‘একটা ব্রিজের জন্য কষ্ট করতাছি। এই নদীর ওপর একটা ব্রিজ অইলে আঙ্গো খুব বালা অইতো। অনেক কষ্ট কইরা আমাদের নদী পার হতে অয়। বর্ষায় যহন পানি বেশি থাহে, তহন অনেক রোগী নদী পার অইবার আগেই মরে যায়। নদীর এই পারেই কষ্ট কইরা থাহন লাগে। অনেকেই সয়াবিন ও মাছ চাষসহ নানা ফসল ফলায়। কত মানুষ আইলো, আমাগো ব্রিজ কইরা দেবে কইলো। কিন্তু ব্রিজ আর অইলো না। আঙ্গো একটাই দাবি এইহানে ব্রিজ চাই।’
শনিবার সরেজমিন চরাঞ্চলে গেলে এ প্রতিবেদককে এভাবেই কষ্টের কথা বলছিলেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়নের চরকাছিয়া গ্রামের আলতাফ মাষ্টার খেয়াঘাট এলাকার কৃষকরা।
রায়পুরের চরকাছিয়া ও বরিশালের গোবিন্দপুর এলাকার সীমান্তবর্তী খেয়াঘাট এলাকায় গিয়ে জানা যায়, রায়পুরের দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়নটি একেবারেই বিচ্ছিন্ন। স্বাধীনতার পর থেকেই স্থানীয়রা মেঘনা নদীর সংযোগ খালের চরকাছিয়া গ্রামে সেতু নির্মাণের দাবি করে এলেও আজও সেতু নির্মাণ হয়নি। এই নদী পার হতে গিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এছাড়াও কেউ অসুস্থ হলে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে অনেক সময় নদী পার হওয়ার আগেই কেউ কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।
পরিবহণ সুবিধার অভাবে ধান, সয়াবিন, চাষকৃত পুকুরের মাছসহ উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সঠিক মূল্য পায় না কৃষকরা। এভাবেই চরম ভোগান্তি নিয়ে চলছে অর্ধলাখ মানুষ।
চরবাসির এই দুর্ভোগের কথা ভেবে হাজিমারা আশ্রয়কেন্দ্রের ভেতর দিয়ে চরের মধ্যে দিয়ে বরিশালের গোবিন্দপুর মেঘনা নদীর খাল পর্যন্ত তিন কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা গ্রামবাসীর সহযোগিতায় নির্মাণ করেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদার।
শিক্ষার্থী মিজান হোসেন ও সাহেদ মনি বলেন, বছরের অধিকাংশ সময় নদীতে অনেক পানি থাকে। অনেক সময় নৌকা দিয়ে নদী পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। এছাড়া শুকনো মৌসুমে নদী পার হতে গিয়ে কাদাপানিতে জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যায়।
কৃষক মাহমুদ আলী বলেন, আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে হাজার হাজার মানুষ কষ্ট করে নদী পার হচ্ছে। বর্ষাকালে নদীতে পানি বেড়ে গেলে দুটি হাট-বাজারে যাওয়া যায় না। এছাড়া পরিবহণ সুবিধা না থাকায় আমাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সঠিক মূল্য পাই না।
দক্ষিন চরবংশী ইউপি সদস্য দিদার হোসেন মোল্লা বলেন, এই নদীতে সেতু না থাকায় সারা বছরই আমাদের খুব কষ্ট করতে হয়। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গেলে আমাদেরকেও এর অংশীদার করতে হবে। তাই সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় দায়িত্বশীলদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এলকেএইচ উপকূলীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুনুর রশীদ জানান, দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়ন থেকে নদী পার হয়ে আমাদের স্কুলে শতাধিক শিক্ষার্থী আসে। স্কুলে আসার সময় অনেক শিক্ষার্থীদের বই-খাতা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় নৌকা ডুবে যায়। এছাড়া নদী পার হয়ে স্কুলে না আসার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ছে। তাই দ্রুত ওই স্থানে ব্রিজ তৈরি করার দাবি জানাচ্ছি।
দক্ষিন চরবংশী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরায়েজি বলেন, উত্তর এবং দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়ন থেকে বরিশালের মেহেদীগন্জ ও গোবিন্দপুর ইউনিয়ন একেবারেই বিচ্ছিন্ন। প্রায় দুই হাজার গ্রামবাসী চরবংশী ইউনিয়নসহ জেলা ও উপজেলা শহরে যাতায়াত করে। সারা বছরই তাদের নৌকায় কষ্ট করে পার হতে হয়। গত ১৫ বছর ব্রিজের দাবি থাকলেও আজও নদীর শাখা খালটির উপর ব্রিজ নিমার্ণ হয়নি। বর্ষায় নদীতে পানি বেশি থাকে, মাঝে মাঝে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। কেউ অসুস্থ হলে সময়মতো চিকিৎসাও করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় নদী পার হওয়ার আগেই বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।