালিক রুহুল আমিন দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি কে বলেন, চিনি কেজি ৯০ টাকা। বোতলজাত আধা লিটার তেল ৯২ টাকা এবং এক লিটার তেল বিক্রি করছি ১৯২ টাকায়।
তিনি বলেন, সরকার চিনি ও তেলের দাম কমালেও আমরা কম দামে কিনতে পাইনি। আমরা না পেলে জনগণ কীভাবে পাবে। সরকার দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে কিন্তু ব্যবসায়ীরা তো কম দামে মাল ছাড়ছে না। নতুন দামের চিনি ও তেল আসতে আসতে আবারও দাম বাড়িয়ে দেবে ব্যবসায়ীরা। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে যে, রোববার থেকে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি সর্বোচ্চ ৮৯ টাকা, খোলা চিনি ৮৪ টাকা এবং পাম তেলের লিটার ১৩৩ টাকায় বিক্রি হবে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী পাম তেল ও চিনির দাম নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মিলগেট, পরিবেশক ও খুচরা পর্যায়ের জন্য আলাদা দাম ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার পাম সুপার খোলা তেল মিলগেট থেকে ১২৮ টাকায় কিনে পরিবেশকরা ১৩০ টাকায় বিক্রি করবেন। আর খুচরা পর্যায়ে তা বিক্রি হবে ১৩৩ টাকায়।
প্রতি কেজি খোলা চিনি মিলগেটে ৭৯ টাকায় কিনে পরিবেশক পর্যায়ে ৮১ টাকা এবং খুচরা বিক্রি হবে ৮৪ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনি মিলগেটে ৮২ টাকায় কিনে পরিবেশকরা বিক্রি করবে ৮৪ টাকা। ভোক্তাদের কাছে চিনি বিক্রি হবে ৮৯ টাকায়। এতদিন খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার পাম সুপার খোলা তেল ১৪৫ টাকা ও খোলা চিনির দাম ছিল ৯০ টাকা। সে হিসাবে পাম তেলের দাম কমেছে ১২ টাকা আর চিনিতে দাম কমলো ৬ টাকা।