ভূমির নামজারির পদ্ধতি সহজ করা যাচ্ছে না। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী ২৮ দিনে ই-নামজারি করতে পারছে না ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলো। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭২ দিন পর্যন্তও সময় লাগছে। দেশের আটটি বিভাগের কোথাও নির্দেশনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় বিব্রত ভূমি মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং ড্যাশবোর্ড পর্যালোচনায় আগস্ট মাসে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রণালয় থেকে সর্বশেষ জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী ই-নামজারি আবেদন ২৮ দিনের মধ্যে নিষ্পন্ন করার নিয়ম রয়েছে। তবে গত আগস্ট মাসে সব বিভাগের অধীন ই-নামজারি মামলার গড় নিষ্পত্তির সময় ছিল নির্ধারিত সময়ের বেশি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ই-নামজারি আবেদন নিস্পত্তিতে গড়ে সময় লেগেছে ঢাকা বিভাগে ৩৭ তিন। চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৬ দিন। রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৪ দিন। আর রংপুর বিভাগে ছিল ৪৫ দিন।
এছাড়া ই-নামজারি মামলার গড় নিষ্পত্তির সময় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগস্ট মাসে গাজীপুরে সময় লেগেছে ৭২ দিন। নারায়নগঞ্জে ৫৯ দিন। মানিকগঞ্জে ৫৪ দিন। রাজবাড়ীতে ৬৪ দিন। ফেনীতে লেগেছে ৫৮ দিন। কুমিল্লায় লেগেছে ৫৩ তিন। কক্সবাজারে লেগেছে ৫২দিন। লক্ষীপুরে লেগেছে ৫৩ দিন। নওগাঁয় লেগেছে ৫৯ দিন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৬৮ দিন। খুলনা জেলায় ৫২ দিন। নড়াইলে ৫৩ দিন। মাগুরায় ৫৪ দিন। ঝালকাঠীতে ৫৩ দিন। বরিশালে ৫৩ দিন। সিলেটে ৬২ দিন। সুনামগঞ্জে ৬০ দিন। শেরপুরে ৬২ দিন। রংপুরে ৫৩ দিন। গাইবান্ধায় ৫২ দিন এবং দিনাজপুরে ৫২ দিন।
কী কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে না বা কোন কারণে অতিরিক্ত সময় লাগছে তা জানতে চেয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এ জন্য দেশের ৮ বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি লিখেছে মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ই-নামজারি’ পোর্টালে প্রবেশ করে এলাকাভিত্তিক নামজারি তথ্যচিত্র (ই-নামজারি মামলার গড় নিষ্পত্তির সময়) দেখার অপশনটি সাধারণ নাগরিকসহ সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এ পোর্টালে প্রবেশ করে সরাসরি বিভাগ বা জেলা পর্যায় থেকে মনিটরিং করার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন ই-নামজারি মামলা নিষ্পত্তিতে নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত মাত্রার সময় ব্যয় হচ্ছে তা জানাতে হবে। বেশি সময় লাগার কারণ উল্লেখ, ই-নামজারি পোর্টালে নামজারি মামলার গড় নিষ্পত্তির সময় নিয়মিত মনিটরিং এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা জেলার অধীনে ২৮ দিনের অধিক মাত্রাতিরিক্ত অনিষ্পন্ন ই-নামজারি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্র্রতিবেদন দেওয়ার জন্য চিঠিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে যেসব আবেদন পেন্ডিং রয়েছে সেগুলো ধাপ অনুযায়ী নিষ্পত্তি করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এই চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যেসব আবেদন অনলাইনে সাবমিট করা হয়েছে, কিন্তু ম্যানুয়ালি অনুমোদন করে খতিয়ান দেওয়া হয়েছে এমন আবেদন যদি সিস্টেমে পেন্ডিং থাকে তাহলে এ আবেদনগুলো একটি আদেশ দিয়ে নামঞ্জুর করে দিতে হবে। এ আবেদনটি ম্যানুয়ালি প্রসেস করে খতিয়ান দেওয়া হয়েছে সেজন্য অনলাইন থেকে নামঞ্জুর করা করা হলো বলে আদেশ দিতে হবে। এ আদেশে ম্যানুয়ালি সৃষ্ট খতিয়ান নম্বর, আদেশের তারিখ ইত্যাদি সব না রেফারেন্স উল্লেখ থাকতে হবে। এছাড়া ম্যানুয়ালি সৃষ্ট খতিয়ান চলমান মিউটেটেড খতিয়ান ডাটা এন্ট্রিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যদি এমন কোনও নামজারি আবেদন থাকে যার খতিয়ান চূড়ান্ত, কিন্তু ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিপ্ট) ফি পরিশোধ করা হয়নি তবে সেই পেন্ডিং আবেদনগুলো আর্কাইভ করে দেওয়া যাবে। পরবর্তীতে এ আবেদনগুলোর ডিসিআর ফি পরিশোধ করার সুযোগ থাকবে। ডিসিআর ফি পরিশোধ না করলে চূড়ান্ত খতিয়ান প্রিন্ট অপশন থাকবে না। পেন্ডিং আবেদনের বিষয়ে আদেশ দেওয়ার পদক্ষেপ না নেওয়া গেলে সেক্ষত্রে সেই আবেদনগুলো একটি এক্সেল ফাইলে তুলে মেইলে সেন্ড করে দিলে টেকনিক্যাল টিম পদক্ষেপ নেবে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বিজনেস অটোমেশনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর পারভেজ হোসাইনের মোবাইল নম্বরে কল করা যাবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে পূর্বের সিস্টেমের কারণে যেসব আবেদন ‘মিথ্যা-নেতিবাচক’ অনিষ্পন্ন বা পেন্ডিং দেখাচ্ছে সেসব সমাধান করার উপায়ও জানানো হয়েছে একই পত্রে। সামগ্রিকভাবে ই-নামজারি নিষ্পত্তিতে নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত মাত্রার সময় ব্যয় হওয়ার অন্যান্য সব ধরনের কারণ জানানোর জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে এতে। উল্লেখ্য, প্রশ্নভিত্তিক গাইডেড ই-নামজারি ফরম, সরকারের সার্ভারে রক্ষিত ডাটার সঙ্গে সিনক্রোনাইজিং সহ বেশ কিছু নতুন ফিচার সংযুক্ত করে পূর্বের ই-নামজারি সিস্টেম আপডেট করে স্মার্ট করা হয়েছে। ভূমি প্রশাসনে সুশাসন নিশ্চিত করা এবং ভূমি সেবা অধিকতর গণমুখী করার জন্য ভূমি সেবা সম্পর্কিত প্রযোজ্য তথ্যও এই স্মার্ট সিস্টেমে উন্মুক্ত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার একটি ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এখনও অনেক কর্মকর্তা প্রযুক্তির সঙ্গে সেভাবে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেনি। এছাড়া উপজেলা ইউনিয়ন পর্যায়ের সার্ভারে ত্রুটি থাকে। নেট ঠিকভাবে কাজ করে না। তাই দেরি হচ্ছে। একই সঙ্গে যারা সেবা নিতে আসেন তারাও ঠিকমতো কাগজপত্র সাবমিট করতে পারেন না, সেসব কারণেও বিলম্ব হচ্ছে। তবে অবিলম্বে সব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে নির্ধারিত ২৮ দিনেই ই-নামজারি সেবা দেওয়া যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন এই ভূমি কর্মকর্তা।
একজন জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, চিঠি পেয়েছি। কারণ জানার চেষ্টা করছি। সংশ্লিষ্টদের কাছে তথ্য চেয়েছি। কিছুটা সময় পেলে পরে বিস্তারিত জানাতে পারবো। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, সেবা সহজীকরণ করতে এবং গ্রাহকদের হয়রানি কমাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি সৃষ্ট জটিলতা কেটে যাবে। সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন।