ভারতের বিরুদ্ধে সাইবার আর্মি গঠনে গোপনে পাকিস্তানকে সহায়তা করেছে তুরস্ক। মূলত ইসলামাবাদ ও আঙ্কারার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির অধীনে অত্যন্ত গোপনে ছদ্মবেশী সাইবার-আর্মি প্রতিষ্ঠায় দেশটি পাকিস্তানকে সহায়তা করেছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআইয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সম্ভাব্য ওই সাইবার-আর্মির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক লক্ষ্য থাকার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতকে আক্রমণ করার লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মূলত অলাভজনক সংস্থা নর্ডিক মনিটরের বরাত দিয়ে এই সংবাদ সামনে এনেছে এএনআই। এতে বলা হয়েছে, জনমত গঠন করতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলমানদের মতামতকে জোরালো ও প্রভাবিত করতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে আক্রমণ করতে এবং পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে সমালোচনাকে দুর্বল করতে তুরস্ক সাইবার-সেনাবাহিনী গঠনে পাকিস্তানকে সহায়তা করেছে বলে নর্ডিক মনিটর জানতে পেরেছে।
২০১৮ সালে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোয়লুর সঙ্গে বৈঠকের সময় পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পরিকল্পনাটি অনুমোদন দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি একই সাথে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদেও সেসময় অধিষ্ঠিত ছিলেন ইমরান খান।
নর্ডিক মনিটর বলছে, ২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান সফররত তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোয়লু এবং তৎকালীন পাকিস্তানি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শেহরিয়ার খান আফ্রিদির মধ্যে ব্যক্তিগত আলোচনার সময় সাইবার-আর্মির এই ধরনের একটি ইউনিট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে তখন জ্যেষ্ঠ পর্যায়ে আলোচনা হয় এবং ইসলামাবাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেশিরভাগ কর্মকর্তার কাছ থেকে তা গোপন রাখা হয়েছিল। তবে ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর তুরস্কের কাহরামানমারাস শহরের স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে গোপন এই মিশনের কথা প্রথম প্রকাশ্যে স্বীকার করেন তুর্কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোয়লু। অবশ্য কোন দেশকে সাইবার আর্মি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা হচ্ছে তা ওই সাক্ষাৎকারে সোয়লু প্রকাশ করেননি।
তবে সোয়লু কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, তিনি আসলে পাকিস্তানের কথা বলছেন। কারণ সাক্ষাৎকারে সরাসরি নাম না করে তিনি এমন একটি দেশের কথা উল্লেখ করেছিলেন যেটি তুরস্ক থেকে সরাসরি পাঁচ বা ছয় ঘণ্টার ফ্লাইট ছিল।
নর্ডিক মনিটরের দাবি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোলাইমান সোয়লু তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের পক্ষে সাইবারস্পেসে ট্রল এবং গোপন সেনাবাহিনী চালানোর কাজে অভিজ্ঞ। এছাড়া ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগেও একই ধরনের গোপন অভিযানে কাজ করেছেন সোয়লু।
এএনআইয়ের দাবি, প্রচারণা এবং সমালোচকদের ওপর আক্রমণে সোশ্যাল মিডিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করার জন্য একটি দল গঠন করেছিল তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল একেপি। এছাড়া প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালনের সময় ২০১৪ সালে সোয়লু গোপনে টুইটারে বড় একটি দল গঠন করেছিলেন।
এছাড়া সংসদীয় রেকর্ড অনুসারে, সোয়লু সেই সময়ে ৬ হাজার সদস্য সম্বলিত শক্তিশালী ট্রল-আর্মি নিয়ন্ত্রণ করতেন।