ঢাকা ১১:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

আফগানিস্তানে গণহত্যা চালালো পাকিস্তান : ব্যাটিং শুরু করবে তালিবান

গত ২৪ সে ডিসেম্বর রাত্রে আফগানিস্তানের পাক্ষতিকা প্রদেশে আতর্কিত বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। আর এই আতর্কিত হামলায় প্রায় ৪৬ জন নিহত হয় যার বেশিরভাগই নারী এবং শিশু।

ওপরের ছবি দেখে ভাবছেন এটা গাজা অথবা ইয়েমেনের?
আজ্ঞে না।

আর এখানেই ধরা পড়ে গাজা অথবা ইয়েমেনে চালানো ইসরায়েলি হামলার তথাকথিত “বুদ্ধিজীবী” প্রতিবাদীদের হিপোক্রেসি! কারণ এই বেলায় যখন আক্রমনকারী অনেকের প্রিয় দেশ “ইসলামিক রিপাবলিক” অফ পাকিস্তান তাই তারা আজ চুপ! এদের জন্য কোনো টুইটারের “অল আইজ” হ্যাসট্যাগ ট্রেন্ড করবেনা অথবা কোনো ক্যান্ডেল মার্চ বেরোবেনা।

কিন্তু কেন হলো এই হামলা?

শুরুটা শুরু থেকেই বলা যাক। কারণ এর নেপথ্যে রয়েছে একটি গভীর ভূরাজনৈতিক চক্রান্ত!

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ এবং ফাটা এলাকার সাথে আফগানিস্তানের বর্ডার রয়েছে। আর এই প্রদেশটির বেশিরভাগ জনগণ ট্রাইবাল পাঠান, যারা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রধান সরকার দ্বারা বহুদিন ধরে নিপিড়িত এবং নির্যাতিত।

তার ওপরে পাকিস্তানের স্বৈরাচারী সেনা শাসন তাঁদের জমি কেড়ে নিয়ে পাকিস্তানের ও চীনের প্রস্তাবিত CPEC প্রজেক্টের জন্য ব্যবহার করছে যেখানে আখেরে ফায়দা পাবে পাকিস্তানী পাঞ্জাবীরা আর এসবের থেকে পাঠানরা হবে বঞ্চিত।

আর তাই এসবের থেকে নিজেদের আত্মমর্যাদা রক্ষার জন্য তারা পাকিস্তানের থেকে নিজেদের আলাদা করে আফগানিস্তানের সাথে সংযুক্তি চায়। আর সেই কারনে আফগানিস্তানের তালিবান যার সিংহভাগই হলো ট্রাইবাল পাঠান, এই কাজে তাঁদের সহযোগিতার জন্য তৈরী করেছে তেহেরীকে তালিবান পাকিস্তান বা সংক্ষেপে TTP।

একবার ভাবুন, যখন এই তালিবান আফগানিস্তানে ক্ষমতায় এসেছিলো তখন এই পাকিস্তানই আনন্দনৃত্যে মেতে উঠে ভেবেছিলো যে তাঁদের ভারতের বিরুদ্ধে কাশ্মীরে ব্যবহার করবে। কিন্তু আজ ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে, যেখানে শিকারী নিজেই শিকার হয়ে গেছে!

ছবি : TTP ওরফে পাকিস্তানী তালিবান
TTP পাকিস্তানের শোষণনীতির বিরুদ্ধে আজ বহুবছর ধরেই তাঁদের মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং কার্যত তাঁদের সাফল্য হিসেবে বেশ কিছু জায়গায় নিজেদের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বিষয়টা অনেকটা বাংলাদেশের ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো ভাবতে পারেন।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান যেই দেশটি আমেরিকার থেকে সবুজ ঘাস নিয়ে সেখানকার আর্মি জেনারেলদের পেট ভরিয়ে এতদিন আফগানিস্তানকে গৃহযুদ্ধের কবলে রেখে কার্যত বরবাদ করে দিয়েছে, তারা তাঁদের দেশ থেকে অনেক পাঠানদের জোর করে তাঁদের রিফিউজি বানিয়ে, জমি কেড়ে নিয়ে চীনের কাছে দালালি করে আফগানিস্তানে ডিপোর্ট করতে শুরু করেছে।

সোর্স : The Diplomat
এতে TTP তাঁদের কার্যকলাপ আরো সক্রিয় করে। তারা বালুচিদের অনুকরনে পাকিস্তানে থাকা চীনের নাগরিকদের এবং পাকিস্তানের অত্যাচারী সেনাবাহিনীকে টার্গেট করা শুরু করে।

স্বাভাবিকভাবেই চীন এই বিষয়ে পাকিস্তানের অসহায়তা দেখে চাইনিজ নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য, সেখানে নিজেদের সেনাবাহিনী রাখার প্রস্তাব দেয়।

সোর্স : রয়েটার্স
কিন্তু এতে পাকিস্তানকে, আমেরিকার স্বার্থের বিরুদ্ধে যেতে হবে যা পাকিস্তান চায়না। আর তাই চীনকে শান্ত রাখতে এবং TTP এর ওপরে কেবলমাত্র অফিসিয়াল কাগজে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করছে দেখাতে পাকিস্তান এভাবেই আফগানিস্তানের ওপর বিমান হামলা চালাতে থাকে যেগুলির কোনো নির্দিষ্ট টার্গেট থাকেনা।

অর্থাৎ, তারা যেকোনো একটি সিভিলিয়ান জায়গায় অন্ধ বোমাবর্ষণ করে দাবী করে যে তারা TTP এর ওপর হামলা চালিয়েছে।

আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের বিমান হামলায় বলি হয় সাধারন শিশু এবং মহিলারা।

তালিবানের হুমকি
আফগানিস্তানের তালিবান পাকিস্তানের এই বর্বরচিত হামলার করা নিন্দা জানিয়েছে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়ার হুশিয়ারী দিয়েছে।

সোর্স : আলজাজিরা
অথচ এখানেই প্রমাণিত হয় তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও প্রতিবাদীদের দ্বিমুখী মানসিকতা। যখন গাজায় ইসরায়েলের হামলায় প্রতিবাদের ঝড় তোলার প্রতিযোগিতায় মত্ত তারা, তখন আফগানিস্তানে পাকিস্তানের হাতে নারীদের ও শিশুদের ওপর চালানো নির্মম হত্যাযজ্ঞে তারা সম্পূর্ণ নীরব। এই নীরবতা কি তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পক্ষপাতিত্বের চূড়ান্ত রূপ নয়?

একদিকে মানবতার সুরক্ষা নিয়ে তারা মঞ্চ গড়েন, আর অন্যদিকে সেই মানবতার মৃত্যু হতে দেখেও তারা মুখ ফিরিয়ে নেন। এই দ্বিচারিতাই প্রমাণ করে, তাদের প্রতিবাদ আসলে মানবতার পক্ষে নয়, বরং সুবিধাবাদী রাজনীতির হাতিয়ার।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

পুড়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, যেখানে অফিস করবেন আসিফ মাহমুদ

আফগানিস্তানে গণহত্যা চালালো পাকিস্তান : ব্যাটিং শুরু করবে তালিবান

আপডেট সময় ১২:৩৫:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

গত ২৪ সে ডিসেম্বর রাত্রে আফগানিস্তানের পাক্ষতিকা প্রদেশে আতর্কিত বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। আর এই আতর্কিত হামলায় প্রায় ৪৬ জন নিহত হয় যার বেশিরভাগই নারী এবং শিশু।

ওপরের ছবি দেখে ভাবছেন এটা গাজা অথবা ইয়েমেনের?
আজ্ঞে না।

আর এখানেই ধরা পড়ে গাজা অথবা ইয়েমেনে চালানো ইসরায়েলি হামলার তথাকথিত “বুদ্ধিজীবী” প্রতিবাদীদের হিপোক্রেসি! কারণ এই বেলায় যখন আক্রমনকারী অনেকের প্রিয় দেশ “ইসলামিক রিপাবলিক” অফ পাকিস্তান তাই তারা আজ চুপ! এদের জন্য কোনো টুইটারের “অল আইজ” হ্যাসট্যাগ ট্রেন্ড করবেনা অথবা কোনো ক্যান্ডেল মার্চ বেরোবেনা।

কিন্তু কেন হলো এই হামলা?

শুরুটা শুরু থেকেই বলা যাক। কারণ এর নেপথ্যে রয়েছে একটি গভীর ভূরাজনৈতিক চক্রান্ত!

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ এবং ফাটা এলাকার সাথে আফগানিস্তানের বর্ডার রয়েছে। আর এই প্রদেশটির বেশিরভাগ জনগণ ট্রাইবাল পাঠান, যারা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রধান সরকার দ্বারা বহুদিন ধরে নিপিড়িত এবং নির্যাতিত।

তার ওপরে পাকিস্তানের স্বৈরাচারী সেনা শাসন তাঁদের জমি কেড়ে নিয়ে পাকিস্তানের ও চীনের প্রস্তাবিত CPEC প্রজেক্টের জন্য ব্যবহার করছে যেখানে আখেরে ফায়দা পাবে পাকিস্তানী পাঞ্জাবীরা আর এসবের থেকে পাঠানরা হবে বঞ্চিত।

আর তাই এসবের থেকে নিজেদের আত্মমর্যাদা রক্ষার জন্য তারা পাকিস্তানের থেকে নিজেদের আলাদা করে আফগানিস্তানের সাথে সংযুক্তি চায়। আর সেই কারনে আফগানিস্তানের তালিবান যার সিংহভাগই হলো ট্রাইবাল পাঠান, এই কাজে তাঁদের সহযোগিতার জন্য তৈরী করেছে তেহেরীকে তালিবান পাকিস্তান বা সংক্ষেপে TTP।

একবার ভাবুন, যখন এই তালিবান আফগানিস্তানে ক্ষমতায় এসেছিলো তখন এই পাকিস্তানই আনন্দনৃত্যে মেতে উঠে ভেবেছিলো যে তাঁদের ভারতের বিরুদ্ধে কাশ্মীরে ব্যবহার করবে। কিন্তু আজ ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে, যেখানে শিকারী নিজেই শিকার হয়ে গেছে!

ছবি : TTP ওরফে পাকিস্তানী তালিবান
TTP পাকিস্তানের শোষণনীতির বিরুদ্ধে আজ বহুবছর ধরেই তাঁদের মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং কার্যত তাঁদের সাফল্য হিসেবে বেশ কিছু জায়গায় নিজেদের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বিষয়টা অনেকটা বাংলাদেশের ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো ভাবতে পারেন।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান যেই দেশটি আমেরিকার থেকে সবুজ ঘাস নিয়ে সেখানকার আর্মি জেনারেলদের পেট ভরিয়ে এতদিন আফগানিস্তানকে গৃহযুদ্ধের কবলে রেখে কার্যত বরবাদ করে দিয়েছে, তারা তাঁদের দেশ থেকে অনেক পাঠানদের জোর করে তাঁদের রিফিউজি বানিয়ে, জমি কেড়ে নিয়ে চীনের কাছে দালালি করে আফগানিস্তানে ডিপোর্ট করতে শুরু করেছে।

সোর্স : The Diplomat
এতে TTP তাঁদের কার্যকলাপ আরো সক্রিয় করে। তারা বালুচিদের অনুকরনে পাকিস্তানে থাকা চীনের নাগরিকদের এবং পাকিস্তানের অত্যাচারী সেনাবাহিনীকে টার্গেট করা শুরু করে।

স্বাভাবিকভাবেই চীন এই বিষয়ে পাকিস্তানের অসহায়তা দেখে চাইনিজ নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য, সেখানে নিজেদের সেনাবাহিনী রাখার প্রস্তাব দেয়।

সোর্স : রয়েটার্স
কিন্তু এতে পাকিস্তানকে, আমেরিকার স্বার্থের বিরুদ্ধে যেতে হবে যা পাকিস্তান চায়না। আর তাই চীনকে শান্ত রাখতে এবং TTP এর ওপরে কেবলমাত্র অফিসিয়াল কাগজে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করছে দেখাতে পাকিস্তান এভাবেই আফগানিস্তানের ওপর বিমান হামলা চালাতে থাকে যেগুলির কোনো নির্দিষ্ট টার্গেট থাকেনা।

অর্থাৎ, তারা যেকোনো একটি সিভিলিয়ান জায়গায় অন্ধ বোমাবর্ষণ করে দাবী করে যে তারা TTP এর ওপর হামলা চালিয়েছে।

আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের বিমান হামলায় বলি হয় সাধারন শিশু এবং মহিলারা।

তালিবানের হুমকি
আফগানিস্তানের তালিবান পাকিস্তানের এই বর্বরচিত হামলার করা নিন্দা জানিয়েছে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়ার হুশিয়ারী দিয়েছে।

সোর্স : আলজাজিরা
অথচ এখানেই প্রমাণিত হয় তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও প্রতিবাদীদের দ্বিমুখী মানসিকতা। যখন গাজায় ইসরায়েলের হামলায় প্রতিবাদের ঝড় তোলার প্রতিযোগিতায় মত্ত তারা, তখন আফগানিস্তানে পাকিস্তানের হাতে নারীদের ও শিশুদের ওপর চালানো নির্মম হত্যাযজ্ঞে তারা সম্পূর্ণ নীরব। এই নীরবতা কি তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পক্ষপাতিত্বের চূড়ান্ত রূপ নয়?

একদিকে মানবতার সুরক্ষা নিয়ে তারা মঞ্চ গড়েন, আর অন্যদিকে সেই মানবতার মৃত্যু হতে দেখেও তারা মুখ ফিরিয়ে নেন। এই দ্বিচারিতাই প্রমাণ করে, তাদের প্রতিবাদ আসলে মানবতার পক্ষে নয়, বরং সুবিধাবাদী রাজনীতির হাতিয়ার।