ঢাকা ০৫:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
এস আলম গ্রুপের সব স্থাবর সম্পদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ বঙ্গভ্যাক্স ভ্যাকসিনে অনীহা নজর ছিল আমদানিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম সদরঘাট থানা’র উদ্যোগে সিরাতুন্নবী (সঃ) মাহফিল অনুষ্ঠিত এমন গরম আর কতদিন ? কোরআন পড়ে বাড়ি ফেরা হলো না চার শিশুর দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানি, বড় হুজুর গ্রেফতার রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া গণপূর্তের সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ছয় প্রকল্প বাতিল দাউদকান্দিতে অবৈধভাবে এলপিজি গ্যাস বোতলজাতকরণের দায়ে ৩ জনকে সাজা প্রদান চাঁপাইনবাবগঞ্জে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবসে আলোচনা সভা বোরহানউদ্দিনে উত্তর-টবগী রাস্তার মাথা জামে মসজিদের সভাপতি বাচ্চু পন্ডিত- সম্পাদক- আলম ফরাজি

মেট্রোরেল যে কোনো দিন চালু

দেশবাসীর জন্য উত্তরার দিয়াবাড়ীতে আরেকটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন হতে চলেছে। পদ্মা সেতুর পর যোগাযোগ খাতের আরেক স্বাপ্নিক প্রকল্প মেট্রোরেল লাইন-৬ যাত্রী চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে চলতি মাসেই। বিজয়ের মাস হিসেবে ডিসেম্বরের সঙ্গে বাঙালি জাতির আলাদা এক আবেগ, অনুভূতি জড়িত। আর সেই ডিসেম্বর মাসকেই বেছে নেওয়া হয়েছে মেট্রোরেল উদ্ভোধনের জন্য।

এ প্রকল্পে উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে উদ্বোধনের প্রস্তুতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। তাঁর দেওয়া সুবিধাজনক দিনেই উদ্বোধন করা হবে মেট্রোরেল। তবে সেটা ২০ ডিসেম্বরের পর যে কোনো দিন হতে পারে। উদ্বোধনের পর প্রথম সপ্তাহে রেল চলবে দিনে দুবার সকালে ও বিকালে। আধুনিক ও নতুন এই যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে মানুষকে অভ্যস্ত এবং পরিচয় করিয়ে দিতেই প্রথমদিকে দিনে দুবার চলবে রেল। এরপর ধীরে ধীরে তা বাড়ানো হবে। লাইন-৬ উদ্বোধনের এই প্রস্তুতি সরেজমিন ঘুরে দেখাতে প্রথমবারের মতো গতকাল সাংবাদিকদের নিয়ে এক প্রেস ট্যুরের আয়োজন করে এ প্রকল্পে অর্থায়নকরী ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। অবশ্য এর আগে ডিএমটিসিএল ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বহুবার প্রকল্পের অগ্রগতি ঘুরে দেখানো হয়। গতকালের অনুষ্ঠানে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রকল্পের জেনারেল কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোয়েইর প্রতিনিধি ফুজিতোমি তাকায়ুকি, প্রকল্পের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মারুবেনির প্রতিনিধি রাসোনো তেতসুয়া, ট্রেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কাওয়াসাকির প্রতিনিধি মিয়ামোতি হিদিয়াতি। এই মিডিয়া ট্যুরের এক সেগমেন্টে লাইন-৬ এর কাজের বিভিন্ন ধাপের (ঋণচুক্তি থেকে উদ্বোধনের প্রস্তুতি) অগ্রগতি, উদ্বোধনের প্রস্তুতিসহ নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। এ সময় জাইকার বাংলাদেশ মিশন চিফ ইচিগুচি তমোহিদে প্রকল্পের সামগ্রিক বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বলেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাধুনিক মেট্রোরেলগুলোর একটি। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম এই মেট্রোরেল। তবে দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে ৩৮ মিনিট। এ ছাড়া মেট্রোরেল লাইন-১ এর মূল কাজও শুরু হবে এ মাসেই। মেট্রোরেল চালু হলে মানুষের জীবনমানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। সময় বাঁচবে, অর্থের সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব বাহনে চড়তে পারবেন তারা। পাশের দেশ ভারতের দিল্লিতে পরিচালিত একটি গবেষণার সূত্র ধরে তিনি বলেন, মেট্রোরেল চালুর পর সেখানে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ব্যাপক সংখ্যায় বেড়েছে। বাংলাদেশেও নারীদের অংশগ্রহণ সেভাবে বাড়বে বলে আমরা মনে করছি।

সবশেষ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বক্তব্য রাখেন এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের সঙ্গে যাত্রীদের অভ্যস্ততা তৈরি করা এবং আন্তর্জাতিক মান বিবেচনা করে প্রথম দিকে ট্রেনের চলাচল সময়টা কম এবং ট্রেনের স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় বেশি থাকবে। আন্তর্জাতিক প্র্যাকটিস যেটা, যখন যাত্রী পরিবহন শুরু হবে, সেই ক্ষেত্রে একদম প্রথম থেকেই পরিপূর্ণভাবে যাত্রী বহন করে চলাচলটা শুরু করে না। এটা ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হয়। প্রথম দিকে হয়তো কম সময় চলবে। দুই থেকে তিন মাসের ভিতরে একদম শতভাগ অপারেশন যেভাবে চলে, সেভাবে চলবে। প্রথমদিকে চার মিনিট পরপর ট্রেন চালালে জনসাধারণ এটার সঙ্গে অভ্যস্ত হতে বা সেভাবে পরিচিত হতে পারবেন না। আবার আমরা দাঁড়ানোর সময়টাকে হয়তো এক সময় ৩০ সেকেন্ডে নিয়ে আসব। কিন্তু প্রথম দিকে যদি আপনি এক-দুই মিনিট না দেন, তাহলে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে নামবেন-উঠবেন, এই কাজগুলো হবে না। এ জন্য প্রথম দিকে আমরা বেশি সময় দাঁড়াব। তিনি জানান, উদ্বোধনের আগেই ৬ বগির ১০টি ট্রেন সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রাখা হবে। ব্যাকআপ হিসাবে আরও দুটি ট্রেন প্রস্তুত থাকবে।’ প্রতিটি মেট্রোরেল ২ হাজার ৩০০ যাত্রী নিয়ে ছুটতে পারবে বলে তিনি জানান।

এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এই মাসের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সুবিধাজনক সময়ে উদ্বোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা অপেক্ষায় আছি, আমরা যে কোনো দিন তারিখ পেয়ে যেতে পারি। পেয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’ প্রস্তুতির সময় বিবেচনায় সুনির্দিষ্ট তারিখের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহটাকে মাথায় রেখে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। আমাদের প্রস্তুতিটা থাকবে, যাতে চতুর্থ সপ্তাহের যে কোনো দিন এটা হতে পারে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য ৮০-৯০ ভাগ প্রস্তুতি আমরা শেষ করে ফেলেছি।’

এ সময় লাইন-৬ এর প্রকল্প পরিচালক আফতাবউদ্দীন তালুকদারসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরা নর্থ স্টেশনে। ডিপো পেরিয়ে মূল স্টেশন থেকে ঝকঝক শব্দে নর্থ স্টেশনে এসে থামে রেলকোচ। সেখানে ট্রেনে চড়িয়ে দেখানো হয় সাংবাদিকদের। এর আগে স্টেশনের এক্সেলেটর, লিফট সিঁড়ি, টিকিটিং সিস্টেম, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কন্ট্রোল সিস্টেম ও রুম, পাওয়ার সিস্টেম, পাওয়ার রিজার্ভ সিস্টেম, বিশ্রামাগার, প্ল্যাটফরম ঘুরে দেখান জাইকার প্রতিনিধিরা।

এ সময় জানানো হয়, মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে সক্ষম। আপাতত যে অংশ চালু হচ্ছে-উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের স্টেশন হবে নয়টি। এতে ভাড়া পড়বে প্রতি কিলোমিটার ৫ টাকা, সর্বনিম্ন ২০ টাকা। প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উড়ালপথে চলবে ট্রেন। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের এই পথে মেট্রোরেল সময় নেবে ২০ মিনিট। পূর্ণমাত্রায় চালু হলে এই সময় কমে আসবে ১৬-১৭ মিনিটে।

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনে চলমান এ প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর থেকে পর্যন্ত মেট্রোরেল এগিয়ে নেওয়ায় মোট ব্যয় বেড়ে হয় প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। এ প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এবং তার পরে কমলাপুর পর্যন্ত অংশ চালু করা হবে বলে জানান এম এ এন ছিদ্দিক। মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে ৫ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। সেই হিসাবে উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া হবে ৬০ টাকা। অন্যদিকে, উত্তরা নর্থ স্টেশন হতে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত হবে ২০ কিলোমিটারে দূরত্বের জন্য সর্বোচ্চ ভাড়া যাত্রী প্রতি ১০০ টাকা।

ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা জানান, উদ্বোধনের সময় ঘোষণা হওয়ার পর ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হবে। প্রথমদিকে কেবল স্টেশনের কাউন্টার থেকে এমআরটি পাস ইস্যু করা হবে এবং সেটা রিচার্জ করা যাবে। এ ছাড়া স্টেশনের কাউন্টার কিংবা টিকিট বিক্রয় মেশিন থেকে নির্দিষ্ট যাত্রার টিকিট (সিঙ্গেল জার্নি টিকিট) কেনা যাবে। পরবর্তীকালে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস দিয়েও এমআরটি পাসের টাকা রিচার্জ করা সম্ভব হবে। তবে সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলেও জানান কর্মকর্তারা। মেট্রোরেলের বিষয়ে জনসাধারণকে ধারণা দিতে দিয়াবাড়ির মেট্রোরেল ডিপোতে স্থাপন করা হয়েছে মেট্রোরেল এক্সিবিশন ইনফরমেশন সেন্টার (এমইআইসি) চালু করেছে ডিএমটিসিএল। প্রদর্শনী কেন্দ্রের পাশাপাশি উত্তরা নর্থ স্টেশনে ট্রেনের টিকিট কাটা এবং চলাচলের নিয়মাবলি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন জাইকা এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

এস আলম গ্রুপের সব স্থাবর সম্পদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ

মেট্রোরেল যে কোনো দিন চালু

আপডেট সময় ০৯:৩৭:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২

দেশবাসীর জন্য উত্তরার দিয়াবাড়ীতে আরেকটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন হতে চলেছে। পদ্মা সেতুর পর যোগাযোগ খাতের আরেক স্বাপ্নিক প্রকল্প মেট্রোরেল লাইন-৬ যাত্রী চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে চলতি মাসেই। বিজয়ের মাস হিসেবে ডিসেম্বরের সঙ্গে বাঙালি জাতির আলাদা এক আবেগ, অনুভূতি জড়িত। আর সেই ডিসেম্বর মাসকেই বেছে নেওয়া হয়েছে মেট্রোরেল উদ্ভোধনের জন্য।

এ প্রকল্পে উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে উদ্বোধনের প্রস্তুতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। তাঁর দেওয়া সুবিধাজনক দিনেই উদ্বোধন করা হবে মেট্রোরেল। তবে সেটা ২০ ডিসেম্বরের পর যে কোনো দিন হতে পারে। উদ্বোধনের পর প্রথম সপ্তাহে রেল চলবে দিনে দুবার সকালে ও বিকালে। আধুনিক ও নতুন এই যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে মানুষকে অভ্যস্ত এবং পরিচয় করিয়ে দিতেই প্রথমদিকে দিনে দুবার চলবে রেল। এরপর ধীরে ধীরে তা বাড়ানো হবে। লাইন-৬ উদ্বোধনের এই প্রস্তুতি সরেজমিন ঘুরে দেখাতে প্রথমবারের মতো গতকাল সাংবাদিকদের নিয়ে এক প্রেস ট্যুরের আয়োজন করে এ প্রকল্পে অর্থায়নকরী ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। অবশ্য এর আগে ডিএমটিসিএল ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বহুবার প্রকল্পের অগ্রগতি ঘুরে দেখানো হয়। গতকালের অনুষ্ঠানে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রকল্পের জেনারেল কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোয়েইর প্রতিনিধি ফুজিতোমি তাকায়ুকি, প্রকল্পের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মারুবেনির প্রতিনিধি রাসোনো তেতসুয়া, ট্রেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কাওয়াসাকির প্রতিনিধি মিয়ামোতি হিদিয়াতি। এই মিডিয়া ট্যুরের এক সেগমেন্টে লাইন-৬ এর কাজের বিভিন্ন ধাপের (ঋণচুক্তি থেকে উদ্বোধনের প্রস্তুতি) অগ্রগতি, উদ্বোধনের প্রস্তুতিসহ নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। এ সময় জাইকার বাংলাদেশ মিশন চিফ ইচিগুচি তমোহিদে প্রকল্পের সামগ্রিক বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বলেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাধুনিক মেট্রোরেলগুলোর একটি। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম এই মেট্রোরেল। তবে দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে ৩৮ মিনিট। এ ছাড়া মেট্রোরেল লাইন-১ এর মূল কাজও শুরু হবে এ মাসেই। মেট্রোরেল চালু হলে মানুষের জীবনমানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। সময় বাঁচবে, অর্থের সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব বাহনে চড়তে পারবেন তারা। পাশের দেশ ভারতের দিল্লিতে পরিচালিত একটি গবেষণার সূত্র ধরে তিনি বলেন, মেট্রোরেল চালুর পর সেখানে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ব্যাপক সংখ্যায় বেড়েছে। বাংলাদেশেও নারীদের অংশগ্রহণ সেভাবে বাড়বে বলে আমরা মনে করছি।

সবশেষ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বক্তব্য রাখেন এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের সঙ্গে যাত্রীদের অভ্যস্ততা তৈরি করা এবং আন্তর্জাতিক মান বিবেচনা করে প্রথম দিকে ট্রেনের চলাচল সময়টা কম এবং ট্রেনের স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় বেশি থাকবে। আন্তর্জাতিক প্র্যাকটিস যেটা, যখন যাত্রী পরিবহন শুরু হবে, সেই ক্ষেত্রে একদম প্রথম থেকেই পরিপূর্ণভাবে যাত্রী বহন করে চলাচলটা শুরু করে না। এটা ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হয়। প্রথম দিকে হয়তো কম সময় চলবে। দুই থেকে তিন মাসের ভিতরে একদম শতভাগ অপারেশন যেভাবে চলে, সেভাবে চলবে। প্রথমদিকে চার মিনিট পরপর ট্রেন চালালে জনসাধারণ এটার সঙ্গে অভ্যস্ত হতে বা সেভাবে পরিচিত হতে পারবেন না। আবার আমরা দাঁড়ানোর সময়টাকে হয়তো এক সময় ৩০ সেকেন্ডে নিয়ে আসব। কিন্তু প্রথম দিকে যদি আপনি এক-দুই মিনিট না দেন, তাহলে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে নামবেন-উঠবেন, এই কাজগুলো হবে না। এ জন্য প্রথম দিকে আমরা বেশি সময় দাঁড়াব। তিনি জানান, উদ্বোধনের আগেই ৬ বগির ১০টি ট্রেন সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রাখা হবে। ব্যাকআপ হিসাবে আরও দুটি ট্রেন প্রস্তুত থাকবে।’ প্রতিটি মেট্রোরেল ২ হাজার ৩০০ যাত্রী নিয়ে ছুটতে পারবে বলে তিনি জানান।

এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এই মাসের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সুবিধাজনক সময়ে উদ্বোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা অপেক্ষায় আছি, আমরা যে কোনো দিন তারিখ পেয়ে যেতে পারি। পেয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’ প্রস্তুতির সময় বিবেচনায় সুনির্দিষ্ট তারিখের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহটাকে মাথায় রেখে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। আমাদের প্রস্তুতিটা থাকবে, যাতে চতুর্থ সপ্তাহের যে কোনো দিন এটা হতে পারে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য ৮০-৯০ ভাগ প্রস্তুতি আমরা শেষ করে ফেলেছি।’

এ সময় লাইন-৬ এর প্রকল্প পরিচালক আফতাবউদ্দীন তালুকদারসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরা নর্থ স্টেশনে। ডিপো পেরিয়ে মূল স্টেশন থেকে ঝকঝক শব্দে নর্থ স্টেশনে এসে থামে রেলকোচ। সেখানে ট্রেনে চড়িয়ে দেখানো হয় সাংবাদিকদের। এর আগে স্টেশনের এক্সেলেটর, লিফট সিঁড়ি, টিকিটিং সিস্টেম, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কন্ট্রোল সিস্টেম ও রুম, পাওয়ার সিস্টেম, পাওয়ার রিজার্ভ সিস্টেম, বিশ্রামাগার, প্ল্যাটফরম ঘুরে দেখান জাইকার প্রতিনিধিরা।

এ সময় জানানো হয়, মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে সক্ষম। আপাতত যে অংশ চালু হচ্ছে-উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের স্টেশন হবে নয়টি। এতে ভাড়া পড়বে প্রতি কিলোমিটার ৫ টাকা, সর্বনিম্ন ২০ টাকা। প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উড়ালপথে চলবে ট্রেন। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের এই পথে মেট্রোরেল সময় নেবে ২০ মিনিট। পূর্ণমাত্রায় চালু হলে এই সময় কমে আসবে ১৬-১৭ মিনিটে।

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনে চলমান এ প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর থেকে পর্যন্ত মেট্রোরেল এগিয়ে নেওয়ায় মোট ব্যয় বেড়ে হয় প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। এ প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এবং তার পরে কমলাপুর পর্যন্ত অংশ চালু করা হবে বলে জানান এম এ এন ছিদ্দিক। মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে ৫ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। সেই হিসাবে উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া হবে ৬০ টাকা। অন্যদিকে, উত্তরা নর্থ স্টেশন হতে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত হবে ২০ কিলোমিটারে দূরত্বের জন্য সর্বোচ্চ ভাড়া যাত্রী প্রতি ১০০ টাকা।

ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা জানান, উদ্বোধনের সময় ঘোষণা হওয়ার পর ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হবে। প্রথমদিকে কেবল স্টেশনের কাউন্টার থেকে এমআরটি পাস ইস্যু করা হবে এবং সেটা রিচার্জ করা যাবে। এ ছাড়া স্টেশনের কাউন্টার কিংবা টিকিট বিক্রয় মেশিন থেকে নির্দিষ্ট যাত্রার টিকিট (সিঙ্গেল জার্নি টিকিট) কেনা যাবে। পরবর্তীকালে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস দিয়েও এমআরটি পাসের টাকা রিচার্জ করা সম্ভব হবে। তবে সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলেও জানান কর্মকর্তারা। মেট্রোরেলের বিষয়ে জনসাধারণকে ধারণা দিতে দিয়াবাড়ির মেট্রোরেল ডিপোতে স্থাপন করা হয়েছে মেট্রোরেল এক্সিবিশন ইনফরমেশন সেন্টার (এমইআইসি) চালু করেছে ডিএমটিসিএল। প্রদর্শনী কেন্দ্রের পাশাপাশি উত্তরা নর্থ স্টেশনে ট্রেনের টিকিট কাটা এবং চলাচলের নিয়মাবলি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন জাইকা এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা।