ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ভয়াবহ হামলার জন্য ইউক্রেনকে অভিযুক্ত করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একইসঙ্গে এই হামলাকে তিনি ‘সন্ত্রাসবাদী কাজ’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন।
প্রেসিডেন্ট পুতিন আরও বলেছেন, ইউক্রেনের গোয়েন্দা বাহিনী রাশিয়ার বেসামরিক অবকাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ধ্বংস করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। সোমবার (১০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি অব রাশিয়া’র প্রধান আলেকজান্ডার বাস্ট্রিকিনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। সেখানেই ক্রিমিয়া সেতুতে হামলার জন্য ইউক্রেনকে অভিযুক্ত করে এসব কথা বলেন তিনি।
কর্মকর্তারা বলছেন, ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুতে বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হয়েছেন। রাশিয়ান কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত একটি লরি বিস্ফোরণের মাধ্যমে হামলার এই ঘটনা ঘটে এবং নিহতরা কাছাকাছি একটি গাড়িতে ছিলেন। রোববার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করার লক্ষ্যে এটি একটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এই কাজের পরিকল্পনাকারী, মূল চরিত্র এবং সুবিধাভোগী হচ্ছে ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা।’
অন্যদিকে আলেকজান্ডার বাস্ট্রিকিন বলেছেন, রাশিয়ার কিছু নাগরিক এবং কয়েকটি বিদেশি রাষ্ট্র এই হামলার প্রস্তুতিতে সহায়তা করেছে। তার মতে, তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, তারা (হামলাকারীরা) যে ট্রাকটি উড়িয়ে দিয়েছে তা বুলগেরিয়া, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, উত্তর ওসেটিয়া এবং ক্রাসনোদার ভূখণ্ড দিয়ে ভ্রমণ করে (রাশিয়ায় প্রবেশ করেছিল)।
হামলার পর গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর একটি অংশ ভেঙে যায় এবং তিনি ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ইউক্রেনীয় বাহিনী যে এই হামলার পেছনে ছিল তেমন কোনো ইঙ্গিত ইউক্রেনের কর্মকর্তারা দেননি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক পুতিনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এখানে শুধুমাত্র একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আছে’ এবং ‘পুরো বিশ্ব জানে সেটি কে’।
তিনি বলেন, ‘পুতিন কি ইউক্রেনকে সন্ত্রাসবাদের জন্য অভিযুক্ত করেছেন? এটা রাশিয়ার জন্যও খুবই নিষ্ঠুর বলে মনে হচ্ছে।’ এদিকে হামলার কয়েক ঘণ্টা পর রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ সেতুর রাস্তার অংশটি আংশিকভাবে আবার খুলে দেয়। তবে তা শুধুমাত্র হালকা যান চলাচলের জন্য। পরে সেতুর রেলওয়ে অংশ – যেখানে তেল ট্যাঙ্কারে আগুন লেগেছিল – সেটিও আবার খুলে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দ্বীপের দখল নেয় রাশিয়া। পরে এই দ্বীপের সাথে রাশিয়ার সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য দীর্ঘ ১৯ কিলোমিটার সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ক্রিমিয়া দ্বীপ দখলে নেওয়ার চার বছর পর ২০১৮ সালে সেতুটিকে রাশিয়ার পরিবহন নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মহা ধুমধাম করে সেটির উদ্বোধন করেছিলেন।
ইউক্রেন যুদ্ধে এই সেতু রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক সরবরাহ রুটে পরিণত হয়েছে। কারণ ইউক্রেনের দক্ষিণের খেরসন অঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা রুশ সৈন্যরা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তাদের কাছে অস্ত্র ও সামরিক রসদ পাঠানোর অন্যতম পথ ক্রিমিয়া উপদ্বীপের দীর্ঘ এই সেতুটি।