অফিসের রাস্তার দুই পাশে আবর্জনার স্তূপ। প্রধান ফটকেও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। ডিজিটাল প্লেট থাকলেও ঠিকমতো চলছে না। হঠাৎ করে দেখলে বোঝার উপায় নেই এটা একটি কর ও তথ্য সেবা কেন্দ্র। তাও আবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মতো প্রতিষ্ঠানের ই-টিআইএন সংক্রান্ত প্রধান সেবা কেন্দ্র। যেখানে করদাতারা ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন ও সংশোধনের সেবা গ্রহণ করে থাকেন।
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় এনবিআরের প্রধান কার্যালয় থেকে একটু সামনে এগিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বৃহৎ করদাতা ইউনিটিসহ কয়েকটি অফিসের (১২ তলা ভবন) সামেনে-পেছনে এমন পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে।
করদাতাদের বক্তব্য ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বছরের অধিকাংশ সময়ই কর ও তথ্যসেবা কেন্দ্রের প্রধান গেট আড়ালে থাকে। প্রধান ফটকের সামনে সারা বছর বাস-মিনিবাস পার্কিং করা থাকে। ফলে প্রধান ফটক মূল সড়ক থেকে দেখাই যায় না। গেট আড়ালে থাকার কারণে এর আশে-পাশে রাস্তার ময়লা ও আবর্জনার পাশাপাশি প্রস্রাবের গন্ধ পাওয়া যায়। প্রধান ফটক খোলা পাওয়া গেলেও নাক বন্ধ করে ঢুকতে হয় কর সেবাগ্রহীতাদের। প্রধান গেট থেকে প্রবেশ করার পর অফিস রুমে প্রবেশে আগেও দেখা মিলবে আবর্জনার স্তূপ।
সেবা কেন্দ্রে প্রবেশের আরও একটি গেট আছে, বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে পেছনের দিক দিয়ে যেতে হয়। করদাতারা যাকে বলে পেছনের গেট। ওখানকার চিত্র আরও ভয়াবহ। প্রবেশের মুখেই দেখা মিলবে আবর্জনার বড় স্তূপ। পুরো রাস্তায়ই ময়লা-আবর্জনায় ভরা। এরপর যখন অফিসের ভেতরে প্রবেশ করবেন মোটামুটি পরিচ্ছন্ন রূপ দেখতে পাওয়া গেলেও করদাতাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না কর্মকর্তারা।
কর সেবা বিষয়ে উপস্থিত ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন, এখানে ই-টিআইএন খোলা ও সংশোধনের কাজে আসতে হয়। সেবার মান আরও উন্নত হওয়া প্রয়োজন। লোকবল সংকটের কারণে অতিরিক্ত ভিড় থাকলে সেবা পেতে দেরি হয়। এছাড়া ই-টিআইএনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নামের সংশোধন করা যায় এখানে। ঠিকানা বা অন্য কোনো তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে আবার এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে যেতে হয়। ফলে হয়রানি থেকেই যাচ্ছে। এছাড়া কাগজপত্রে জটিলতা থাকলে কর্মচারীদের খুশি করতে টাকা-পয়সা খরচ করতে হয়।
এ বিষয়ে কর ও তথ্য সেবা কেন্দ্রের এক কর্মচারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে আসলে সব সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। করদাতাদের অনেক অভিযোগের সমাধান এখানে সম্ভব নয়। টিআইএন রেজিস্ট্রেশন ও শুধুমাত্র নাম সংশোধনের কাজ এখানে করতে পারি। এর বাইরে আমাদের করার কিছু নেই। আর একটি অভিযোগ সব সময়ই পাওয়া যায় পুরাতন টিআইএন সার্টিফিকেট খোঁজা। অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, আমার ই-টিআইএন কে খুলেছে? তারা যখন নতুন ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন করতে যান, তখনই এমন সমস্যায় পড়ছেন বলে আমাদের কাছে অভিযোগ করেন।
অন্যদিকে কর ও তথ্য সেবা কেন্দ্রে নিয়মিত আসেন এমন এক আয়কর আইনজীবী ইমরান গাজী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এনবিআরের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের কর ও তথ্য সেবা কেন্দ্র একটি ভবনের পেছনে স্থাপন করাই উচিত হয়নি। করদাতারা সেবা নিতে পেছনের গেট ব্যবহার করে থাকে। রাস্তা থেকে বোঝার উপায় নেই, ওটা একটি সেবা কেন্দ্র। সারা বছরই ময়লা ও আবর্জনার স্তূপ থাকে ওই অফিসের আশেপাশে। ফলে নাকে রুমাল দিয়ে অফিসে ঢুকতে হয়। আমরা যারা জানি তারা এখানে মাঝে মধ্যে যাই। সেবা কেন্দ্রটি এমন জায়গায় অবস্থিত, সাধারণ মানুষ তো এ অফিস সম্পর্কে জানেই না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় সদস্য (কর তথ্য ব্যবস্থাপনা ও সেবা) মোহাম্মদ জাহিদ হাছানের সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আসলে আমাদের অফিস সংকট রয়েছে। সেজন্য আগারগাঁওয়ে আমাদের নতুন ভবন করা হয়েছে। ডিসেম্বর নাগাদ আমাদের অফিস স্থানান্তরের কাজ শুরু হবে। এ কারণে পুরাতন অফিস নিয়ে নতুন করে আর ভাবা হচ্ছে না। নতুন ভবনে আধুনিক ও সুন্দর সেবা কেন্দ্র হবে। সেখানে এমন অভিযোগ থাকবে না।
২০১৩ সালের ১ জুলাই এনবিআর ই-টিআইএন ব্যবস্থা চালু করে। নতুন এ পদ্ধতি চালুর পর ১০ ডিজিটের টিআইএনের পরিবর্তে ১২ ডিজিটের টিআইএন চালু করা হয়। এর পরপরই কর ও তথ্য সেবা কেন্দ্রটি চালু হয়। করদাতাদের অনলাইন নিবন্ধনে জটিলতা এড়াতে সহায়তা দিতে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন সেবা কেন্দ্র চালু হয়েছিল। প্রথমে এই সেবা কেন্দ্রের নাম ছিল এনবিআরের ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন সেবাকেন্দ্র। পরবর্তী সময়ে নাম পরিবর্তন করা হয়।
এই সেবা কেন্দ্রে নতুন করদাতাদের ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন, পুরনো করদাতাদের রি-রেজিস্ট্রেশন, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতাদের ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন, ই-টিআইএনের বিপরীতে ইউজার আইডি প্রদান, ই-টিআইএন ভুল সংশোধনসহ এ সংক্রান্ত সব তথ্য ও সেবা পাওয়া যাচ্ছে।