নাসরা সিন্ধু রান আউট হতেই উচ্ছ্বাসে ভাসলো বাংলাদেশের মেয়েরা। অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির দৌড় যেন থামছিলই না।
একটু আগে তার মিসেই অবশ্য ম্যাচটা হারতে বসেছিল বাংলাদেশ। তাদের উচ্ছ্বাসও জয়ের নয়। তবে ম্যাচটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে গেছে ততক্ষণে।
ছেলে ও মেয়ে মিলিয়ে প্রথমবারের মতো সুপার ওভার হলো বাংলাদেশের ক্রিকেটে। এতে শেষ অবধি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সুপার ওভারে পাকিস্তান ৭ রান করে, সেটি বাংলাদেশ এক উইকেট হারিয়ে টপকে যায়। এর আগে ৯ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ১৬৯ রান করেছিল পাকিস্তান। বাংলাদেশ এক বল আগে অলআউট হয় এই রানেই।
টস জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ষষ্ঠ ওভারে এসে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সাদিয়া ইকবালের বলে স্টাম্পিং হন মুর্শিদা খাতুন। ২ চারে ১৮ বলে ১২ রান করেন তিনি। আরেক ওপেনার ফারজানা হক পিংকি এদিন পান বেশ ভালো শুরু।
সোবহানা মোস্তারির সঙ্গে ২২ রানের জুটি গড়ে তোলেন তিনি। ওই জুটি ভাঙে ৩৫ বলে ১৬ রান করে নাসরু সিন্ধুর বলে সোবহানা এলবিডব্লিউ হলে। পরের জুটিটি হয় আরও বড়, এবার ফারজানার সঙ্গী হন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। এটির পরিণতি অবশ্য ছিল হতাশার।
দুজনের ৪৯ রানের জুটি ভাঙে ফারজানা রান আউট হলে। আগেও কয়েকবার জ্যোতির সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝি হয় তার। এ দফায় আর রক্ষা পাননি। রান হবে না এমন বলে দৌড় শুরু করেন দুই ব্যাটার, কিন্তু পরে ফিরে যান জ্যোতি। ৮৮ বলে ৩ চারে ৪০ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। আউট হওয়ার পর ব্যাট ছুড়ে জ্যোতির জন্য নিজের ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি।
নবম ব্যাটার হিসেবে আউট হন জ্যোতি। কিন্তু তিনিও খুব দ্রুত রান তুলতে পারেননি। ইনিংস শেষ হওয়ার এক বল আগে আউট হওয়া এই ব্যাটার ১০৪ বলে কেবল ৩ চারে ৫৪ রান করেন তিনি। পরের ব্যাটারদের মধ্যে কেবল একজনই দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেন। ১৭ বলে ১৬ রান করেন ফাহিমা খাতুন। পাকিস্তানের পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন সাদিয়া ইকবাল ও নাসরা সিন্ধু।
রান তাড়ায় নামা পাকিস্তান শুরুটা করে বেশ ভালো। তাদের প্রথম উইকেট পাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয় ১৭তম ওভার অবধি। ৪৩ বলে ২২ রান করা সিদরা আমিনকে আউট করেন ফাহিমা খাতুন। পরের ওভারেই তিন বল খেলে কোনো রান করার আগে বিসমাহ মারুফকে জ্যোতির ক্যাচ বানান তিনি।
ওপেনার সাদিফ শামসের উইকেট নেন নিশিতা আক্তার নিশি। ৮৩ বলে ২৯ রান করেন তিনি। মাঝে ইরাম জাভেদের সঙ্গে ২৫ ও নাজিহা আলবির সঙ্গে ২৫ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক নিদা দার। তাতে ব্যবধানও কমে আসে জয়ের রানের। এর মধ্যে নিয়মিত উইকেটও হারাতে থাকে পাকিস্তানের মেয়েরা।
৪৯তম ওভারের তৃতীয় বলে এসে উম্মে হানি রান আউট হরে নবম উইকেট হারায় পাকিস্তান। তখন তাদের দরকার ৪ রান। শেষ ওভারে সেটি দাঁড়ায় তিন রানে। দ্বিতীয় ও চতুর্থ বলে রান নিয়ে নাসরা সিন্ধু ও সাদিয়া ইকবাল ম্যাচ টাই করে ফেলেন।
পঞ্চম বল উইকেটরক্ষক জ্যোতি মিস করেন। এরপর দৌড় শুরু করেন নাসরা সিন্ধু ও ফাহিমা খাতুন। কিন্তু নন স্ট্রাইক প্রান্তে হয়ে যান রান আউট। বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রথমবারের মতো সাক্ষী হয় সুপার ওভারের।
ছেলেদের ম্যাচেও এর আগে কখনো বাংলাদেশ ম্যাচ টাই করেনি। মেয়েদের ক্রিকেটে এ বছরই ভারতের বিপক্ষে টাই করেছিল জ্যোতিরা। কিন্তু তখন আলোক স্বল্পতার কারণে সুপার ওভার হয়নি। তবে এবার আর আলোক স্বল্পতা বাধা হয়নি। বাংলাদেশও পেয়েছে সুপার ওভারে প্রথম জয়।
এই জয়ে সিরিজে ১-১ সমতা ফেরালো বাংলাদেশের মেয়েরা।