ঢাকা ০৭:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পর আমেরিকা প্রকাশ্যে এসে বড় ঘোষণা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ছোট দারোগার হাট বাজার এলাকায় উল্টো পথে আসা ট্রাকের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ বোরহানউদ্দিনে পৌর বিএনপির সদস্য সচিব আবু জাফর মৃধা’র বসতবাড়িতে হামলা। বনানীর আবাসিক হোটেলে মিলল ৯৮৪ বোতল বিদেশি মদ গাজীপুর কাস্টমসের পিওন কাওসারের কোটি টাকার সম্পত্তি পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যায়িত করার দাবি বাকেরগঞ্জের বিরঙ্গল দারুসুন্নাত নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসাটির বিভিন্ন অনিয়ম রয়েছে গোপালগঞ্জের সোহাগ একসঙ্গে দুই সরকারি চাকরি করেন বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

পদ্মার চরে অবাধে চলছে ফসলি জমির মাটি লুট

ফরিদপুর সদরপুরে ঢেউখালি ইউনিয়নের হাওলাদার কান্দি পদ্মা নদীর তীরে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে দিনে-রাতে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি মহল।

ফরিদপুর সদরপুরে ঢেউখালি ইউনিয়নের হাওলাদার কান্দি পদ্মা নদীর তীরে প্রায় ৫০০ মিটারজুড়ে চলছে মাটি কাটার ধুম। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে দিনে-রাতে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি মহল। এতে দিন দিন কমে যাচ্ছে কৃষিজমি। সেই সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ। হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে নদী রক্ষা বাঁধ ও ওই এলাকার বসতবাড়ি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। ভেকুর মাধ্যমে এমনভাবে মাটি কাটছে যে, একটু বৃষ্টি হলেই পাশের কৃষিজমি ভেঙে পড়বে। এতে একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। অন্যদিকে লাভবান হচ্ছে মাটির ব্যবসায়ীরা।

হাওলাদার কান্দি গ্রামের পদ্মার চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদরপুর উপজেলার ঢেউখালি ইউনিয়নের হাওলাদার কান্দির পাকা সড়ক থেকে একটি মাটির রাস্তা নেমে গেছে সোজা পদ্মা নদের উৎসমুখ পর্যন্ত প্রায় আড়াই শ মিটার এবং পূর্ব দিকে পদ্মা নদীর পানি পর্যন্ত অন্তত ২০০ মিটার অংশজুড়ে চলছে এ মাটি কাটা। দুটি এক্সকাভেটর (ভেকু) দিয়ে ৩০ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত গভীর গর্ত করা হচ্ছে। নদীভাঙনের কারণে পদ্মা চরের বাসিন্দারা এখন উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছেন। চরের সাথেই পদ্মা নদী। শুকনো মৌসুমে পণ্যবাহী কার্গো এসে আটকে যায় নদীর বুকে। অন্যদিকে, চরের জেগে ওঠা জমির নতুন মাটিতে বাদাম, ভুট্টা, ধান, কলইসহ নানা শষ্য আবাদ করা হয়।

হাওলাদার কান্দি চরের মাটির রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যেতেই ফসলি জমির মাঝ বরাবর দেখা মিলল একে একে দুইটি ভেকুর। এদিকে মাটি কাটার খবর সংগ্রহের জন্য সেখানে পৌঁছানোর পর ভেকু রেখেই সেখান থেকে পালিয়ে যায় ভেকুর ড্রাইভার। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরেও সে ফিরে আসেনি। সেখানে উপস্থিত একজন কৃষক জানালেন, মাটির ব্যবসায়ীরা জোরপূর্বক তাদের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা নিয়ে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে। এখান থেকে প্রতিদিন রাত ৭টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কয়েকশ গাড়ি বালুমাটি কেটে বিক্রি করা হয়।

স্থানীয় একজন কৃষক জানান, পাশের জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ায় তার জমির ফসল ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। মাটি বহনকারী যান চলাচলের জন্য তার জমির পাড় ভেঙে পড়ছে, ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। তাদের বলেও থামানো যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একখণ্ড জমির মালিক বললেন, তিনি তার জমিতে বাদাম, ভুট্টা, কলইয়ের চাষ করেন। তবে পাশের জমির মালিক মাটি কেটে বিক্রি করছে। গত কয়েক মাস যাবত এভাবে মাটি বিক্রি করছেন তিনি। ফলে মাটি টানার জন্য ব্যবহৃত গাড়ি চলাচলের কারণে তার জমির ফসল নষ্ট হয়। দুর্ঘটনাও ঘটে। ধুলো ও রাতভর গাড়ির শব্দের কারণে আমাদের বসবাস করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় আরেকজন কৃষক বলেন, তিনি এখানে নিজের জমিতে শস্য লাগিয়েছেন। নদীর চরের নতুন মাটিতে শস্য খুব ভালো ফলে। কিন্তু পাশের জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে স্নেহ হাওলাদার। এখন তার জমি ঘেঁষে পাশের জমির মাটি কাটা হচ্ছে। যেকোনো সময় তার ফসলি জমি ভেঙে পড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রতি রাতে পাঁচটি এক্সেভেটর দিয়ে ওই এলাকার পদ্মার তীর থেকে অন্তত ৬০ হাজার ঘনফুট মাটি কাটা হয়। প্রতিদিন রাত ৭টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত দুটি এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কেটে তা বিক্রি করা হয়। এ কাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন উপজেলার ঢেউখালি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার স্নেহ হাওলাদার।

তবে স্নেহ হাওলাদার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই জমির মালিক সে নিজেই তার জমি থেকেই সে মাটি কেটে বিক্রি করছেন।

ঢেউখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমি মাটি কাটার বিষয়ে তেমন কিছুই জানি না। স্নেহ এক দলের রাজনৈতি করে আমি অন্য দলের করি। তবে আমার জানা মতে, নদীর চরের যে জায়গার মাটি কাটা হচ্ছে, তা ব্যক্তিমালিকানাধীন। সেই মাটিই ইউপি সদস্য স্নেহ কেটে বিক্রি করছেন।

এ ব্যাপারে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোরাদ আলী জানান, আমি এখানে নতুন জয়েন্ট করেছি হাওলাদার কান্দি গ্রাম থেকে মাটি কেটে নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন জানলাম, মাটি কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পর আমেরিকা প্রকাশ্যে এসে বড় ঘোষণা

পদ্মার চরে অবাধে চলছে ফসলি জমির মাটি লুট

আপডেট সময় ০২:১৫:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৪

ফরিদপুর সদরপুরে ঢেউখালি ইউনিয়নের হাওলাদার কান্দি পদ্মা নদীর তীরে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে দিনে-রাতে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি মহল।

ফরিদপুর সদরপুরে ঢেউখালি ইউনিয়নের হাওলাদার কান্দি পদ্মা নদীর তীরে প্রায় ৫০০ মিটারজুড়ে চলছে মাটি কাটার ধুম। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে দিনে-রাতে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি মহল। এতে দিন দিন কমে যাচ্ছে কৃষিজমি। সেই সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ। হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে নদী রক্ষা বাঁধ ও ওই এলাকার বসতবাড়ি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। ভেকুর মাধ্যমে এমনভাবে মাটি কাটছে যে, একটু বৃষ্টি হলেই পাশের কৃষিজমি ভেঙে পড়বে। এতে একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। অন্যদিকে লাভবান হচ্ছে মাটির ব্যবসায়ীরা।

হাওলাদার কান্দি গ্রামের পদ্মার চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদরপুর উপজেলার ঢেউখালি ইউনিয়নের হাওলাদার কান্দির পাকা সড়ক থেকে একটি মাটির রাস্তা নেমে গেছে সোজা পদ্মা নদের উৎসমুখ পর্যন্ত প্রায় আড়াই শ মিটার এবং পূর্ব দিকে পদ্মা নদীর পানি পর্যন্ত অন্তত ২০০ মিটার অংশজুড়ে চলছে এ মাটি কাটা। দুটি এক্সকাভেটর (ভেকু) দিয়ে ৩০ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত গভীর গর্ত করা হচ্ছে। নদীভাঙনের কারণে পদ্মা চরের বাসিন্দারা এখন উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছেন। চরের সাথেই পদ্মা নদী। শুকনো মৌসুমে পণ্যবাহী কার্গো এসে আটকে যায় নদীর বুকে। অন্যদিকে, চরের জেগে ওঠা জমির নতুন মাটিতে বাদাম, ভুট্টা, ধান, কলইসহ নানা শষ্য আবাদ করা হয়।

হাওলাদার কান্দি চরের মাটির রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যেতেই ফসলি জমির মাঝ বরাবর দেখা মিলল একে একে দুইটি ভেকুর। এদিকে মাটি কাটার খবর সংগ্রহের জন্য সেখানে পৌঁছানোর পর ভেকু রেখেই সেখান থেকে পালিয়ে যায় ভেকুর ড্রাইভার। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরেও সে ফিরে আসেনি। সেখানে উপস্থিত একজন কৃষক জানালেন, মাটির ব্যবসায়ীরা জোরপূর্বক তাদের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা নিয়ে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে। এখান থেকে প্রতিদিন রাত ৭টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কয়েকশ গাড়ি বালুমাটি কেটে বিক্রি করা হয়।

স্থানীয় একজন কৃষক জানান, পাশের জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ায় তার জমির ফসল ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। মাটি বহনকারী যান চলাচলের জন্য তার জমির পাড় ভেঙে পড়ছে, ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। তাদের বলেও থামানো যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একখণ্ড জমির মালিক বললেন, তিনি তার জমিতে বাদাম, ভুট্টা, কলইয়ের চাষ করেন। তবে পাশের জমির মালিক মাটি কেটে বিক্রি করছে। গত কয়েক মাস যাবত এভাবে মাটি বিক্রি করছেন তিনি। ফলে মাটি টানার জন্য ব্যবহৃত গাড়ি চলাচলের কারণে তার জমির ফসল নষ্ট হয়। দুর্ঘটনাও ঘটে। ধুলো ও রাতভর গাড়ির শব্দের কারণে আমাদের বসবাস করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় আরেকজন কৃষক বলেন, তিনি এখানে নিজের জমিতে শস্য লাগিয়েছেন। নদীর চরের নতুন মাটিতে শস্য খুব ভালো ফলে। কিন্তু পাশের জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে স্নেহ হাওলাদার। এখন তার জমি ঘেঁষে পাশের জমির মাটি কাটা হচ্ছে। যেকোনো সময় তার ফসলি জমি ভেঙে পড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রতি রাতে পাঁচটি এক্সেভেটর দিয়ে ওই এলাকার পদ্মার তীর থেকে অন্তত ৬০ হাজার ঘনফুট মাটি কাটা হয়। প্রতিদিন রাত ৭টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত দুটি এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কেটে তা বিক্রি করা হয়। এ কাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন উপজেলার ঢেউখালি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার স্নেহ হাওলাদার।

তবে স্নেহ হাওলাদার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই জমির মালিক সে নিজেই তার জমি থেকেই সে মাটি কেটে বিক্রি করছেন।

ঢেউখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমি মাটি কাটার বিষয়ে তেমন কিছুই জানি না। স্নেহ এক দলের রাজনৈতি করে আমি অন্য দলের করি। তবে আমার জানা মতে, নদীর চরের যে জায়গার মাটি কাটা হচ্ছে, তা ব্যক্তিমালিকানাধীন। সেই মাটিই ইউপি সদস্য স্নেহ কেটে বিক্রি করছেন।

এ ব্যাপারে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোরাদ আলী জানান, আমি এখানে নতুন জয়েন্ট করেছি হাওলাদার কান্দি গ্রাম থেকে মাটি কেটে নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন জানলাম, মাটি কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।