ঢাকা ০৯:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
করাচিতে ৩ বাংলাদেশি নারী গ্রেফতার সোনাগাজীতে আ.লীগ নেতা গ্রেফতার ২০২৬ সালের এসএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও মানবণ্টন প্রকাশ মসজিদ কমিটির দ্বন্দ্বে আইনজীবীর বাড়ি ভাঙচুর, আহত তিন স্বৈরাচারের দোষর কেউ বিএনপির বন্ধু হতে পারে না:রফিকুল আলম মজনু চাঁপাইনবাবগঞ্জে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় শীতবস্ত্র বিতরণ ভালুকায় শ্রমিকদলের মল্লিকবাড়ি ও ভালুকা ইউনিয়নের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন আমাদের প্রধান কাজ গণহত্যার বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন: আইন উপদেষ্টা নারায়ে তাকবির ও জিন্দাবাদ স্লোগান নিয়ে যা জানালেন মির্জা আব্বাস বাংলাদেশ প্রেসক্লাব পাবনা জেলা শাখার সম্মেলন ২০২৪ অনুষ্ঠিত

ইমরানের সঙ্গে আলোচনার পর সেনাপ্রধান নিয়োগে সায় পাক প্রেসিডেন্টের

পরমাণু শক্তিধর দেশ পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান নিযুক্ত হয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মুনির। কয়েক সপ্তাহের জল্পনা-কল্পনা ও গুজবের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ তাকে সেনাবাহিনীর নতুন প্রধান (সিওএএস) হিসেবে বেছে নেন।

পরে শেহবাজের সেই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি। তবে তার আগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি বৃহস্পতিবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের সাথে দেখা করেন এবং নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ইমরান খানের লাহোরের বাসভবনে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বৃহস্পতিবার লাহোরের জামান পার্কে ইমরান ও আলভির মধ্যে এই বৈঠকটি প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলে। বৈঠকে নতুন সেনাপ্রধানসহ সামরিক নিয়োগের সারসংক্ষেপ স্বাক্ষর সম্পর্কিত মূল বিষয়গুলো, এ বিষয়ে পিটিআই-এর অবস্থান এবং আগামী ২৬ নভেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে ইমরানের দলীয় কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা করেন তারা। বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট আলভি ফেডারেল রাজধানী ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং সেখানে তিনি নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের নিয়োগের সারসংক্ষেপে স্বাক্ষর করেন।

অবশ্য কয়েক দিন আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ তার বড় ভাই এবং পিএমএলএন সুপ্রিমো নওয়াজ শরিফের সাথে দেশের প্রধান সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য লন্ডনে একটি বৈঠক করেছিলেন। সেসময় ইমরানের পিটিআই এতে গুরুতর আপত্তি তুলেছিল। যাইহোক, বৃহস্পতিবার ইমরান খান এবং তার পুরানো বলিষ্ঠ এই সহকর্মী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

উল্লেখ্য, পাকিস্তানের বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া চলতি মাসের শেষে অবসরে যাচ্ছেন। তার আগে বৃহস্পতিবার বাজওয়ার উত্তরসূরি বেছে নেন শেহবাজ। ৬২ বছর বয়সী জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া ২০১৬ সাল থেকে ৬ লাখ সদস্যের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন। ২০১৯ সালের আগস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বাজওয়ার চাকরির মেয়াদ তিন বছরের জন্য বৃদ্ধি করেছিলেন। সেই মেয়াদ শেষে আগামী মঙ্গলবার অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ তার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে দেশের নতুন সেনাপ্রধান বেছে নিয়েছেন। অবশ্য সামরিক বাহিনীর নতুন প্রধান কে হবেন তা নিয়ে পাকিস্তানে ইমরান খান ও ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উত্তেজনা ছিল চরমে। এই বিষয়টি উত্তেজনা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা ছিল, কারণ আরিফ আলভি দীর্ঘদিন ইমরান খানের বিশ্বস্ত সহকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন এবং বর্তমানে দেশটির প্রেসিডেন্ট।

আর তাই প্রেসিডেন্ট আলভি নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ নিয়ে শেহবাজের সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেবেন কিনা সেটি নিয়েও ছিল শঙ্কা। এ কারণেই সেনাপ্রধান নিয়োগের পরপরই পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ আশা প্রকাশ করেন, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি এই নিয়োগকে ‘বিতর্কিত’ করবেন না এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজের পরামর্শকে সমর্থন করবেন।

পরে তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্টের উচিত প্রধানমন্ত্রীর ‘পরামর্শকে’ সমর্থন করা যাতে ‘বিতর্কের সৃষ্টি না হয়’। তার ভাষায়, ‘এটি আমাদের দেশ এবং অর্থনীতিকে সঠিক পথে যেতে সহায়তা করবে। বর্তমানে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছে।’ তার ভাষায়, ‘এটি প্রেসিডেন্ট আলভির জন্যও একটি পরীক্ষা, তিনি রাজনৈতিক পরামর্শ গ্রহণ করবেন নাকি সাংবিধানিক ও আইনি পরামর্শ অনুসরণ করবেন।’

প্রেসিডেন্ট আলভি সম্পর্কে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার হিসেবে রাজনৈতিক সংঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করা তার দায়িত্ব।’ তবে শেষ পর্যন্ত সেনাপ্রধান নিয়োগে শেহবাজের সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট আলভি অনুমোদন করায় এ নিয়ে আপাত আর কোনও সংকট হয়তো হবে না। তবে শেহবাজের সিদ্ধান্ত অনুমোদনের আগে ইমরানের সঙ্গে আলভির বৈঠককে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

করাচিতে ৩ বাংলাদেশি নারী গ্রেফতার

ইমরানের সঙ্গে আলোচনার পর সেনাপ্রধান নিয়োগে সায় পাক প্রেসিডেন্টের

আপডেট সময় ০৩:১০:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর ২০২২

পরমাণু শক্তিধর দেশ পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান নিযুক্ত হয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মুনির। কয়েক সপ্তাহের জল্পনা-কল্পনা ও গুজবের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ তাকে সেনাবাহিনীর নতুন প্রধান (সিওএএস) হিসেবে বেছে নেন।

পরে শেহবাজের সেই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি। তবে তার আগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি বৃহস্পতিবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের সাথে দেখা করেন এবং নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ইমরান খানের লাহোরের বাসভবনে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বৃহস্পতিবার লাহোরের জামান পার্কে ইমরান ও আলভির মধ্যে এই বৈঠকটি প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলে। বৈঠকে নতুন সেনাপ্রধানসহ সামরিক নিয়োগের সারসংক্ষেপ স্বাক্ষর সম্পর্কিত মূল বিষয়গুলো, এ বিষয়ে পিটিআই-এর অবস্থান এবং আগামী ২৬ নভেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে ইমরানের দলীয় কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা করেন তারা। বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট আলভি ফেডারেল রাজধানী ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং সেখানে তিনি নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের নিয়োগের সারসংক্ষেপে স্বাক্ষর করেন।

অবশ্য কয়েক দিন আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ তার বড় ভাই এবং পিএমএলএন সুপ্রিমো নওয়াজ শরিফের সাথে দেশের প্রধান সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য লন্ডনে একটি বৈঠক করেছিলেন। সেসময় ইমরানের পিটিআই এতে গুরুতর আপত্তি তুলেছিল। যাইহোক, বৃহস্পতিবার ইমরান খান এবং তার পুরানো বলিষ্ঠ এই সহকর্মী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

উল্লেখ্য, পাকিস্তানের বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া চলতি মাসের শেষে অবসরে যাচ্ছেন। তার আগে বৃহস্পতিবার বাজওয়ার উত্তরসূরি বেছে নেন শেহবাজ। ৬২ বছর বয়সী জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া ২০১৬ সাল থেকে ৬ লাখ সদস্যের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন। ২০১৯ সালের আগস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বাজওয়ার চাকরির মেয়াদ তিন বছরের জন্য বৃদ্ধি করেছিলেন। সেই মেয়াদ শেষে আগামী মঙ্গলবার অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ তার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে দেশের নতুন সেনাপ্রধান বেছে নিয়েছেন। অবশ্য সামরিক বাহিনীর নতুন প্রধান কে হবেন তা নিয়ে পাকিস্তানে ইমরান খান ও ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উত্তেজনা ছিল চরমে। এই বিষয়টি উত্তেজনা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা ছিল, কারণ আরিফ আলভি দীর্ঘদিন ইমরান খানের বিশ্বস্ত সহকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন এবং বর্তমানে দেশটির প্রেসিডেন্ট।

আর তাই প্রেসিডেন্ট আলভি নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ নিয়ে শেহবাজের সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেবেন কিনা সেটি নিয়েও ছিল শঙ্কা। এ কারণেই সেনাপ্রধান নিয়োগের পরপরই পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ আশা প্রকাশ করেন, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি এই নিয়োগকে ‘বিতর্কিত’ করবেন না এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজের পরামর্শকে সমর্থন করবেন।

পরে তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্টের উচিত প্রধানমন্ত্রীর ‘পরামর্শকে’ সমর্থন করা যাতে ‘বিতর্কের সৃষ্টি না হয়’। তার ভাষায়, ‘এটি আমাদের দেশ এবং অর্থনীতিকে সঠিক পথে যেতে সহায়তা করবে। বর্তমানে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছে।’ তার ভাষায়, ‘এটি প্রেসিডেন্ট আলভির জন্যও একটি পরীক্ষা, তিনি রাজনৈতিক পরামর্শ গ্রহণ করবেন নাকি সাংবিধানিক ও আইনি পরামর্শ অনুসরণ করবেন।’

প্রেসিডেন্ট আলভি সম্পর্কে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার হিসেবে রাজনৈতিক সংঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করা তার দায়িত্ব।’ তবে শেষ পর্যন্ত সেনাপ্রধান নিয়োগে শেহবাজের সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট আলভি অনুমোদন করায় এ নিয়ে আপাত আর কোনও সংকট হয়তো হবে না। তবে শেহবাজের সিদ্ধান্ত অনুমোদনের আগে ইমরানের সঙ্গে আলভির বৈঠককে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।