বিনা শুল্কে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা ইঞ্জিন চালিত ট্রলার বোঝাই ভারতীয় কয়লার চালান জব্দ করা হলেও চোরাকারবারি চক্রের সদস্যদের সন্ধান পায়নি থানা পুলিশ।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানা এলাকার হাওর ও সীমান্ত জনপদের স্থানীয় মানুষের দেওয়া তথ্যের ভিক্তিতে থানার টেকেরঘাট অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ একটি ২৮ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিনযুক্ত ষ্টিল বডি ট্রলার ৩০ মেট্রিকটন ভারতীয় চোরাচালানের কয়লার অবৈধ চালান মালিকবিহীন অবস্থায় জব্দ তালিকা করেন শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে উপজেলার পাটলাই নদীর তীরবর্তী শ্রীপুর বাজার মসজিদ ঘাট থেকে।

শনিবার সুনামগঞ্জ আদালত থেকে জব্দকৃত ট্রলার ও কয়লার চালানের বিষয়ে প্রাপ্ত প্রতিবেদন সুত্রে ওই তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশি এমন ভুমিকা নিয়ে জনমনে নানা মুখরোচক সমালোচনা শুরু হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পরবর্তী কোন এক সময়ে সুনামগঞ্জ-২৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ (বিজিবি)’র তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও বিওপির দায়িত্বপূর্ণ লালঘাট পশ্চিমপাড়া ও কলাগাঁও সীমান্ত ছড়া নদীতে একাধিক ট্রলারে বিনা শুল্কে নিয়ে আসা ভারতীয় চোরাচালানের অবৈধ কয়লার চালান লোড করছে চোরাকারবারি চক্রের সদস্যরা এমন তথ্য স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ব্যাটালিয়নের চারাগাঁও বিওপি’র ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার শফিকুল ইসলাম ও হাবিলদার হুমায়ুন ও টেকেরঘাট অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই আবীর দাশকে বারবার অবহিত করেন। কিন্ত তারা নানা কৌশলে ভারতীয় চোরাচালানের কয়লার চালান জব্দ কিংবা কয়লা লোড হচ্ছে এমন এলাকায় আসতে গড়িমসি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার ভোর রাতে এমন একটি অবৈধ কয়লার চালান নৌপথে সরিয়ে নেওয়ার পথে তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের চারাগাঁও শুল্ক ষ্টেশনের অধীনে নৌপথে নিয়োজিত এক প্রহরী আটক করে অতিরিক্ত চাঁদার জন্য দেন দরবার শুরু করেন চোরাচালানী চক্রের সদস্যদের সঙ্গে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি ভিডিও চিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দিলে অবৈধ ভারতীয় চোরাচালানের কয়লা বোঝাই ‘তামান্না অ্যান্ড সূবর্ণা’ নৌ পরিবহন নামক ট্রলারটি হাওরে ফেলে রেখে চম্পট দেয় ট্রলারের মাঝি, সূকানী ও চোরাকারবারি চক্রের সদস্যরা।

এরপর চারাগাঁও শুল্ক ষ্টেশনে কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের পরামর্শে ওই প্রহরী অন্যদের সহযোগীতায় অবৈধ কয়লা বোঝাই ট্রলারটিকে গোপন সমঝোতায় চোরাকারবারিদের হেফাজেতে ফিরিয়ে দিতে সরিয়ে নিয়ে রাখেন শ্রীপুর বাজার মসজিদ ঘাটে।

এরপর হাওর ও সীমান্তজনপদেও একাধিক লোকজন বিষয়টি থানা পুলিশ ও টেকেরঘাট অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জকে অবহিত করলে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশে শ্রীপুর বাজার মসজিদ ঘাট থেকে চোরাকারবারীদের রক্ষায় ভারতীয় জ্বালানী কয়লা হিসাবে মালিক বিহিন অবস্থায় ট্রলারটির জব্দ তালিকা তৈরি করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাহিরপুরের হাওর ও সীমান্তজনপদেও একাধিক লোকজন শুক্রবার ও শনিবার গণমাধ্যমকে জানান, এসব নতুন কিছু নয়। প্রায় রাতেই পুলিশ-বিজিবির কিছু অসৎ সদস্যদের ছত্রছায়ায় চোরাচালানের কয়লা –চুনাপাথর , মাদক, চিনিসহ নানা ভারতীয় চোরাচালানের পণ্যসামগ্রী থেকে চাঁদা আদায়ে থাকা কথিত কয়েকজন সোর্সের ইশারায় এসব চোরাচালান নির্বিঘ্নে চলে আসছে।

শুক্রবার সুনামগঞ্জ-২৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ (বিজিবি)’র তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও বিওপির হাবিলদার হুমায়ুনের নিকট কয়লা চোরাচালানে বাঁধা দেওয়ায় লালঘাট পশ্চিচম পাড়ার একাধিক ব্যাক্তির সঙ্গে অসদাচরণ ও সোর্সদের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়ে স্বীকার করেন, সীমান্তের কলাগাঁও এলাকায় আউয়াল ও চারাগাঁও এলাকায় শফিকুল ইসলাম ভৈরব (একাধিক চোরাচালান মামলায় আদালতে বিচারাধীন আসামি) নামে উনার দু’জন সোর্স রয়েছে।

সুনামগঞ্জ-২৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ (বিজিবি)’র তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও বিওপির ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার শফিকুল ইসলামের নিকট বৃহস্পতিবার রাতে সীমান্তের লালঘাট পশ্চিমপাড়া ও কলাগাঁও সীমান্তছড়া নদীর নৌপথে ভারতীয় কয়লা চোরাচালান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোবাইলফোনের নেটওয়ার্ক সমস্যা দেখিয়ে তিনি কৌশলে কয়লা চোরাচালান প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।

শনিবার তাহিরপুর থানার টেকেরঘাট অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই আবীর দাশের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়লা ও ট্রলারসহ প্রায় ৮ লাখ টাকার মালামাল জব্দ করেছি। কেউ মালিকানা দাবি বা তাৎক্ষণিকভাবে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় মালিকবিহীন অবস্থায় আপাতত জব্দ তালিকা তৈরি করেছি।

স্থানীয় লোকজনের দেওয়া তথ্য অনুসারে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এলসিবিহীন ভারতীয় চোরাচালের কয়লার চালান ছিল ওই ট্রলারে তারপরও জব্দ তালিকায় শুল্ক ফাকি দিয়ে ভারতীয় চোরাচালানের কয়লা উল্লেখ না করে ভারতীয় জ্বালানী কয়লা বলে প্রতিবেদন বা জব্দ তালিকা তৈরি করায় আদালতে গিয়ে ফের চোরাকারবারি চক্রের সদস্যরা ভুয়া চালানপত্র, অন্য কারো পূরনো এলসির কাগজপত্র দিয়ে মালিকানা দাবি করে আইনের ফাঁক-ফোকর তৈরি করে অবৈধ কয়লার চালান ও ট্রলার ছাড়িয়ে নিতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই এসআই বলেন, এটি আদালত বিবেচনা করবেন।