রংপুরের মিঠাপুকুরে শালমারা নদীকে অবৈধভাবে বিল ঘোষণা করে ইজারা দেয়ার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি এবং ইজারা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় গ্রামবাসী ও নদী সুরক্ষা কমিটি।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের তাবোয়ার ঘাটে আয়োজিত এ মানববন্ধনে জেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করা হয়।
বক্তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই একটি প্রবহমান নদীকে ‘বিল’ হিসেবে দেখিয়ে ইজারা দেয়া হয়েছে।
নদী সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক শাহ জালাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শালমারা নদী বিল হলো কীভাবে? সরকারের লোকজন তো লাল পতাকা দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করেছে। ভূমি কর্মকর্তারা কি অন্ধ? তারা কি দেখতে পান না যে এটি নদী, বিল নয়?’
অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘শালমারা নদীকে তিনটি নামে তিন স্থানে ইজারা দেয়া হয়েছে, যা সংবিধান, আইন এবং উচ্চ আদালতের রায়ের লঙ্ঘন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
তিনি আরও জানান, শালমারা নদীর প্রায় ৫১ একর জমি ভিন্ন নামে ইজারা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পায়রাবন্দ ইউনিয়নে ‘শালমারা বিল’ নামে ৩৯ একর ৪০ শতক জমি ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছে। পার্শ্ববর্তী বড় হযরতপুর ইউনিয়নে ‘শাল রিভার ছোট’ নামে ৪ একর ২০ শতক জমি ১ লাখ ৫২ হাজার টাকায় এবং ভাংনি ইউনিয়নে ‘বুড়াইল নদী’ নামে ১১ একর ৬৪ শতক জমি মাত্র ১৫ হাজার ৫০০ টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রতারণা করা হয়েছে ইজারার চৌহদ্দি নির্ধারণের ক্ষেত্রে।
প্রসঙ্গত, স্থানভেদে শালমারা নদী ‘চমকা নদী’ নামেও পরিচিত। এটি কাফ্রি খাল নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে ‘বুড়াইল নদী’ নামে প্রবাহিত হয়ে ঘাঘট নদীতে গিয়ে যুক্ত হয়েছে। কয়েক বছর আগে রিভারাইন পিপলের শালমারা নদী সুরক্ষা কমিটির আন্দোলনের ফলে রংপুরের জেলা প্রশাসক এ নদীর ব্যক্তিগত মালিকানা বাতিল করেছিলেন। কিন্তু এবার প্রশাসনের যোগসাজশে আবারও নদীকে বিল হিসেবে ইজারা দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন শালমারা নদী সুরক্ষা কমিটির সভাপতি শাহ জালাল। এতে আরও বক্তব্য রাখেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও রিভারাইন পিপলের পরিচালক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, শালমারা নদী সুরক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাঙ্গা মিয়া, নদী সংগঠক আতিকুর রহমান, রফিক মিয়া, মজিবর রহমান, আজিজার রহমান, মাহফুজার রহমানসহ অনেকে।