আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, ‘গত কয়েকমাসের সংঘাত, সংঘর্ষ, অস্থিরতা ও গণঅভ্যুত্থানের মিত্রদের বিভক্তির দায় অন্তর্বর্তী সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।’
সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার ও দেশবাসীর উদ্বেগ দূর করার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনাকর সংঘাতময় পরিস্থিতিতে উদ্বেগ ও শান্তি রক্ষায় করণীয় প্রসঙ্গে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন দলের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার।
সংবাদ সম্মেলনে মঞ্জু প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘মাত্র তিন মাস আগেও যেসব ছাত্র একতাবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে, ঢাল হয়ে একে অপরের জীবন রক্ষা করেছে, তারা কেন আজ হিংসা হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে পরস্পরের রক্ত ঝরাচ্ছে? কেন রাজপথে নেমে প্রতিদিন সহিংস আন্দোলন করতে হচ্ছে অধিকার বঞ্চিতদের? আন্দোলনের মিত্রদের কণ্ঠে কেন এত তাড়াতাড়ি অনৈক্য ও বিভক্তির সুর?’
তিনি বলেন, ‘হাজারো ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত এই সরকার আন্দোলনে সম্পৃক্ত সব পক্ষের ঐক্য রক্ষার ব্যাপারে শুরু থেকেই উদাসীন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উদ্বেগ তারা আমলে নিচ্ছেন না। আহত সংগ্রামীরাসহ প্রতিদিন রাজপথে নেমে আসতে হচ্ছে অধিকারের দাবিতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে একটা ভালো সমন্বয় টিম তৈরি করে এসব আন্দোলন ও দাবি-দাওয়া টেবিলে বসেই সমাধান করা যেত। বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি, দখল দারিত্বের যে অভিযোগ তার কোনো সঠিক সুরাহা হচ্ছে না।
তুচ্ছ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাফিলতি এখানে অত্যন্ত সুস্পষ্ট। অহিংস গণঅভ্যুত্থানের জনসমাগমের বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝিও সরকার আগাম ব্যবস্থা নিলে সমাধান করা যেত। কয়েকটি জাতীয় পত্রিকার অতীত ভূমিকা নিয়ে সংক্ষুব্ধদের বিষয়টিকেও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরসন সম্ভব হতো।
মঞ্জু আরও বলেন, ‘গত ১৫ বছরের চরম নৈরাজ্যবাদী শাসনের অবসানের পর দেশবাসী আশা করেছিলেন, সব জায়গায় ধীরে ধীরে শান্তি ফিরবে। কিন্তু পতিত ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে অরাজকতা তৈরির জন্য বারবার চেষ্টা চালাচ্ছে, সরকার সে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে কোনো আগাম পদক্ষেপ নিতে তো পারছেই না বরং কখনও কখনও নিজের মিত্র শক্তিদের দূরে সরিয়ে তাদেরকে ষড়যন্ত্রকারীদের দোসর বলে দায় এড়াতে চাচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকারের নীতির সমালোচনা করে বলা হয়, রাষ্ট্র শাসনে কোমলতা বলে কিছু নেই বরং ন্যায় ও ইনসাফের জন্য যথার্থতার নীতি অনুসরণই কাম্য। সর্বাত্মক জনসমর্থন, বিপ্লবের স্পিরিট, প্রভূত ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব পাওয়া সত্বেও ড. ইউনূসের মতো শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়া জননন্দিত ব্যক্তিত্ব যদি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে না পারেন তাহলে তা হবে খুবই দুঃখজনক।
এবি পার্টির পক্ষ থেকে সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার সব পক্ষকে অস্থিরতা পরিহার করে ধৈর্য ও সহনশীলতার ভিত্তিতে একটি সমঝোতা সনদ তৈরির প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। শীঘ্রই বৈষম্যবিরোধী সব ছাত্র-জনতাকে নিয়ে ‘গণঅভ্যুত্থান সনদ’ তৈরির পদক্ষেপ নেবেন বলে ঘোষণা দেয় এবি পার্টি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক, সিনিয়র সহকারী সদস্যসচিব এবিএম খালিদ হাসান, আমিনুল ইসলাম এফসিএ, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসাইন, যুবপার্টির আহ্বায়ক শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, সহকারী সদস্য সচিব শাহ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী নাসির, মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব সেলিম খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুলতানা রাজিয়া, শাহিনুর আক্তার শীলা, আমেনা বেগম, সুমাইয়া শারমিন ফারহানাসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।