মানুষ চাইলে কিনা পারে? এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ ভারতের মণিপুর রাজ্যের ইম্ফলের ৪৭ বছর বয়সী বাসিন্দা মইরাংথেম লইয়া। যিনি নিজের প্রবল ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে বিস্তৃত অনুর্বর জমির একটি অংশকে পরিণত করেছেন ৩০০ একরের বিশালাকৃতির এক বনে।
তবে দুই-একদিনে নয়। ৩০০ একরের বন তৈরি করতে তার সময় লেগেছে দীর্ঘ ২০ বছর। এ সময়টায় নির্দিষ্ট ওই জমিতে বিভিন্ন জাতের গাছ লাগিয়েছেন মইরাংথেম লইয়া নামের সেই প্রকৃতিপ্রেমী। তার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি এখনো চলমান আছে।
ছোটকাল থেকেই প্রকৃতির প্রতি আলাদা ভালোবাসা ছিল মইরাংথেমের। অনুর্বর জমিতে গাছ লাগানোর শুরুর গল্পটা তিনি শুনিয়েছেন সংবাদসংস্থা পিটিআইকে। তিনি বলেন, ‘২০০০ সালের শুরুতে, চেন্নাই থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে আমি কাউব্রু পাহাড়ে যাই। বন উজাড়ের মাত্রা এবং গাছপালার পরিমাণ কম দেখে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। তখন প্রকৃতিকে কিছু ফিরিয়ে দিতে নিজের ভেতর একটি শক্তিশালী অনুভুতি অনুভব করি।’
এই অনুভব থেকেই রাজধানী ইম্ফলের বন মারু লাংগোলে যান তিনি। সেখানেই খুঁজে পান সেই অনুর্বর জমি। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ে চড়ার সময় হঠাৎ করে স্থানটির সন্ধান পাই, যেটি অনুর্বর ছিল এবং তাৎক্ষণিকভাবে আমার মনে হয় বৃক্ষরোপণ, ধৈর্য্য এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে এ স্থানটিকে সবুজ ও ঘন বনে পরিণত করা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই স্থানটি ছয় বছরের জন্য আমার বাড়ি ছিল। আমি একটি কুঁড়ে ঘরে একাকি থেকেছি। আমি বাঁশ, ওক, কাঁঠাল গাছ ও সেগুন গাছ রোপন করি।’
বিশালাকৃতির বন তৈরি করা ৪২ বছর বয়সী এ প্রকৃতিপ্রেমী আরও বলেন, ‘আমি চারা কিনতাম এবং যখন সম্ভব তখনই সেগুলো রোপণ করতাম।’ তিনি জানান, বেশিরভাগ চারা তিনি বর্ষাকালে রোপণ করতেন এবং এগুলো দ্রুত বেড়ে উঠত।
এদিকে মইরাংথেম লইয়ার এ কার্যক্রমকে সহায়তা দিয়ে আসছেন বনকর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, মইরাংথেমের তৈরি করা বনে ১০০ প্রজাতির গাছ আছে। যার মধ্যে বাঁশেরই আছে ২৫টি ভিন্ন প্রজাতি। তার এ বনে বাস করে হরিণ, সজারু এবং সাপের মতো প্রাণীগুলো।
সবুজ ও গাছপালার প্রতি তীব্র ভালোবাসা থাকা মইরাংথেম জানিয়েছেন, বনের প্রসার ঘটানো এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ করা তার আজীবনের লক্ষ্য। যদিও পরিবার ও নিজের ভরণ-পোষণের জন্য এখন একটি ফার্মেসীতে কাজ করতে হয় তাকে।