ঢাকা ০৮:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন বিটিভির সংবাদ বেসরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারের প্রয়োজন নেই : নাহিদ শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ র‍্যাব ক্যাম্পের অভিযানে দু’কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার, আটক-১ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলেই ভাসতে থাকে প্রথম শ্রেণীর জাজিরা পৌরসভা। চট্টগ্রামে সাবেক সাংসদ বাদলের কবরে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে মুক্তি পাচ্ছে ‘রুম নম্বর ২০১১’ গণতন্ত্র ও বিএনপি সমান্তরাল : মির্জা ফখরুল আ.লীগ দেশকে পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল : তারেক রহমান

পুলিশ কর্মকর্তার মা-বাবাকে হত্যা, যে বিষয় ঘিরে চলছে তদন্ত

যাত্রাবাড়ীতে শফিকুর রহমান-ফরিদা ইয়াসমিন দম্পতিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় খুনিদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। পারিবারিক জমিসংক্রান্ত বিরোধ সামনে রেখে তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। এছাড়া ঘটনাস্থল যাত্রাবাড়ী কোনাপাড়ার ওই বাড়ির অন্য বাসিন্দাদেরও নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ।

প্রযুক্তিগত মাধ্যমে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করেই খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশের একাধিক দল। ঘটনাস্থলে কোনো সিসি ক্যামেরা না থাকায় সেখান থেকে কোনো ফুটেজ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তবে আশপাশের এলাকা থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে খুনিদের শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভিকটিম শফিকুরের চাচাতো ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তার জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছিল ওই পরিবার। এখনো দুটি মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। এ সংক্রান্ত বিরোধ ছাড়া শফিকুর ও তার স্ত্রীর সঙ্গে কারও শত্রুতা খুঁজে পাওয়া যায়নি এখনো। ফলে জমিসংক্রান্ত বিরোধকে গুরুত্ব দিয়ে খুনিদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়াও ওই ভবনের অন্য বাসিন্দাদের সন্দেহ করা হচ্ছে। তাদের মোবাইল ফোনের তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে ৯৯৯-এর মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে কোনাপাড়ার আড়াবাড়ি বটতলার বাড়িতে যায় পুলিশ। সেখানে তারা বাসার নিচতলায় শফিকুরের লাশ দেখতে পান। তার গলা ও মাথায় অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। এরপর দ্বিতীয়তলায় একটি কক্ষে মশারির ভেতর স্ত্রী ফরিদার লাশ পাওয়া যায়। তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় তাদের ছেলে পুলিশের বিশেষ শাখার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে ইমন যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন। ওই মামলার এজাহারে তিনি বলেন, বুধবার রাত ১টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার মধ্যে তাদের বাড়িতে দুষ্কৃতকারীরা ঢুকে তার মা-বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করে। পূর্বশত্রুতার জেরে এ হত্যা করা হয়েছে।

শুক্রবার ভিকটিম শফিকুর রহমানের জামাতা আরিফুর রহমান বলেন, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা এসে আশপাশে বাড়িগুলো থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। তবে সেসব ফুটেছে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তারা। এছাড়াও তদন্তসংশ্লিষ্টরা মামলার বাদী ইমনের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। তবে হত্যার কারণ ও খুনিদের শনাক্তের বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।

এ ঘটনায় ভাড়াটিয়াদের সন্দেহ করছে পুলিশ, তাদের কেউ কেউ বাইরে আছে কি না জানতে চাইলে আরিফুর রহমান বলেন, চতুর্থতলার একজন ভাড়াটিয়া বাসায় থাকছেন না। তিনি এলাকাতেই তার এক আত্মীয়ের বাসায় চলে গেছেন। তিনি একা থাকেন, তাই এ ঘটনার পর ভয় পেয়েছেন। যাওয়ার আগে ঘরের চাবি দিয়ে বাড়ির সবাইকে এ কথা বলে গিয়েছেন। পুলিশ কোনো ভাড়াটিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।

শফিকুর রহমানের ভাই মফিজুর রহমান বলেন, যাদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ, তারা আমাদের শরিক ও ভাগীদার হলেও খুবই দুষ্টপ্রকৃতির। আমাদের চাচাতো ভাইয়ের এক ছেলে শফিকুর ভাইয়ের থেকে জোর করে কিছু জমি কিনতে চেয়েছে কয়েকবার। কিন্তু ভাই সেটা দেননি। এটা নিয়েই তারা একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চাচাতো ভাইয়ের ছেলে ও তার পরিবারসহ অন্য সন্দেহভাজন আত্মীয়দের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল ফোনের তথ্য ও অন্যান্য আলামত পর্যালোচনা করে হত্যাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের বাড়ির ভাড়াটিয়াদেরও সন্দেহ করা হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, হত্যাকারীদের এখনো শনাক্ত করা যায়নি। সম্ভাব্য সব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত চলছে। এখনই নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

নিহত শফিকুর রহমান জনতা ব্যাংকের গাড়িচালক হিসাবে ২ বছর আগে অবসরে যান। পরিবার নিয়ে তিনি ওই এলাকায় দীর্ঘদিন বসবাস করছিলেন। সেখানে তিনি চারতলা ওই বাড়িও নির্মাণ করেছেন। নিচতলার এক পাশ এবং তৃতীয় ও চতুর্থতলা ভাড়া দেওয়া, তিনি নিজে দ্বিতীয়তলায় থাকতেন। তার ছেলে ও তার স্ত্রী একই বাসায় থাকতেন। বুধবার রাতে ইমন দাদার বাড়ি ফেনী ও পরে তার স্ত্রী বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

পুলিশ কর্মকর্তার মা-বাবাকে হত্যা, যে বিষয় ঘিরে চলছে তদন্ত

আপডেট সময় ১০:২৯:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

যাত্রাবাড়ীতে শফিকুর রহমান-ফরিদা ইয়াসমিন দম্পতিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় খুনিদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। পারিবারিক জমিসংক্রান্ত বিরোধ সামনে রেখে তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। এছাড়া ঘটনাস্থল যাত্রাবাড়ী কোনাপাড়ার ওই বাড়ির অন্য বাসিন্দাদেরও নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ।

প্রযুক্তিগত মাধ্যমে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করেই খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশের একাধিক দল। ঘটনাস্থলে কোনো সিসি ক্যামেরা না থাকায় সেখান থেকে কোনো ফুটেজ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তবে আশপাশের এলাকা থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে খুনিদের শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভিকটিম শফিকুরের চাচাতো ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তার জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছিল ওই পরিবার। এখনো দুটি মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। এ সংক্রান্ত বিরোধ ছাড়া শফিকুর ও তার স্ত্রীর সঙ্গে কারও শত্রুতা খুঁজে পাওয়া যায়নি এখনো। ফলে জমিসংক্রান্ত বিরোধকে গুরুত্ব দিয়ে খুনিদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়াও ওই ভবনের অন্য বাসিন্দাদের সন্দেহ করা হচ্ছে। তাদের মোবাইল ফোনের তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে ৯৯৯-এর মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে কোনাপাড়ার আড়াবাড়ি বটতলার বাড়িতে যায় পুলিশ। সেখানে তারা বাসার নিচতলায় শফিকুরের লাশ দেখতে পান। তার গলা ও মাথায় অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। এরপর দ্বিতীয়তলায় একটি কক্ষে মশারির ভেতর স্ত্রী ফরিদার লাশ পাওয়া যায়। তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় তাদের ছেলে পুলিশের বিশেষ শাখার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে ইমন যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন। ওই মামলার এজাহারে তিনি বলেন, বুধবার রাত ১টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার মধ্যে তাদের বাড়িতে দুষ্কৃতকারীরা ঢুকে তার মা-বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করে। পূর্বশত্রুতার জেরে এ হত্যা করা হয়েছে।

শুক্রবার ভিকটিম শফিকুর রহমানের জামাতা আরিফুর রহমান বলেন, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা এসে আশপাশে বাড়িগুলো থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। তবে সেসব ফুটেছে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তারা। এছাড়াও তদন্তসংশ্লিষ্টরা মামলার বাদী ইমনের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। তবে হত্যার কারণ ও খুনিদের শনাক্তের বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।

এ ঘটনায় ভাড়াটিয়াদের সন্দেহ করছে পুলিশ, তাদের কেউ কেউ বাইরে আছে কি না জানতে চাইলে আরিফুর রহমান বলেন, চতুর্থতলার একজন ভাড়াটিয়া বাসায় থাকছেন না। তিনি এলাকাতেই তার এক আত্মীয়ের বাসায় চলে গেছেন। তিনি একা থাকেন, তাই এ ঘটনার পর ভয় পেয়েছেন। যাওয়ার আগে ঘরের চাবি দিয়ে বাড়ির সবাইকে এ কথা বলে গিয়েছেন। পুলিশ কোনো ভাড়াটিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।

শফিকুর রহমানের ভাই মফিজুর রহমান বলেন, যাদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ, তারা আমাদের শরিক ও ভাগীদার হলেও খুবই দুষ্টপ্রকৃতির। আমাদের চাচাতো ভাইয়ের এক ছেলে শফিকুর ভাইয়ের থেকে জোর করে কিছু জমি কিনতে চেয়েছে কয়েকবার। কিন্তু ভাই সেটা দেননি। এটা নিয়েই তারা একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চাচাতো ভাইয়ের ছেলে ও তার পরিবারসহ অন্য সন্দেহভাজন আত্মীয়দের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল ফোনের তথ্য ও অন্যান্য আলামত পর্যালোচনা করে হত্যাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের বাড়ির ভাড়াটিয়াদেরও সন্দেহ করা হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, হত্যাকারীদের এখনো শনাক্ত করা যায়নি। সম্ভাব্য সব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত চলছে। এখনই নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

নিহত শফিকুর রহমান জনতা ব্যাংকের গাড়িচালক হিসাবে ২ বছর আগে অবসরে যান। পরিবার নিয়ে তিনি ওই এলাকায় দীর্ঘদিন বসবাস করছিলেন। সেখানে তিনি চারতলা ওই বাড়িও নির্মাণ করেছেন। নিচতলার এক পাশ এবং তৃতীয় ও চতুর্থতলা ভাড়া দেওয়া, তিনি নিজে দ্বিতীয়তলায় থাকতেন। তার ছেলে ও তার স্ত্রী একই বাসায় থাকতেন। বুধবার রাতে ইমন দাদার বাড়ি ফেনী ও পরে তার স্ত্রী বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান।