ঢাকা ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

গাজায় এবার বিষণ্ন ঈদ

ইসরাইলের হামলায় বিধ্বস্ত বাড়ির ধ্বংসস্তূপে বসেই ঈদের বিস্কুট তৈরি করছেন একটি পরিবারের সদস্যরা। ছবি: আল-জাজিরা
‘এ বছর কোনো ঈদ নেই। শুধুই যুদ্ধ। হাতে কোনো টাকা নেই, কাজ নেই, বাড়িটাও মাটিতে মিশে গেছে। আমার আর কিছুই নেই’- হতাশাগ্রস্ত দীর্ঘশ্বাস নিয়ে এমনটাই বলেছিলেন দক্ষিণ গাজার বাসিন্দা আল-বাতাশ। শুধু বাতাশই নন, একই চিত্র গাজার প্রতিটি ঘরে। ইসরাইলের হামলায় অবরুদ্ধ অঞ্চলটির প্রতিটি ঘরে এখন শোকের ছায়া।

কেউ হারিয়েছে নিজের প্রিয়জনকে, কেউ হারিয়েছে সারা জীবনের উপার্জিত সহায়-সম্বল। কেউ আবার আহত হয়েছে, ডুবে আছে গভীর অবসাদে। সবমিলিয়ে বছরের দ্বিতীয় পবিত্র ঈদুল আজহায়ও বিষণ্নতায় আচ্ছন্ন গাজা। আনাদুলু এজেন্সি।

ঈদ আনন্দ ও উৎসবের হলেও গাজার শিশু ও বাসিন্দাদের জন্য এবারের ঈদ যেন শোক ও যন্ত্রণার আরেক নাম। কারণ সেখানে নেই বিশুদ্ধ খাবার পানি, নেই পর্যাপ্ত খাবার ও বাসস্থান। প্রতি মুহূর্তে বোমা ফেলছে দখলদার ইসরাইল বাহিনী।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ডেপুটি নির্বাহী পরিচালক কার্ল স্কাউ বলেছেন, পরিষ্কার পানি বা পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধাবিহীন অবস্থায় গাজার দক্ষিণে আটকে পড়েছেন কমপক্ষে ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ। সেখানে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা হতাশাজনক। যুগ যুগ ধরেই ইসরাইলি আগ্রাসন ও হত্যার বিরুদ্ধে স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য লড়াই করে চলেছেন ফিলিস্তিনিরা। তবে এবার যেন সেই আগ্রাসন ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব মাত্রা। পার করেছে অত্যাচার ও গণহত্যার সব সীমারেখা। দীর্ঘ আট মাসের চলমান যুদ্ধের মধ্যেই পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর পার করেছেন গাজাবাসীরা। এবার দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে ইসরাইল। আটকে দিয়েছে ত্রাণ সরবরাহ। এতে করে ঈদের খুশি তো দূরে থাক অনাহারে প্রতি মুহূর্তে প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত ফিলিস্তিনিরা।

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে গাজার একজন শিশুকে বলতে শোনা যায়- ‘গাজায় ঈদ উদ্যাপন বা আনন্দ করার মতো কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।’ ফিলিস্তিনি শিশুটির ভাষ্যমতে, ‘আমরা আশা করেছিলাম যে যুদ্ধ কয়েক দিন বা সপ্তাহ স্থায়ী হবে, তবে মাস নয়। আমরা ইতোমধ্যে পবিত্র রমজান মাস এবং ঈদুল ফিতর পার করেছি এবং আমরা সেগুলো উদ্যাপন করতে পারিনি।’

শিশুটি আরও বলে, ‘এখন ঈদুল আজহা প্রায় কাছাকাছি এবং আমাদের কাছে কিছুই নেই। কুরবানির জন্য পশু বা নতুন পোশাক কেনার জন্য অর্থ নেই। হত্যা আর ধ্বংস ছাড়া আমাদের আর কিছুই নেই। শোক আর যন্ত্রণার মাঝেই এলো ঈদ।’

রামাল্লার একটি পোশাকের দোকানের মালিক ওসামা আববুদ বলেন, গত বছরের তুলনায় বিক্রি ৭০%-এর বেশি কমেছে এবং ডিসকাউন্ট সত্ত্বেও চাহিদা খুবই কম। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের ছায়ায় এটি দ্বিতীয় ঈদ। আমাদের কোনো আনন্দ বাকি নেই। যুদ্ধ, ধ্বংস, শোক এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে খুব কম মানুষই ঈদের কেনাকাটা করছেন এবং নতুন পোশাক কিনছেন।’

শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি সামরিক হামলায় অন্তত ৩৭,২৯৬ জন নিহত এবং ৮৫,১৯৭ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৯৫ জন আহত হয়েছেন।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

গাজায় এবার বিষণ্ন ঈদ

আপডেট সময় ১২:১০:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুন ২০২৪

ইসরাইলের হামলায় বিধ্বস্ত বাড়ির ধ্বংসস্তূপে বসেই ঈদের বিস্কুট তৈরি করছেন একটি পরিবারের সদস্যরা। ছবি: আল-জাজিরা
‘এ বছর কোনো ঈদ নেই। শুধুই যুদ্ধ। হাতে কোনো টাকা নেই, কাজ নেই, বাড়িটাও মাটিতে মিশে গেছে। আমার আর কিছুই নেই’- হতাশাগ্রস্ত দীর্ঘশ্বাস নিয়ে এমনটাই বলেছিলেন দক্ষিণ গাজার বাসিন্দা আল-বাতাশ। শুধু বাতাশই নন, একই চিত্র গাজার প্রতিটি ঘরে। ইসরাইলের হামলায় অবরুদ্ধ অঞ্চলটির প্রতিটি ঘরে এখন শোকের ছায়া।

কেউ হারিয়েছে নিজের প্রিয়জনকে, কেউ হারিয়েছে সারা জীবনের উপার্জিত সহায়-সম্বল। কেউ আবার আহত হয়েছে, ডুবে আছে গভীর অবসাদে। সবমিলিয়ে বছরের দ্বিতীয় পবিত্র ঈদুল আজহায়ও বিষণ্নতায় আচ্ছন্ন গাজা। আনাদুলু এজেন্সি।

ঈদ আনন্দ ও উৎসবের হলেও গাজার শিশু ও বাসিন্দাদের জন্য এবারের ঈদ যেন শোক ও যন্ত্রণার আরেক নাম। কারণ সেখানে নেই বিশুদ্ধ খাবার পানি, নেই পর্যাপ্ত খাবার ও বাসস্থান। প্রতি মুহূর্তে বোমা ফেলছে দখলদার ইসরাইল বাহিনী।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ডেপুটি নির্বাহী পরিচালক কার্ল স্কাউ বলেছেন, পরিষ্কার পানি বা পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধাবিহীন অবস্থায় গাজার দক্ষিণে আটকে পড়েছেন কমপক্ষে ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ। সেখানে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা হতাশাজনক। যুগ যুগ ধরেই ইসরাইলি আগ্রাসন ও হত্যার বিরুদ্ধে স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য লড়াই করে চলেছেন ফিলিস্তিনিরা। তবে এবার যেন সেই আগ্রাসন ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব মাত্রা। পার করেছে অত্যাচার ও গণহত্যার সব সীমারেখা। দীর্ঘ আট মাসের চলমান যুদ্ধের মধ্যেই পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর পার করেছেন গাজাবাসীরা। এবার দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে ইসরাইল। আটকে দিয়েছে ত্রাণ সরবরাহ। এতে করে ঈদের খুশি তো দূরে থাক অনাহারে প্রতি মুহূর্তে প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত ফিলিস্তিনিরা।

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে গাজার একজন শিশুকে বলতে শোনা যায়- ‘গাজায় ঈদ উদ্যাপন বা আনন্দ করার মতো কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।’ ফিলিস্তিনি শিশুটির ভাষ্যমতে, ‘আমরা আশা করেছিলাম যে যুদ্ধ কয়েক দিন বা সপ্তাহ স্থায়ী হবে, তবে মাস নয়। আমরা ইতোমধ্যে পবিত্র রমজান মাস এবং ঈদুল ফিতর পার করেছি এবং আমরা সেগুলো উদ্যাপন করতে পারিনি।’

শিশুটি আরও বলে, ‘এখন ঈদুল আজহা প্রায় কাছাকাছি এবং আমাদের কাছে কিছুই নেই। কুরবানির জন্য পশু বা নতুন পোশাক কেনার জন্য অর্থ নেই। হত্যা আর ধ্বংস ছাড়া আমাদের আর কিছুই নেই। শোক আর যন্ত্রণার মাঝেই এলো ঈদ।’

রামাল্লার একটি পোশাকের দোকানের মালিক ওসামা আববুদ বলেন, গত বছরের তুলনায় বিক্রি ৭০%-এর বেশি কমেছে এবং ডিসকাউন্ট সত্ত্বেও চাহিদা খুবই কম। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের ছায়ায় এটি দ্বিতীয় ঈদ। আমাদের কোনো আনন্দ বাকি নেই। যুদ্ধ, ধ্বংস, শোক এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে খুব কম মানুষই ঈদের কেনাকাটা করছেন এবং নতুন পোশাক কিনছেন।’

শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি সামরিক হামলায় অন্তত ৩৭,২৯৬ জন নিহত এবং ৮৫,১৯৭ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৯৫ জন আহত হয়েছেন।