অভিমান, প্রেমঘটিত কারণ, পড়াশোনার চাপ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও মানসিক সমস্যার কারণে ২০২৩ সালে দেশে ৫১৩ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ১৬৫ জনই অভিমান থেকে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা: পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. সাইদুর রহমান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ বি এম নাজমুস সাকিব, আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৩ সালজুড়ে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার আগের বছরের কাছাকাছি। ২০২১ সালে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা ছিলো ১০১ জন। ২০২২ সালে দেশে আত্মহত্যাকারী স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল ৫৩২ জন। ২০২৩ সালে দেশের ১০৫টি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
২০২৩ সালে ৫১৩ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, ৬০ শতাংশ নারী
ফরিদপুরে নারী চিকিৎসকের ‘আত্মহত্যা’
সংগ্রহকৃত তথ্য অনুসারে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ১২ মাসে ৫১৩ জন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক বছরের ডাটা সমন্বয়ের ফলাফল তুলে ধরেন ফারজানা আক্তার লাবনী। তিনি বলেন, আঁচল ফাউন্ডেশনের একদল গবেষকের নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে সংগ্রহকৃত তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, ২০২৩ সালে ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে স্কুলশিক্ষার্থী ২২৭ জন (৪৪.২ শতাংশ), কলেজ শিক্ষার্থী ১৪০ জন (২৭.২ শতাংশ), বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৯৮ জন (১৯.১ শতাংশ) এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ৪৮ জন (৯.৪ শতাংশ)।
৫১৩ জন শিক্ষার্থীর মাঝে পুরুষ ছিলো ২০৪ জন, যা ৩৯.৮ শতাংশ। অন্যদিকে নারী শিক্ষার্থী ছিলো ৩০৯ জন, যা ৬০.২ শতাংশ। ২০২২ সালে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী ছিল ৫৩২ জন। ২০২৩ সালে কিছুটা কমলেও ততটা আশানুরূপ নয় বলে এ সময় জানানো হয়।
লাবনী আরও বলেন, ২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল- অভিমান, যা সংখ্যায় ১৬৫ জন (৩২.২ শতাংশ)। এরপরেই প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করে ১৪.৮ শতাংশ। মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন ৯.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী, পারিবারিক কলহে ৬.২ শতাংশ, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন ১.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালে পড়াশোনার চাপের সম্মুখীন হয়ে আত্মহত্যার দিকে পা বাঁড়ান ৪.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ৩.৫ শতাংশ এবং পাবলিক পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়ে বেঁচে থাকার পথ রুদ্ধ করেন ১.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন ২.৫ শতাংশ। অপমান বোধ করে ০.৮ শতাংশ আত্মহত্যা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আত্মহত্যা প্রতিরোধে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সব শিক্ষার্থীকে মাসে অন্তত একবার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, প্রত্যকে শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে মেন্টর (পরামর্শদাতা) নির্ধারণ করা এবং মেন্টর ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরির পদক্ষেপ নেওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে মানসিক স্বাস্থ্য কর্নার চালু করা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা, পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আবেগীয় অনুভূতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল ও ধৈর্যশীলতার পাঠ শেখানোসহ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়।