ঢাকা ০২:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পর আমেরিকা প্রকাশ্যে এসে বড় ঘোষণা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ছোট দারোগার হাট বাজার এলাকায় উল্টো পথে আসা ট্রাকের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ বোরহানউদ্দিনে পৌর বিএনপির সদস্য সচিব আবু জাফর মৃধা’র বসতবাড়িতে হামলা। বনানীর আবাসিক হোটেলে মিলল ৯৮৪ বোতল বিদেশি মদ গাজীপুর কাস্টমসের পিওন কাওসারের কোটি টাকার সম্পত্তি পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যায়িত করার দাবি বাকেরগঞ্জের বিরঙ্গল দারুসুন্নাত নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসাটির বিভিন্ন অনিয়ম রয়েছে গোপালগঞ্জের সোহাগ একসঙ্গে দুই সরকারি চাকরি করেন বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

৪ লাখ মানুষের সেবায় ৭ ডাক্তার, চরমভাবে ব্যাহত বন্যার্তদের চিকিৎসাসেবা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে উপকূলীয় মেঘনার চরাঞ্চল এলাকা থেকে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। বেরিয়ে আসছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। সঙ্গে দেখা দিচ্ছে রোগব্যাধি। ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ জ্বর, সর্দি–কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ। অনেকের হাতে–পায়ে ঘা, খোস–পাঁচড়া দেখা দিচ্ছে।

গত ১২ দিন ধরে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করায় লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বয়স্ক ও শিশুরা জ্বর, সর্দি–কাশি ও ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

বন্যার্তরা বলছেন, চারদিক এখনও পানিতে তলিয়ে আছে। ডাক্তার এবং পর্যাপ্ত ওষুধপত্র ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

রায়পুর উপজেলায় প্রায় চার লক্ষ মানুষের বসবাস। ১৯৭২ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির কার্যক্রম শুরু করা হলেও আজও ডাক্তারদের ৩১টি পদের মধ্য ১৩ জনই নাই। তার মধ্যে হাসপাতালে আছেন ৭ জন এবং উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আছেন ৬ জন ডাক্তার। দুই চিকিৎসক ছুটি না নিয়েই গত ১২ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

অপরদিকে চরম সংকটের মধ্যে ৫ জন ডাক্তারকেই সাবেক এমপি ও সিভিল সার্জনের সুপারিশে সদর হাসপাতালে ডেপুটেশনে রাখা হয়েছে। কিন্তু তারা বেতন তুলছেন রায়পুর থেকে। এতে হাসপাতালে ডাক্তার-নার্সের চরম সংকটে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে প্রতিদিন ৫-৬শ রোগী।

গত ১২ দিনের টানা ভাড়ি বর্ষণ ও জোয়ারের কারণে সৃষ্ট বন্যায় বুধবার (২৮ আগষ্ট) পর্যন্ত ১০ জন সাপে কাটার রোগী এবং প্রায় শতাধিক ডায়রিয়া ও ঠান্ডা-শ্বাসকস্টের রুগী চিকিৎসা নেন বলে জরুরী বিভাগের ডাক্তার জানান।

বন্যায় ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রীত মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে চরম বিঘ্ন ঘটছে বলে জানান ইউএনও মো. ইমরান খান।

তিনি বলেন, পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকা চিকিৎসা সেবা দিতে বিঘ্ন ঘটছে বলে জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহানসহ সিভিল সার্জনকে জানানে হয়েছে।

জানা যায়, রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও ১০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন আছে, বরাদ্দ আছে এবং কিছু চিকিৎসা সরঞ্জামও থাকলেও চিকিৎসা নেই। দূষিত পানি পান ও বন্যার পানি মাড়িয়ে চলাফেরা করায় পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন জেলার বন্যার্ত মানুষ।

হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই হাসপাতালে ৩১ জনের মধ্যে ১৩ ডাক্তার এখন দায়িত্ব পালন করছেন। গাইনি, শিশু ও মেডিসিন ছাড়া কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। ৩৬ জন নার্সের মধ্যে ১০ জনই নেই।

ডাকাতিয়া ও মেঘনার উপকূল অঞ্চলের লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর-জেলা সদর) আসনে প্রায় ৪ লক্ষাধিক লোকের বসবাস। এ অঞ্চলের বাসিন্দারা চিকিৎসা সেবার জন্য ১০০ শয্যার আবেদন করলেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও তা অনুমোদন হয়নি। সামান্য রোগেও সরকারি চিকিৎসাসেবা অপ্রতুল। নির্ভর করতে হয় রায়পুর শহরের ১৫টি প্রাইভেট হাসপাতাল চিকিৎসার ওপর। উন্নত চিকিৎসার জন্য ছুটতে হয় জেলা সদর অভিমুখে নয়তো রাজধানীতে।

রায়পুর উপজেলার চরবংশী ইউপির চরকাছিয়া এলাকার বানভাসি মাজেদা বেগম (৪৮) জানান, এ গ্রামের অনেক বসতভিটায় বন্যার পানি ছিলো। এ পানির ভেতরেই তাদের চলাচল করতে হয়েছে। এতে তার হাতে-পায়ে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। গ্রামের সব পরিবারেই কোনো না কোনো রোগ দেখা দিয়েছে।

রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. বাহারুল আলম জানান, হাসপাতালে প্রতিদিন জরুরি বিভাগ ৫-৬শ রোগীর চিকিৎসা নিতে আসেন। এ হাসপাতালে ডাক্তার থাকার কথা ৩১ জন, আছেন ১৭ জন। স্থানীয় এমপি ও সিভিলসার্জনের সুপারিশে ৫ জন ডাক্তারই সদর হাসপাতালে ডেপুটেশনে।
স্বাস্থ্যকর্মীরা নৌকায় করে দুর্গম এলাকায় বানভাসিদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিচ্ছেন।

লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, বানভাসিদের চিকিৎসাসেবা দিতে ৬৩টি ও একটি বিশেষ মেডিকেল টিম কাজ করছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের ৪০টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও তিনটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র পানিতে ডুবে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যার্তদের ভাল চিকিৎসা দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পর আমেরিকা প্রকাশ্যে এসে বড় ঘোষণা

৪ লাখ মানুষের সেবায় ৭ ডাক্তার, চরমভাবে ব্যাহত বন্যার্তদের চিকিৎসাসেবা

আপডেট সময় ১১:১৩:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে উপকূলীয় মেঘনার চরাঞ্চল এলাকা থেকে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। বেরিয়ে আসছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। সঙ্গে দেখা দিচ্ছে রোগব্যাধি। ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ জ্বর, সর্দি–কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ। অনেকের হাতে–পায়ে ঘা, খোস–পাঁচড়া দেখা দিচ্ছে।

গত ১২ দিন ধরে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করায় লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বয়স্ক ও শিশুরা জ্বর, সর্দি–কাশি ও ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

বন্যার্তরা বলছেন, চারদিক এখনও পানিতে তলিয়ে আছে। ডাক্তার এবং পর্যাপ্ত ওষুধপত্র ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

রায়পুর উপজেলায় প্রায় চার লক্ষ মানুষের বসবাস। ১৯৭২ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির কার্যক্রম শুরু করা হলেও আজও ডাক্তারদের ৩১টি পদের মধ্য ১৩ জনই নাই। তার মধ্যে হাসপাতালে আছেন ৭ জন এবং উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আছেন ৬ জন ডাক্তার। দুই চিকিৎসক ছুটি না নিয়েই গত ১২ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

অপরদিকে চরম সংকটের মধ্যে ৫ জন ডাক্তারকেই সাবেক এমপি ও সিভিল সার্জনের সুপারিশে সদর হাসপাতালে ডেপুটেশনে রাখা হয়েছে। কিন্তু তারা বেতন তুলছেন রায়পুর থেকে। এতে হাসপাতালে ডাক্তার-নার্সের চরম সংকটে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে প্রতিদিন ৫-৬শ রোগী।

গত ১২ দিনের টানা ভাড়ি বর্ষণ ও জোয়ারের কারণে সৃষ্ট বন্যায় বুধবার (২৮ আগষ্ট) পর্যন্ত ১০ জন সাপে কাটার রোগী এবং প্রায় শতাধিক ডায়রিয়া ও ঠান্ডা-শ্বাসকস্টের রুগী চিকিৎসা নেন বলে জরুরী বিভাগের ডাক্তার জানান।

বন্যায় ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রীত মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে চরম বিঘ্ন ঘটছে বলে জানান ইউএনও মো. ইমরান খান।

তিনি বলেন, পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকা চিকিৎসা সেবা দিতে বিঘ্ন ঘটছে বলে জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহানসহ সিভিল সার্জনকে জানানে হয়েছে।

জানা যায়, রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও ১০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন আছে, বরাদ্দ আছে এবং কিছু চিকিৎসা সরঞ্জামও থাকলেও চিকিৎসা নেই। দূষিত পানি পান ও বন্যার পানি মাড়িয়ে চলাফেরা করায় পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন জেলার বন্যার্ত মানুষ।

হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই হাসপাতালে ৩১ জনের মধ্যে ১৩ ডাক্তার এখন দায়িত্ব পালন করছেন। গাইনি, শিশু ও মেডিসিন ছাড়া কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। ৩৬ জন নার্সের মধ্যে ১০ জনই নেই।

ডাকাতিয়া ও মেঘনার উপকূল অঞ্চলের লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর-জেলা সদর) আসনে প্রায় ৪ লক্ষাধিক লোকের বসবাস। এ অঞ্চলের বাসিন্দারা চিকিৎসা সেবার জন্য ১০০ শয্যার আবেদন করলেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও তা অনুমোদন হয়নি। সামান্য রোগেও সরকারি চিকিৎসাসেবা অপ্রতুল। নির্ভর করতে হয় রায়পুর শহরের ১৫টি প্রাইভেট হাসপাতাল চিকিৎসার ওপর। উন্নত চিকিৎসার জন্য ছুটতে হয় জেলা সদর অভিমুখে নয়তো রাজধানীতে।

রায়পুর উপজেলার চরবংশী ইউপির চরকাছিয়া এলাকার বানভাসি মাজেদা বেগম (৪৮) জানান, এ গ্রামের অনেক বসতভিটায় বন্যার পানি ছিলো। এ পানির ভেতরেই তাদের চলাচল করতে হয়েছে। এতে তার হাতে-পায়ে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। গ্রামের সব পরিবারেই কোনো না কোনো রোগ দেখা দিয়েছে।

রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. বাহারুল আলম জানান, হাসপাতালে প্রতিদিন জরুরি বিভাগ ৫-৬শ রোগীর চিকিৎসা নিতে আসেন। এ হাসপাতালে ডাক্তার থাকার কথা ৩১ জন, আছেন ১৭ জন। স্থানীয় এমপি ও সিভিলসার্জনের সুপারিশে ৫ জন ডাক্তারই সদর হাসপাতালে ডেপুটেশনে।
স্বাস্থ্যকর্মীরা নৌকায় করে দুর্গম এলাকায় বানভাসিদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিচ্ছেন।

লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, বানভাসিদের চিকিৎসাসেবা দিতে ৬৩টি ও একটি বিশেষ মেডিকেল টিম কাজ করছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের ৪০টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও তিনটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র পানিতে ডুবে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যার্তদের ভাল চিকিৎসা দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি।