ঢাকা ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
স্কুলে ভর্তির লটারিতে অনিয়মের অভিযোগ

এক ছাত্রীকেই মেধা তালিকায় রাখা হয়েছে তিনবার

গত ১৭ ডিসেম্বর স্কুলে ভর্তিতে ডিজিটাল লটারি হয়। লটারির ফল নিয়ে একের পর এক অভিযোগ উঠছে। ফল প্রকাশের পর থেকেই গাইবান্ধায় বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য একজন ছেলেকে নির্বাচিত করা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এবার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখায় এক ছাত্রীকে তিনবার মেধাতালিকায় রাখার তথ্য পাওয়া গেছে। এ নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকরা ভর্তির লটারিতে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন।

ডিজিটাল লটারিতে দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ফলাফল তৈরি করা হয়। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার দ্বিতীয় শ্রেণিতে মর্নিং শিফটে ইংলিশ ভার্সনে রুবাইতা বিনতে রুবেল নামে এক শিক্ষার্থীকে মেধাতালিকায় দুবার রাখা হয়েছে। তাছাড়া একই শ্রেণির বাংলা ভার্সনের মর্নিং শিফটেও ওই শিক্ষার্থী মেধাতালিকায় রয়েছে।

ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা ভার্সনে মর্নিং শিফটে রুবাইতা সাধারণ কোটায় ৯৬তম হয়েছে। একই শ্রেণিতে ইংলিশ ভার্সনের মর্নিং শিফটে সে সাধারণ কোটায় ১৫ ও ১৯তম স্থানে রয়েছে। তার বাবার নাম মো. রুবেল ও মায়ের নাম সুলতানা জাকের।

সব জায়গায় তার একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। বাবা-মায়ের নামও একই। তবে তিন জায়গায় তিনটি ভিন্ন মোবাইল নম্বর রয়েছে। জন্মনিবন্ধনের নম্বরও ভিন্ন।

ওই শিক্ষার্থীর নামের পাশে থাকা ভিন্ন ভিন্ন তিনটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে একটি বন্ধ পাওয়া যায়। বাকি দুটি নম্বরে কল দেওয়া হলে রিসিভ করেন একই ব্যক্তি (মো. রুবেল)। তিনি রুবাইতা নামে ওই ছাত্রীর বাবা।

এ বিষয়ে রুবাইতার বাবা মো. রুবেল বলেন, ‘আমরা দুই শিফটে দুটি আবেদন করেছিলাম। সেটার নিয়ম আছে। কিন্তু ইংলিশ ভার্সনে কেন দুবার নাম এসেছে, তা আমি জানি না।’

তিন জায়গায় তিনটি জন্মনিবন্ধন নম্বর কেন ব্যবহার করা হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। আমার ভাই হয়তো আরেকটা ভিন্ন নম্বর দিয়ে আবেদন করতে পারে। আমরা কোনো অনিয়মের আশ্রয় নিইনি। আমার মেয়ে সব কাগজপত্র স্কুলে জমা দিয়েছে। ভর্তি হবে।’

তবে ওই ছাত্রীর অভিভাবকরা স্কুলে কাগজপত্র জমা দিয়ে এলেও তা অনুমোদন করেননি শিক্ষকরা। রুবাইতা যে ইংলিশ ভার্সনে দুইবার মেধাতালিকায় এসেছে, সেই ভার্সনের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা কাগজপত্র জমা নিয়েছি। তবে সেটি অনুমোদন করিনি। এটা সন্দেহজনক হওয়ায় তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’

এক স্কুলে তিনবার নাম আসা আদৌ সম্ভব কি না, জানতে চাইলে এ সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘এটা প্রাথমিকভাবে স্পষ্ট যে, প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট বানিয়ে একাধিক আবেদন করা হয়েছে। এটা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে এটা খুব খারাপ ও গর্হিত কাজ।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমিক বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘লটারির পুরো প্রক্রিয়াটি সফটওয়্যারে করা হয়। এখানে অনিয়মের সুযোগ নেই। তবে কিছু ত্রুটি হতে পারে। সেটা আমরা জানতে পারলে ব্যবস্থা নেব।’

গাইবান্ধায় বালিকা বিদ্যালয়ে ছেলের নাম আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। হয়তো ভুল করে ওই শিক্ষার্থীর আবেদন করার সময় জেন্ডার অপশনে ছাত্র ক্লিক করা হয়েছে। আর কেউ যদি ভিন্ন ভিন্ন জন্মনিবন্ধন বানিয়ে একাধিক আবেদন করেন, সেক্ষেত্রে স্কুলে ভর্তির সময় ধরা পড়ে যাবে। তাকে বাদ দেওয়া হবে।’

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘লটারি প্রক্রিয়াটি সরকারের ভালো উদ্যোগ। এ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটি চক্র তৎপর। সেখানে শিক্ষকরাও জড়িয়ে পড়েছেন। তারা অভিভাবকদের নানা কু-পরামর্শ দিয়ে অনিয়মে উদ্বুদ্ধ করেন। সেজন্য আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে যেসব অনিয়ম পাওয়া যাবে, তাতে কারা জড়িত তা চিহ্নিত করতে হবে। শিক্ষক-অভিভাবক যারাই জড়িত থাকুক, কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

স্কুলে ভর্তির লটারিতে অনিয়মের অভিযোগ

এক ছাত্রীকেই মেধা তালিকায় রাখা হয়েছে তিনবার

আপডেট সময় ০২:৪২:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

গত ১৭ ডিসেম্বর স্কুলে ভর্তিতে ডিজিটাল লটারি হয়। লটারির ফল নিয়ে একের পর এক অভিযোগ উঠছে। ফল প্রকাশের পর থেকেই গাইবান্ধায় বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য একজন ছেলেকে নির্বাচিত করা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এবার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখায় এক ছাত্রীকে তিনবার মেধাতালিকায় রাখার তথ্য পাওয়া গেছে। এ নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকরা ভর্তির লটারিতে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন।

ডিজিটাল লটারিতে দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ফলাফল তৈরি করা হয়। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার দ্বিতীয় শ্রেণিতে মর্নিং শিফটে ইংলিশ ভার্সনে রুবাইতা বিনতে রুবেল নামে এক শিক্ষার্থীকে মেধাতালিকায় দুবার রাখা হয়েছে। তাছাড়া একই শ্রেণির বাংলা ভার্সনের মর্নিং শিফটেও ওই শিক্ষার্থী মেধাতালিকায় রয়েছে।

ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা ভার্সনে মর্নিং শিফটে রুবাইতা সাধারণ কোটায় ৯৬তম হয়েছে। একই শ্রেণিতে ইংলিশ ভার্সনের মর্নিং শিফটে সে সাধারণ কোটায় ১৫ ও ১৯তম স্থানে রয়েছে। তার বাবার নাম মো. রুবেল ও মায়ের নাম সুলতানা জাকের।

সব জায়গায় তার একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। বাবা-মায়ের নামও একই। তবে তিন জায়গায় তিনটি ভিন্ন মোবাইল নম্বর রয়েছে। জন্মনিবন্ধনের নম্বরও ভিন্ন।

ওই শিক্ষার্থীর নামের পাশে থাকা ভিন্ন ভিন্ন তিনটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে একটি বন্ধ পাওয়া যায়। বাকি দুটি নম্বরে কল দেওয়া হলে রিসিভ করেন একই ব্যক্তি (মো. রুবেল)। তিনি রুবাইতা নামে ওই ছাত্রীর বাবা।

এ বিষয়ে রুবাইতার বাবা মো. রুবেল বলেন, ‘আমরা দুই শিফটে দুটি আবেদন করেছিলাম। সেটার নিয়ম আছে। কিন্তু ইংলিশ ভার্সনে কেন দুবার নাম এসেছে, তা আমি জানি না।’

তিন জায়গায় তিনটি জন্মনিবন্ধন নম্বর কেন ব্যবহার করা হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। আমার ভাই হয়তো আরেকটা ভিন্ন নম্বর দিয়ে আবেদন করতে পারে। আমরা কোনো অনিয়মের আশ্রয় নিইনি। আমার মেয়ে সব কাগজপত্র স্কুলে জমা দিয়েছে। ভর্তি হবে।’

তবে ওই ছাত্রীর অভিভাবকরা স্কুলে কাগজপত্র জমা দিয়ে এলেও তা অনুমোদন করেননি শিক্ষকরা। রুবাইতা যে ইংলিশ ভার্সনে দুইবার মেধাতালিকায় এসেছে, সেই ভার্সনের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা কাগজপত্র জমা নিয়েছি। তবে সেটি অনুমোদন করিনি। এটা সন্দেহজনক হওয়ায় তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’

এক স্কুলে তিনবার নাম আসা আদৌ সম্ভব কি না, জানতে চাইলে এ সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘এটা প্রাথমিকভাবে স্পষ্ট যে, প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট বানিয়ে একাধিক আবেদন করা হয়েছে। এটা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে এটা খুব খারাপ ও গর্হিত কাজ।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমিক বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘লটারির পুরো প্রক্রিয়াটি সফটওয়্যারে করা হয়। এখানে অনিয়মের সুযোগ নেই। তবে কিছু ত্রুটি হতে পারে। সেটা আমরা জানতে পারলে ব্যবস্থা নেব।’

গাইবান্ধায় বালিকা বিদ্যালয়ে ছেলের নাম আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। হয়তো ভুল করে ওই শিক্ষার্থীর আবেদন করার সময় জেন্ডার অপশনে ছাত্র ক্লিক করা হয়েছে। আর কেউ যদি ভিন্ন ভিন্ন জন্মনিবন্ধন বানিয়ে একাধিক আবেদন করেন, সেক্ষেত্রে স্কুলে ভর্তির সময় ধরা পড়ে যাবে। তাকে বাদ দেওয়া হবে।’

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘লটারি প্রক্রিয়াটি সরকারের ভালো উদ্যোগ। এ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটি চক্র তৎপর। সেখানে শিক্ষকরাও জড়িয়ে পড়েছেন। তারা অভিভাবকদের নানা কু-পরামর্শ দিয়ে অনিয়মে উদ্বুদ্ধ করেন। সেজন্য আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে যেসব অনিয়ম পাওয়া যাবে, তাতে কারা জড়িত তা চিহ্নিত করতে হবে। শিক্ষক-অভিভাবক যারাই জড়িত থাকুক, কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’