টানা প্রায় সাড়ে ছয় মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। চলমান এই আগ্রাসনের কারণে রাশিয়াকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে দাবি করেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এমনকি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সন্ত্রাসীতে পরিণত হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে বক্তব্য সামনে এনেছেন তাতে হতাশই হবে ইউক্রেন। বাইডেন বলেছেন, রাশিয়াকে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত নয়। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, রাশিয়াকে সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক হিসাবে চিহ্নিত করা উচিত নয়। তবে রাশিয়ার নামের সাথে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক শব্দটি জুড়ে দিতে দীর্ঘদিন ধরেই চাপ দিয়ে আসছে ইউক্রেন।
অবশ্য রাশিয়ার নামের সঙ্গে তেমন কোনো লেবেল লাগিয়ে দেওয়া হলে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সম্পর্ক ভেঙে পড়বে বলে আগেই সতর্ক করেছিল মস্কো। আর এ নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই সোমবার রাশিয়াকে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক বলা নিয়ে আপত্তি জানান বাইডেন। রয়টার্স বলছে, রাশিয়াকে সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক হিসাবে মনোনীত করা উচিত কিনা সোমবার হোয়াইট হাউসে তা জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাদের বলেন: ‘না।’
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো। মস্কো অবশ্য ইউক্রেনে তাদের এই আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করছে। এছাড়া যুদ্ধের শুরুতে পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড আক্রান্ত হলেও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মূল মনোযোগ এখন দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়।
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন বহু মানুষ। আরও লাখ লাখ মানুষ তাদের বাড়ি-ঘর হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে গত মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে রাশিয়া সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেসময় এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘রাশিয়া সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে এবং বিশ্বকে অবশ্যই আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্বীকৃতি দিতে হবে।’
এরপর গত জুনের শেষের দিকে রাশিয়াকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে দাবি করেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। সেসময় ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ক্রেমেনচুকের একটি জনবহুল শপিংমলে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তিনি বলেন, শপিংমলে রাশিয়ার হামলা ‘ইউরোপীয় ইতিহাসে সবচেয়ে বিদ্বেষপূর্ণ সন্ত্রাসী হামলার একটি’।
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘শুধুমাত্র সম্পূর্ণ উন্মাদ সন্ত্রাসীরা, যাদের পৃথিবীতে কোনো স্থান থাকা উচিত নয়, তারাই এমন একটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করতে পারে।’ এর একদিন পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সন্ত্রাসীতে পরিণত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন জেলেনস্কি। ইউক্রেনের এই প্রেসিডেন্ট সেসময় আরও বলেন, পুতিন সন্ত্রাসী হয়ে উঠেছেন। তার ভাষায়, ‘কোনো ধরনের সাপ্তাহিক বন্ধ ছাড়াই প্রতিদিনই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। প্রতিদিন তারা সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করছে।’