কুমিল্লার হোমনায় আলোচিত তিন খুনের ঘটনা (ট্রিপল মার্ডার) উন্মোচন করেছে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত আক্তার হোসেনকে (২৭) নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল রাতে হোমনার শ্রীমদ্দি চরের গাও এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাকে আটক করে। আক্তার হোসেন, শ্রীমদ্দি চরের গাও এলাকার হক মিয়ার ছেলে।
হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আক্তার হোসেন স্বীকার করেছেন যে, নিহত মাহমুদার সঙ্গে তার পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় মাহমুদা তার কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ধার নেন, যা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীর্ঘদিন আক্তারকে ঘুরিয়ে রেখেছিলেন। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে বেশ কয়েকবার বিবাদ হয়।
গত বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আক্তারকে তার পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার বাড়িতে ডেকে নেন মাহমুদা। রাতের খাবার শেষে মাহমুদার ছেলে সাহাত এবং ভাতিজি তিশা ঘুমিয়ে গেলে, গভীর রাতে মাহমুদা ও আক্তারের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে আক্তার মাহমুদার মাথায় আঘাত করেন এবং তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করেন।
পরে আক্তার ভাবতে থাকে তিশা ও সাহাত তো আক্তারকে দেখেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা যদি আক্তারের কথা বলে দেয় সেই আশঙ্কা থেকে তাদের দুজনকেও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে মরদেহ তিনটি এক খাটের ওপর রেখে পালিয়ে যান হত্যাকারী আক্তার।
ওসি জয়নাল আবেদীন জানান, তিনজনকে হত্যার ঘটনায় নিহত মাহমুদার বাবা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করার পর ঘটনার রহস্য উদঘাটনে নামে পুলিশ। তদন্তের মাধ্যমে পুলিশ হত্যাকারী আক্তারকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। গতকাল শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে শ্রীমদ্দি চরের গাও এলাকার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শনিবার বিকেলে আদালতে তোলা হলে ঘটনার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন ঘাতক আক্তার।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে কুমিল্লার হোমনার বড় ঘাগুটিয়া এলাকায় শাহপরানের ঘরে তিনজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ তিনটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এর আগে বুধবার রাতের কোনো একসময় তিনজনকে হত্যা করে মরদেহ একটি খাটের ওপর ফেলে রাখা হয়।
নিহতরা হলেন- বড় ঘাগুটিয়া এলাকার মো. শাহপরানের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (৩৫), তাদের ৯ বছরের ছেলে সাহাত এবং প্রতিবেশী মামাতো ভাইয়ের মেয়ে তিশা (১৪)।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতেই নিহত মাহমুদার বাবা আবুল হোসেন বাদী হয়ে হোমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘাতক আক্তারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে শনিবার বিকেলে আক্তারকে আদালতে তোলা হয়েছে।