সম্প্রতি আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় এ বিষয়ে ট্রানজিট বিষয়ে নেতিবাচক পোস্ট দেখছি। তাই বিষয়টির বিশদ বিশ্লেষণ জরুরি।
প্রথমেই আমাদেরকে Transit, Transhipment, Corridor সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।
▶️ ট্রানজিটঃ
প্রথম দেশ, দ্বিতীয় দেশের #ভূখণ্ড (Land) ব্যবহার করে যখন তৃতীয় দেশের জন্য পণ্য বহন করে নিয়ে যায়, তখন তা প্রথম দেশটির জন্য দ্বিতীয় দেশ থেকে পাওয়া ট্রানজিট সুবিধা বিবেচিত হয়৷
যেমন- বাংলাদেশকে ভারত ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশের পণ্যবাহী গাড়ি ভারতের ভূমি ব্যবহার করে নেপাল বা তৃতীয় কোন দেশে যেতে পারবে।
অর্থাৎ Transit হতে অন্তত ৩টি দেশ হতে হয়। এখানে শুধু ২য় একটি দেশের ভূমি ব্যবহার করা হয়। যানবাহন ১ম দেশটিরই হয়।
▶️ ট্রান্সশিপমেন্টঃ
একটি দেশের পণ্যবাহী যানবাহনগুলো প্রতিবেশী একটি দেশের সীমান্তবর্তী বন্দরে গিয়ে মালামাল গুলো ঐ দেশের নিজস্ব যানবাহনে তুলে দিবে।
সেই যানবাহন গুলো মালামাল পরিবহন করে অন্যপ্রান্তের সীমান্তে অপেক্ষমান সে দেশের যানবাহনে তুলে দিয়ে আসবে নির্ধারিত ভাড়ার বিনিময়ে- এটাই ট্রান্সশিপমেন্ট।
যেমন- ভারতের পণ্যবাহী জাহাজগুলো বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে এসে তাদের পণ্য গুলো খালাস করে।তারপর বাংলাদেশের ট্রাকগুলো সেই পণ্য বহন করে ভারতের আসাম- ত্রিপুরার সীমান্ত পর্যন্ত গিয়ে আবার ভারতের ট্রাকে তুলে দিয়ে আসে।ট্রান্সশিপমেন্ট স্থল বন্দর দিয়েও করা যায় এবং এতে অর্থনৈতিক ভাবে বেশি লাভবান হওয়া যায়।অর্থাৎ Transhipment এ ভূমি যার, যানবাহনও তার হতে হবে।
▶️ কোরিডোরঃ
একটি দেশের যানবাহন অন্য একটি দেশের উপর দিয়ে নিজের দেশের অন্য অংশে পৌঁছানোর সুযোগ পেলে যে দেশটির উপর দিয়ে গেল সেটা হলো তাদের জন্য করিডোর।যেমন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাদের কোন যানবাহন বাংলাদেশের উপর দিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যে গেলে ‘বাংলাদেশ’ হলো তাদের জন্য করিডোর।
▶️ বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট দিয়েছেঃ
২০১০ সালে বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি হয়।ভারতকে বাংলাদেশ মূলত মাল্টিমোডাল বা বহুমাত্রিক ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিতে শুরু করেছে ২০১০ সালে৷ দুদেশের মধ্যকার নৌ প্রটোকলের আওতায় আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার করে এটি শুরু হয়৷ প্রথমে কলকাতা থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে, তারপর আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া-আগরতলা পর্যন্ত সড়কপথে ভারতীয় পণ্য পরিবহন করা হয় পরীক্ষামূলকভাবে ৷
এরপর ২০১৬ সালে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়মিত ব্যবস্থা হিসেবে চালু করা হয়৷বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহারের জন্য ২০১৬ সালে নামমাত্র মাসুল (টন প্রতি ১৯২ টাকা) ধার্য করা হয়।
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোয় নিয়মিতভাবে পণ্য আনা-নেয়ার দ্বার পুরোপুরি খুলে দিয়েছে বাংলাদেশ৷এতে করে বাণিজ্যিকভাবে এই দুটি বন্দর ব্যবহার করতে পারছে ভারত৷
ভারতের প্রধান ভূখণ্ড থেকে জাহাজে আসা পণ্যগুলো বাংলাদেশি যানবাহনে তুলে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের ভেতরে আটটি রুট দিয়ে চারটি স্থলবন্দর হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোয় নেওয়ার কাজটি হলো মূলত ট্রান্সশিপমেন্ট৷ একইভাবে ঐ রাজ্যগুলো থেকেও পণ্য চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে আবার ভারতে নেওয়া যাবে৷
ভবিষ্যতে কখনো যদি তৃতীয় দেশ (যেমন: সিঙ্গাপুর) থেকে আমদানিকৃত পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে খালাস করে ত্রিপুরা বা মেঘালয়ে নেয়া হয়, তাহলে তা একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক ট্রানজিট ব্যবস্থায় রূপ নেবে৷
এই সুবিধার আওতায় মূলত ভারতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পণ্য আনা-নেয়া করা যাবে বাংলাদেশকে নির্ধারিত মাশুল (Toll) প্রদান করে৷বাংলাদেশ ভূখণ্ডে পরিবহনের সময় বাংলাদেশী যানবাহন ব্যবহার করতে হবে।বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ভারতীয় কন্টেইনার পরিবহনে ন্যূনতম Toll (মাশুল) নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৮৯ টাকা।
✅ নেপাল ও ভুটানের সাথে ট্রান্সশিপমেন্ট
নেপাল ও ভুটান যথাক্রমে ১৯৭৬ ও ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের সাথে ট্রানজিট চুক্তি করেছিল৷কিন্তু তা কাজ করেনি নানা প্রতিবন্ধকতায়৷ এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে স্থলবন্দর ও ট্রানজিট রুটের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে ২০১০ সালের পর৷ বর্তমানে নেপাল ও ভুটানের ট্রাক ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত পণ্য বহণ করতে পারে৷কিন্তু বাংলাদেশের ভেতর প্রবেশ করে মোংলা বা চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারে না৷এক্ষেত্রে বাংলাদেশি ট্রাকে পণ্য নিয়ে ভারতীয় সীমান্তে গিয়ে তা খালাস করা হয়৷তারপর আবার ভারতীয়, নেপালি বা ভুটানি ট্রাক তা তুলে নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলে যায়৷ এই ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবস্থা অনেকদিন থেকেই চালু আছে৷
✅ বাংলাদেশকেও ফ্রি ট্রানজিট দিয়েছে ভারতঃ
ইতোমধ্যে ২০২২ সালে ভারত বাংলাদেশকে বিনা মাশুলে তাদের স্থলবন্দর, বিমানবন্দর ও সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য পরিবহনের প্রস্তাব দিয়েছে৷ এতে করে বাংলাদেশের পণ্যবাহী ট্রাক এখন ভারতের নির্দিষ্ট স্থলবন্দর ও পথ হয়ে নেপাল ও ভুটানে যেতে পারবে৷
অবশ্য এর আগেই মাশুল দিয়ে ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে নেপালে সার রপ্তানিতে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে ভারত৷
তবে এখনো সার্বিক ট্রানজিট ও ফ্রি ট্রানজিট সুবিধা পাওয়া যায়নি৷ নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে৷
বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) মোটরযান চুক্তি বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের জন্য হয়তো আরেকটু সুবিধা হতে পারে৷ ভুটান অবশ্য এখনো এই চুক্তি অনুস্বাক্ষর করেনি৷
🟥 রেল ট্রানজিট বা কোরিডোর
২৩শে জুন, ২০২৪ বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে রেল ট্রানজিট বিষয়ে আলোচনা হয়। ভারতের ট্রেন এতদিন বাংলাদেশের সীমান্তে এসে ইঞ্জিন পরিবর্তন করে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ওপর বাংলাদেশের ইঞ্জিনে চলতো। কিন্তু এখন ভারতের রেলগাড়ি বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের পূর্ব-পশ্চিমে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে।
MoU (Memorandum of Understanding) এর মূল বিষয়বস্তু হলো regional connectivity। ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের মধ্যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্যই এমওইউ সই করা হবে।
এতে Connectivity, Bilateral Trade এ অগ্রগতির পাশাপাশি, বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকরা দু দেশে যাতায়াতে আরো স্বাচ্ছন্দ্যে ও দ্রুত গতি পাবেন।
🟥 ভারতের সুবিধাঃ
১) ভারতের পশ্চিম পাশের রাজ্যগুলো থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহন খরচ অনেক কমে যাবে।
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার সঙ্গে কলকাতার দূরত্ব ১৬৮০ কিলোমিটার৷ আর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আগরতলার দূরত্ব মাত্র ২৪৮ কিলোমিটার৷
মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের সঙ্গে কোলকাতার দূরত্ব ১১৫০ কিলোমিটার হলেও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এ দূরত্ব ৫৭০ কিলোমিটার৷
মিজোরামের রাজধানী আইজলের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ৬৫৫ কিলোমিটার আর কলকাতার দূরত্ব ১৫৫০ কিলোমিটার৷
নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমার সঙ্গে বন্দরের দূরত্ব ৮৮০ কিলোমিটার হলেও কলকাতার দূরত্ব ১৪৫০ কিলোমিটার৷
কলকাতা থেকে অন্যান্য রাজ্যের দূরত্বও চট্টগ্রামের তুলনায় গড়ে তিন গুণের বেশি৷
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে পণ্য পরিবহণে ভারত সরকারের সময় ও অর্থ দুটিই বেশি যাচ্ছে৷ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে সাত রাজ্যে পণ্য পরিবহণ শুরু হওয়ায় এখন আগের চেয়ে ভারতের খরচ কমে যাবে৷
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে পণ্য নিতে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে ৷ সময় এবং দূরত্বেও লাভবান হবে তারা৷
২) ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারত মিয়ানমারসহ ASEAN ভুক্ত দেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারবে।
৩) India এর “Look East Policy” এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
🟥 বাংলাদেশের লাভ কী?
✅ কূটনীতির হাতিয়ারঃ
ভারতকে প্রদত্ত এ বিশেষ সুবিধাটি ভারতকে ব্যাপকভাবে লাভবান করবে এবং ভারত বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
ভারতের এ নির্ভরতাকে বাংলাদেশ Bargaining Tool হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। যেমনঃ
কোন এক সময় বাংলাদেশ বলল, Non Tariff Barriers, সীমান্ত সমস্যা, সমুদ্রবিরোধ নিষ্পত্তি বা পানিবণ্টন চুক্তি না হলে আমরা ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দেবো৷ তখন কিন্তু ভারত Consider করতে বাধ্য হতে পারে।
আপনি যখন কাউকে Dependent করবেন, তখনই কিছু আদায়ের সুযোগ আসবে।
ইতোমধ্যে ২০২৪ সালের ২৩ জুন স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকে তিস্তা প্রকল্পের বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
✅ ২০৪১ সালে বাংলাদেশ Tax-GDP Ratio ২২% করতে চায়। বাংলাদেশের জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আদায় খুবই কম। সে ক্ষেত্রে Toll, fee এর মাধ্যমে অনেক রাজস্ব আদায় করতে পারবে বাংলাদেশ।
✅ LDC উত্তরণে CEPA এর অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবেঃ
২০২৬ সালে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে Least Developed Country থেকে উত্তরণ করে Developing Nation হিসেবে পদার্পণ করবে। তখন LDC ভুক্ত দেশ হিসেবে রপ্তানিতে যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতো, তা পাবে না।
বর্তমানে বাংলাদেশ ভারতে পণ্য রপ্তানিতে ৯৭% পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। LDC উত্তরণের পরবর্তী সময়েও শুল্কমুক্ত সুবিধা ধরে রাখতে ভারতের সাথে একটি CEPA (Comprehensive Economic Partnership Agreement) এর আলোচনা চলমান। তবে Non Tariff বাঁধা অনেক বেশি। এটি ভারত নিজ দেশের পণ্যের Protection এ করে থাকে। যার কারণে পূর্ণাঙ্গ বেনিফিট পাওয়া যাচ্ছে না।
Non Tariff বাঁধা দূরীকরণ ও CEPA activate করতে ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত সম্পর্কের এ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ – ‘ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট’ প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে।
✅ বাংলাদেশের সেবা খাতের প্রসার ও লাভঃ
এই ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য-পরিবহন তথা Logistic Support সম্প্রসারণের একটা সুযোগও তৈরি হয়েছে৷ কারণ, ট্রান্সশিপমেন্টের ট্রাক বা যানবাহন বাংলাদেশের৷
কনটেইনার ওঠানো-নামানো বাবদ মাশুল রয়েছে দুই বন্দরের। আবার ভারতীয় পণ্য আনা-নেওয়ার প্রক্রিয়ায় যুক্ত শিপিং এজেন্ট, ট্রানজিট অপারেটর এবং কনটেইনার পরিবহন বাবদ দেশীয় পরিবহন খাতেরও আয় হবে।
হোটেল, রেস্তোরা ব্যবসার প্রসার ঘটবে।
✅ বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা, বন্দর ও অন্যান্য অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন হবেঃ
ভারতকে প্রদত্ত ট্রানজিট ব্যবস্থাকে কার্যকরী করতে অবকাঠামো খাতে, যেমন রাস্তা-ঘাট-সেতু ইত্যাদিতে উন্নয়ন ঘটবে। স্থল ও সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। উন্নত বাংলাদেশের জন্য পূর্বশর্ত Port Facilities উন্নত ও ব্যাপক Infrastructural Development করা।
✅ বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ বাড়বেঃ
নিজের স্বার্থেই ভারত বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং বন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগ বা অর্থায়ন করবে।
বাংলাদেশে India এর দুটি Economic Zone রয়েছে। “Smart Bangladesh 2041” বাস্তবায়নে FDI (Foreign Direct Investment) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
✅ আসলে ভারতকে সুবিধা দেয়ার পরে ভারতও
বাংলাদেশকে ট্রানজিট দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের জন্য ভারতের ভূমি ব্যবহার করে নেপাল, ভূটান, পাকিস্তান, ইরান ইত্যাদি দেশে পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৪ সালের ২৩ জুন দু দেশের বৈঠকে Nepal থেকে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে 40 MW বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে।
✅ আঞ্চলিক যোগাযোগ বা Regional Connectivity এবং Trade বাড়াতে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট ভূমিকা রাখবে। Nepal, Bhutan এর মতো Landlocked Countries, ASEAN ভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। ফলে বাংলাদেশ Geopolitically আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
✅ মহেশখালীতে নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের ৪র্থ সমুদ্রবন্দর, যা হবে দেশের প্রথম সমুদ্রবন্দর। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেয়ায়, এ সমুদ্রবন্দরটি ভারত ব্যবহার করবে এবং বাংলাদেশের আয় অনেক বাড়বে।
🟥 আরো বেশি সুবিধা পেতে বাংলাদেশের করণীয়ঃ
১) ভারত থেকে যাতে বাংলাদেশি জাহাজে পণ্য আনা যায়, সেই ব্যবসা ধরতে নজর দিতে হবে। বন্দরের সুযোগ-সুবিধা, সক্ষমতা আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, তা দেখতে হবে। ভালো সেবা দিতে পারবে।
১) ভারত থেকে যাতে বাংলাদেশি জাহাজে পণ্য আনা যায়, সেই ব্যবসা ধরতে নজর দিতে হবে। বন্দরের সুযোগ-সুবিধা, সক্ষমতা আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, তা দেখতে হবে। ভালো সেবা দিতে পারলে সেবামাশুলও বাড়ানো যাবে।
(মাশুলকে ইংরেজিতে Toll বলে)
২) ভারতের ভূমি ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশ ও তৃতীয় দেশের পণ্য আনা-নেওয়ার যে সুযোগ রয়েছে, তা কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটা ভাবা উচিত।
৩) ভারত থেকে যে সব জাহাজে করে পণ্য আসে। বাংলাদেশী জাহাজগুলো সেই বাজারটা ধরতে পারে।
৪) পায়রা বন্দরকে আরো সক্রিয় করতে হবে।
৫) রেল ট্রানজিটে বাংলাদেশ যেন ন্যায্য মাশুল (Toll) পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
৬) বাংলাদেশ ভারতকে সুবিধা দেয়ায়, বাংলাদেশও তিস্তা পানিবণ্টনে সুবিধা আদায় করে নিতে হবে।
🟥 🟥🟥 ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট নিয়ে সকলের আলোচনার ঝড় ; অথচ India এখনও বাংলাদেশের ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা তেমন ব্যবহার করছে না।
কারণ বাংলাদেশের বন্দর সক্ষমতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। India রুটগুলো ব্যবহার করলেই বাংলাদেশের লাভ হবে। না করলে কোন রাজস্ব বা পারিপার্শ্বিক লাভ তো হচ্ছে না।
🟥🟥🟥 অনেকে কমেন্ট করেছেন Nepal এর সাথে কেন বাণিজ্য হচ্ছে না। ভাই বাণিজ্য হচ্ছে। ২০১৫ সালে BBIN (Bangladesh Bhutan India Nepal) চুক্তির আওতায় ট্রানজিট বাংলাদেশ পাবে। ২০২২ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারতে সফরে গেলে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিনা শুল্কে ভারতের ভূমি ব্যবহার করে ভূটান ও নেপালে পণ্য পরিবহনের প্রস্তাব দেন।
এখন কার্যকর সময়ের ব্যাপার। আর এমন তো না যে India’র Transit টিও পুরোপুরি কার্যকর হয়েছে! এখনও Transhipment চলছে। রেল ট্রানজিট তো মাত্র আলোচনা শুরু হলো। তার চেয়ে বড় কথা, ট্রান্সশিপমেন্ট দেয়ার পরেও India তেমন ব্যবহার করছে না। ব্যবহার করলে যে বাংলাদেশের লাভ আছে, সেটা বোঝাটা জরুরি।
🟥 পরিশেষে বক্তব্যঃ
আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, Regional Connectivity এর ক্ষেত্রে Transit, Transshipment, Corridor একটি স্বাভাবিক বিষয়। আমরা European Union সহ বিভিন্ন Region এ এরকম সহযোগিতা দেখে আসছি। এতে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে না, বরং সকলেই লাভবান হচ্ছেন।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ ও ভারত একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করতে চায়।
বাংলাদেশ ২য় সর্বোচ্চ আমদানি করে ভারত থেকে। বিশেষত, খাদ্যপণ্যের জন্য ভারত গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক নিরাপত্তায়ও দুদেশেরই একে অপরকে প্রয়োজন।
IORA, BBIN, BIMSTEC, SAARC, NDB এর সদস্য দুটি দেশই। দুটি দেশই Global South (উন্নয়নশীল দেশ) এর Voice হিসেবে স্বীকৃত।
বাংলাদেশ ২০২৬ সালে LDC থেকে উত্তরণ করবে। এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এবং ২০৪১ সালে একটি উন্নত, উদ্ভাবনী, সমৃদ্ধ, Smart Bangladesh বিনির্মাণে Regional Connectivity, pivotal role (কেন্দ্রীয় ভূমিকা) পালন করবে।
Bangladesh ও India এর সুসম্পর্কে ট্রানজিট একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। যা তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি, সীমান্ত সমস্যা, সমুদ্রবিরোধ নিষ্পত্তি, নন-ট্যারিফ বাঁধা দূরীকরণ ও বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনেকে বলছেন, বাংলাদেশ ভারতের ওপর বেশি নির্ভরশীল হচ্ছে এবং ভারতের Satellite State (অনুগত রাষ্ট্র) এ পরিণত হচ্ছে। যা আদৌ যৌক্তিক নয়।
বাংলাদেশ যথেষ্ট স্বাধীনভাবে তার “Friendship to all ; malice towards none” পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে। বাংলাদেশ সফলভাবেই “Balanced Diplomacy” প্রয়োগ করছে।
China, Russia, USA, India, Japan, ASEAN, Middle East সবার সাথেই বাংলাদেশ ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে কৃতিত্ব দেখিয়েছে।
যেমন, China বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশের Megaprojects ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে তাদের সহযোগিতা রয়েছে। বাংলাদেশ NDB এর ৬ষ্ঠ সদস্য। BRI, GDI, RCEP, Flagship Policy, Pearl Trade Policy এর জন্য বাংলাদেশকে চীনের প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশ কৌশলগত সম্পর্ক রক্ষা করছে।
USA, EU বাংলাদেশ থেকে স্বল্পমূল্যে RMG আমদানি করে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ USA এর (So far). China কে ঠেকাতে USA এর IPS, QUAD, AUKUS, IPEF কর্মসূচিতে বাংলাদেশকে তাদের প্রয়োজন। বিভিন্ন সময়ে চাপ সৃষ্টি করলেও বাংলাদেশ তার স্বাধীন সত্তায় শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। ফলে, বিভিন্ন Sanction এর ভয় দেখালেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
আবার USA এর প্রভাব উপেক্ষা করে Palestine এর পক্ষে জোড়ালো অবস্থান বাংলাদেশের। রাশিয়ার ওপর Sanction এর ফলে বিশ্বে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলেছে বাংলাদেশ।
Russia এর সাথে বাংলাদেশ এ এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় Megaprojects, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ পরমাণু ক্লাবে যুক্ত হয়েছে। ৬০ বছর মেয়াদী, ২৪০০ MW এর এ প্রকল্প বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
জাপান বাংলাদেশে BIG-B Project এর আওতায় মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, ১২০০ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও হযরত শাহজালাল (রহঃ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিনিয়োগ করেছে। নারায়ণগঞ্জে তাদের Economic Zone স্থাপিত হয়েছে।
ফ্রান্সের সাথে Airbus, Bangabandhu Satellite 1 (বাস্তবায়িত ২০১৮) & 2 বিষয়ে প্রকল্প চলমান।
২০২৩ সালে G20 ও BRICS সম্মেলনে বাংলাদেশের Invitationই বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মহলে মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতির অনন্য স্বাক্ষর।
তবে India, Bangladesh এর neighbouring state বলে স্বাভাবিকভাবেই দুদেশের সম্পর্কের গভীরতা ও নির্ভরশীলতা বেশি এবং দুদেশের অগ্রযাত্রার জন্য বিষয়টি অনিবার্য। এক্ষেত্রে Zero Sum Game (একপাক্ষিক লাভ) না হয়ে যেন Win-Win Situation (দু পক্ষের লাভ) বজায় থাকে সেটাই মূল বিষয়। স্বভাবতই ভারসাম্য রক্ষার জন্য বাংলাদেশ তার স্বার্থ আদায় করে নিতে পারবে।