শান্ত জনপদকে পুনঃরায় অশান্ত করার মিশনে নেমেছে আলোচিত সমালোচিত রাজউকের দূর্নীতিবাজ অথরাইজ অফিসার পলাশ শিকদার। দূর্নীতি আর ঘুষ বানিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত টাকার জোরে সে নিজ পৈত্রিক নিবাস পিরোজপুরের নেসারাবাদ উপজেলার গুয়ারেখা ইউনিয়নকে সন্ত্রাসী জনপদে পরিনত করেছিল। গত বছরের ০৫ আগস্টের পট পরিবর্তনে ফলে তার সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী ছত্রভংগ হয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। নিজেও তার পর থেকে এলাকায় পা রাখে নি। এর পূর্বে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের ১৩ জুন এক অফিস আদেশে তাকে জোন ২/১ থেকে বদলি করে প্রশাসন শাখার বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে রাজউকের প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। অতি সম্প্রতি তাকে তার পূর্ব পদে পূনর্বহাল করা হয়। এলাকা থেকে সদলবলে বিতাড়িত হয়ে সামাজিকভাবে বেকায়দায় পড়ে যায় ইন্জিনিয়ার পলাশ শিকদার।
বিগত আওয়ামী সরকারের দালালী করে নিজ এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে। পলাশ বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্যই এলাকার বাহিরে আত্মগোপনে থাকলেও কয়েকজন এলাকায় অবস্থান করে উঁকিঝুঁকি মারছে। কিছু দিন পূর্বে পিরোজপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল এবং নেছারাবাদ থানার পাটিকেলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির একটি দল পলাশ বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য পলাশের গ্রামের বাড়িতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। একটি সূত্র জানায় পলাশ তার বাহিনীর পলাতক সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত ঢাকায় মিটিং করে। অন্য একটি সূত্র জানায় পলাশ ও তার বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় ফেরার জন্য স্বরুপকাঠী বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের এক শীর্ষ নেতার সাথে দর কষাকষি চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে গুয়ারেখা ইউনিয়ন বিএনপি ওর এর অংগ সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী জানান এটা নতুন কিছু নয়। অর্থের বিনিময়ে স্বরুপকাঠীতে আওয়ামী লীগ পূনর্বাসন প্রকল্প চলমান। অবৈধ অর্থ দিয়ে নীতিহীন নেতাদের ম্যানেজ করে পলাশ যে কোনো মুহূর্তে বিএনপি হয়ে যেতে পারে। কিন্তু পলাশ শিকদার ও তার বাহিনীর সদস্যদের এলাকায় আর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করতে দেয়া হবে না।
পলাশের অতীত অপকর্মের বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তার পিতা ছিল একজন বিএনপি ঘরনার লোক। তিনি এলাকায় রব ডিলার নামে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু ২০১০ সালের পর হঠাৎ বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগ বনে যান। ইতিমধ্যে টানাটানির সংসারে পলাশ অতিকষ্টে শিক্ষা জীবন শেষ করে রাজউকে সহকারী অথরাইজ অফিসার হিসেবে যোগ দেয়। পরে অথরাইজ অফিসার হিসেবে পদোন্নতি পান। অবৈধ অর্থ উপার্জনের বিষয়টি কাজে কর্মে জানান দিতে থাকে সর্বত্র। পিতা আব্দুর রব শিকদারকে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত করার মিশনে নেমে ২০২০ সালে সে এলাকায় গড়ে তোলে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী। যা পলাশ বাহিনী নামে পরিচিত। এলাকার বেকার, মাদকাসক্ত ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের নিয়মিত অর্থ প্রদান করে এই বাহিনী পরিচালনা করা হত। বিগত দানব সরকারের আমলে নিজ পরিবারের সকল সদস্যকে টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের পদ পদবী কিনে দেন। ফলে পলাশ পরিবার হাইব্রিড আওয়ামী পরিবার হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।
২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে পলাশ তার পিতার জন্য আওয়ামী দলীয় প্রার্থী হিসাবে নমিনেশন পেতে ব্যার্থ হয়। অবশেষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পলাশ তার পিতাকে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ করান। পলাশ তার নিজ হাতে গড়া বাহিনী নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে ভোট কেন্দ্র দখল করা সহ সর্বত্র সন্ত্রাসী তান্ডব চালায়। অবৈধ টাকার বিনিময়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পিতা আব্দুর রব শিকদারকে গুয়ারেখার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত করান। পলাশের নেতৃত্বে তার বাহিনী ইউনিয়ন ব্যাপী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাট বাজার সহ সর্বত্র আধিপত্য বিস্তারের নেশায় মেতে উঠে। মাত্র দেড় বছরের মাথায় আব্দুর রব শিকদারের আকস্মিক মৃত্যু হলে ঐ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে উপ নির্বাচনের আয়োজন করে। পলাশ তার পরিবারের চেয়ারম্যান উপাধি পুনরুদ্ধারে স্ত্রী ফারজানা আক্তারকে হাইব্রিড ছাত্র লীগ বানিয়ে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ করান। পলাশ তার বাহিনী ও অবৈধ অর্থ নিয়ে পূর্বের ন্যায় ঝাপিয়ে পড়েন ইউনিয়ন বাসীর উপর। কিন্তু এবার সে প্রতিরোধের সম্মূখীন হন। ইউনিয়নবাসী তাদের মনোনীত প্রার্থী গাজী মিজানুর রহমানকে বিজয়ী করার জন্য প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে পলাশ ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে। সংঘর্ষ আর মামলা হামলার বিরুদ্ধে লড়াই করে জনগন তাদের মনোনীত প্রার্থী গাজী মিজানুর রহমানের পক্ষে বিজয় ছিনিয়ে আনেন।
নির্বাচন কালীল ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে পলাশ শিকদার মামলা হামলা করে প্রতি পক্ষকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে। নিজেও একাধিক মামলার আসামি হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে রাজউক, গণপূর্ত মন্ত্রনালয়, দূর্নীতি দমন কমিশনেও একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় পত্রিকার সম্পাদককে তুলে নেয়ার জন্য ডিজিএফআই এর এক সদস্যকে ভাড়া করা হয়েছিল। এছাড়াও নিউজ করার জন্য এক সাংবাদিককে হুমকি দিয়েও মামলায় জড়াতে হয় তাকে।
কর্মস্থল রাজউকের চাকরি সংক্রান্ত ঝামেলা কিছুটা সামাল দিয়ে আবারও দূর্নীতি ও অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার পথ খুঁজছে সে। নিজ এলাকায়ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সচল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। মিশন সফল করতে হলে রাজনৈতিক পরিচয় পাল্টাতে হবে। আওয়ামী লীগ পরিবারের নাম ঘুচিয়ে বিএনপি ট্যাগ লাগানোর জন্য ইতিমধ্যে উপজেলা বিএনপির নেতাদের ম্যানেজ করেছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।