ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে বুধবার আঘাত হানে এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র। বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক জোট ন্যাটো বলছে, সম্ভবত ইউক্রেনের সেনাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র পোল্যান্ডে আঘাত হেনেছে। খবর বিবিসির।
প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল এবং ইউক্রেনের পক্ষ থেকে দৃঢ়ভাবে বলা হয়েছিল, পোল্যান্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে রাশিয়া। এ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে দুইজন পোলিশ নাগরিক নিহত হন।
তবে ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বুধবার জানিয়েছেন, সম্ভবত ইউক্রেনের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র পোল্যান্ডে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘খুব সম্ভবত এটি ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষার ক্ষেপণাস্ত্র।’
তবে তিনি সঙ্গে এও জানিয়েছেন, রাশিয়া এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। কারণ তারা ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
শক্তিশালী সামরিক জোটের মহাসচিব এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘ রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে এ হামলা চালিয়েছে আমাদের কাছে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই। কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই এর জন্য দায়ী রাশিয়া। কারণ তারা যদি গতকাল (মঙ্গলবার) ইউক্রেনের শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা না চালাত তাহলে এমন ঘটনা ঘটত না।’
ইউক্রেন অবশ্য এখনো দাবি করে আসছে ক্ষেপণাস্ত্রটি রাশিয়া ছুড়েছে। ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র এটি ইউক্রেনের ছোড়া বলে জানালেও, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আবারও দাবি করেছেন এটি রাশিয়ারই কাজ।
এ ব্যাপারে জেলেনস্কি একটি টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমার কোনো সন্দেহ নেই এটি আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র না। আমাদের সামরিক তথ্য অনুযায়ী, আমি বিশ্বাস করি এটি রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র।’
এছাড়া ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে যে স্থানে ক্ষেপণাস্ত্রটি পড়েছে সেখানে ইউক্রেনের তদন্তকারীদের যাওয়ার সুযোগ প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
মঙ্গলবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ অন্যান্য অঞ্চলে মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে রুশ সেনারা। সেগুলো ঠেকাতে নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর করে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন। ধারণা করা হচ্ছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নয় মাসের মধ্যে মঙ্গলবারই সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বেশ কয়েকটি ইউক্রেনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ওপর আঘাত হানে। যদিও কিয়েভ জানিয়েছিল, বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র আটকে দিতে সমর্থ হয়েছে তারা।
মস্কোর এমন বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র সমালোচনা করেন জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেওয়া বিশ্বনেতারা। এরপর বুধবার যখন জানা যায় ন্যাটোভুক্ত দেশ পোল্যান্ডে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে তখন শঙ্কা তৈরি হয়— বিপজ্জনকভাবে হয়ত দ্বন্দ্ব বেড়ে যাবে।
এছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের শান্তি আলোচনা ও যুদ্ধবিরতি নিয়ে কথা বলেছেন ন্যাটো মহাসচিব। তিনি জানিয়েছেন, আগেরবার যখন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছিল তখন দেখা গিয়েছিল ‘প্রেসিডেন্ট পুতিনের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া ও আলোচনার মানসিকতা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বুঝতে হবে যদি রাশিয়া ও পুতিন লড়াই বন্ধ করে দেয় তাহলে শান্তি আসবে। কিন্তু যদি জেলেনস্কি ও ইউক্রেন লড়া্ই বন্ধ করে দেয়, স্বাধীন দেশ হিসেবে ইউক্রেনের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।’