সারাদেশের সরকারি বেসকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের বিএড স্কেল প্রদান করতে হলে সেই সনদ হতে হবে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান হতে অর্জিত। অন্যতায় অন্য কোন প্রতিষ্ঠান বা কলেজ হতে অর্জিত বিএড সনদ দিয়ে বিএড স্কেল প্রদান করা যাবে না মর্মে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে। এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে অন্য প্রতিষ্ঠানের বিএড সনদে বিএড স্কেল প্রদান করায় সরকারের বড় অংকের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এমনকি দেশের নির্দিষ্ট বেসরকারি হিসেবে ২৩টি প্রতিষ্ঠান হতে অর্জিত বিএড সনদ ব্যতিত অন্য প্রতিষ্ঠানের সনদ দিয়ে বিএড স্কেল প্রদান উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপন্থী বলে জানিয়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ। কিন্তু বাহুবল উপজেলার দীননাথ ইনস্টিটিউশন সাতকাপন সরকারি মডেল হাইস্কুলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রণয় চন্দ্র দেবের বিএড সনদ ওই ২৩ প্রতিষ্ঠানের বাইরে রয়েল ইউনিভাসিটি হতে অর্জিত। অর্থাৎ রয়েল ইউনিভার্সিটি হাইকোর্টের রায়ের বিপরীত প্রতিষ্ঠান, যা প্রণয় চন্দ্র দেব বিএড সনদ গ্রহণ করেন। যদিও এই সনদ নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। এছাড়া অন্যান্য শিক্ষকও ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিএড সনদ দিয়ে বিএড স্কেল ধরানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু প্রণয় চন্দ্র দেব উচ্চ আদালতের রায়ের বাইরে গিয়ে কিভাবে বিএড স্কেল গ্রহণ করলেন তা বোধগম্য নয়। এর আগে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুছ ছাত্তার শেখ স্কুলের সভাপতি থাকাবস্থায় ২০০৮ সালে ৩ নভেম্বর স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভায় বিএড ডিগ্রি সনদ অর্জন সংক্রান্ত সভার সিন্ধান্তে বলা হয়, প্রণয় চন্দ্র দেব সরকারি কোন টিটি কলেজ হতে অর্জন করেননি এবং কর্তৃপক্ষের অনুমতিও নেননি। ফলে কমিটি তার বিএড সনদ অর্জনের প্রক্রিয়া বিধি মোতাবেক না হওয়ায় স্বীকৃতি দেয়ার সুযোগ নেই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ওই সভায় উপস্থিত স্বাক্ষরদাতাগণের মধ্যে ছিলেন সহসভাপতি শফি আহমেদ চৌধুরী, হিফজুর রহমান, প্রয়াত ডা: মারফত উল্লা, মোঃ আব্দুর রেজ্জাক (৩নং সাতকাপন ইউপি চেয়ারম্যান), শিক্ষক আবুল ফজল, প্রদীপ কুমার বিশ্বাস ও তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ ইসহাক মিয়া। কিন্তু আব্দুছ ছত্তার শেখ বদলীর পর ১৮ জুলাই ২০০৯ ইং তারিখে ইউএনও আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরীর (বর্তমানে যুগ্ম সচিব) সভাপতিত্বে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির পরবর্তী সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় উপরোক্ত সিদ্ধান্তকে পূন:র্বিবেচনার জন্য আবেদন করা হয় এবং পূর্বের সিদ্ধান্ত অনেকেই অস্বীকার করেন এবং প্রণয় চন্দ্র দেবের বিএড সনদ অর্জন আইনগত প্রক্রিয়ায় সুরাহার আহবান জানানো হয়। কিন্তু সেই সভার সিদ্ধান্তে সনদটির বৈধতার কোন বার্তা লেখা হয়নি।
এদিকে ২০০৯ সালে সাতক্ষীরার হাজী ওয়াজেদ আলী টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ নাজিরুল ইসলাম বেসরকারি কলেজ হতে বিএড সনদ অর্জনের প্রেক্ষিতে বিএড স্কেল প্রদান সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট নং ৫০৩৮/২০০৯ দায়ের করেন। হাইকোর্ট সরকারের বিপক্ষে রায় ঘোষণা করেন। বাদীপক্ষের অর্থাৎ ২৩টি বেসরকারি টিটি কলেজ ব্যতিত অন্য কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিএড সনদে শিক্ষকদের বিএড স্কেল প্রদান করা যাবে না। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর ২০১৪ সালে সরকার পক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করেন। কিন্তু আপীল বিভাগও সরকারের বিরুদ্ধে রায় দেন অর্থাৎ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাদীপক্ষ পরবর্তীতে কনটেম্পট রিট নং ১৫৩/২০১৪ দায়ের করেন। এর পরই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর সারাদেশের হাইস্কুলসহ সকল সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রায় বাস্তবায়নের নিমিত্তে সার্কুলার প্রেরণ করেন এবং ২৩টি প্রতিষ্ঠানের যেকোন ১টি হতে শিক্ষকদের অর্জিত বিএড স্কেল প্রদান না করার জন্য নির্দেশনা জারী করা হয়। এই নির্দেশ উপেক্ষা করে বিভিন্ন স্কুলে অন্য প্রতিষ্ঠান হতে অর্জিত বিএড সনদে স্কেল বা উচ্চতর স্কেল প্রদান করায় সরকারের বড় অংকের আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়। চলবে।